বাঙালি সিনেমা বোদ্ধারা (সবই ফেসবুকীয়) ইদানিং তামিল সিনেমা সাজেস্ট করে দেখতে। বাহুবলি দেখেছিলাম, পরে কেজিএফ দেখলাম। এ থেকে কয়েকটি বিষয় জানলাম।
তামিল নায়ক গ্র্যাভিটি প্রুফ হয়ে থাকেন। উড়ে উড়ে মারেন, মহাকর্ষ, অভিকর্ষ, কোন কর্ষই তাঁর কিছু করতে পারেনা। তাঁর মার খেয়ে ভিলেনও সেভাবেই উড়ে যান যেভাবে ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে বল উড়ে গিয়ে গ্যালারির দর্শকের কোলে পড়ে। এখানেও অভিকর্ষ মহাকর্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়। নিউটন মামার তিন সূত্র তামিল নায়কের বেলায় মাথা কুটে মরে।
তাঁরা বুলেট প্রুফও হয়ে থাকেন। ভিলেন দূর থেকে এক নিশানায় একটা বুলেটে একটা সাধারণ মানুষ ফেলে দিলেও অনেক কাছ থেকে নায়কের দিকে হাজার গুলি ছুড়লেও তা নায়কের পায়ের সামনের মাটিতে ঢুকে ধূলি উড়ানো ছাড়া কিছু করতে পারেনা। নায়কের শরীরে নিশ্চই বুলেটের শিশার সমধর্মী চৌম্বকীয় তরঙ্গ আছে, যে কারনে তীব্র গতিতে ছুটে আসা বুলেট চৌম্বক বলয়ে প্রবেশ করে বিপরীতমুখী বলের মুখোমুখি হয়ে গতি জড়তার কারনে পাশে ছিটকে পড়ে। সিক্সথ স্ট্যান্ডার্ড ফিজিক্স! মারহাবা!
নায়ক ডাস্ট প্রুফও হয়ে থাকেন। হাঁটার সময়ে মাটিতে ছ্যাঁচড়ায়ে ছ্যাঁচড়ায়ে হাঁটেন, ফলে ধুলোবালি উড়ে। এতটাই যে টর্নেডোর সময়েও এতটা উড়ে না। সাধারণ মানুষ হলে এই ধুলায় হাঁচি দিতে দিতে আধমরা হয়ে যেতেন। নায়ক সেভাবেই নির্বিকারভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেন যেভাবে মাছ পানির নিচে নিয়ে থাকে। নায়কের শরীরে ভুল করে দুয়েকটা দায়ের কোপ পড়লে (যা সচরাচর ঘটে না) নায়ক মুঠোভর্তি "দেশ কি মিট্টি" তুলে নিয়ে সেই ক্ষতে ঘষাঘষি করেন। এতেই ক্ষতস্থান ভাল হয়ে যায়। কোন সেপ্টিক হয় না। মানে নায়ক ফিজিক্স প্রুফ হবার পাশাপাশি জার্ম্স তথা বায়োলজি প্রুফও। রোগ জীবাণু তামিল নায়কের কিছু করতে পারেনা।
তামিল ভিলেন তেমনই চেহারা প্রুফ হয়ে থাকে। সাধারণ কাউকে যদি কুৎসিত মানুষের চেহারা কল্পনা করতে বলা হয়, সে কল্পনায় যেখানে গিয়ে থামবে, তামিল ভিলেনের চেহারা তারও বহু ক্রোশ সামনে থেকে শুরু হবে। যেন চেহারা সুন্দর লোকজনের দুষ্টামি করার ক্ষমতা নাই।
তামিল সিনেমা হবে ডিপ্রেশন প্রুফ। কারন প্রতিটা দৃশ্যে মোটিভেশনের সুব্যবস্থা থাকবে। হয় ডায়লগ থাকবে, নাহয় কবিতা, নাহয় গান। দেখতে বসলে মাঝে মাঝে নিজেরই ইচ্ছা করে টিভি পজ দিয়ে বাইরে গিয়ে দুই চারটা ভিলেন পিটায়ে আসি।
এছাড়া তামিল সিনেমা বিশৃঙ্খলা প্রুফও হয়ে থাকে। করুন দৃশ্যে একশোজন একই সাথে মাথা ঝুঁকাবে, আবার যখনই প্রেরণা আসবে, একই সাথে একশো লোক মাথা তুলে তাকাবে, কিংবা থমকে পেছনে ফিরবে। ভিলেনের চামচারাও ছন্দে ছন্দে কাজ করবে। দেখে মনে হয় খুবই সুশৃঙ্খল কোন নাচের দৃশ্যের জন্য প্র্যাকটিস করেছিল। কাহিনীর প্রয়োজনে নাচ বাদ যাওয়ায় এখন সেটাই ফিট করে দিয়েছে। ন্যাচারাল একটিংয়ের মাম্মিকে ড্যাডি।
সর্বোপরি, এটি হতে হবে লজিক প্রুফ। পাঁচশো জন (ক্ষেত্রবিশেষে হাজার) তাগড়া ভিলেনকে এক বীর নায়ক পিটিয়ে ভর্তা করে দেয়া থেকে শুরু করে বহু কিছু দেখানো হবে। এজন্য আপনাকেও দর্শক হিসেবে হতে হবে এক্সপেক্টেশন প্রুফ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৬