somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা - কীভাবে লিখবেন স্টেটমেন্ট অফ পারপাস

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্টেটমেন্ট অফ পারপাস -- এ এমন এক রচনা, যার উপরে উচ্চতর পর্যায়ে ভর্তির অনেক কিছুই নির্ভর করছে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ম হলো, মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে পড়ার আবেদন করার সময়ে নিজের উপরে একটা রচনা লিখতে হয়। এতে বলতে হয় নিজের সম্পর্কে, কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বা এই বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, এসব কিছু।

সমস্যা হলো, স্কুল কলেজ থেকেই আমরা "নতুন বাংলা রচনা" ধাঁচের লেখা মুখস্ত করে চলি, কাজেই নিজে থেকে রচনা লেখার অভ্যাসটা অনেকেরই থাকে না। কিন্তু ভর্তির আবেদনের এই স্টেটমেন্টটা অবশ্যই লিখতে হবে নিজেকে, একেবারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। তাই এখানে তুলে ধরছি এই গুরুত্বপূর্ণ রচনাটি লেখার জন্য কিছু পরামর্শ।

কোরো নাকো কপিপেস্ট

বছর সাতেক আগে যখন ভর্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখন দেখতাম, বুয়েটে আমার সহপাঠী কিংবা সিনিয়র ভাইদের কম্পিউটারে বিভিন্ন ততোধিক সিনিয়র ভাইদের স্টেটমেন্টের কপি ("চোথা") থাকতো। সময় বাঁচাতে অনেকেই আরেকজনের স্টেটমেন্ট এদিক সেদিক করে চালিয়ে দিতো। কিন্তু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির লোকজন এতো গাব নয় মোটেও। বছরের পর বছর ধরে একই লেখা দেখতে দেখতে তারাও বিরক্ত, কাজেই এরকম রিসাইকেল করা লেখা পেলে সেটার ফল কী হয়, বলাই বাহুল্য।

কাজেই স্টেটমেন্ট লেখার জন্য প্রথম পরামর্শ হলো, অন্য কারো নমুনাকে এদিক সেদিক করে চালাবার কাজটা কখনোই করবেন না। নিজে লিখুন।

বিরত থাকুন GRE-বিদ্যা জাহির করা থেকে

স্টেটমেন্ট লেখার সময় আরেকটা ভুল হলো, বিশাল বড় বড় সব বাক্য, আর জিআরইতে সদ্য শেখা জটিল সব শব্দের ব্যবহার। একটা ধাক্কা যুক্তরাষ্ট্রে এসে সবাই খায়, তা হলো, আমাদের দেশে শেখা "ভালো ইংরেজি" এখানে অনেকটা অচল। আমরা বিশাল বিশাল, একাধিক বাক্যাংশের যে রীতিতে বাক্য লিখতে শিখি, মার্কিনীরা তা মোটেও পছন্দ করে না। কাজেই এক বাক্য এক লাইনের বেশি গেলেই ওদের পড়তে/বুঝতে সমস্যা হয়, খেই রাখতে পারে না। কাজেই বাক্য যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখতে হবে, আর একাধিক বাক্যাংশের জটিল বাক্যগঠনের অভ্যাস বাদ দিতে হবে। শব্দ চয়নের ক্ষেত্রেও তাই। জিআরই-এর জন্য যেসব শব্দ শেখা হয়, ওগুলো বাস্তব জীবনে কেউ ব্যবহার করে কি না সন্দেহ, তাই নিজের বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে ওসব শব্দ ব্যবহার করলে পাঠক চরম বিরক্ত হবে নিঃসন্দেহে।

তাহলে কী লিখবেন?

স্টেটমেন্টে তাই লিখুন নিজের কথা। কেনো পড়তে আগ্রহী হলেন আপনার বিষয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে কোন কোর্স কেনো ভালো লাগলো, কীরকম কাজ করেছেন তা গল্পের ভাষায় (সিভিতে কোর্সের বিশাল বৃত্তান্ত আছেই, কাজেই এখানে গল্পাকারে লিখতে হবে)। কেনো উচ্চতর শিক্ষা চান (চাপা না মেরে লিখুন), কেনো বেছে নিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়। আসলে, এটা লেখার সময়ে ধরে নিন, আপনার সামনে বসে আছে ভর্তি কমিটি, তাদের পটিয়ে ভর্তি হতে হবে, কাজেই নিজেকে যথাযোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করতে মাত্র ৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পাবেন। সেই সময়ে কী বলবেন, তাই লিখতে হবে আপনার স্টেটমেন্টে।

লিখুন সময় নিয়ে

স্টেটমেন্টটা কিন্তু হুট করে লিখে ফেলার কিছু না। এটা লেখার জন্য ২/৩ সপ্তাহ সময় নিন। একবার লিখুন, তার পর কয়েকদিন পরে পড়ে দেখুন পাঠকের দৃষ্টিতে, কী লিখেছেন। দরকার হলে বন্ধু বা সিনিয়র কাউকে দেখান। যারা ইতিমধ্যেই উচ্চতর পর্যায়ে আছেন, তাদের বলুন একটু দেখে দিতে। বানান শুদ্ধ রাখুন। বানান বা ব্যকরণ ভুল হলে কিন্তু সুন্দর করে লেখা একটি স্টেটমেন্টও কাজ দেবে না। স্পেল চেকারের উপরে ভরসা করবেন না, স্টেটমেন্ট লিখে প্রিন্ট করে তার পর কাগজটা লাইন বাই লাইন পড়ে দেখুন ঠিক আছে কি না।

ফরম্যাটিং

আর স্টেটমেন্ট দেখতে কেমন, তাও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ফন্ট খুব বেশি ছোট ব্যবহার করবেন না। ১১ বা ১২ হলে ভালো। অনেক প্রফেসরের বয়সই কিন্তু ৪০ এর উপরে, আর চশমার কারণে তারা ১০ ফন্টের লেখা পড়তে পারেন না বা অনেক কষ্ট করে পড়েন। টেক্সট লেফট জাস্টিফাইড, আর স্পেসিং সিঙ্গল বা ১.৫ স্পেসিং দিলে ভালো। ৫/৬ প্যারার বেশি না লেখাই ভালো। সব মিলিয়ে দেড়পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করা উচিৎ। এর বেশি আসলে কেউ পড়ার ধৈর্য্য রাখতে পারেনা।

---

স্টেটমেন্ট অফ পারপাস ভর্তির একটি গুরুতপূর্ণ নিয়ামক। কাজেই সময় নিয়ে, চিন্তা ভাবনা করে, তবেই লিখুন।

---

বুয়েটে আমার পরের ব্যাচের ছাত্র হেলালী মর্তুজা (এখন মাইক্রোসফটে আছেন) একটা চমৎকার পরামর্শ নিবন্ধ লিখেছেন এই ব্যাপারে, এটা পড়ে দেখতে পারেন

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ২:০০
৫৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×