somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিরপিনের থাইল্যান্ড ভ্রমন (দ্বিতীয় পর্ব)

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আগের পর্বের লিংক কিরপিনের থাইল্যান্ড ভ্রমন (প্রথম পর্ব)



মেট্রিপলিটন মিউজিয়াম

আজকের মূল গন্তব্য সামুদ প্রাখান জাদুঘর। এই বিষয়ে জুন আপার একটা পোস্ট আছে, পাঠক কে অনুরোধ করবো পড়া না থাকলে পোস্টটা পড়ে নেবেন। আমার বর্ননায় অনেক ফঁকি থাকবে।
জুন আপার পোস্টের লিংকঃ প্রাচীন শ্যামদেশ---- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত যাদুঘর

সকালের নাস্তার করতে করতে ডিসিশন - আজ সামুদ প্রাখান যাব। সামুদ প্রাখান যাবার বিষয়ে পড়ে প্রিপারেশন নেয়ার সময় পাই নি, মনে আছে আগের সপ্তাহে গুগুল ম্যাপে দেখেছি ব্যাংকক থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার, সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা, হাতে কিছু সময় আছে, কাজেই গুগুল ম্যাপে যেয়ে বের করলাম এক্সপ্লোর নিয়ারবাই অ্যাট্রাকশন। দেখাচ্ছে দশ মিনিটের দুরত্বে মেট্রপলিটন মিউজিয়াম। হাঁটা ধরলাম। এই জায়গায় প্রচুর হোটেল, কম বাজেটের টুরিস্টদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের থাকার জায়গার মধ্যে এটা এক, দুই বা তিন নম্বরে থাকবে। বেশির ভাগ হোটেলে ব্রেকফাস্ট ইনক্লুডেড, লোকেরা আয়েশ করে খাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। শুয়োর আর হাঁস প্রচুর। কিছু খাবার দোকান ও চোখে পড়লো, সকালের নাস্তা বিক্রি করছে। স্যামসন রোডে মিউজিয়াম, কোন এন্ট্রি ফি নেই। মূল মিউজিয়াম সম্ভবত অনেক বড়, এখন কিছু কাজ চলেছে- গুগুল এরকম বলছে আমি, আমি নিশ্চত না। মিউজিয়ামে ব্যাংকক নগর গড়ার পিছনে রাজাদের অবদানের কথা বিষয়টিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।


রাজাদের ব্যবহার করা কিছু সামগ্রী।

মিউজিয়ামে ঢোকার আগে জুতা খুলে ঢুকতে হয়।এখানে অনেক জায়গায়ই এই কালচার। ভিতরে ঢুকতেই দেখি একজন বয়স্কা মহিলা মেঝেতে শুয়ে আছে। ভিতরে আমি ছাড়া আর কোন দর্শনার্থী নেই। মিউজিয়াম দেখতে বেশি সময় লাগলো না। মিউজিয়ামের বেশি ছবি দিলম না।

মিউজিয়াম থেকে বের হয়ে দুএক মিনিট হাটা হাটি করে আসপাশের দোকান গুলো দেখলাম। হঠাৎ টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হয়ে পড়লো। আশে পাশে কোন পাবলিক টয়লেট দেখছি না। একটু হাটতেই তেলের পাম্প চোখে পড়লো। ভিতরে ঢুকতেই পিছনের দিকে টয়লেট খুঁজে পেলাম। দেখি থাই ভাষায় ২০ বাথ - ২৫ বাথ কি সব লেখা। কিন্তু পয়সার দিকে সব সময় তাকানো যায় না। টয়লেট পরিচ্ছন্ন ছিল। থাইল্যান্ডে প্রায় সকল টয়লেটেই পানির ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু টয়লেট পেপার থাকে না। এবং অনেক জায়গাতেই মনে হয়েছে এদের প্লাম্বিঙের কাজে দুর্বলতা আছে, টয়লেটের পানির নিষ্কাষন লাইনে লিক, টয়লেটের মেঝে ভেজা। যাহোক বের হবার পর পয়সা দেয়ার জন্য লোক খুঁজলাম, কিন্তু পয়সা নিলো না, মনে হলো এটা কর্মচারি ও কাস্টোমারদের জন্য করা, পয়সা নেয়ার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু দেয়ালে ঐ দাম লেখা কথা গুলো কি বোঝা হয়ে ওঠে নি।

রাস্তায় অনেক চওড়া, রাস্তাও পরিচ্ছন্ন দেখলাম। প্রচুর গাড়ি, কিন্তু জ্যাম নেই। একজায়গায় দেখলাম ইংরেজি আই চিহ্ন দেয়া, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ। গোটা ব্যাংককে এরকম অনেক দেখেছি। অবশ্য এই সকালে বুথে লোক দেখলাম না। আগস্ট থাইল্যান্ডে ট্যুরিস্টদের জন্য অফ পিক সিজন, ট্যুরিস্ট কম, সেজন্য অথবা এখনো বুথ খোলার সময় হয়নি বলেই হয়তো কেউ নেই।

হাটতে হাটতে দেখি বাজার মতো এলাকা, রাস্তার ধারে কাটা ফল বিক্রি হচ্ছে। ত্রিশ বাথ দিয়ে আনারস কিনে খেলাম। দুরকমের আনারস ছিল। বড় জাতের, মিষ্টি কিছু কম, ছোট জাতের-অনেক বেশি মিষ্টি। বাজারের গলিতে ঢুকতে বুঝলাম লোকালদের মার্কেট। কাপড়, জুতা, খাবার- অনেক কিছুই মাটিতে বিছানো। উপরে বাজার কতৃপক্ষের সামিয়ানা। কিছু খাবারের দোকানে আরবিতে হালাল লেখা। চেহারা দেখে আমার আগ্রহ উবে গিয়েছিল। তবে কাঁচা বাজার চোখে পড়লো। একদম কচি বেগুন, বিশাল করলা সহ অনেক কিছু চোখে পড়লো। বাজারের ঠিক বাইরে বের হয়ে চল্লিশ বাথের আম খেলাম। খুব ভালো স্বাদের।

বাজারের একটু পাশেই একটা খাল, এটা যেয়ে নদিতে পড়েছে, নদির নাম চাও ফ্রায়া নদি। খালের পানির রঙ হলদে সবুজ, বুড়িগঙ্গার ধারে কাছেও না, এরা উন্নতিতে বাংলাদেশকে ধরতে অনেক দেরী আছে । সামসেন রোড ব্যাংককের সবচেয়ে পুরানো রাস্তা গুলোর একটি। আজ থেকে কয়েকশ বছর আগে পর্তুগিজরা এখানে বসতি করে। একটা পুরাতন চার্চ আছে, আমি সময়াভাবে ঐ দিকে যাইনি ।


শুধু এটা না, ব্যাংককের সব রাস্তাই অত্যন্ত পরিস্কার অনেক রাস্তায়ই রাস্তার ধারে বাগান।

সামুদ প্রাখান কি ভাবে যাবো গুগুল ম্যাপে দেখতে মন দমে গেল। এখান থেকে দেখাচ্ছে পচিশ কিলোমিটারের বেশি, যেতে প্রায় দু ঘন্টা লাগবে। শুধু বাসে যাওয়া যাবে, তবে বাস আর স্কাই ট্রেনের কম্বিনেশনে গেলে সময় কম লাগবে। স্কাই ট্রেন কি বস্তু, হেলিকপ্টার না পেলেন জানা নাই। বাসে করে প্রথমে স্কাই ট্রেন স্টেশনে যেতে হবে। আমার বর্তমান পজিশন থেকে স্কাইট্রেনের সবচেয়ে কাছের স্টেশন হল ৩টা-- রাচাথেউয়ি, ভিক্টরি মনুমেন্ট অথবা সিয়াম।

যেটাতে বাস সবচেয়ে কম বদল করতে হবে সেই রুট ঠিক করলাম। থাইল্যান্ডের গুগল ম্যাপ পুরোপুরি ইংরেজি ভাষায় কাজ করেনা, ইংরেজি এবং থাই ভাষার মিকচার দেখায়। দুবার ভুল করে ভুল বাসে উঠে পড়লাম। ১৬ আর ১৬এ এক বাস না। এর পরের বার উল্টা ডিরেকশনের বাসে উঠে পড়েছিলাম। তৃতীয়বারে ঠিকমতো বাসে উঠলাম।

ব্যাংককে বাসগুলো খুব পরিষ্কার। দুই সিটের মাঝখানের ফাঁক অনেক বেশি , আরাম করে বসা যায় । আমি বাসে ভিড় খুব কম দেখেছি। বাসে দাঁড়ানো লোক-- এমনকি রাশ আওয়ারে ও খুব কম থাকে। বেশিরভাগ বাসে কন্ডাকটর মহিলা, তবে চালক পুরুষ। বাসে উঠতেই কন্ডাকটর মাসি হাতে একটা সিলিন্ডার টাইপের লাঠি নিয়ে আমার দিকে আসলেন। আমি ভয়ে ভয়ে গুগুল ম্যাপের পেজ খুলে তাকে দেখালাম কোথায় যেতে চাই। উনি বললেন রাচাথেউয়ি- এইট বাথ।

ব্যাংককে এত বেশি টুরিস্ট আসে যে ট্যুরিস্টদের যন্ত্রনায় এরা ইংরেজী শিখে নিয়েছে। পয়সা বের করে দিতেই উনি সিলিন্ডারটা খুললেন। এটা আসলে বড় আকারের একটা পেন্সিল বক্সের মতো। ভিতরে খোপ করে খুচরো পয়সা রাখার জায়গা আর টিকেট রয়েছে। ব্যাংককে পরে আমি শহরের ভিতরে চলার জন্য যে কটা বাসে চড়েছি, সবগুলো বাসের ভাড়া আট বাথ নিয়েছে, একবার এসি বাসে ১৫ বাথ নিয়েছে। এটা ফ্ল্যাট রেট নাকি বেশি দূরে ভাড়া আরো বেশি জানা নেই ।

রাস্তায় জ্যাম নেই তবে প্রতিটা সিগন্যালেই অনেক ক্ষণ থামতে হচ্ছে। অবশেষে গন্তব্যে পৌছলাম। বাস যেখানে নামালো এর পাশে একটা বিশাল স্কুল। স্কুল বিল্ডিং এবং বাচ্চাদের দেখে মন ভরে যায়। এর নাম EPS School, যা বুঝলাম, ইংলিশ মিডিয়াম না, বাইলিঙগুয়াল স্কুল।

এক মিনিট হেঁটে রাচাথেউয়ি বিটিএস বা স্কাই ট্রেন স্টেশনে চলে আসলাম। স্কাইট্রেন মানে আকাশে উড়ে উড়ে যায় না। মাটির উপরে ফ্লাইওভারের মতো আছে , ফ্লাইওভার দিয়ে ট্রেন যায়। ঢোকার আগে এখানে একজন ভিক্ষুক দেখলাম। গোটা থাইল্যান্ডে ভিক্ষুক কম। ব্যাংককে কিছু দেখেছি। প্রায় সবাইকে দেখেছি ওভার ব্রিজ বা এরকম জায়গায় বসতে। কাউকে কখনো বলে না কিছু দিয়ে যাও। সামনে একটা বড় কাগজের কাপ- ফাস্ট ফুডের দোকানে যেরকম গ্লাসে পেপসি বা কোক দেয় সরকম। কেউ এদের দিকে তাকালে এরা দু হাত তুলে একটা নমস্কার করে। সমাহিত দৃষ্টি। কেউ কিছু দিলে সেটা কাপেই থাকে, কাপ খালি করে ব্যাগে ভরে রাখে না।

রাচাথেউয়ি বিশাল বড় স্টেশন। গুগুল অনুসারে আমাকে রাচাথেউয়ি থেকে স্যামরঙে যেয়ে ট্রেন বদল করতে হবে, সেখান থেকে পাক নাম স্টেশনে যেতে হবে। টিকেট কাউন্টারে যাবার পর ক্লার্ক বললো ট্রেন বদলাতে হবে না, এক ট্রেনেই পাক নাম যাওয়া যাবে, ভাড়া ৪৯ বাথ!!! :(( জিজ্ঞাসা করায় বললো ভেঙে গেলেও একই ভাড়া :(



রাচাথেউয়ি স্টেশন-- ছবি, চুরি করা।


যেতস্কাই ট্রেনের টিকেট একটা আয়তাকার কাগজ , যার মধ্যে ম্যাগ্নেটিক্যালি ডাটা প্রিন্ট করা থাকে। গেট দিয়ে ঢোকার সময় টিকেট পাঞ্চ করতে হয় , বের হওয়ার সময় পাঞ্চ করলে মেশিন টিকেটটা খেয়ে ফেলে দরজা খুলে দেয়। নির্ধারিত দূরত্বের বেশি গেলে দরজা খুলবে না। টিকেট কাউন্টার স্বাভাবিকভাবেই গেটের ঠিক বাইরে।


ট্রেনের টিকের এক পিঠ। অপর পিঠে ট্রেন লাইনের ম্যাপ।

বাস যেরকম খালি পেয়ে ছিলাম , ট্রেন সেরকম না। মূল শহর এলাকায় প্রচণ্ড ভিড়। আমাদের দেশে অফিস আওয়ারে পাবলিক বাসের ভিড়ের মত। থাইল্যান্ডের ভালো যানজট আছে, ট্রাফিক সিগনালে অনেক সময় নষ্ট হয় এজন্য লোকে স্কাইট্রেন পছন্দ করে। কোনো যানজট নেই বলে খুব দ্রুত যাওয়া যায়। একারণে ভাড়া পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাসের চেয়ে অনেক বেশি। ভাড়ার ব্যাপারটা আগে জানলে মিউজিয়াম বাদ দিয়ে সকালেই বাসে করে সামুদ প্রাখান চলে যেতাম। রাচাথেউয়ি থেকে পাক নাম পর্যন্ত যেতে প্রায় ৫০ মিনিটের মত লাগে; মাঝখানে কুড়িটার বেশি স্টপ। সিট খালি না থাকায় অনেকখানি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, মূল শহর পার হবার পর থেকে ট্রেন ফাঁকা হতে শুরু করলে বসে পড়লাম।


ট্রেন থেকে দেখা কিছু দৃশ্য।





থাইল্যান্ডে অ্যাসবেসটস এখনো প্রচুর ব্যবহৃত হয়

পাক নামে নামার পর গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছে এখান থেকে সামুদ প্রাখান ৬ মিনিটের হাঁটা পথ। কিন্তু প্রায় দশমিনিট মতো হাঁটার পরও দেখি কিছু কমার্শিয়াল বিল্ডিং আর দূরে কিছু জলাভূমি। মিউজিয়ামের কোন নিশানাও আসে পাশে নেই। প্রিপারেশনে ফাঁকির ফল। একটা জায়গায় দাড়িয়ে জুন আপার পোস্ট আবার পড়ে গুগুল ম্যাপের সঙ্গে মিলানোর চেষ্টা করতেই ভুলটা বুঝতে পারলাম। সমস্যা বড় রকমের। সামুদ প্রাখান জায়গার নাম, যেমন ঢাকার মিরপুর। গুগুল ম্যাপ সামুদ প্রাখান নামের কোন মিউজিয়াম চেনে না। আমি যেটাকে সামুদ প্রাখান নামে ভাবছি গুগুল সেটাকে অ্যানসিয়েন্ট সিটি মিউজিয়াম বা শুধু এনসিয়েন্ট সিটি হিসেবে চেনে।

এনসিয়েন্ট সিটি মিউজিয়ামে যেতে গেলে আমাকে আবার ট্রেন স্টেশনে যেতে, হবে ট্রেন ধরে আরো তিন স্টেশন দূরে খোয়া নামের এক স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে চার কিলোমিটার, ট্যাক্সি নিতে হবে। নতুন করে স্কাই ট্রেনের টিকিটের ভাড়া কত নেবে জানি না। তারপর সময়ও নষ্ট হচ্ছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল। পাক নাম থেমে খেয়ার টিকিট কাটার সময় বুকিং ক্লার্কের মধুবর্ষণে মন ভালো হয়ে গেল--এখান থেকে খেয়া স্টেশন পর্যন্ত টিকেট ফ্রী :) :) । এই তিন স্টেশন এর জন্য কোন পয়সা লাগে না। আমারতো মনে হলো এখানে এক দিন থেকে যাই, এই তিন স্টেশন খালি বারবার সারাদিন যাওয়া আসাই করতে থাকি। ফ্রি জিনিস আমার খুব ভাল লাগে।

খেয়ায় নামার পর দেখি ঠিক স্টেশনের পাশ থেকে টেম্পু যাচ্ছে। এরা টেম্পু কে বলে সংথাও। অ্যানসিয়েন্ট সিটি শব্দটা বুঝে টেম্পুর দালাল ইশারা করলো উঠে যাও (স্ট্যান্ডে একজন চেইনম্যান বা দালাল থাকতে দেখেছি প্রায় সব জায়গায়)। আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাড়া কত। থাইল্যান্ডে টেম্পু/সিএনজি ভাড়া নিয়ে দুই নম্বরির অনেক ঘটনা আছে, অপরিচিত টুরিস্টকে গাড়িতে চড়িয়ে পরে ১০ বাথের ভাড়া ৩০০ বাথ আদায় করার ঘটনা অনেক ট্রাভেল ব্লগে পড়েছি। এখানে ভাড়া বলল ১০ বাথ (পরে জেনেছি ৮ বাথ আমার কাছে ২ বাথ বেশি নিয়েছিল)। এরা টেম্পু খুব জোরে চালায়, খুব ভয় লাগিয়ে দেয়।

দেখতে পাম গাছের মতো, ধরে আছে সুপারি। জিজ্ঞাসা করায় বললো কলাবাগান ভাই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরি করেছেন, সুপারির মৌসুমে সুপারি, পামের মৌসুমে পাম হয়। কলাবাগান ভাইয়ের কাছ থেকে যাচাই করার সুযোগ হয় নি।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই এনসিয়েন্ট সিটি এসে পৌছালাম।টিকেটের দামের ব্যাপারে গুগল ম্যাপে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া আছে , জুন আপার ব্লগে দেয়া দেওয়া তথ্যই ঠিক এবং সবচেয়ে সাম্প্রতিক।


সামুদ প্রাখান

একাধিক কাউন্টারে ঘুরেও টিকিট কাটতে পারলাম না, কারণ এরা বলছে এই কাউন্টার গুলো গ্রুপ বুকিং বা অনলাইন বুকিঙের টিকেটের জন্য। অবশেষে চার নম্বর কাউন্টারে টিকিট কাটলাম। ৭০০ বাথ, প্রায় ২১০০ টাকা। ভিতরে বিশাল জায়গা ঘোরার জন্য এরা সাইকেল ফ্রি দেয়, যারা সাইকেল চালাতে পারেন এটাই সবচেয়ে ভালো অপশন। গল্ফ কার্টের ব্যবস্থা আছে, তবে ঘন্টা হিসেবে ভাড়া দিতে হয়। একটাতে চার বা ছয় জন, বসা যায়, কাজেই বড় গ্রুপের জন্য পোষাতে পারে, কিরপিনের জন্য না।

সাধারন লোকের জন্য ট্রেন আছে। আসলে উপরে দেখতে ট্রেনের মতো, নিচে বাসের চাকা লাগানো। ট্রেন ফ্রি। এছাড়া হেডফোন সহ অডিও গাইড সেট ফ্রি, একটা ম্যাপও দিয়ে দিল। তবে হেডফোনের সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ এরা আমার পাসপোর্ট রেখে দিল আর সাথে ফোন নাম্বারও রেখে দিল।

ট্রেন দু ঘন্টা পর পর ছাড়ে। একটু আগে একটা ছেড়েছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো পরেরটার জন্য অপেক্ষা করবো নাকি এরা আমাকে আগেরটার সাথে জুড়ে দেবে। সময় বাঁচাতে আমি পরের অপশনটাই নিলাম। আমাকে এরা গলফ কার্টে করে ট্রেন পর্যন্ত পৌছে দিয়ে গেল। ট্রেনে ড্রাইভার এর পাশে একজন গাইড থাকে। গাইডরা সংক্ষেপে যাত্রাপথের বিবরণ দিচ্ছে, কিন্তু গাড়িতে স্থানীয় যাত্রী বেশি হওয়ায় সব বিবরন থাই ভাষায়। সামুদ প্রাখান বিশাল এলাকা, দুঘণ্টায় ট্রেনের পক্ষে কাভার করা সম্ভব না। ট্রেন রুট দিয়ে শুধুমাত্র বড় রাস্তার পাশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় ঘুরে দেখানো হয়। পুরা জায়গা দেখতে হলে গলফ কার্ট বা সাইকেল লাগবে বা হাঁটতে হবে।

ট্রেন রুটে বিভিন্ন পূর্ব নির্ধারিত পয়েন্ট আছে, একটা পয়েন্ট থেকে আরেকটা পয়েন্টের দূরত্ব আধা কিলোমিটার থেকে এক কিলোমিটারের মতো। সসব পয়েন্টে ট্রেন ১৫-৩০ মিনিটের ব্রেক দেয়। ব্রেকের সময়ে ওই পয়েন্ট এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো দর্শকরা ঘুরে নেয়।

পার্কে প্রচুর টয়লেট। সব অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। অনেক খাবার দোকান। খাবারের মধ্যে শুয়োর-মুরগি থেকে শুরু করে আইসক্রিম-লেবেঞ্চুস বিয়ার-ফান্টা সবই আছে। ব্রেক এর ফাকে এক জায়গায় জোহরের নামাজ পড়ে খাবার খুঁজলাম। চিনা বাদামের প্যাকেট নিলাম। সম্ভবত কুড়ি বাথ নিয়েছিল। ভেগান আইসক্রিম পেলাম, কয়েক ফ্লেভারের। ডুরিয়ানের নাম শুনেছি। দাম অনেক। এখন ৩৫ বাথ দিয়ে ডুরিয়ান ফ্লেভারের আইসক্রিম খেলাম। সয়া মিল্ক দেয়া। স্বাদ ভালো লাগেনি। ডুরিয়ানের গন্ধ অতি অপ্রিতিকর মনে হয় নি, তবে ভালো লাগে নি।

দু'ঘণ্টা পর ট্রেনের শেষ স্টপের আগে আমি গাইড কে বলে নেমে পড়লাম যে আমি ট্রেনের সঙ্গে আর যাব না বাকিটুকু হেঁটে দেখব।

থাইল্যান্ডের লোকেরা ধর্মকে গভীর ভাবে ধারণ করে। বার গার্ল হোক আর বাস ড্রাইভার বা আমলা, বুদ্ধ মূর্তি দেখলে নমষ্কার করার চেষ্টা করে। মঙ্করা এখানে অত্যন্ত সম্মানীয়। শ্যাম দেশে বৌদ্ধ ধর্মের আদি স্থান ভারতেরও অনেক প্রভাব আছে। নাগ বাসুকি এবং শিবের অনেক মূর্তী বা ত্রিশুলও আমি দেখেছি। এই দেশে চিন, বার্মা, লাওস, খেমার, ভারত - বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসেছে। সবাই নিজের কালচার সাথে নিয়ে এসেছে। স্থান ভেদে বৌদ্ধ মূর্তির চেহারা ভারতীয় থেকে মঙ্গলয়েড হয়েছে, সাথে বিভিন্ন দেব দেবি যোগ হয়েছে। এসব নিয়ে এদের মারামারি নেই যে আমার বুদ্ধই আসল, বাকিদেরটা ভুয়া। গোটা শ্যাম দেশেই হাজার হাজার মন্দির। শৈল্পিক দৃষ্টি কোন থেকে এদের মাঝে বেশ কিছু মন্দির অনন্য। সামুদ প্রাখান এলাকায় আসলে থাইল্যান্ডের সমস্ত বিখ্যাত মন্দিরের রিপ্লিকা তৈরি করা হয়েছে, দু একটা ক্ষেত্রে বরং রিপ্লিকা না করে মূল স্থাপনাটাই তুলে আনা হয়েছে।


ভক্তরা ভগবানকে ফান্টা নৈবেদ্য দিয়েছে।

এই বিশাল এলাকা এক দিনে দেখে শেষ করা কঠিন। যারা আগ্রহী তাদের সকাল সকাল আসাই ভালো। যারা মন্দির বা পূরাকীর্তি দেখতে আগ্রহী না তাদের এখানে আসার প্রয়োজন নেই। এই বিশাল এলাকায় এক্সপানশনের কাজ অনবরত চলছে, কাজেই আজ যা দেখলাম দু বছর পরে তার সাথে নতুন কিছু যোগ হবে নিশ্চিত করে বলা যায়।

এখানে আমি প্রায় চার ঘণ্টা বা কিছু বেশি হেঁটেছি। তবে আমি মনে করি আমি পুরোপুরি দেখতে পারিনি, দুই বা তিনটা স্পট আমার বাদ চলে গিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে আরো একটা আইসক্রিক খেলাম, আম ফ্লেভারের। স্বাদ এবারেও ভালো না। সয়া মিল্কই সর্বনাশ করেছে।আইসক্রিমের দাম নিল ৩০ বাথ।


ভন্ডুল মামার বাসা


ম্যালফিসিয়েন্টের প্রাসাদ


ঘুরতে ঘুরতে আবার আগের আইসক্রিমের দোকানের দিকে চলে আসলাম। বললাম আইসক্রিমের দাম পাঁচ বাথ বেশি নিয়েছে। কেনার সময় আমার ইংরেজি ঠিকই বুঝেছিল, এবার বুঝছিল না। ফোন থেকে ট্রান্সলেটর বের করে বলার পরেও বুঝলো না। অবশেষে কুড়ি বাথ দিয়ে আমি এক বোতল জল কিনে দাম থেকে পাঁচ বাথ কম দিয়ে সমন্বয় করে দোকানদারের সাথে হাত মিলিয়ে বের হলাম (দোকানে দাম ২৫ বাথ বলেছিল)। পরে দেখেছি বাইরে এই জলের দাম ১৫ বাথ, আইসক্রিমের দাম ২০ বাথ।


মন্দিরের ভিতরের দান বাক্স। যে যা পারেন ময় মুরুব্বির নামে দান করে যান



ছেড়েদে শয়তান

হাঁটতে হাঁটতে আরো দুটো আইসক্রিম আর এক বোতল গোলাপি রঙের মিরিন্ডা খেলাম। আইসক্রিম-বাদাম-পানি-মিরিন্ডা সব মিলিয়ে আমার লাঞ্চে ২০০ বাথের মতো খরচ হয়েছিল। এটা কি খুব বেশি নাকি খুব কম না স্বাভাবিক এর জবাব ধীরে ধীরে জানা যাবে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় বসে জিরিয়ে নিলাম। সময় হয়েছে দেখে আসরের নামাজ পড়ে ফোনে এলার্ম দিয়ে ঠিক পনেরো মিনিট ঘুমিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। সাড়ে পাঁচটার দিকে রিসিপশন থেকে আমাকে ফোন, অডিও ডিভাইস ফেরৎ দিতে হবে। আমি বললাম সময় মতো ফেরৎ দেব। আসলে ৭০০ বাথ উশুল করতে হবে, সময়ের আগে বের হবার বেশি ইচ্ছে আমার নেই।


আর্টিফিশিয়াল পাহাড়, এর উপর মন্দির। মূল স্থাপনা কম্বোডিয়ায়, থাইরা এই জায়গা নিজেদের দাবি করেছিলো। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ঠিক হয় এটা কম্বিডিয়ার অংশ। দেশপ্রেমিক স্থপতি মনে করেন এই অংশ থাইল্যান্ডের পাওনা ছিল। মনের কষ্ট দূর করতে এই রিপ্লিকা তৈরি করেন।










আগস্টের এ সময়টায় সূর্য ডোবে ছটা চল্লিশের দিকে। আলো কমে আসছে। বের হতে যেয়ে সমস্যা বুঝলাম। সামুদ প্রাখানের মিউজিয়াম এলাকা থেকে রিসিপশন পর্যন্ত অনেক দূর। রিসিপশনের পরে অনেক খানি এলাকা টিকেট ছাড়াই দেখা যায়। সিনেমার ট্রেলারের মতো। এর পরে টিকেট অনলি এরিয়া শুরু। আসার সময়ে গল্ফ কার্টে এসেছি বলে বুঝিনি। বের হবার সময় ঠ্যালা বুঝলাম। তবে হাঁটার সুবিধা আছে, কার্ট বা ট্রেনে থাকলে অনেক কিছু চোখ এড়িয়ে যায়। বোরোবার পথে দেখলাম অনেক হল রুম এরা কনফারেন্স রুম হিসেবে ভাড়া দেয়, ভিতরে থাকার হোটেল আছে বলেও মনে হলো।

৬-৪৫এ আমি বের হয়ে গেছে এসে অডিও টেপ জমা দিয়ে আমার পাসপোর্ট ফেরত নিলাম। সূর্য প্রায় ডুবে যায় যায়। রাস্তার ধারে প্রচুর ফাঁকা জায়গা, এরকম জায়গায় মাগরিবের নামাজ পড়ে নিলাম। ফেরার টেম্পু ধরতে গেলে আমাকে রাস্তার উল্টো দিকে যেতে হবে। রাস্তায় সাঁই সাঁই করে জোরে বড় বড় গাড়ি চলছে, রাস্তা ক্রস করা খুব মুশকিল। বাংলাদেশি স্টাইলে হাত দেখিয়ে দৌড়ে আইল্যান্ড বরাবর যেয়ে দেখি দুই রাস্তার মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় গর্ত করে পানি দিয়ে নদীর মত বানিয়ে রেখেছে। অতএব আগের পন্থায় ফিরে আসা। রাস্তার এই দিক থেকে ওই দিকে যাব কি করে আর টেম্পু ধরবো কি করে মাথায় বড় দুশ্চিন্তা। খুঁজে পেতে সামনে একজনকে ধরলাম। পাঠক বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই দেশে পুরুষ মানুষ খুঁজে পাওয়া আসলে খুব মুশকিল। ইশারায় তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বোঝালেন সামনে খানিকটা গেলে ওভারব্রিজ আছে, ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হওয়া যাবে।

ওভার ব্রিজের আগে দেখি রাস্তার ধারে এক জায়গায় মিউজিকের তালে তালে বুড়ি ছুড়িরা নাচছে। কাছে যেতে বুঝলাম এক রকমের এক্সারসাইজ। সাত বছরের মেয়ে থেকে সত্তর বছরের মহিলা, সব এজ গ্রুপের লোকই আছে। তবে পুরুষ নেই। কারো কারো পরনে ফরমাল ব্যায়ামের পোষাক, অধিকাংশের পরনেই সাধারণ পোষাক।

ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হয়ে টেম্পুতে খেয়া স্টেশন। আসার সময়ে ফোনের ট্রেইনম্যান অ্যাপে স্পীড মেপে দেখি ৮২ কিমি/ঘন্টা পর্যন্ত স্পীড ওঠাচ্ছে। যেখানে বাঁক সেখানে ৬৬, এর চেয়ে কমাচ্ছে না। রাজধানীর এত কাছে এই স্পীডে যেতে যেতে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী মনে হচ্ছিল :) । খেয়া থেকে ট্রেনে রাচাথিউয়ি । খেয়া এ মাথার প্রথম স্টেশন, ওদিক থেকে আসার সময় শেষ স্টেশন। প্রথম স্টেশন হওয়ায় বসার সুযোগ পেলাম। সিটে গা এলাতে শরীরের অবস্থা টের পেলাম। সারাদিন হাঁটা, তার উপর আগের রাত ঘুমহীন । সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা।

হায় জাম্বাক।


রাচাথিউই স্টেশনে নেমে দেখি ফুটপাথে খাবারের দোকানের মেলা। এর মধ্যে এক দোকানে পরোটা ভাজছে। সামনে লেখা হালাল। ছেলেটা ইংরেজি জানে। চেহারা ভারতীয়দের মত। জিজ্ঞেস করলে জানালো রোহিঙ্গা। পরোটার মাঝে কলা, নিউটেলা, ডিম বিভিন্ন জিনিস ভরে দিয়ে বিক্রি করে। আমি ডিম পরোটা চাইলাম। জিজ্ঞাসা করলাম মরিচ দিতে পারবে কিনা। বলল মরিচ হবেনা। দেখি লবণ ছাড়াই ভাজা শুরু করেছে। বললাম লবণের কথা। বলল এক্সট্রা লবণ নেই, তবে সে মাখন ব্যবহার করে, মাখনের মধ্যে লবণ আছে। পরোটা ভাজার শেষ হলে সে পরোটার মধ্যে কনডেন্স মিল্ক লাগানো শুরু করতেই আমি লাফ দিয়ে তাকে মানা করলাম। সে খুব অবাক হয়ে গেল। এখানে পরোটা কনডেন্স মিল্ক মাখিয়েই খায়।

যাহোক, আগে বলেছি থাইল্যান্ড ভ্রমণ করার সময় পকেটে লবণদানি রাখবেন, কারন এরা লবণের ব্যবহার জানে না। লবণদানি না রাখলে মিষ্টি পরোটা খেতে হবে। এই একটা ডিম পরোটার দাম এখানে ৫০ বাথ, বাংলাদেশের টাকায় প্রায় ১৫০ টাকা। দুপুরে ভাত খাইনি। এই ৫০ বাথের পরোটা খেয়ে কিছুই হলো না। এর পাশে দেখি ডাব/নারকেল বিক্রিকরছে। আমি একটা ডাব নিলাম। প্রচুর পানি। পানি খাওয়ার পরে কেটে শাস বের করে দিল। খেটে আমি হাঁটা দিতেই পিছন থেকে ডাক দিল -- সোনার চান, পয়সা দিয়ে যাও বাবা । আমি ভাব দেখালাম যেন ভুলেই গিয়েছিলাম। পয়সা দিয়ে পাশের দোকানে যেয়ে দেখি আম বিক্রি করছে। ৫০ বাথের আম খেলাম। পাশে ডুরিয়ান বিক্রি করছে । ইচ্ছে ছিল, কিন্তু দাম ১৫০ বাথ, কাজেই বাদ দিলাম।

এর পরে হোটেলে যাওয়ার পালা। গুগল ম্যাপ থেকে খুঁজে বের করলাম কোন বাস কাছাকাছি এলাকায় যাবে। আমার এখান থেকে খাওসান রোডের বাস পাব না, কাছাকাছি এলাকার বাস পাব । বাসে করে চলে এলাম প্রাচাতাই মনুমেন্ট এলাকায়। বাস থেকে নামতেই দেখি এক জায়গায় বাতাবি লেবু, তরমুজ আনারস এসব কেটে বিক্রি করছে। দুজায়গায় কুড়ি বাথ করে চল্লিশ বাথের তরমুজ আর বাতাবী লেবু নিলাম। ঢাকায় এই লেবু ৩০০ টাকা কেজি। কুড়ি বাথে অন্তত ২৫০ গ্রাম লেবু পেয়েছি। খুব সুস্বাদু । তবে এই রোডে রাত সাড়ে নটাতেই বেশির ভাগ দোকান বন্ধ দেখলাম।

হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম খাও সান রোড এলাকায় । অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় আলোকসজ্জা সম্পন্ন একটা রোড। হরেক রকম দোকানে সাজানো । এই রোড গভীর রাত পর্যন্ত বা বলা চলে প্রায় ভোর পর্যন্ত জেগে থাকে । রোডের এ মাথা থেকে ও মাথা সারা বছরই খুব ভিড়। আগস্ট মাস ট্যুরিস্টদের অফ সিজন তারপরেও যত ভিড়, নভেম্বরে এখানে কিরকম হবে কল্পনা করতে পারছিনা। গায়ে গায়ে ধাক্কা খেতে খেতে এগোতে লাগলাম। বিভিন্ন দোকান থেকে লিফলেট হাতে কর্মচারিরা বের হয়ে এসেছে। বারের জন্য মাত্র ৩০০ বাথ এন্ট্রি ফি। কমেডি শো থাকবে। সাথে একটা ড্রিঙ্ক ফ্রি। বিভিন্ন মাসাজ সেলুন থেকে দোকানের কর্মচারীরা হাতে ব্যানার নিয়ে বের হয়ে এসেছে। ব্যানারে লেখা কোন মাসাজ এর রেট কত। সবার গায়ে দোকানের ইউনিফর্ম। মেরুন, হালকা আকাশী এবং সোনালি রঙের ইউনিফরম বেশি।

রাস্তার দুধারের ভ্যানে অসংখ্য খাবার দোকানে শুয়োর মুরগির মাংস সহ বিভিন্ন নুডুলস ইত্যাদি ভাজা বিক্রি হচ্ছে। এর বাহিরে রয়েছে বিভিন্ন রকম পরোটা। অসংখ্য ফলের দোকান। ফলের সাথে রয়েছে বিভিন্ন রকমের জুস। এক গ্লাস জুস খেয়ে নিলাম ৪০ বাথে। সারাদিন ভাত খাওয়া হয়নি । সকালের হালাল হোটেলটাতে ভাতের ব্যবস্থা ছিল। ওই দিকে হাঁটা দিলাম, শুকনো ভাতই খাবো। খাওসান রোডের শেষ মাথায় গিয়ে হাতের বাম দিকে টার্ন নিলেই দোকানটা। দোকানটা খোলা আছে, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার ভাত নেই , কোন খাবারই নেই।

তবে এখান থেকে প্রায় ২০ গজ দূরে ফুটপাতে কোনায়।অনেকগুলো দোকানে অনেক রকমের খাবার বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে একজন স্টিকি রাইস এবং আম বিক্রি করছেন। স্টিকি রাইস একটু আঠালো ভাত, দলা পাকিয়ে থাকে, রঙটা আমাদের ভাতের মতো সাদা না, ইরি চাল যেরকম হলুদাভ স্বচ্ছ সে রকম রঙ। ভিতরে কি না কি মিশানো আছে আমি জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইলেই বলল খাবার সম্পূর্ণ হালাল। সবজি বা ফল ছাড়া তার দোকানে আর কিছু নেই। মনে হলো মুসলমান। সামান্য খানিকটা ভাতের (চা চামুচের দু চামুচ) সঙ্গে অনেকখানি আম দিয়ে তার উপরে নারকেলের দুধ ঢেলে দিল। খুব সুস্বাদু। দাম ৬০ বাথ। পেট মোটেও ভরল না । আরো দুটো খাওয়া দরকার । কিন্তু পকেট এর কথা চিন্তা করে বাতিল।

ক্লান্তি এবং ব্যথায় শরীর ভেঙে আসছে। সারা গায়ে ব্যথা। ফুটপাথের খাবার দোকানের পাশে দেখি একটা দোকান, লেখা আছে সেভেন ইলেভেন- 7-11 । এটি থাইল্যান্ডের বিখ্যাত চেইন স্টোর। ট্যুরিস্টরা হোটেল বুকিং দেওয়ার সময় খোঁজে আশেপাশে আছে সেভেন ইলেভেন আছে কিনা। ভিতরে ঢুকে কিছু চিনা বাদাম, পানির বোতল আর 250ml কলার ফ্লেভার যুক্ত দুধ নিলাম। এবং খুঁজে বের করলাম টাইগার বাম। দুধের দাম ২৭ বাথ। পানির দাম হাফ লিটার ব্রান্ড ভেদে ৭ থেকে ১০ বাথ। ২ লিটারের দাম ১৫ বাথ থেকে শুরু । সেভেন ইলেভেন এর নিজেদের ব্র্যান্ডেড পানির দাম তুলনামুলক কিছুটা কম (পরে দেখেছি টেসকো কোম্পানির পানি বোতল প্রতি সেভেন ইলেভেনের পানির চেয়ে এক বাথ কম)। পিনাট এর দাম ভুলে গেছি, তবে ক্যাশু নাট দেখেছি, ছোট একটা প্যাকেট কুড়ি বাথ । টাইগার বাম এর দাম নিলো ৮৯ বাথ --প্রায় ৩ ডলারের মত, বাংলাদেশের টাকায় এটা হবে আড়াইশো টাকা।

হোটেলে মোবাইল চার্জে দিলাম। এদের এখানে লন্ড্রি সার্ভিস ফ্রি , তবে ডিটারজেন্ট নিজের। গায়ের জামাটা বেশ নোংরা হয়ে গেছে। ডিটারজেন্টের মিনিপ্যাক এখানে পাওয়া যাবে না। কাজেই বাথরুমের শাওয়ার জেল থেকে খানিকটা জেল নিয়ে ওয়াশিং মেশিনে জামা ঢুকিয়ে দিলাম। লন্ড্রী রুমে কাপড় নেড়ে দেওয়া তার দেওয়া আছে। চানফান সেরে এসে দেখি কাপড় ধোয়া হয়ে গেছে। কাপড় তারে শুকাতে দিয়ে হোটেল রেকি করতে বের হলাম।


হোটেল


তিনটা ফ্লোর। অনেক রুম। প্রতি ফ্লোরে টয়লেট- ছেলেদের আর মেয়েদেরটা আলাদা। কয়েকটা রুম মিক্সড, কয়েকটা শুধু ছেলেদের, কয়েকটা শুধু মেয়েদের (আমারটা ছেলেদের ছিল)। কমন এরিয়ায় বড় স্ক্রিনের টিভি, তবে কেউ দেখছে না। একটা মেয়ে টিভির সোফায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে, নিজের রুমে কি সমস্যা বুঝলাম না। একটা প্রায় বাচ্চা মেয়ে ইন্টারনেট থেকে গিটার বাজানো শিখছে। আরেকটা ছেলে তাই দেখে সাহায্য করতে আসলো। কিন্তু ছেলেটার চেয়ে মেয়েটাই বেশি জানে মনে হলো। দুজনেরই চেহারা চাইনিজ, কিন্তু ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলছে। আমার কাছএ থাই-জাপানি-কোরিয়ান-ভিয়েতনামি-কম্বিডিয়ান-লাও সব চাইনিজ মনে হয়।



বিছানায় এশার নামাজের পর সারা গায়ে টাইগার বাম মেখে শুয়ে পড়লাম। ৮৯ বাথে দেশে দশটা জামবাক কিনতে পারতাম X(( । আপনারা ব্যাকপ্যাকিঙে গেলে জামবাক নিতে ভুলবেন না।

কাল যাবো কাঞ্চনবুড়ির দেশে।

তৃতীয় পর্বের লিঙ্কঃ কিরপিনের থাইল্যান্ড ভ্রমন (তৃতীয় পর্ব)



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৫
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×