ঘোরাঘুরি যে কত ভালো লাগে তা আমারই জানা ছিলো না। ২০০৮ এর আগে কখনও তেমন ঘোরাঘুরি করার সুযোগ হয়নি। ২০০৮এ ঢাকায় আসলাম, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে! ঢাকায় তেমন কোন আত্মীয় স্বজন নাই। তাই বাবা-মাও আমার দায় আমাকে দিয়ে ছেড়ে দিলেন।
আর সুযোগ মত আমিও ঘোরাঘুরি করা শুরু করলাম। তবে বাবা-মায়ের টাকায় নয়। মূলত আমার লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ দিতেন আমার বড় ভাই। আমি ২০০১ সালের পর কখনও পরিবার থেকে হাত খরচের টাকা নেইনি। না, টিউশনি করে না; অন্য বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করতাম। এর মধ্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিলো অন্যতম উপায়।
যাই হোক, যেহেতু ভাইয়ের টাকায় থাকি-খাই, মনের মধ্যে একটা কষ্ট কাজ করতো। তাই তার টাকায় ঘোরাঘুরি শুরু করাটা নিতান্তই বেকুবের কাজ হবে। এজন্য নিজেই আবার টাকা ইনকামের ধান্ধায় নামলাম। প্রথম পদক্ষেপ, ডাটা এন্ট্রি। মোহাম্মদপুরের একটা অফিস থেকে কাগজ এনে এক্সেলে ডাটা এন্ট্রিই ছিলো মূল কাজ। টাইপিং স্পিড ও কম্পিউটারের নলেজের কারণে এ কাজে বেগ পোহাতে হলো না। সাথে নিলাম আরও গোটা ১০জনকে, যারা সবাই তাদের বাসা (মেস) এ থেকেই কাজ করতো।
মোটামুটি একটা ভালো ইনকামের পথ হয়ে গেলো। এর সাথে শুরু করলাম কম্পিউটার রিপেয়ারিং এর কাজ। আর সময় সুযোগ মত ওয়েব ডিজাইনের কাজও শিখতে লাগলাম। এখান থেকে যে টাকা আসতো, তা দিয়ে মাসে ২টা ট্যুর কোন ঘটনাই হতো না।
২০০৮ এর শেষ নাগাদ শুরু করলাম ঘোরাঘুরি। ৬৪ জেলা ঘোরার টার্গেট থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৫৪এ থেমে যেতে হয়েছে।
২০১৩এর কথা। একটা পত্রিকাতে রিপোর্টার হিসাবে কাজ করবার জন্য ইন্টারভিউ দিলাম। একই সময়ে অবশ্য আমার নিজের ডোমেইন-হোস্টিং-ওয়েব ডিজাইনের ব্যবসা চলছিলো। বাড়তি কিছু টাকার জন্যই মূলত পত্রিকাতে জয়েন করা।
ভেবেছিলাম ইন্টারভিউ দিয়ে যদি কাজটি পাইও, হয়ত কিছুদিন সময় লাগবে তাদের উত্তর জানতে। এজন্য যেদিন ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, তার ২দিন পরেই সিলেটে যাওয়ার একটা প্লান করে রেখেছিলাম।
ইন্টারভিউ শেষ হতেই পত্রিকার সম্পাদক আমাকে বললেন কোথাও যেওনা। ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে যাবে। ততসময় এখানেই থাকো। আর আগামীকাল দুপুর ২টায় অফিসে হাজির হয়ে যাবে!
আমি চোখের সামনে দেখতে পেলাম আমার ট্যুরের বারোটা বেজে গেছে! তাই উনাকে বললাম যে আমি ৮/৯দিন পর জয়েন করতে চাই। এবং সরাসরি কারণও বললাম। সম্পাদক সাহেব কোন কারণে আমার উপর সদয় হলেন। বললেন যে কদিন ঢাকায় আছো, কাজ করো, আমি তোমার এপয়েন্টমেন্ট লেটারে জয়েনিং ডেট আগামী মাসের ১তারিখ করে দিচ্ছি।
সো, ট্যুর ক্যান্সেল হলো না। বরং চোখ চকচক করে উঠলো যে এই ট্যুর নিয়েই হয়ত পত্রিকাতে কোনদিন একটা লেখা লিখতে পারবো।
ট্যুরের গল্প আগামী পর্বে, ইন শা আল্লাহ।
-------------------------------------------
বেশ আগে আমার ছোটবেলার ঘোরাঘুরি নিয়ে একটা ধারাবাহিক লেখা লিখেইছিলাম। সেগুলি চাইলে পড়তে পারেন।
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০১)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০২)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০৩)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০৪)
প্রাকৃতিক শান্তি! - আমার বেড়াতে যাওয়া (পর্ব ০৫)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১১