somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্ট মিশে শূন্যে (পর্ব-৬)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্য তার লাল আভা ছড়িয়ে দিয়ে পশ্চিম দিকে ডুবে যাওয়ার প্রস্ততি চূড়ান্ত করে ফেলেছে। রাস্তার পাশের সবুজ গাছের ডগায় বাতাসের খুনসুটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হিমেলের হুন্ডার পিছনে বসে রাহাত ভাবছে চাকুরী পেলে এই ধরনের একটা হুন্ডা তাকে কিনতেই হবে। কল্পনার জগতে হারিয়ে যায় রাহাত। নীলাকে নিয়ে রাহাতের হুন্ডা ছুটে চলছে শাল গজারী বনের মেঠো পথ দিয়ে। নীলার শাড়ির আঁচলে খেলা করছে দামাল হাওয়া।মাঝে মাঝেই প্রিয় মানুষটির শাড়ির আঁচল ছুঁয়ে যাচ্ছে রাহাতের শরীর। রাহাত ঘাড় বাঁকা করে পরম যতনে শাড়ির আঁচলে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে নেয় আর ভাবে এমনি করে চিরকাল আমারই হয়ে থেক প্রিয়। হুন্ডা এগিয়ে যাচ্ছে রাশি রাশি শুকনো পাতা মারিয়ে। হুন্ডার শব্দে পাখিগুলোর চলছে এগাছ হতে ওগাছে ছুটোছুটির মহড়া । নীলা রাহাতের অতি কাছে বসে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত। রাহাত যেন নীলার হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনছে। আজ রাহাতের চেয়ে সুখী আর কেউ নেই- তার ভালোবাসার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির নতুন শাড়ির গন্ধ তাকে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে।
হঠাৎ হিমেলের ডাকে রাহাতের সম্বিত ফিরে আসে। কিরে তুই কি ঠিক আছোস!
-হুমম! ঠিক না থাইকা উপায় আছে দোস্ত।
রাহাত সান গ্লাসটা চোখ হতে নামিয়ে জামার পকেটে রাখে। এত সুন্দর একটি পরিবেশ। নীলা আপা এই এলাকা দেখলে নিশ্চয় খুবই খুশি হতেন। দুই হাত দিয়ে চুলে বিলি কেটে পিছন দিকে নিয়ে যায়।
- রাহাত পিছনে দেখতো নাসির ভাইয়ের হুন্ডা কত দূরে।
- রাহাত পিছনে তাকিয়ে নাসির ভাইয়ের হুন্ডার দেখা পায় না। হিমেলকে বলে আরে নাহ্! নাসির ভাইয়ের হুন্ডার দেখা নাই। এ সময়ে রাহাতের মোবাইলটা বেজে ওঠে। রাহাত প্যান্টের পকেট হতে মোবাইলটা বের করে রিসিভ করে।
-ওপর প্রান্ত হতে ভেসে আসে আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুমুস সালাম।
- আমি কি মোহাঃ রাহাত চৌধুরীর সাথে কথা বলছি।
-জী
-আপনি আমাদের বায়িং হাউজে সাত দিন আগে এইচ আর অফিসার পদে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন।
- জী ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম।
- আমরা আপনাকে সিলেক্ট করেছি। আপনি আগামীকাল সকাল ৯ টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে আমাদের অফিসে আসবেন। আর ইমেইলের এ্যাটাচমেন্টে বিস্তারিত সব আছে।
- আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি অবশ্যই আগামীকাল ৯ টার মধ্যে আসবো।
- হিমেল আমার তো চাকুরী হইয়া গেল দোস্ত!
- ওহ্ তুই যে গেল সপ্তাহে ইন্টারভিউ দিছিলি।অভিনন্দন দোস্ত। খুব খুশি হইলামরে দোস্ত। এখন শালা একটু বেশিই খাওয়া যাবে, কি বলিস?
- রাহাত মুখ বুঝে হাসে, বলে হুমম একটু বেশি খাওয়া যাবে। হিমেল তুই একটু রাস্তার ধারে থামা। আমি আব্বা আর মা'য়ের সাথে কথা বলবো।
হিমেল রাস্তার ধারে হুন্ডা রাখে। রাহাত হুন্ডা হতে একটু দূরে এসে বাবা, মা'র সাথে কথা বলে। তারপর নীলার নম্বরে কল দেয়। রাহাতের শরীর ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। গলা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এক জগ পানি পান করলেও গলা ভিজবে না। ওপাশ হতে মিষ্টি সুরে বলে উঠলো, রাহাত! কেমন আছো?
- জী নী-লা আপা, আমি ভালো আছি, আপনি।
- আমি তো সব সময় ভালো থাকার চেষ্টা করি। তা বল, কি খবর!
- নীলা আপা, বায়িং হাউজের চাকরীটা আমার হয়েছে।
- গুড নিউজ। আমি খুবই খুশি হলাম। সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা দিলে। এখন বাকী সিঁড়ি ভেঙ্গে তোমাকেই উপরে উঠতে হবে।
- রাহাত মনে মনে বলে, পরাণ পাখি তুমি আমার পাশে থাকলে ঠিকই আমি বহুদূর যেতে পারবো।
:
- নাসির ইরফানকে বলে, ওরা আমাদেরকে ওদের দলের বিশ্বস্ত টিম মেম্বার মনে করছে। আমরা প্রথম ধাপ অর্জন করতে পেরেছি। আজকে সাভারের আসরের পর হতে মূল কাজে প্রবেশ করতে হবে। আমি টিমের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। আজকের আসরে কোন এক ফাঁকে পুলিশকে জানিয়ে ওদেরকে দাবড়ানি দিতে হবে-এটা মাঝে মাঝেই কনটিনিউ করতে হবে। আর ব্যক্তিগত দাওয়াত, কালচারাল অনুষ্ঠান, ভ্রমন, যার যার ধর্ম অনুযায়ী নসিহত, ইসলামী দাওয়াত পর্ব , মদ- গাঁজা- ট্যাবলেট হতে যারা ফিরে এসেছে তাদের সাথে শেয়ারিং, কেয়ারিং ইত্যাদি চলতেই থাকবে। কেমন হবে বলেন তো ইরফান ভাই।
-ইরফান মাথা নাড়ে আর হাসে। আপনি পারেনও নাসির ভাই।
-ও ইরফান ভাই ! চলেন-চলেন। এমনিতেই দেরী হয়ে গেল--
:
-হিমেল শোন আমি আজকে সাভার যেতে পারবো নারে দোস্ত। ওরা কিছু কাগজপত্র নিয়া যাইতে কইছে। সব কাগজপত্র কোথায় আছে কে জানে ! এসব গোছাতে হবে বুঝলি। তাছাড়া সারা রাত জাইগা সাভার হতে বাসায় আইসা এগুলো গুছাইয়া অফিসে নিয়া যাইতে পারুম নারে বন্ধু। তুই একটু বুঝতে চেষ্টা কর।
- যাহ্। অন্তত আজকের দিনে তোরে আর আটকাবো নারে দোস্ত। যা তুই যা।
- রাহাত হিমেলের সাথে হাত মিলায়।
- মিস করবোরে রাহাত---
রাহাত রাস্তার ওপারে যায়, হাত নেড়ে একটি বাস থামায়। জানালার ধারে একটা খালি সিটে বসে। ছোট্ট বোনটির কথা খুব মনে পড়ছে। চাকুরী পাওয়ার কথা শুনলে রেশমা খুবই খুশি হতো। মুখ ফুটে কিছুই চাইতো না। কিন্তু রাহাত দেশে যাওয়ার সময় ওর জন্য কিছু কিনে নিয়ে যেত। রাহাত জীবনের প্রথম টিউশনির টাকা দিয়ে রেশমার জন্য একটা ড্রেস কিনে নিয়ে গিয়েছিল। রেশমার হাতে যখন ড্রেসটি দিয়েছিল তখন ওর খুশি আর কে দেখে।
- ভাইয়া! আমার যে লেমন কালার পছন্দ, তা তুমি কি কইরা জানলা ?
- হুমম ভাইয়েরা সব জানতে পারেরে পাগলী।
- শোন ভাইয়া! তুমি যখন প্রথম চাকুরী পাইবা তখন ঐ টাকা দিয়া আমার জন্য কোন ড্রেস কিন না। কোন একজন এতিম শিশুকে কিছু একটা দিও। ঠিক আছে।
- রাহাত হাসে আর বলে, তোর জন্যও ড্রেস আর সাজুনী জিনিস কিনুম আর কোন এক এতিম শিশুরেও দিমু। এখন হইলো তো!
- হুমম হইলো। ভাইয়া তুমি যখন বিয়া করবা তখন আবার আমার জন্য এত কিছু দিও না। সব জিনিস ভাবীর জন্য কিন। আর আমাগো পাড়ার দুইজন গরীব বুড়ী দাদী আছে তাগো দিও। আর মা, বাবা, নানী, দাদী, চাচা, চাচীরে দিও। ওহ্! আর ছোট ভাইয়াকেও কিছু দিও।
- এবার রাহাত উচ্চস্বরে হেসে উঠে। তুই আসলেই একটা আস্ত পাগলী। আগে তোর লেখাপড়াটা শেষ হইবো, তারপর তোর জন্য রাজপুত্র খোঁজ করুম, ধুমধাম কইরা তোরে বিয়া দিমু। পরে আমি বিয়া করার কথা চিন্তা করুম।
- না ভাইয়া। তুমি চাকরী পাইয়া আগে বিয়া করলে আমি ভাবী পামু। ভাবী আমারে কত আদর করবো। আর মাতো খুব খুশি হইবো।
- রাহাতের দুই চোখ পানিতে ভিজে যায়। চাকুরীর প্রথম বেতন পেলেই একজন এতিম শিশুকে তার পছন্দমত কিছু কিনে দিবে। আর গ্রামের দুই বুড়ী দাদীদের দুটো শাড়ি কিনে দিবে।
- এ্যাই গাবতুল্লী - গাবতুল্লি। আহেন- জলদি আহেন। যারা গাবতুল্লী নামবেন, তারা গেটে আহেন। হেলপারের চিতকারে রাহাত সিট হতে উঠে দাঁড়ায়। একজন নারীর ডাকে রাহাত পিছন দিকে ফিরে তাকায়।
- আমি বীনা রাহাত ভাই। আমার সাথে আব্বা আর ছোড বোইন আছে। আমরা কল্যানপুরে খালার বাসায় যামু।
- বীনার বাবা বীনার কথায় সায় দিয়ে বলে হ রাহাত। ওর মা'রে ৩ দিন আগে ওর খালা তাগো বাসায় নিয়া গ্যাছে। তাই ওর মা'রে এখন আমরা আনতে যাইতেছি। তা তুমি চল আমাগো সাথে।
- না না চাচা। আপনি কি যে বলেন। আমার কাজ আছে। রাহাত বীনার দিকে বিরক্তি সহকারে তাকায়। তারপর বাস হতে নামার জন্য সামনের দিকে পা বাড়ায়।
:
চলবে--
নোট: সংগত কারণে ষষ্ঠ পর্ব লিখতে দেরী হয়ে গেল। যে কোন ইতিবাচক পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে।
আগের পর্বসমূহের লিংক:
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-৫)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-৪)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-৩)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-২)
কষ্ট মিশে শূন্যে-(পর্ব-১)
:
লায়লা
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:১১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×