somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেপাল ভ্রমন ১৯ তম পর্বঃ দার্জিলিং এর টাইগার হিল

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পূর্ব প্রকাশের পরঃ


“এই ওঠো ওঠো গাড়ী আসছে।” রাজু বা রিয়াজ কেউ হয়তো আমাকে ডাকছে। কিন্তু আমি তখন স্বপ্নে বিভোর। দেখছি একটা ঝর্ণার নিচে দাড়িয়ে আছি। আমার হাত ধরে আছে একজন সুন্দরী মেয়ে। অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটা। কিন্তু আমি যখন ঝর্ণার দিকে তখন মেয়েটাকে মলিন মনে হয়, মনে হয় এই সুন্দরী মেয়েটার চেয়ে ঝর্ণাই বেশি সুন্দর। আবার যখন মেয়েটার দিকে তাকাই মনে হয় আসলে ঝর্ণা নয় মেয়েটাই বেশী সুন্দরী। আমি তখন মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করি, বলোতো, তুমি বেশী সুন্দর না ঐ ঝর্ণা ধারা বেশি সুন্দর। মেয়েটি উত্তর দিল, ঐ ঝর্নাই বেশি সুন্দর। তখন আমারও তাই মনে হলো। আমাদের চারিদিকে পাহাড়, আমরা দাড়িয়ে আছি পাহাড়ের নিচের গভীর তলদেশে পাহারের উচু শৃঙ্গ থেকে চৌদ্দ হাজার ফিট নিচে। এই ঝর্ণা ধারায় পানি ঝরঝর করে পরছে সেই চৌদ্দ হাজার ফিট উপরের থেকে। আমাদের পাশ দিয়ে বয়ে যায় ঝর্ণার পানি। আমরা দু’জন আমি আর সেই সুন্দরী মেয়েটি দাড়িয়ে আছি একটা পাথরের উপরে । পাহাড়ের সৌন্দর্যে, ঝর্নাধারার সৌন্দর্যে বিমোহিত আমরা লাফিয়ে লাফিয়ে এপাথর থেকে ও পাথরে ছুটতে ছুটতে একেবারে ঝর্নাধারার নিচে চলে আসি। আমরা দু’জনেই একত্রে ঝর্নার পানিতে গোছল করি। একজন আরেকজনের দিকে ঝর্ণার পানি ছিটাতে ছিটাতে হঠাৎ মেয়েটিকে আর দেখিনা। আমার একা হয়ে যাওয়া যেন খুবই অস্বস্থির। এদিক সেদিক তাকিয়ে আমি মেয়েটিকে খুজতে থাকি। না আর দেখিনা তাকে। তখন কে যেন আমায় ডাকে, এই ওঠো ওঠো গাড়ী আসেছে। আমার যে গাড়ীর খোজ নেয়ার সময় নেই। আমি খুজতে থাকি মেয়েটিকে। তবুও কে যেন হাত ধরে টানতে থাকে, এই ওঠো তারাতারি, একদম সময় নেই। জলদি ওঠো নইলে আজকে আর সূর্যদয় দেখা সম্ভব হবেনা। অনেক জোরে কে যেন আমার হাত ধরে হেচকা টান মারে। কোথায় কি? কোন ঝর্ণা ধারা নয় কোন সুন্দরী মেয়ে নয় রিয়াজ আমাকে ধমকাতে থাকে আরও দেরি হলে আজ আর সূর্যদ্বয় দেখা হবেনা। নিজেকে স্বপ্নের বাইওে আনতে পারিনি তখনও। কম্বলের নিচে বসে বসে ভাবতে থাকি স্বপ্নের এতো সূন্দর দৃশ্যপট বাস্তব জীবনের কোথায়ও দেখা সম্ভব কিনা।

Click This Link অবশেষে বাস্তবে ফিরে এলাম। আমি তখনও দার্জিলিং এর হোটেল রুমে কম্বলের নিচে। রিয়াজ ও রাজু দু’জনেই তাগাদা দিচ্ছে তারাতারি করার জন্য। পাশের রুম থেকে ছিদ্দিকরাও বারবার ইন্টারকমে রিং করে করে তাগাদা দিচ্ছিল। আমি কোন মতে ফ্রেস হয়ে ঝটপট গতকালে বাবার জন্য কেনা চাদরটি গায় দিয়ে ওদের সাথে বেড়িয়ে পড়লাম। আমরা প্রথমেই যাব টাইগার হিলের সূর্যদ্বয় দেখতে।

আমাদের জন্য একটা মাইক্রোবাস এসেছে। একেবারেই নতুন ঝকঝক করছে। দুপুর পর্যন্ত সাইট সিয়িংয়ের জন্য ভাড়া ২০০০/= রুপি। মাইক্রোবাসটি কোন ব্রান্ডের ঠিক মনে নেই। তবে তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমি যদি কখনো গাড়ী কিনি তাহলে এমনটাই কিনবো। ড্রাইভারকে বললাম, চমৎকার গাড়ী ভাই। নিজের? সে মাথা নাড়ালো নিজের নয়। বলল, আমারই এক আত্মিয়ের গাড়ী। আমিই দায়িত্ব নিয়ে কিনেছি। এরকম নতুন গাড়ী ছাড়া এই পাহাড়ে চলা যায়না। আমরা সবাই গাড়ীতে উঠে বসতেই ড্রাইভার টাইগার হিলের দিকে ছুটতে লাগলো। ড্রাইভার একজন চমৎকার গাইড হিসেবে যাওয়ার পথে নানান জিনিসের বর্ননা আমাদের মুগ্ধ করে ছাড়লো।

প্রথমেই আমরা পৌছে গেলাম টাইগার হিলের সর্বোচ্ছ শৃঙ্গে আমরা সূর্যদ্বয় দেখার জন্য এখানকার দোতলা একটি ভবনের ছাদে চলে এলাম। শত শত দর্শনার্থীর মধ্যে আমরা কয়েকজন মিলে একবারে সামনের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি। সামনে মেঘের জন্য আমরা আসলে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। তবুও দাড়িয়ে আছি সূর্যদ্বয় দেখবো বলে। রাজু আমাদের বারবার আ
আশ্বস্ত করছে যে এমনটিই বেশির ভাগ সময় ঘটে। যার ভাগ্যে সূর্যদ্বয় থাকে সেই শুধু এই সূর্যদ্বয় দেখতে পায় ধরে নাও আমাদের ভাগ্যে সূর্যদ্বয় নেই। আমি জোড় গলায় গান শুরু করে দিলাম, সূর্যদ্বয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ প্রিয় জন্ম ভূমি। রিয়াজ মাঝে মাঝে আমার সাথে গান গাইছে। ছিদ্দিক একটু সুর ধরছে তো আমার থামছে। একটা গান শেষ হতেই আরেকটা গান শুরুর জন্য অনুরোদ আসছে। তাই সূর্যদ্বয়ের দেখা না পেলেও গান একটার পর একটা আমাদের চলতেই ছিল। আমরা গাইলাম, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভাল বাসি। চিরদিন তোমার আকাশ ... ... এইবার আমোদের সাথে অনেকেই কণ্ঠ মিলালো। এখানকার অনেক পর্যটকই বাংলাদেশের ছিল। আমার অন্তরের ভিতর থেকে বাংলাদেশের জন্য কেঁদে উঠলো। এরপর গান গাইলাম, মাগো ভাবনা কেন? গাইলাম, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, বন্ধুয়া রে করো তোমার মনে যাহা লয়। আমি গান গাইছি আর মাঝে মাঝে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে আমার পাশেই। খুব মনোযোগ দিয়ে আমার গান শুনছে। সাথে তার স্বামী। নব দম্পতি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তার স্বামী অন্যত্র যেতে বলছে, কিন্তু সে হাত ঝাড়া দিয়ে তাকে এখানেই দাড়িয়ে থাকতে বলছে। সম্ভবত বাংলাদেশ থেকেই এসেছে। আমি গাইলাম, আমি কেমন করে পত্র লিখি গো... আমার পোখারার স্বরস্বতির কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটা যথেষ্ট ভালোবেসে ফেলেছিল আমাকে। আর কি কোন দিন তার সাথে দেখা হবে? কিংবা কোন ধরনের যোগাযোগ? না তা হবার নয়। তোমার আমি হলেম অচেনা।

না সূর্যমামা এর মধ্যে ঠিকই উঠে গেছেন। কিন্তু তা আমাদের অজান্তে আমরা তাকে দেখিনি, দেখছিনা। আমরা দেখছি মেঘ, কুয়াশার মতো ঝাল পেতে ঢেকে রেখেছে আমাদের কাংখিত সূর্যদ্বয় দেখাকে। আমাদের গাড়ীর ড্রাইভার এসে সুধালেন, আর দাড়িয়ে লাভ নেই। যদি সম্ভব হয় আগামীকাল আবার আসতে হবে। এখন চলেন। আমরা দশজনের পাঁচ সাতজন মাত্র গাড়ীতে উঠেছি। অন্যদের ডাকাডাকি করছি এই সময় সেই নবদম্পতি জুটি এলো। ছেলেটি বলল, আমরাকি আপনাদের সাথে যেতে পারি? রাজু বলল, আমরা দশজনই আছি দশজনের বেশি গাড়ীতে বসার সিট হবেনা। না হয় অবশ্যই আপনাদের নিতাম। আপনারাতো মনে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। তাইনা? ছেলেটি বলল, জি বাংলাদেশ থেকেই এসেছি। মেয়েটিকে দেখিয়ে বলল, ওর ইচ্ছে ছিল আপনাদের সাথে আজকে সাইট সিয়িং করবে। তাই এসেছিলাম। এই সময়ের মধ্যেই আমাদের সবাই চলে এল। আমরা নবদম্পতিকে বাইবাই জানিয়ে চলে এলাম।

এরপরই আমরা চলে এলাম এখানকার একটা বৌদ্ধ মন্দিরে। এখানকার বৌদ্ধ মূর্তি দেখে আবার ছুটে চলা। গাড়ী ছুটে চলে এলো পাহাড়ের ঢালে চাবাগানে। আমরা চা বাগান ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। এখনকার উপজাতীয় চেহারার বা নেপালী চেহারার মহিলারা চা পাতা তুলছে আমরা তা দেখছি আর ছবি তুলছি। চা বাগানটার পাশেই একটা মার্কেটের মতো। এখানের বেশির ভাগ দোকানই দার্জিলিং এর বিখ্যাত চায়ের বিভিন্ন ধরণের পাতা বিক্রি করছে। আমরা সেখান থেকে চাপাতি কিনলাম। দোকানে তৈরি চা খেলাম। চা কিভাবে রান্না করতে হবে যেনে নিলাম।

এর পরের সাইট সিয়িং একটু নাকি ভয়ংকর। রাজু সবাইকে আগে আগেই জানিয়ে রাখলো।

চলবে .. .. .. ..

নেপাল ভ্রমন ১৮ পর্ব

নেপাল ভ্রমন ১৬ তম পর্বঃ দার্জিলিং - ২ :: নেপাল ভ্রমন ১৫ তম পর্বঃ দার্জিলিং :: নেপাল ভ্রমন : চতুর্দশ পর্ব :: নেপাল ভ্রমন : ত্রয়োদশ পর্ব :: দ্বাদশ পর্ব :: প্রথম পর্ব ::দ্বিতীয় পর্ব :: তৃতীয় পর্ব :: চতুর্থ পর্ব :: পঞ্চম পর্ব :: ষষ্ট পর্ব :: সপ্তম পর্ব :: অষ্টম পর্ব :: নবম পর্ব :: দশম পর্ব :: একাদশ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×