ঘোষণা : এই লেখাটিতে ২৮টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে ছবিগুলি লোড হতে কিছুটা সময় লাগবে।
কক্সবাজার ভ্রমণ ২০২০ এর যাত্রা শুরু ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২০ বাংলাদেশ বিমানের দুপুর ২টার ফ্লাইটে। ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ৪০ মিনিটে প্লেন থেকে পাখির চোখে দেখা অপরূপ দৃশ্যের স্বাদ নিতে নিতে আমরা ৪ জন পৌছে যাই কক্সবাজার এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে একটি ইজিবাইক ভাড়া করে চলে আসি কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টের কল্লোল হোটেলের রেস্টুরেন্ট কাশুন্দি-তে। এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে পাশেই হোটেল অভিসারে উঠে আসি। তারপর চলে যাই সাগর সৈকতে প্রথম দিনে সূর্যাস্ত দেখবো বলে। বিকেল আর সন্ধ্যেটা কাটে সাগর পারে ভাড়া করা বিচ চেয়ারে আয়েসী আলসেমীতে চারধার দেখতে দেখতে।
পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বরে সকালে নাস্তা সেরে চলে আসি সাগর পারে। শুরু হয় কক্সবাজার ভ্রমণ ২০২০ এর দ্বিতীয় দিনের সমূদ্র স্নান। অনেকটা সময় নিয়ে চলে সমূদ্র স্নান আর ছবি তোলা। সমূদ্র স্নান শেষে হোটেলে ফিরে দুপুরে লাঞ্চ শেষে আমরা বেড়াতে যাই রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডের রঙ্গীন মাছের দুনিয়ায়। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে নানান প্রজাতির মাছ দেখা শেষে সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যাই পুরনো বার্মীজ মার্কেটের পিছনে অবস্থিত আগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং দেখতে।
৩০ সেপ্টেম্বর সকালের নাস্তা সেরে বেরিয়ে পরি সারাদিনের জন্য বেড়াতে। সম্ভবতো ১,২০০ টাকায় একটি সিএনজি ভাড়া করি সারা দিনের জন্য। রুট প্লান হচ্ছে কক্সবাজার > রামু > ইনানী > কক্সবাজার।
প্রথমেই দেখে নেই অতি পুরনো কক্সবাজার বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ। সেখান থেকে চলে যাই রামুতে ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি দেখতে। বিশাল বুদ্ধমূর্তি দেখা শেষে সেখান থেকে আমরা রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারে কিছুটা সময় কাটিয়ে রওনা হয়ে যাই এবারের রামু সফরের শেষ দ্রষ্টব্য লামাছড়ার “রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার” এর উদ্দেশ্যে।
রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে ছোট কয়েকটি পাহাড় টিলার উপরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ বিহার। মৌর্য বংশের তৃতীয় সম্রাট, সম্রাট অশোক এটি স্থাপন করেছিলেন। অনেকে এটিকে রামকোট বৌদ্ধ বিহার নামে জানেন।
বনাশ্রমের প্রবেশদারে দুই পাশেই আছে বৌদ্ধদের কবরস্থান। সেখানে আছে সারি সারি অসংখ্য বুদ্ধ মূর্তি। আকারে এই মূর্তিগুলি খুব একটা বড় নয় অবশ্য। এই মূর্তি গুলি ছাড়াও দন্ডায়মান বেশ বড় আকারের অনেকগুলি বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে বনাশ্রমের নানান যায়গায়।
একটু এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে জগৎচন্দ্রের স্মৃতি মন্দির। তারপরেই সুয়ান জাং এর মূর্তি। তারপরেই আছে সম্রাট অশোকের মূর্তি। তার একটু সামনে থেকেই শুরু হয়েছে সিঁড়ি।
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে মূল আশ্রম প্রাঙ্গন। এখনেও নানান মূর্তি আছে চার ধারে। প্রথম গেটের কাছেই আছে সিংহ মূর্তি। আছে বিশাল একটি ঘন্টা। বিক্ষুদের ধ্যানের জন্য আছে বেশ কিছু কুটির। সেগুলি দেখতেও বেশ সুন্দর।
বৌদ্ধদের কোনো একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির জন্য মূল মন্দির ধোয়া-মোছার কাজ চলছিলো বলে ভিতরে তেমন কিছু দেখতে পারি নি আমরা।
এই টিলাটি থেকে পাশের টিলা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য আছে একটি সুন্দর সেতু। সেতু পার হয়ে হাতের ডানে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে পাশাপাশি একটি মন্দির ও বৌদ্ধ যাদি। তার পশ্চিম পাশ দিয়েই টিলা থেকে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি পথ। বড় একটি পুকুরের পাশ দিয়ে নেমে হেঁটে এগিয়ে যেতে হবে ফেরার পথে।
ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায় –
খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে প্রাচীন আরাকানের ধন্যবতী (ধাঁঈয়াওয়াদি) নগরের রাজা মহাচন্দ্র সুরিয়ার আমন্ত্রণে গৌতম বুদ্ধ তার শিষ্যদের নিয়ে তৎকালীন সমতটের চৈতগ্রামের (বর্তমান চট্টগ্রাম) উপর দিয়ে ধন্যবতী নগরে যাওয়ার পথে এই স্থানে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেছিলেন। তখন তার প্রধান সেবক আনন্দ স্থবিরকে উদ্দেশ্য করে ভবিষ্যত বাণী করে বলেন, “হে আনন্দ! পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব তীরে রম্যবতি (রম্মাওয়াদি) নগরের পর্বত শীর্ষে আমার বক্ষাস্থি স্থাপিত হবে, তখন এর নাম হবে রাং (বুদ্ধের বুকের অস্থি) কূট (স্থান)।
সম্রাট অশোক বুদ্ধের ৪৫ বছর ব্যাপী প্রচারিত ৮৪ হাজার ধর্মবাণীকে বুদ্ধ জ্ঞানের প্রতীকরূপে বুদ্ধের অস্থি সংযোজিত ৮৪ হাজারটি চৈত্য স্থাপন করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম রামুর এ চৈত্যটি। পরবর্তিতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০৮ অব্দে আরাকান রাজা চন্দ্রজ্যোতি (চেঁদি রাজা) কর্তৃক বুদ্ধের উক্ত বক্ষাস্থি সাদা পাথরের ৬ ফিট উঁচু বুদ্ধবিম্বের মাথায় সংযোজিত করে বুদ্ধবিম্বটি স্থাপন করেন। সময়ের বিবর্তনে রাংকূটের অস্তিত্ব বিলীন হল হয়ে যায়।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৩০ সালে জগৎচন্দ্র মহাথের নামে এক ব্রহ্মদেশীয় ভিক্ষু শ্রীলঙ্কায় অবস্থানকালে একখানি শিলালিপি উদ্ধার করেন। শিলালিপির তথ্যানুযায়ী অনুসন্ধান ও খননকার্যের ফলে এ বিহারটি আবিষ্কৃত হয়। সেই সঙ্গে আবিষ্কৃত হয় বৃহদাকার অভয়মুদ্রায় খচিত বুদ্ধমূর্তি। বর্তমানে মূর্তিটি বনাশ্রম বিহারে রক্ষিত আছে। বিহারের পূর্বদিকের পাহাড়ে একটি বৃহদাকার দালানের ধ্বংসাবশেষ আছে। এর চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বেলেপাথর নির্মিত ভাস্কর্যের ভগ্নাংশসমূহ।
তথ্য সূত্র : উইকি
এখান থেকে বেরিয়ে এবারের রামু ভ্রমণ শেষ করে সরাসরি চলে যাবো ইনানী সৈকতে।
ছবি তোলার স্থান : রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, রামু, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
GPS coordinates : 21°24'09.5"N 92°06'42.8"E
ছবি তোলার তারিখ : ৩০/০৯/২০২০ ইং
চলবে.....
=================================================================
মরুভূমির জলদস্যুর ভ্রমণ বিলাস
সিলেট ভ্রমণ : হযরত শাহজালাল ও শাহপরান দরগাহ, চাষনী পীরের মাজার, বিছনাকান্দি, লালাখাল, জাফলং, হরিপুর পরিত্যাক্ত গ্যাস ফিল্ড
শ্রীমঙ্গল : লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক,
খাগড়াছড়ি ভ্রমণ : আলুটিলা গুহা, রিছাং ঝর্ণা, শতবর্ষী বটগাছ, ঝুলন্ত সেতু, অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার
রাঙ্গামাটি ভ্রমণ : সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার
বান্দরবন ভ্রমণ : নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির
কক্সবাজার ভ্রমণ : রঙ্গীন মাছের দুনিয়া, আগ্গ মেধা ক্যাং, বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ, ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ
নারায়ণগঞ্জ : ১নং ঢাকেশ্বরী দেব মন্দির, টি হোসেন বাড়ি, কদম রসুল দরগাহ, সোনাকান্দা দূর্গ, হাজীগঞ্জ দূর্গ, বাবা সালেহ মসজিদ, বন্দর শাহী মসজিদ, সিরাজ শাহির আস্তানা, কুতুববাগ দরবার শরিফ, বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ী, পালপাড়া মঠ, বীরেন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি, মহজমপুর শাহী মসজিদ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৫৮