somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেনমার্ক গ্রীনকার্ডঃ ১১১ দিনের পরবাস, স্বপ্নের সলিল সমাধি, অতঃপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন-৫

১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাড়ি পাতিলের আওয়াজে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখি আমার সামনে একজন লোক দাঁড়ানো। জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি দেবু ভাই নাকি আসিফ ভাই? উত্তরে বললেন “আমি দেবু”। তার পর কুশলাদি বিনিময় করে জিজ্ঞেস করলেন আমি কিছু খেয়েছি কিনা। আমি বললাম এসেই ঘুমিয়ে পরেছি। তিনি তাড়াতাড়ি আমাকে রুটি বের করে দিলেন খাবার জন্য। অফিস থেকে এসে রান্না শুরু করে দিয়েছেন দেবু ভাই। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর আসিফ ভাই চলে আসলেন। আসিফ ভাই ইউক্রেনের খারকভ এ লেখা পড়া করেছেন। আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন খারকভ এ ছিলেন, তাদের একজন কে আবার আসিফ ভাই চিনেন। এইসব নিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় খাবার নিয়ে আসা হল। মুরগির মাংস আর ডাল। খুব টেস্টি। খেতে খেতে একসময় আমি জিজ্ঞেস করলাম খাবার কিভাবে খাব, একসাথে নাকি আলাদা আলাদা। দেবু ভাই বললেন তারা রেগুলার ব্যায়াম করেন তাই তাদের অনেক বেশি এবং ব্যয়বহুল খাবার খেতে হয়। আমি তাদের সাথে খেয়ে পোষাতে পারব না। তাই আমি যেন আলাদা খাই। শুরুতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বিদেশের মাটি, নতুন এসেছি, একসাথে থাকলে একসাথেই সবাই রান্না করে খায়, এমনটাই জেনে এসেছি, করে এসেছি। কিন্তু এইখানে দেখি ভিন্ন রকম। জাই হোক কি আর করা, আমি তাদের কে বললাম আমাকে ৩ দিন আপনাদের সাথে খেতে দিন, আমি একটু পথ ঘাট চিনে নিজেই রান্না করে খাব। তারা রাজি হলেন। খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ টিভি দেখে ঘুমাতে গেলাম। আসিফ ভাই এর রুমে নিচে বিছানা করে থাকতে হবে আমাকে। আমি সেখানে গিয়ে বিছানা ঠিক করে ঘুমিয়ে পরলাম।

পরদিন দুপুরে ঘুম ভাঙল। গোসল করতে গিয়ে হল এক নতুন অভিজ্ঞতা। কিচেন এর মধ্যে মাত্র ৬ বর্গ ফুটের একটা গোসলখানা, এইখানে গোসল করতে হল, প্রথম দিন, তাই বাহিরে অনেক পানি চলে এসেছিল। গোসল শেষে দেখি দেবু ভাই খাবার তৈরি করে রেখেছেন। খাবার শেষ করে আজিজ ভাইকে কল দিলাম। আজিজ ভাই এর সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল। আজিজ ভাই এখন কাজে আছে। আমাকে একটা ঠিকানা দিলেন আর বলে দিলেন কিভাবে আসতে হবে।



আমার বাসার কোনায় একটা বাস স্টপেজ আছে, নাম Borups Plads. সেখানে একটা রোড গেছে Norrebro এর দিকে, আরেকটা রোড গেছে যার নাম Borups Alle। আমি Borups Alle তে যে স্টপেজ আছে সেখানে এসে বাসে উঠলাম। ২য় স্টপেজে নেমে আরেকটি বাসে চলে কোন রকমের সমস্যা ছাড়াই চলে গেলাম আজিজ ভাই এর কর্মস্থল Valby Rail Station এর কাছে valby langgade-এ।



দরজা জানালা সব লাগানো, তাই দোকানের ভীতরে ঢুকতে একটু ভয় করতেছিল। আমি বাহির থেকে কল দিলাম। আজিজ ভাই দোকানের বাহিরে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। ডেনমার্ক এর যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত যে, আপনি যদি অতি বোকা না হন, কোনদিন কোন ঠিকানা বের করতে আপনার কষ্ট হবে না। এখানে বাস, ট্রেনগুলো এত সময় মেনে চলে যে http://www.rejseplanen.dk এই ওয়েবসাইটে যদি আপনি কোথায় আছেন আর কোথায় যাবেন এবং কয়টার সময় যাত্রা শুরু করবেন এই তথ্য দিয়ে দেন, আপনাকে একদম সঠিক রুট বলে দিবে, ম্যাপ সহ এবং কোন রুটে কতক্ষণ সময় লাগবে তাও বলে দিবে। আপনার ১ মিনিট সময়ও বেশি-কম লাগবেনা। আজিজ ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন এগুলো হল ক্যাসিনো, এই দোকানগুলোকে Spillhall বলে।



এইখানে মেশিনে টাকা ঢুকাইলে যদি জ্যাকপট চলে আসে তাহলে অনেক টাকা পাওয়া যায়। যদি না আসে তাহলে পুরো টাকাই মার। বাহিরে আবার লেখা আছে এই ম্যাশিনে সর্বচ্চো ৮৭% টাকা রিটার্ন পাওয়া যাইবে। এইটা একটা জুয়া কিন্তু কিছুটা লটারির মত, মনে মনে ভাবলাম শালারা কি গর্দভ। নিজের পকেটের টাকা এইভাবে কেউ অন্যকে দিয়ে যায়।



যাইহোক, আজিজ ভাই এর সাথে অনেক কথা হল। মনে হল খুব হতাশ। দেশে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স শেষ করে একটা বড় আই-এস-পি তে ভাল পজিশনে জব করতেন। এইখানে ৮ মাস যাবত এসেছেন, কিন্তু সেই শুরু থেকে এখনও এই জুয়ার দোকানে জব করেন। ডেনমার্কের আইন অনুযায়ী ১১০ ক্রনার এর নিচে কোন জব নাই। কিন্তু এইসব ক্যাসিনোর বেশিরভাগ মালিক পাকিস্থানি। তারা মাত্র ২৫ ক্রনারে বিপদে পড়া লোকজনকে দিয়ে কাজ করায়। অনেক হতাশার কথা আজিজ ভাই আমাকে বললেন, আমি তাকে উৎসাহ দিলাম, দুইজনে মিলে আমরা চেষ্টা করব, একটা ভাল কিছু নিশ্চয়ই হয়ে যাবে। দোকানের মালিক চলে আসার সময় হয়েছে।মালিকের ২০+ ক্যাসিনো আছে। প্রতিদিন একবার করে প্রত্যেক কাসিনোতে যায় হিসেব নিতে। গিয়ে যদি কারো বন্ধু বান্ধব দেখে তাহলে খুব রাগ করে। তাই মালিক আসার আগেই কাস্টমারদের জন্য রাখা ফ্রী কফি-বিস্কুট খেয়ে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম বাসায়

চলবে....

ডেনমার্ক গ্রীনকার্ডঃ ১১১ দিনের পরবাস, স্বপ্নের সলিল সমাধি, অতঃপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন – ১

ডেনমার্ক গ্রীনকার্ডঃ ১১১ দিনের পরবাস, স্বপ্নের সলিল সমাধি, অতঃপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন – ২

ডেনমার্ক গ্রীনকার্ডঃ ১১১ দিনের পরবাস, স্বপ্নের সলিল সমাধি, অতঃপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন – ৩

ডেনমার্ক গ্রীনকার্ডঃ ১১১ দিনের পরবাস, স্বপ্নের সলিল সমাধি, অতঃপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন – ৪
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৫৬
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×