১.
ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪) হিন্দুত্ববাদী কবি ও সাহিত্যিকদের অনুসরণে তাদের বিপরীতে গিয়া বাঙালীদের মধ্যে মুসলিম আইডেনটিটি নির্মাণ বা বলা ভালো আরবি ফারশি শব্দ ও ধারণা প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে অনেক কবিতা লিখছেন।
যেইটা বাংলাদেশে মূলত ইউটোপিয়া বা সমাজবিচ্ছিন্ন আদর্শের কাব্যিক চর্চা। ইন্ডিয়ায় তা নয়।
যারা ফররুখ আহমদের এই কাব্য ও রাজনীতির বিরোধী তারা তাকে চুয়াত্তরে বা তার আগে তার বিপদের কালে কেন হেল্প করলেন না এই রকম একটা আহাজারি লক্ষ্য করা যায়।
আমার প্রশ্ন, চুয়াত্তরে মুসলিম রাজনীতির যারা লোক ছিলেন, যথা জামাতে ইসলাম বা অন্য ইসলামিক আদর্শের রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান তারা কেন তাকে তার অভাব বা দুর্যোগের কালে সাহায্য সহযোগিতা করলেন না?
২.
ফররুখ আহমদের বুদ্ধিদীপ্ত কবিতা তথা বুদ্ধদেব বসু প্রভাবিত কবিতায় তার সূক্ষ্ম চিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়। আমি তার এই ধরনের কবিতাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
পক্ষান্তরে ইসলামি ভাবাদর্শ বা শব্দবাহুল্যের কবিতায় ফররুখ যে রাজনীতি করতেছেন তা বাংলাকে আরব কল্প সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করে।
এই প্রস্তাব কাব্যের লালিত্য, গভীরতা ও সৌন্দর্যের মন্ত্রণায় ইসলামের দাবিতে দূর দেশে আরব সাম্রাজ্য বিস্তারের কুপ্রস্তাব।
৩.
বাঙালী মুসলমানকে বাঙালী হওয়ার জন্যে যেমন ভারতপন্থী হইতে হবে না, তেমনি মুসলমান হইতে গেলেও তাকে আরব বা পাকিস্তানপন্থী হইয়া উঠতে হবে না।
বাংলায় যা আছে তা বাঙালী মুসলানের বাঙালী ও মুসলমান আইডেনটিটির জন্য যথেষ্ট।
যে কারণে বাঙালী হিন্দুকে প্যান ইনন্ডিয়ান বা প্যান হিন্দু হইতে হবে না সেই একই কারণে প্যান মুসলিম বা প্যান আরব কেন হইতে হবে বাঙালী মুসলমানকে?
যে কারণে ভারত বাংলার মাতা নয় সে একই কারণে ফররুখের কবিতায় আবাহন করা আরবের জল বা ভূমিও বাংলার আরাধ্য কিছু নয়।
এমনিতে আর্টের বৈচিত্র্য বা কবিতার আনন্দের জন্যে ফররুখের কবিতা সে তো গুরুত্বপূর্ণ বটেই।
কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে রিজেক্টেবল বা বর্জনযোগ্য।
১৩/৬/২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:০৭