স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার অপরাধে ব্রিটিশ সরকার জওহরলাল নেহেরুকে কারাগারে পাঠায় অনেকবার। কারাগারে বসেই নেহেরু চিন্তা করলেন মেয়েকে বিশ্বের ইতিহাস জানাবেন। কিন্তু জানানোর মাধ্যমটা কি হবে? কারাগার থেকে তো স্বজনদের সাথে সবসময় দেখা করা যায় না! সবদিক ভেবে নেহেরু কন্যা ইন্দিরাকে চিঠি লেখা শুরু করলেন। একসময় এই চিঠিগুলো সংকলিত হয়ে প্রকাশ হল বই আকারে। নাম তার 'গ্লিমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি', বাংলা অনুবাদে ' বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ'। চিঠিগুলো লেখা হয়েছে ভারতের বিভিন্ন কারাগার থেকে, ১৯৩০-১৯৩৩ এই সময়কালের মধ্যে। চিঠিতে জওহরলাল নেহেরু বর্ণনা করেছেন মানবজাতির ফেলে আসা ইতিহাসকে, আবিষ্কার করতে চেয়েছেন পুরাতনের সাথে নতুনের সম্পর্ককে। নেহেরুর বর্ণনায় চিঠির বিবরণ যেমন মূল্যবান হয়েছে ঠিক তেমনভাবে চিঠিগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে নেহেরুর ব্যক্তিত্ব। সব মিলিয়ে চিঠির সংকলনটি সময়কে ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন ও সর্বকালের।
সামহোয়্যারইনের জন্য ধারাবাহিক আকারে থাকবে ' বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ ' নিয়ে ধাপে ধাপে কিছু বলার প্রচেষ্টা। বিরাট পরিধি নিয়ে লেখা ইতিহাসের সরল কিন্তু গভীর পাঠের এই সিরিজে আপনাকে স্বাগতম।
শুরুর কথা.......
নাইনির সেন্ট্রাল জেল থেকে ইন্দিরাকে লেখা প্রথম চিঠিটির শিরোনাম ' জন্মদিনের চিঠি'। সেখানে নেহেরু লিখেছেন-
" তোমার আমার মধ্যে অনেক কথা হয়েছে, তা বলে মনে কোরো না- সেই অতিবিজ্ঞের মতো- যা শেখবার মতো যা শেখবার তা শেখা হয়ে গেছে, জানা হয়ে গেছে, আমাদের এই বিস্তীর্ণ পৃথিবী ছাড়াও আরও কতসব আশ্চর্য জগৎ আছে - তাদের সম্বন্ধে শিখতে হলে, জানতে হলে কিন্তু অতিবিজ্ঞের মতো বড়াই করলে চলবে না। "
নেহেরু তাঁর শুরুর দিকের চিঠিতে বলতে চেয়েছেন, বালিকা ইন্দিরাকে উদ্দেশ্য করে লেখা সহজপাঠ চিঠিগুলোকে কোনভাবেই পৃথিবীর ইতিহাস বলা যায় না। বরং তাতে সমস্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের পরস্পরাক্রমের সাথে অতীত ও সেইকালের চলমান ঘটনার একটি যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। নেহেরুর বলা ইতিহাসের বিষয়বস্তু ছিল - বর্বরতা অতিক্রম করে সভ্যতায় পরিনতি। একেই মূলমন্ত্র ধরে নেহেরু বাকি রচনাতে এগিয়েছেন।
নেহেরু ইন্দিরাকে দূরপাঠ দেওয়া শুরু করেছেন এশিয়া ও ইউরোপের পতন-উত্থানের ইতিহাস জানিয়ে৷ এশিয়ার ভাগ্য বিপর্যয় ও ইউরোপের উত্থান নিয়ে নেহেরু বলেছেন, ভারতবর্ষে আর্যদের আগমনের হাজার বছর আগেই গড়ে উঠেছিলো মহেঞ্জোদারো সভ্যতা। এরপরে গড়ে উঠেছিলো দ্রাবিড় সভ্যতা, শেষে আর্যদের আগমনে নতুন করে রচিত হয় ভারতবর্ষের ইতিহাস। আর এই সময়টায় ইউরোপ কেমন ছিল? তখনকার ইউরোপকে নেহেরু বলেছেন বর্বর।
নেহেরু লিখেছেন, " এশিয়া ও ইউরোপকে পাশাপাশি রাখলেই আমরা দেখতে পাব সময়ের ফেরে কীভাবে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে গেছে। পৃথিবীর মানচিত্র খুলে দেখো- দেখতে পাবে স্বল্পায়তন ইউরোপ এশিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখন্ডের সঙ্গে কেমন করে জুড়ে রয়েছে, মনে হবে ইউরোপ এই মহাদেশেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ।"
নেহেরু সবসময় চেয়েছেন সভ্যতার অগ্রগতিতে ইউরোপের প্রাপ্য গৌরব তাকে দিতে, কিন্তু সেটা এশিয়াকে খাটো করে নয়।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:৫৬