somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চা পাতার দাস ও অ্যাকটিভিস্টদের শ্রমিক বিলাস

২৫ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে, নাইলে আপনি প্রতি কাপ চায়ের সঙ্গে শ্রমিকের রক্ত পান করতেছেন—এই টাইপের রোমাণ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি চা শ্রমিকদেরকে চা শ্রমিক হিসাবেই বন্দি রাখবার করুণামূলক দৃষ্টিভঙ্গি।

চা শ্রমিকরা কেন চা বাগান ছাইড়া যেই পেশায় বেশি পয়সা তা এক্সপ্লোর করতে পারে না, সেই ব্যাপারে মনোযোগ না দিলে আপনি চা শ্রমিকদের টাকা বাড়াইয়াও শেষ পর্যন্ত দাসশ্রমিক হিসাবেই তাদেরকে ধইরা রাখার সম্মতিপত্র দিতেছেন।

বরং চা শ্রমিকরা যদি দেশে বর্তমান অন্য সব কাজে অংশগ্রহণ করে, চা বাগান ও বন্দিত্বের রোমাণ্টিক এলাকা ত্যাগ করে, তবে এই দাসজীবন তার আর থাকেও না।

২.
বংশানুক্রমে কোনো পেশায় নিযুক্ত থাকলে মালিকের দাস না হইলেও সেই পেশার দাসই সে মানুষ হয়।

তারা কেন চা বাগান ছাড়ে না, দেখা দরকার সেই বিয়ষটি।

চা শ্রমিকরা সারাজীবন চা শ্রমিকই থাকবে এইটা দাসপালন মূলক মনোভাব।

চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার চিন্তা ১৪৫ টাকা করার চাইতে খুব বেশি আনন্দজনক বা ভবিষ্যৎময় নয়। বরং ৩০০ টাকা মজুরি হইলে এই দাসশ্রমিকরা আরো বেশি দাসই থাইকা যাওয়ার মধ্যে থাকতে থাকবে।

৩.
চা শ্রমিকদের চা বাগান ছাড়ার কথা বলাতে মিডল ক্লাস চা খাওয়া লোকগুলা দেখলাম তেলেবেগুনে জ্বইল্লা উঠতেছে। তারা আমারে বেশুমার গালাগালি করল এই প্রস্তাবের কারণে।

এই বাগানপ্রেমিক কাব্য করা লোকগুলার কথা শুনলে মনে হয়, চা শ্রমিকদের পূর্বপুরুষদের সকলেরই যেন চা বাগানেই জন্ম হইছিল!

যেন ওনারা অন্য কোথাও থিকা এই দেশে আসেন নাই যে এখন বেটার পেশার জন্যে চা বাগান একদম ছাড়া যাবে না!

ওনাদের নাকিকান্নার বয়ান, এইখানে চা শ্রমিকদের ৫ প্রজন্ম মাটিতে শুইয়া আছে! যেন যেখান থিকা তারা আসছিলেন সেখানকার মাটিতে তাদের ৫০ প্রজন্ম মাটিতে হুইয়া রয় নাই!

পেশার লড়াই সকলের আছে। দেশের এক জেলার লোক আরেক জেলায় পাড়ি দিতেছে পেটের দায়ে। কমিউনিটি বা ট্রাইব রক্ষা করতে গিয়া তাদেরকে দাস বানাইয়া রাখার ওকালতি কীভাবে করে বাম আন্দোলনকারীরা আমি বুঝতেই পারি না! সো স্যাড।

আরো দুঃখ এই যে, দাসেদের দিনমজুরি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা হইলেই বামরেডরা সকলে সন্তুষ্ট!

৪.
এক এলাকার লোক আরেক এলাকায় গিয়া তাদের পেশা বাইছা কি নেয় না? অনেকেই শহরে, যেইখানে মজুরি বেশি, আইসা অবস্থার পরিবর্তন করছেন, চা শ্রমিকদের তা করতে দিতে আপনাদের আপত্তি কেন? পেশা কি একটাই নাকি!

আমি চা শ্রমিকদের বাগান থিকা ঠেইলা ভাগাইতে বলতেছি না। বলতেছি চা শ্রমিকরাও যাতে এই রকম বাইছা নিতে পারেন তার একটা অপশন তৈরি করার কথা।

এই অপশন চা শ্রমিকরা তৈরি করবেন না। করবে সরকার।

যার খুশি ৩০০ টাকা দিনমজুরিতে কাজ করুক। কিন্তু ৩০০ কোনো সমাধান না। বরং দাস ব্যবস্থা চলতে থাকাটা তাতে পোক্ত হয় আরো।

সারাদেশে লোকে যারা রিকশা চালায় তারা কি ক্ষেতখামারে মজুর হিসাবে না থাইকা বেটার অপশন হিসাবে এইটারে বাইছা নেয় নাই?

চা শ্রমিকদের চা শ্রমিকই থাকতে হবে কারণ তাদেরকে থাকতে জায়গা দেওয়া হইছে, এইটা যুক্তি হিসাবে ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়াশীল যুক্তি।

এই রকম তো দাসদেরও থাকতে দেওয়া হইত মালিকদের তাল্লুকে। এইটা কোনো থাকা না।

থাকা যখন না থাকার চাইতে বেদনাদায়ক হয় তখন যারা ভাগ্যবদলে আগ্রহী হয় না তারা আপনাদের মতো কারো নসিহত মানে বইলাই অগ্রসর হয় না।

৫.
৩০০ টাকা দেওয়ার লড়াইয়ে আপনারা যারা আছেন, তাদের অ্যাকটিভিজম চা বাগানের মালিকদেরকে শ্রমিক শোষণের সাসটেইনেবল অবস্থায় নিয়া যাবে। দাসদের কিঞ্চিৎ বেশি সুখী রাখা মহত্ত আরোপ করার মত কোনো বিষয় না।

চা রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লাভের যেই অবিবেচক দেশপ্রেম আপনাদের মধ্যে খলবল করে সেই জিনিসই দাসশ্রমিকদের চা বাগানে বংশ পরম্পরায় পুইত্তা রাখতে সাহায্য করে।

কীভাবে চা শ্রমিকেরা চাইলে বাগান ছাইড়া নিজের ইচ্ছার পেশা বাইছা নিতে পারে সে ব্যাপারে সরকার ও রাষ্ট্র নজর দেউক।

চা শ্রমিকদের দাসজীবনের অবসান ঘটুক!

২১-২২/৮/২০২২

(Photo: Md Rafayat Haque Khan / Shutterstock)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৩৭
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×