somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০১১ : কচ ও দেবযানীর প্রেম

১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কচ ও দেবযানী
ব্রহ্মার পুত্র দক্ষ প্রজাপ‌তি তাঁর পঞ্চাশ‌টি কন্যা‌কে পুত্র হিসেবেই দেখতেন।
বড় মেয়ে অ‌দি‌তি থে‌কে বংশানুক্র‌মে বিবস্বান (সূর্য), মনু, ইলা, পুরুরবা, আয়ু, নহুষ ও যযা‌তির জন্ম হয়। যযা‌তি দেবযানী ও শ‌র্মিষ্ঠা‌কে বিয়ে ক‌রে।

‌ত্রি‌লো‌কের ঐশ্ব‌র্যের জন্য যখন দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধ হয় তখন দেবতারা বৃহস্প‌তিকে এবং অসুরেরা শুক্রাচার্য‌কে পুরহিত হিসেবে বরণ ক‌রে নেয়।

দেবতারা যুদ্ধে যে সব অসুরদের হত্যা করতে শুক্র বিদ্যাব‌লে তা‌দের পুনর্জী‌বিত করে দিতো। বৃহস্প‌তির এই বিদ্যা জানা ছিলো না বলে দেবতাদের মৃত সৈন্য বাঁচাতে পার‌তো না। তাই দেবতারা বৃহস্প‌তির পুত্র কচ‌কে বল‌লো শু‌ক্রের প্রিয়কন্যা দেবযানীকে সন্তুষ্ট করে মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা অর্জন করতে।

কচ শু‌ক্রের কা‌ছে গি‌য়ে নিজের পরিচয় দিয়ে একহাজার বছরের জন্য শু‌ক্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলো। গুরু ও গুরুকন্যার সেবা করে কচ ব্রহ্মচার্য পালন কর‌তে লাগ‌লো। সুযোগ পেলেই কচ গান বাজনা করে, নেচে, নানার ধরনের ফুল উপহার দি‌য়ে প্রাপ্ত‌যৌবনা দেবযানী‌কে তুষ্ট কর‌তে লাগলো। সুগায়ক রূপবান কচকে দেবযানীও পছন্দ করতো, তাই নির্জন স্থা‌নে ক‌চের কা‌ছে গান গাই‌তেন এবং তাঁর প‌রিচর্যা কর‌তো।



পাঁচশো বছর পার হয়ে যাওয়ার পরে দানবরা ক‌চের আসল উদ্দেশ্য বুঝ‌তে পার‌লো। তাই এক‌দিন কচ যখন ব‌নে গরু চরা‌চ্ছি‌লো তখন অসুরেরা কচকে হত্যা করে তাঁর দেহ টুকর টুকর করে কুকুর‌কে খায়িয়ে দি‌লো। সন্ধ্যায় কচ ফি‌রে এলো না দে‌খে দেবযানীর সন্দেহ হলো অসুরেরা নিশ্চই কচকে হত্যা করেছে। দেবযানী তার বাবা শুক্রের কাছে গিয়ে জানালো কচকে সে ভালোবাসে, কাচকে ছাড়া সে বাঁচবে না।



শুক্র তখন সঞ্জীবনী বিদ্যা প্র‌য়োগ ক‌রে কচ‌কে আহ্বান কর‌লেন। কচ তখনই কুকুর‌দের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে এলো। তারপর আবার এক‌দিন দানবরা কচ‌কে হত্যা কর‌লো। এবারও শুক্র সঞ্জীবনী বিদ্যা প্র‌য়োগ ক‌রে কচ‌কে বাঁ‌চি‌য়ে দি‌লো।





তৃতীয় বা‌রে দানবরা কচ‌কে হত্যা করে আগুনে পুরিয়ে তাঁর দেহাবশেষ সুরার (মদ) স‌ঙ্গে মি‌শি‌য়ে শুক্র‌কে খায়িয়ে দিলো। কচ‌কে না দে‌খে দেবযানী আবার বাবার কাছে গিয়ে কান্না করতে শুরু করলো। তখন শুক্র মেয়ের ভালোবাসার খাতিরে করচে জীবিত করার জন্য সঞ্জীবনী বিদ্যা প্র‌য়োগ ক‌রে কচ‌কে ডাকলো।
গুরুর পেটের ভিতর থে‌কে কচা জানালো অসুররা তাকে আগুনে পুরিয়ে তাঁর দেহাবশেষ সুরার (মদ) সাথে মি‌শি‌য়ে শুক্রকে খাই‌য়ে‌ছে।

তখন শুক্র দেবযানী‌কে বল‌লো- আমার পেট ছিন্নভিন্ন না করে কচ বের হতে পারবে না। আমি না মরলে কচ বাঁচবে না। এবার বলো তুমি কাকে বেশী ভালোবাসো? কাকে তুমি চাও?

দেবযানী বল‌লো- আপনার মৃত্যু হলে আ‌মি বাঁচব না।
তখন শুক্র বল‌লো- বৃহস্প‌তির পুত্র কচ, দেবযানী তোমা‌কে ভালোবাসে। য‌দি তু‌মি আমার সঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ করো। তু‌মি পুত্ররূ‌পে আমার উদর থে‌কে বের হয়ে সঞ্জীবনী বিদ্যা বলে আমা‌কে বাঁ‌চি‌য়ে দিও।




এবার শু‌ক্রের পেট ফুরে কচ বে‌রি‌য়ে এ‌লো এবং সঞ্জীবনী বিদ্যার দ্বারা শুক্রকে পুনর্জী‌বিত করলো।

দেখতে দেখতে হাজার বছর পার হেলে কচ ফি‌রে যাবার জন্য প্রস্তুত হ‌লো।
দেবযানী কচকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে কচকে বিয়ে করতে চাইলো।




কচ দেবযানীকে গুরুর মেয়ে বলে পূজনীয় মনে করে। তাই দেবযানীকে বিয়ে করার প্রস্তাব সে ফিরিয়ে দিলো। কচ আরো বললো যেহেতু দেবযানীর পিতা শুক্রের পেটে কচ নিজেও ছিলেন সেই হিসেবে দেবযানী কচের বোন হয়।

‌এবার দেবযানী রেগে গিয়ে কচ কে অভিশাপ দিলো দেবযানীকে বিয়ে না করলে কচের সঞ্জীবনী বিদ্যা ফলবতী হ‌বে না।
কচ দেবযানীকে বললো- "তু‌মি আমার গুরুর মেয়ে, গুরুও বিয়ের সম্ম‌তি দেন নি, সেজন্য আমি তোমার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কর‌ছি। তু‌মি কা‌মের ব‌শবতী হয়ে আমা‌কে অ‌ভিশাপ দি‌লে। তু‌মি ব‌লেছ, আমার বিদ্যা নিস্ফল হ‌বে; তাই হক। আ‌মি যা‌কে শেখাব তার বিদ্যা ফলবতী হ‌বে। "
এই কথা বলে কচ ইন্দ্র‌লো‌কে চলে গেলো।




====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।


====================================================================

সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০

====================================================================
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:০৪
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×