somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৬: অপরাজেয় বাংলা

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছয়.

আমি যখন দেশ ছাড়ি তখন আর্ট কলেজের উল্টা দিকে ছবির হাট বলে কিছু ছিল না। ছিলেন মোল্লা চাচা আর তার চা খানা। ১৯৮৭ এ ভিডিওতে প্রজন্ম নামে একটা শর্ট ফিল্ম বানাইবার ব্যার্থ চেষ্টা করে ছিলাম। মোল্লার চা দোকানের একটা সিকোয়েন্স ছিল। ছিল অপরাজেয় বাংলার কিছু ফুটেজ। ক্যাছেট টা খোয়া গেছে মন্ট্রিয়লের বাড়ীতে। বহু দিন পর সেই চেনা যায়গা, একটি দু'টি চেনা মুখ। পাল্টে যাওয়া সময়, পরিবেশ, আর রয়েছে পাল্টানো সময়ের ঝাক ঝাক মানুষ! কাঠের মানুষ ভন্ডুলের মত ভবঘুরে মৃনাল'দাকে দেখেও কথা বললাম না। ইচ্ছে হলো না কথা বলতে। কে বলবে আড়ং এর লগো'র নক্সাবিদ চীফ ডিজাইনার এখন কাকের গু মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ান কপর্দ হীন!

ছবির হাটের যাদের সাথে পরিচয় হলো তাদের কাউকে ২২ বছর আগে মোল্লায় দেখে ছিলাম কিনা মনে করতে পারলাম না। তুহীন পরিচয় করিয়ে দিল দু'এক জনের সাথে। সেই দু'এক জনের সুবাদে পরিচয় হতে থাকলো আরো ক'এক জনের সাথে। যার সাথেই পরিচয় হই তার কাছেই খোজ চাইতে লাগলাম শিল্পী বদরুল আলম বেনুর। কেউ কোন খোজ দিতে পারল না!

খালাত ভাই ইমরুলের চারুকলায় একটা পিচ্চি বাহিনী আছে, টি এস সিতে নাটকের রিহার্সেলের ফাকে ফাকে সেও ছবির হটে ঢু মারে। এক দিন সে এসে আমায় বুদ্ধি দিল, চলেন ভাইয়া রেজিস্ট্রি বিল্ডিংএ গিয়া খোজ লাগাই। এই সব নিয়ম তান্ত্রিক জটিল পদ্ধতিতে আমার বরাবরের অনীহা। আমি ইমুরে বলি, ভাই দেয়ার ইজ অলওয়েজ এ ইজি ওয়ে। আমাদের সেই পথের সন্ধান করতে হবে। ঐ দরখাস্ত ফরখাস্ত করতে আমি পারব না।

ছবির হাটের পোলাপাইন কেউ ই বেনু নামের চারুকলার কোনো ছাত্র কোনো কালে ছিল কিনা তাই আমাকে বলতে পারল না! ওরা আমাকে ম.হামিদ ও আবদুল্লাহ খালিদের সরনাপন্ন হতে বল্ল। ম. হামিদের কাছে খোজ পাওয়া যায়নি আর আবদুল্লাহ খালিদ ও ঢাকায় আসবেন সেই ঈদের পর। সেত আরো ২০/২৫ দিনের কথা। এর মাঝে কি করি তাহলে? ফোন ঘুরালাম আবারো সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে কে। এইবার ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে সাড়া মিলল। আমি ত বেজায় খুশী! ঊনি তখন ঢাকার বাইরে ফিরবেন আরো দু'দিন বাদে। আমি এপয়েন্টমেন্ট চাইলাম উনি আমাকে দুই দিন পর ফোন করতে বললেন। আমি দুই দিন পর ফোন করলাম, উনি আমাকে সময় দিলেন পনর মিনিট। আমি বললাম তাতেই চলবে।

দশটায় এপয়েন্টমেন্ট ধানমন্ডিতে বাড়ী খুজে পেতে পেতে বিশ মিনিট দেরী হয়ে গেল। দড়জায় পৌছুতেই বুঝলাম দেরীকরার জন্য কথা শুনতে হবে। তিনি কিছু বললেন না কিন্তু জায়নামাজ হাতে বাইরে যাবার জন্য বসে আছেন দেখলাম। রোজার দিন উনাকে পাঁচমিনিটও বেশী বিরক্ত করা যাবে না সেটা বুঝলাম পরিষ্কার। ঘরের ভেতর তেমন কোনো আলোর বন্দবস্ত নেই টিউবলাইট জলে ফ্যান চলে ছবি তুলতে যেয়ে বারবারই মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে করছিল। অগত্যা শুরু করলাম। আমি সাখারনত আমার উদ্দেশ্যটা সবাইকে একটু বলেনি প্রথমে তার পর আমার সাবজেক্টরাই হরহর করে বলা শুরু করেছেন এ পর্য্যন্ত। কিন্তু এই বেলায় তেমনটি হলো না ফজলে সাহেবকে যাই জিজ্ঞেস করি তিনি এক শব্দে উত্তর করে ফেলেন আর ঘড়ি দেখেন। আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

দৌড়া দৌড়ি করে ক্যামেরা ট্রাইপড টেনে দস্তুর মত আলোহীন একটা ঘরে জানালার পর্দা বন্ধকরে ক্যামেরা চোখে আমি সর্ষে ফুল দেখা শুরু করলাম। তবুও এর মাঝে যেটুকু পারা যায় ওনার কাছ হতে জানবার চেষ্টা করলাম। ফজলে সাহেব বাক পটু নন। তিনি ১৯৭৩ সালের সেই সুঠাম দেহের তেজদীপ্ত যুদ্ধ ফেরত কোন ছাত্র ও আর নন। গাল ভর্তি দাড়ি নিয়ে সাদা পাজামা, পাঞ্জাবী পরিহিত সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে ক্যামেরার সামনে কিছুটা বিব্রতও বোধকরছেন কেন জানিনা।

সেই মুহুর্তে আমি শুধু একটি কথাই তার কাছ হতে পরিস্কার হতে চাইলাম। সেটা হল আজ এতবছর পর তার ভাবতে কেমন লাগে যে ঐ তেজদীপ্ত তারুন্যের প্রতিনিধি হয়ে তারই একটি প্রতি মুর্তী দাড়িয়ে আছে কলাভবনের সামনে। সৈয়দ হামিদ মকসুদের কথায় ফুটে উঠল গর্বিত এক আবেগ। আমি মনে মনে বললাম ব্যাস এই টুকু হলেই চলবে কমরেড। আপনি ভালো থাকুন।

পরে তিনি রাস্তায় নেমে হাসি মুখে ক্যামেরার জন্য বার কয় হাটলেন তার ধানমন্ডির এপার্টমেন্টের সামনে। আমি বুঝলাম এই লোকটি একজন প্রচার বিমুখ সাদাসিধা সাধারণ মানুষ। যিনি একদা ইতিহাসের একটি অসাধারণ কর্মের সাথে নিজেকে যুক্ত করে ছিলেন এই দেশ ও এর স্বাধীনতাকে ভালোবেসে।
স্যালুট আপনাকে।

(চলিবেক)


মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ১: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ২: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৩: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৪: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৫: অপরাজেয় বাংলা

ওয়েব ঠিকানা, অপরাজেয় বাংলা
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০০৯ রাত ১১:৫৭
১০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×