somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কল্পদ্রুম
জ্ঞানিরা বলেন মানুষ জন্মমাত্রই মানুষ নয়,তাকে যোগ্যতা অর্জন করে তবেই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হয়।যোগ্যতা আছে কি না জানি না,হয়তো নিতান্তই মূর্খ এক বাঙ্গাল বলেই নিজেকে নির্দ্বিধায় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেলি।

নভোনীল পর্ব ১৩ (রিম সাবরিনা জাহান সরকারের অসম্পূর্ণ গল্পের ধারাবাহিকতায়)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘরটা আকারে বেশ ছোটো। সেই তুলনায় এই বাড়ির অন্য ঘরগুলো বড় ছিলো। খোলামেলাও ছিলো বেশ। তবুও নীল স্ব-ইচ্ছাতেই এই ম্যাচ বাকসের মতো ঘরখানা বেছে নিয়েছে। অন্য ঘরগুলোতে রুমমেট শেয়ার করলে তাতে ভাড়া কিছুটা সাশ্রয়ী হতো বটে। কিন্তু যে নির্জনতার লোভে সে হল ছাড়লো। আবার আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার সুলভ সুযোগটাও হাত ছাড়া করলো। সামান্য ক'টা টাকার জন্য তার ব্যত্যয় ঘটানোকে একেবারেই নিরর্থক বলে মনে হয়েছে তার কাছে।

প্রথম দেখাতে ঘরটা যেমন বদ্ধ মনে হয়েছিলো এখন আর ততোটা মনে হচ্ছে না। নীল খুব যত্ন করে তাকে সাজিয়ে তুলেছে। তবে সেটা যতটা না নিজের মতো করে, তার চেয়ে বেশি মৃন্ময়ীর কথা ভেবে। নিজের জিনিসপত্র সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবার মতো আদিখ্যেতা কখনোই ওর ছিলো না। কোনদিন সেরকমটা হবে তাও ভাবেনি। অথচ এই অল্প ক'দিনের ব্যবধানে কিভাবে সমূলেই না বদলে গেল সে! কোন সে জাদুর স্পর্শ যে তাকে ছুঁয়ে দিলো নীল নিজেও তা ভেবে পায় না! তবু তার ভাবতে ভালো লাগে। মৃণ্ময়ীর দেওয়া রজনীগন্ধার টবের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার মনে হয় ছোট্ট এই ঘরখানাতে যেন পৃথিবীর যাবতীয় ভালোবাসা একসাথে এসে জড়ো হয়েছে। যেন এই ঘরেই তার আর মৃণ্ময়ীর চড়ুই পাখির মতো ছোট্ট সংসারের শুরু। সত্যিই তাই! নীল তো এ ঘরে একা নয়। মৃন্ময়ীও আছে এখানে। নীল অতি যত্নে স্যুটকেস থেকে বের করে তাকে।

সাদা জমীনের উপর আঁকাবাঁকা পেন্সিলের রেখাগুলো মিলে তৈরি হয়েছে মৃণ্ময়ীর সুশ্রী মুখের ফুটন্ত আদল! এই আদলকে পূর্ণ রূপ দিতে আরো সময় লাগবে। নীল নিজেই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। ক্যানভাসে হয়তো এটা অসম্পূর্ণ। কিন্তু তার মনের ক্যানভাসে তো সম্পূর্ণ। নীলের আঙ্গুল মৃন্ময়ীর ধনুকের মতো বাকানো ঠোঁট স্পর্শ করে। দুজনার সেই প্রথমদিনের পরিচয়ের পর থেকেই নীল ছবিটা আঁকা শুরু করেছিলো। অনেকটা আনমনেই। উদ্দেশ্য ছিলো কোন একদিন মেয়েটাকে চমকে দেওয়ার। তবে এখন ও ধীরে সুস্থে আগাচ্ছে। ও চায় মৃন্ময়ীর প্রতিটি ক্ষুদ্র বর্ণনা এখানে ফুঁটে উঠুক। সে যেন ছবিটা দেখামাত্রই নীলের ভালোবাসার গাঢ়তা অনুভব করতে পারে।

দরজার খুটখাট শব্দে নীলের চিন্তাভঙ্গ হয়। বিশাল বপু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্থদা। সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে বললেন, "আরিব্বাস! উড়াধুড়া ব্যাপার! তুই কি বউ আনার প্লানিং করছিস? ভালো বুদ্ধি দেই,শোন। মেয়ে টেয়ে আনার প্লানিং থাকলে বাদ দে। বাড়িওয়ালা ইদরিস চাচা জানতে পারলে তোকে গাট্টি বস্তাসহ বিনা নোটিশে বের করে দেবে।" পার্থ দা একই ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র। উলটাপালটা ঠাট্টা করলেও মানুষ ভালো। তবে এই মুহূর্তে স্কেচটা ওনার চোখে পড়লে রক্ষা নাই। নীল সন্তর্পনে স্কেচটাকে উলটে রাখলো। পার্থদা সেদিকে খেয়াল না করে একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বললো, "এটা তোর। একটা ছেলে এসে দিয়ে গেল।"

একলা ঘরে নীল অবাক হয়ে খামের বিষয়বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণের জন্যে তার অনুভূতি অসাড় হয়ে যায়। এরপর একসাথে প্রচন্ড ঘৃণা আর ক্রোধ ওর ভিতরে বিস্ফোরিত হয়। এরকম অনুভূতি ওর এই প্রথম। ছবিগুলো একদিকে ছুড়ে ফেলে ও। খামের ভিতরে একটা চিঠিও ছিলো। নিজেকে কোনমতে শান্ত করে চিঠিটা পড়া শুরু করে।

"নভোনীল,

ছবিগুলো আশা করি দারুণ লেগেছে। আমার হাতের কাজ খুব ভালো। এই লাইনে অভিজ্ঞতাও প্রচুর। অলরেডি মৃণ্ময়ীর কাছে পাঠানো ছবিগুলোতে কিছু কারিশমা দেখতে পেয়েছো। সরাসরি আসল কথায় আসি। এই ছবিগুলো যে আগেরগুলোর মতোই ফেক তোমার মতো বুদ্ধিমান ছেলে সেটা বুঝে ফেলবে আমিও খুব ভালো করে জানি। কিন্তু তোমার কি মনে হয় এসব ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দিলে মানুষ সত্যি মিথ্যা যাচাই করে দেখবে? সুন্দরী মেয়ে এ জাতীয় ছবি সবাই লুফে নেবে। মাঝখান থেকে মৃণ্ময়ীর মতো মিষ্টি মেয়ের জীবন নষ্ট হবে। সুইসাইডও করতে পারে। আর তার জন্যে কে দায়ী হবে জানো? — তুমি।

মৃণ্ময়ীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করো। এতে মৃণ্ময়ীরই উপকার করবে।

ইতি,
অজ্ঞাত।"

প্রচন্ড ক্রোধে নীলের কপালের দুপাশের শিরা দপদপ করতে থাকে।


ঝির ঝির শীতল জলের স্রোত মৃণ্ময়ীর শরীরে পরশ বুলিয়ে যায়। স্নানের পর এক চমৎকার স্নিগ্ধতা অনুভূত হতে থাকে। ভেজা চুল তোয়ালে জড়িয়ে গুণ গুণ করে গাওয়া সুর আয়নার সামনে এসে থমকে যায়। মৃণ্ময়ী আগ্রহ নিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে। তবে নিজের চোখে নয়। নীলের চোখে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে মাত্র ক'দিন আগে। এর মাস খানেক আগেও তো কলেজ ড্রেস পড়ে সে লক্ষ্মী মেয়ের মতো ক্লাস করতো। বইয়ের পাতার আড়ালে যে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবতো না এমন নয়। উপন্যাসের রাজকুমাররা কিশোরী মনের সরলতাকে স্পর্শ করতো নিষ্পাপ নিয়তে। নীলের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই যেন মৃণ্ময়ীর জগৎটা একটা ধাক্কা খায়। অন্য রকম মৃণ্ময়ীর অস্তীত্ব টের পায়। বারংবার পড়া 'শেষের কবিতা' এই প্রথম উপন্যাসের চেয়ে কবিতাই হয়ে ওঠে বেশি। নীলের শরীরে শরীর ছুঁয়ে বসে থাকলে লোমকূপে যেই শিহরণ জাগে। কই? — এরকম অনুভূতি তো এর আগে কখনো হয় নি! মৃণ্ময়ী পূর্ণ সলজ্জ নয়নে আয়নায় নিজেকে দেখে। যেন আয়না নয়,নীলের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।

খুব যত্ন করে সাজে মৃণ্ময়ী। খুব বেশি নয়। তবে কপালের টিপটাও সে পরম আদরে পড়ায়। আজ নীল যেন মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রমনা পার্কে বিকেলে নীলের আসার কথা। মৃণ্ময়ী অপেক্ষা করে। অপেক্ষার প্রহর বাড়তে থাকে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে যায়। তবু অপেক্ষার সমাপ্তি হয় না।



মৃণ্ময়ী এই মুহূর্তে একটি দোতলা বাড়ির নীচ তলায় দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মৃণ্ময়ী কয়েক মুহূর্ত ভাবলো। মনে মনে কথা গুছিয়ে নিয়ে সামনের ঘরের কলিং বেল টিপলো। পর পর দুইবার।

আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে নভোনীলের কোন পাত্তা নেই। মানুষ বলে বিরহ বেলায় প্রেমিকারা ঘন্টা সেকেন্ডের পুঙখানুপুঙখ হিসাব রাখে। কিন্তু মৃণ্ময়ীর ক্ষেত্রে তো তা হয়নি। ওর কাছে এক সপ্তাহকে মনে হয়েছে এক যুগ। নভোহীন প্রতিটা মুহূর্ত ওর শ্বাস নিতেই কষ্ট হয়। এ যুগে কি এতটা ভালোবাসা যায়! মৃণ্ময়ী কাউকে বুঝাতে পারে না। নিজের কষ্ট নিজের কাছে চেপে ধরে নভোনীলকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায়।

নীলের মৌন স্বভাবের কারণে কেউ তার ব্যাপারে বেশি কিছু জানে না। মৃণ্ময়ীর আকুলতা ওদের ক্লাসমেটদের চোখে পড়ে। কেউ সহানুভূতি দেখায়। বেশিরভাগই এতদিনের ঈর্ষা এবার ক্রুর হাসিতে প্রকাশ করে ফেলে। সিন্থিয়া নিজের মেক আপ বক্সের দিকে তাকিয়ে ব্রাশ ঘষতে ঘষতে বলে, "দেখ গিয়ে অন্য কোন মেয়ের সাথে ইটিশ পিটিশ করে বেড়াচ্ছে। ছেলেদের বিশ্বাস করতে নেই।" মৃণ্ময়ীর ইচ্ছে করছিলো তখনই ব্রাশটা ওর মুখের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। তা পারা যায় না। মৃণ্ময়ী এদের থেকে দূরে সরে থাকে। তার বড় অসহায় লাগে। মাঝে মধ্যে মনে হয় যদি সিন্থিয়ার কথা সত্যি হয়ে যায়! নভোনীল কি সত্যিই সত্যিই ছবিগুলো বিশ্বাস করেছিলো! এমন কি হতে পারে যে ছবিগুলো পাঠিয়েছিলো সে নভোকেও আরো কিছু পাঠিয়েছে। আরো খারাপ কিছু! উফ! মৃণ্ময়ী আর ভাবতে পারে না।

গভীর সমুদ্রে পথহারা নাবিক যেভাবে দৈববলে অনেক সময় পথ খুঁজে পায়। মৃণ্ময়ীর ক্ষেত্রেও যেন সেটাই ঘটলো। নভোনীলের এক বন্ধুর খোঁজ পাওয়া গেল। রাজশাহীতেই বাড়ি। স্কুলের ক্লাসমেট। এখন চারুকলাতে পড়ে।

কল্প তখন রাস্তার পাশের দেওয়াল চিত্র আঁকছিলো। কোত্থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ বললো, "তুমি কি নভোকে চেনো?"

বাহ! বেশ সুরেলা কন্ঠ। তবে নিদারুণ দুঃখের সুর। কল্প আকাশের দিকে তাকালো।

সুরেলা কন্ঠ মৃদু ধমক দিয়ে বললো, "ঐ নভো না। নভোনীল।"

"ও আচ্ছা। হ্যাঁ, চিনি।"

"তুমি কি জানো ও কোথায়?"

"আছে হয়তো কোন চিপায়।"

বলার পর মৃণ্ময়ীর দিকে তাকিয়ে কল্প একটা ধাক্কার মতো খেল। এরকম অশ্রু টলমল বিষাদময় চোখ মোটেও হেলা ফেলার বিষয় নয়। "তুমি মৃণ্ময়ী?"

"হ্যাঁ।"

"মাকাল ফল তোমার কথা বলেছে আমাকে। ওর নতুন বাসায় ওঠার পর থেকে আমার সাথেও দেখা হয়নি। তোমার কাছে ওর মোবাইল নাম্বার নাই?"

"না।" মৃণ্ময়ী মৃদু গলায় বললো, "ওর মোবাইল নাই।"

"প্রেম করতেছে। অথচ মোবাইলের যুগে তার কোন ফোন নাই। নিজেকে বিরাট মুনি ঋষি মনে করে। তুমি কিছু মনে করো না। স্কুলের বন্ধু তো। গালি দিয়ে মানসিক শান্তি পাই। তবে চিন্তা নাই। কালকেই ওর বাসার ঠিকানা পেয়ে যাবা। ওর আত্মীয়ের বাড়ি আমি চিনি।"

মৃণ্ময়ীর বুকের ভার কিছুটা হলেও হালকা হলো।

ক্লাস শেষে বের হয়ে আসতে আসতে মৃণ্ময়ী ভাবছিলো নভোনীলের বাসায় আজই যাবে। নানান আশঙ্কায় মনের মাঝে উথাল পাথাল ঢেউ এর ছাপ কি ওর চোখে মুখেও পড়েছে! না হলে ক্লাসে খায়রুল স্যার কেন দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "ইজ দেয়ার এনি প্রবলেম, ইয়াং লেডি?" মৃণ্ময়ীর এদিকে বুক ফেঁটে যায়। ওদিকে মুখ ফুটে অস্ফুট স্বরে বের হলো, "না স্যার। আমি ঠিক আছি।"

রাস্তায় এসে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটছিলো মৃণ্ময়ী। আচমকা একজোড়া হাত ওকে খামচে ধরে টেনে থামালো। হতবিহ্বল মৃণ্ময়ী কিছুটা ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলো পরে।

"আমি মাধবী। আমাকে চেনো না বোধহয়। শোনো তোমাকে কিছু কথা বলা দরকার। খুবই আর্জেন্ট।" হড়বড় করে একগাদা কথা বলে গেলো অন্য মেয়েটি। এলোমেলো শুকনো তেলহীন চুল, বসে যাওয়া চোখ। মৃণ্ময়ীর চেয়েও আরো দিশেহারা দৃষ্টি তার।

পরিচয় না দিলেও মৃণ্ময়ীর তাকে চিনতে অসুবিধা হতো না। পহেলা ফাল্গুনে ওর দিকেই নভোনীল তাকিয়ে ছিলো। নভোনীলের বাবার সহকর্মীর মেয়ে। ওদের প্রতিবেশী।

"শোনো তোমাকে কিছু কথা বলবো। এগুলো তোমার জন্য জরুরি। এখান থেকে অন্য কোথাও চলো।"

গাড়িতে উঠেই শরীরটা এলিয়ে দিলো মৃণ্ময়ী। খোলা জানালা দিয়ে দমকা হাওয়ায় ওর চুল উড়ছে। মনের ভিতরে কেবল মাধবীর বলা কথাগুলোই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। চোখে ভাসছে মাধবীর করুণ চাউনি। রাকিব মাধবীর সম্পর্ক কয়েক বছরের। রাকিবের ইচ্ছেতেই সে সম্পর্ক তৈরি হয়। সে ওদের ডিপার্টমেন্টের তরুণ প্রভাষক। চমৎকার স্মার্ট মানুষ। মাধবীর মতো আঁতেল মেয়ে তাই খুশি মনেই সম্পর্কে জড়িয়েছে। কত মানুষ ওকে রাকিবের ব্যাপারে সাবধান করেছিলো৷ ছাত্র থাকাকালীন অনেক মেয়ের সাথেই সে জোর করে সম্পর্ক করেছে। কিন্তু কারো কাছেই থিতু হয়নি। নতুন নতুন সম্পর্কের প্রতিই তার আগ্রহ। আবার সেসব মেয়েদের কাছ থেকে না কি অনেক টাকাও নিয়েছে। অজানা কারণে কোন মেয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি হয়নি বলে এসব অভিযোগের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মাধবীও কিছু বিশ্বাস করেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন নিজের চোখে রাকিবের কম্পিউটারে ওর পাপ খুঁজে পেলো। তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি৷ সেই পাপনামায় মৃণ্ময়ীর নামও ছিলো৷ রাকিবের আনকোরা প্রজেক্ট৷ মাধবী মৃণ্ময়ীকে নভোনীলের সাথে দেখেছিলো বলে সহজেই চিনতে পারে। মৃণ্ময়ীর হাতে হাত রেখে বলে, "ঐ পাপীটা আমাকে প্রমাণ আনতে দেয়নি। আমাকে থাপ্পড় মেরে তাঁড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে আমি যদি মুখ খুলি তাহলে আমারও জীবন হেল করে ছাড়বে। নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করার পর আর চুপ করে থাকতে পারিনি। তাই তোমার কাছে ছুটে এসেছি। তুমি কোনভাবেই ওর ফাঁদে পা দেবে না। আমি তোমার পাশে আছি। ঐ পাপীটার এবার শাস্তি হবে।"

মূল দালানের পিছনের দিকে গেলে পরপর তিনটি দরজা দেখা যায়। এদের একটি নভোনীলের ঘর। কেউ বলে দেয়নি কোনটি। কিন্তু মৃণ্ময়ী জানে কোনটিতে তার নীল আকাশের বাস। দরজার পাশে রজনীগন্ধা গাছের শুকনো মাটি বিশেষ কারোর এককালীন উপস্থিতির আগাম সংকেত দেয়। ধীরে ধীরে মৃণ্ময়ী ভিতরে প্রবেশ করলো। কোথায় সেই উন্মুক্ত আকাশ! তার বদলে পড়ে আছে একরাশ শূন্যতা এবং একটি ক্যানভাস। মৃণ্ময়ী সেটা তুলে নেয়। নিজের আদলে কেবল চোখ দুটোই জীবন্ত৷

এক মৃণ্ময়ীর চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে অন্য মৃণ্ময়ীর চোখে৷ এবার দুজনের চোখেই জল। নভোনীলকে ছাড়া দুজনই আজ অসম্পূর্ণ।

(চলবে)

পূর্ববর্তী পর্বসমূহ

পর্ব ১২ মোঃ মাইদুল সরকার

পর্ব ১১ ঢুকিচেপা

পর্ব ১০ বিলুনী

পর্ব ৯ মনিরা সুলতানা

পর্ব ৮ কবিতা পড়ার প্রহর

পর্ব ৭ নিয়াজ সুমন

পর্ব ৬ পুলক ঢালী

পর্ব ৫ আখেনাটেন

পর্ব ৪ খায়রুল আহসান

পর্ব ৩ মেঘশুভ্রনীল

পর্ব ২ পদ্মপুকুর

পর্ব ১ রিম সাবরিনা জাহান সরকার
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৪৮
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×