somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১৩) - কানাডিয়ান গুন্ডার কবলে পথ ভুলে এডভেঞ্চারে.......

১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের সারসংক্ষেপ: মা বাবা ক্লাসে গেলে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হয়ে যেতাম। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ি এলাকার স্বর্গীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। এভাবে একদিন ঘুরতে ঘুরতে এক গুন্ডার পাল্লায় পড়ে গেলাম ।

পূর্বের পর্বগুলোর লিংক:
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১) - প্রথমবার প্রবাসে প্রবেশের অনুভূতি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (২) - জীবনের গল্প শুরু হলো এইতো!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৩) - সুখে থাকতে কিলায় ভূতে! (কুইজ বিজেতা ঘোষিত)!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৪) - বাংলাদেশ ভার্সেস কানাডার দোকানপাট, এবং বেচাকেনার কালচার! (কুইজ সলভড)!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৫) - কেমন ছিল কানাডিয়ান স্কুলে ভর্তি হবার প্রস্তুতি পর্ব?!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৬) - কানাডিয়ান স্কুলে ভর্তির ইন্টারভিউ অভিজ্ঞতা!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৭) - কানাডার স্কুল ভ্রমণ এবং দেশীয় মফস্বলের স্কুলের টুকরো স্মৃতি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৮) - কানাডার প্রথম খারাপ অভিজ্ঞতা!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৯) - আবারো দুটিতে একসাথে, প্রেমের পথে... :`> (কুইজ সলভড)
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১০) - লাভ বার্ডসের প্রথম কানাডিয়ান ক্লাসের অভিজ্ঞতা....
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১১) - মায়ের বিদেশী ক্লাসমেট্স, কালচার শক এবং বাবার জেলাসি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১২) - কানাডিয়ান গুন্ডার কবলে.......
পূর্বের সিরিজের লিংক: কানাডার স্কুলে একদিন এবং কানাডার স্কুলে একেকটি দিন

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
গ্যারেজের বেসমেন্ট থেকে বের হয়ে আসা শ্যামলাটে, বোঁচা চোখ নাক, ময়লা পোশাকের মানুষটির হাঁটার ধরণটা মুভিতে দেখা মাতাল ভিলেনের মতো! উনি আমার কাছে চেইন চাওয়াতে আমি উত্তর না দিয়ে ইগনোর করে চলে আসতে লাগলাম, উনি তারপরেও আমাকে আটকে হাত নাড়িয়ে কিসব যেন বলে যাচ্ছেন বিড়বিড় করে। এমনিতেই ইংলিশ বুঝিনা তার ওপরে জড়িয়ে যাওয়া কথাগুলো আরোই বুঝতে পারছিনা। এই লোক তো পথও ছাড়ে না। অন্য দুনিয়া থেকে আসা কোন এক ভয় আমাকে ফ্রিজ করে দিল। গলা শুকিয়ে গেল! কি করব এখন?
আমি যে পা চালিয়ে হেঁটে আসব সেই শক্তি নেই। আমার ভাবটা এমন যে উনি ওনার কথা শোনানোর জন্যে আটকালে আমাকে আটকে থাকতেই হবে। ওনার যে মাথা ঠিক নেই তা বুঝতে পারছি। কিন্তু ওনার আচরণে আমারই মাথা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে চেইন, গয়না কিছুই নেই। আর ওগুলো ছাড়া উনি আমাকে যেতেও দেবে না। বকবক করেই যাবেন। আমার মনে হলো বাবা মা কে লুকিয়ে কাজ করলে একটা না একটা বিপদ হয়ই! মনে মনে নিজেকে দোষ দিয়ে যাচ্ছি এক নাগাড়ে। ভাবছি এই বিপদ থেকে পার হতে পারলে আর এমনকিছু কখনো করব না। (আমি প্রতি বিপদের সময়ে এই প্রতিজ্ঞা করি, এবং বিপদ কেটে গেলে মনে থাকে না ;) )।

আমি কতক্ষন ধরে এই লোকটির বকবক শুনছি? মনে হচ্ছে বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে! ঘেমে গিয়েছি বেশ। বিপদ থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্যে বোধহয় আল্লাহই একটা গাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। গাড়িটি হর্ন বাজাচ্ছে, গ্যারেজে ঢুকবে। সেদিকে আমার সাথে সাথে সেই লোকটিও তাকাল। আর আমি কোথা থেকে যেন অবশ শরীরে জোর পেলাম। এক দৌড়ে রাস্তা পার হলাম। আর দৌড়াতে লাগলাম। কোথায় কি আছে কিচ্ছু খেয়াল নেই, ব্যাস ঐ লোকটার থেকে দৌড়াতে লাগলাম দূরে। পেছনে তাকিয়ে একবার তাকালাম গুন্ডাটার দিকে। সে কয়েক পা এগিয়েছিল আমার দিকে, কিন্তু কি ভেবে যেন নিজের দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে গ্যারেজের বেসমেন্টে ঢুকে গেল!

লোকটা পিছে আসছে না তবুও আমি দৌড়ে গেলাম বেশ অনেকটা পথ। যখন বুঝলাম আর কোনকিছুতে আমি আটকে নেই, স্বস্তির একটা নি:শ্বাস ফেললাম। মনে মনে বললাম, সেই গাড়ির ড্রাইভারের ভালো করুক আল্লাহ! তারপরে ভাবলাম পা চালিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে, বাবা মা ফেরার আগেই পৌঁছাতে হবে। এটা ভাবা মাত্র মাথায় বাজ পড়ল! ওহ! আল্লাহ! আমি বিপদ থেকে ভাগিনি, বিপদের দিকে ভেগেছি!

চারিপাশে তাকালাম, সবকিছু অপরিচিত! আমি এ কদিন হাঁটার সময়ে খুব হিসেব কষে হেঁটেছি, ডানে গেলে শুধুই ডানে বা বামে গেলে শুধুই বামে। সেই হিসেবে কখনো রাস্তা হারাইনি। কিন্তু দৌড়ানোর সময়ে আমার কিছুই মনে ছিলনা। এদিক সেদিক এলোমেলো ভাবে দ্রুত দৌড়েছি। আমি এখন কি করব? পথ তো হারিয়ে ফেলেছি। আশেপাশে তেমন মানুষও দেখছিনা, ছোট পাহাড়ি শহর, তেমন লোক দেখা যায় না মেইন রাস্তা ছাড়া। এই গলির মধ্যে আমি এখন কাকে কি জিজ্ঞেস করব? আর করলেও কেউ তো আমার একসেন্ট বুঝবে না। প্রথম দিনের হারিয়ে যাবার ভয়টা এ কদিন হাঁটতে হাঁটতে মনের ভেতর থেকে চলে গিয়েছিল, কিন্তু শেষে তাই হলো। এত হিসেব করে হেঁটেও আমি বিপদ ঠেকাতে পারলাম না।

একটু পরে সূর্য ঢলতে শুরু করবে, তার আগে বাড়ি ফিরতে না পারলে হয় বাবা মা আমাকে মেরে ফেলবে অথবা পথের অন্যকোন বিপদ। আমার গলায় কান্না জমে যাচ্ছে, কিন্তু কাঁদতেও পারছি না। আটকে গেছে সব কান্না গলার কাছে এসে। কি বিচ্ছিরি অবস্থা! আমি আস্তে আস্তে হাঁটছি শূন্য মনে। সাধারণত বাইরে গেলে বারবার ঘড়ি দেখি, বাবা মা ফেরার আগে ফিরতে হবে সেই তাড়নায়। আমি ততক্ষনে ঘড়ি দেখাও বন্ধ করে দিলাম, মনে মনে বুঝে গেলাম আর যাই হোক সময়ে পৌঁছাতে পারব না বা বলা চলে হয়ত আর পৌঁছাতেই পারবনা জীবনে!

গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমার হুট করে একটা ব্যাপার মনে হলো। আমি তো জায়গায় জায়গায় শপিং মল, রেস্তোরা, এমনকি কোন বাড়ির বারান্দায় কি ডেকোরেশন পিস আছে সব মুখস্থ করে রেখেছি যেন হারিয়ে গেলে বাড়ি ফিরতে পারি। আমি সেসব কেন ব্যবহার করছি না? আমি একটু এদিক সেদিক হাঁটলে কিছু না কিছু তো খুঁজে পাবই। সাথে সাথে বড় একটা নি:শ্বাস নিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।

প্রথমে অনেকটা পথ স্ট্রেইট গেলাম, ডেড এন্ড সাইন পর্যন্ত, না এ পথে সব অপরিচিত। মানে আমার রাস্তা হয় পেছনে অথবা পেছনে যাবার পথে কোন গলিতে। আমি পেছনে হাঁটতে হাঁটতে যেখানেই গলি পেলাম গলির বেশ কিছুদূর হাঁটলাম কোন পরিচিত দৃশ্যের আশায়। মনে মনে প্রার্থনা করছি পরিচিত কোন বাগান, পরিচিত কোন বাড়ি কিছু একটা যেন পাই।
হাঁটতে হাঁটতে পথে দু একটা লোক দেখলাম। বিদেশী সেই মানুষগুলোর কাছে আমি সাহায্য চাইতে পারলাম না। ভয়ে তখন আমি বাংলাই ভুলে গিয়েছি, আর ইংলিশে কথা বলা তো দূরের ব্যাপার। পথচারীরা আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে, পাশের মানুষটির দিকে ইশারা করছে। চেহারা দেখে বুঝে গিয়েছে মনে হয় যে আমি পথ হারিয়েছি। আমার মনে হলো অচেনা লোক যদি বোঝে আমি পথে হারিয়েছি তবে ভুলিয়ে ভালিয়ে ক্ষতি করতে পারে। তাই আমি যখনই লোক দেখি সেই গলি থেকে জলদিই পার হয়ে আরেক গলিতে ঢুকে পড়ি। তবে মনে মনে হিসেব ঠিকই রাখছিলাম। সব গলি কভার করতে হবে আমাকে। রাস্তা আছে কোথাও। আমি নিশ্চই অন্য শহরে চলে আসিনি।

এভাবে করতে করতে যখন আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি হুট করে একটা বারান্দায় সিংহ মূর্তি চোখে পড়ল। আর আমি মনে মনে আনন্দে চিল্লিয়ে উঠলাম ইয়েস বলে। আগের পর্ব যারা পড়েছেন তারা জানেন যে আমার আসার পথে একটি বারান্দায় খুব সুন্দর সিংহ মূর্তি দিয়ে সাজানো ছিল। ব্যাস প্রিয় সিংহ মামাকে পেয়ে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেখান থেকে সবই পরিচিত।

বাসার কাছে চলে এলাম, অন্যদিন বাড়ির কাছের বাগানের ইরিগেশন স্প্রিংকলার চলতে থাকে আমি আসার সময়ে। আজ দেখি বন্ধ হয়ে আছে! তার মানে আমি বেশ লেট করে ফেলেছি, সাথে সাথে এতক্ষন পরে ঘড়ির দিকে তাকালাম ভয়ে ভয়ে। মারাত্মক লেট না হলেও ঠিকঠিক সময়, বাবা মা এলো বলে। ভাগ্য খারাপ হলে এসে গেছে।

আমি খুব দ্রুত পা চালিয়ে ঢুকে পড়লাম নিজেদের বিল্ডিং এ। তারপরে নিজেদের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাড়াতেই শুনতে পেলাম ভেতর থেকে মানুষের আওয়াজ! সত্যি বলছি, গুন্ডা, পথ ভোলা কোনকিছুতেই এতটা ভয় পাইনি, যতটা এটা বুঝে যে বাবা মা ভেতরে। নিঃশ্বাস আটকে গেল সাথে সাথে। আমি একবার ভাবলাম পালিয়ে যাই, আর কোনদিন মুখ দেখাব না। তারপরে সেই গুন্ডার চেহারা মনে পড়তে ভাবলাম না বাবা মা মারুক ধরুক, আমি বাইরে যাব না আর।

এসব ভাবতে ভাবতে নক করতে গিয়ে বাড়ির নাম্বারে চোখ পড়ল। আরেহ! এটা তো আমাদের নাম্বারটা না। আমি ভুলে অন্য তালায় দাড়িয়ে আছি! সাথে সাথে মনে আশা পেলাম হয়ত বাবা মা আসেনি। দৌড়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে গেলাম সিড়ি দিয়ে উঠে। আর দরজা খুলে তাকালাম দরজার কাছের ক্লসেটের জুতার জায়গায়। নাহ! বাবা মার ঘরে পরার জুতা ওখানেই আছে, ঘর অন্ধকার, আমি আগেই এসেছি!

আমি খুব ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম, আর হুট করে নিজে কিছু বোঝার আগেই শব্দ করে কেঁদে উঠলাম। এতক্ষনের আটকে রাখা উত্তেজনা, ভয়, ঠিকভাবে পথে খুঁজে ফেরার আনন্দ সব একসাথে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল। যতবার কান্না মুছি চোখ মুখ পানিতে ভরে যায়। এভাবে বেশ কিছুক্ষন কাঁদার পরে হাতমুখ ধুয়ে নিলাম। মুখ মুছতে মুছতে দরজায় নক!

আমি কোনভাবে নিজেকে ধাতস্থ করে দরজা খুললাম। মা ঢুকে অন্যদিনের মতো হাত নেড়ে নেড়ে গল্প করতে করতে লাইট জ্বালাল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কিরে? তুই বাইরে পরার কাপড় পরে আছিস কেন? বিদেশে সালোয়ার কামিজ পাবি? বাইরের পরার গুলোর ঘরে পরে নষ্ট করছিস কেন?"

আমি কিছু একটা বলে ম্যানেজ করলাম। বাকিটা সময় স্বাভাবিক ভাব করে কাটিয়ে দিলাম।

সেদিন রাতে ঘুমানোর টাইমে আমি নিজেই নিজেকে বাহবা দিলাম। সব ঝামেলা পার করে ফেলার জন্যে। আবার নিজেকে বকলামও এমন বিপদ তৈরি করার জন্যে। তবে পুরো সিচুয়েশনটা ভেবে হেসে উঠলাম। ইশ! কারো সাথে যদি শেয়ার করতে পারতাম! না বাবা না! কাউকেই বলা যাবেনা, বাবা মার কানে যদি কারো কাছ দিয়ে যায় আমি শেষ হয়ে যাব। বাবা মা যে কিছু জানতে পারেনি এটা ভেবে আমার কেন যেন খুব হাসি পাচ্ছিল, হাসতে হাসতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

সেই লোক ভিখিরি, পাগল, গুন্ডা কোনটা ছিল সেটা আমি অনেকদিন জানতাম না। আমি বুঝতেই পারিনি সেদিন আমার সাথে কি হলো, কেন চেইন চাচ্ছিল। লোকটির আসলেই কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিল কিনা! সেই ঘটনার বেশ কমাস পরে চলে যাচ্ছি। তখন আমি স্কুলের তাল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।

বাবা একদিন পেপার পড়তে পড়তে মা কে বললেন, "জানো এখানকার অপরাধীদের বড় অংশ নাকি এবরিজিনাল বা আদিবাসী, পেপারে পড়ে জানলাম। এক হোয়াইট কানাডিয়ানকে রিসেন্টলি আক্রমণ করেছে।"
মা বলল, "ওমা এদেশেও এসব হয়! কোথাও কেউ সেইফ না দেখছি!"
বাবা বলল, "আদিবাসীরা বেশ পিছিয়ে আছে, একসময়ে অনেক অত্যাচারিত হয়েছে, এখনো নানা বৈষম্যের শিকার মনে করে নিজেদেরকে। আদিবাসীদের জন্যে সরকারী অনেক সাহায্য রয়েছে, কিন্তু অনেকেই নিতে চায়না কেন যেন। তারা পথে পথে থাকে, ক্যান, ফেলে দেওয়া জিনিস কুড়ায়, মদ খেয়ে পড়ে থাকে, আর রাতের বেলায় কোন ঘুপচি জায়গা, বিল্ডিং এর আশপাশ, গ্যারেজের বেসমেন্টে, শপিং মলে ঘুমিয়ে পড়ে।"

এসব বলতে বলতে বাবা আমাকে ডাকল, "শোন মা, এখন তো একা স্কুলে যাচ্ছিস, তোর মা আর আমি খুব চিন্তায় থাকি। পথে কেউ যদি এখানে তোর কাছে চেঞ্জ চায় তবে বলবি তোর কাছে টাকা নেই, আর দ্রুত এভয়েড করে চলে আসবি। ঠিক আছে?"
আমি বললাম, বাবা চেঞ্জ চাইবে কেন?
বাবা বলল, "ওরা এভাবেই ভিক্ষা চায়, অবশ্য ভিক্ষা নেবার কথা বলে এটাকও করে বসে। তাই দূরে থাকবি এমন কাউকে দেখলে।"

আমি মাথা নেড়ে আচ্ছা বললাম আর ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলাম। সেদিন তো আমি আসলেই খুব বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছিলাম! ইশ! আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। বাবা মাও কিছু টের পায়নি। সাপ মরল, লাঠি ভাঙ্গল না। দুষ্টুমি করে বেঁচে গেলে মন্দ নয়, পরের দুষ্টুমিতে সাহস ও উৎসাহ পাওয়া যায়। :P

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

পূর্বের পর্বের কুইজ বিজয়ী:
এবারে সঠিক উত্তর দিয়েছেন ব্লগার সুহাস শিমন! তিনি বলেছিলেন, "এই লোক আপনার কাছে change মানে খুচরা টাকা চায়, আপনি ভেবেছেন চেইন, ঠিক বলেছি না?"

জ্বি হ্যাঁ, উনি একদম ঠিক বলেছিলেন। আমি বেশ অবাকই হয়েছি। এটা খুব সহজ ধাঁধা ছিলনা। কেউ এত পারফেক্ট একটা জবাব দিয়ে দেবে মনে হয়নি। অসংখ্য অভিনন্দন আপনাকে। আপনার বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হলাম।

পাঠকের জন্যে কুইজ: সেদিন মা কে আমি কি বলেছিলাম? কেন আমি বাইরের পোশাক পরে আছি?

মজার ব্যাপার কি জানেন পাঠক? এর উত্তর আমি নিজেই জানি না! মানে আমার মনেই নেই! অবাক ব্যাপার আমি এখনো চোখ বন্ধ করলে সেখানকার রাস্তা, কার বারান্দায় কি ডেকোরেশন পিস আছে তা মনে করতে পারি। কিন্তু নিজের কথাটাই অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না!
এর কারণ হতে পারে সেসময়ে আমি এত ভয়, উত্তেজনায় ছিলাম যে মেমোরি থেকে ইরেজড হয়ে গেছে। অথবা সেটি মিথ্যে ছিল বলে বেশিদিন আমার মনে বাঁচতে পারেনি! তবে যাই হোক, আমার উত্তরটি এমনকিছু ছিল যা মা কে জলদিই শান্ত করেছে। মা সন্দেহ করেনি। কি বলতে পারি আমি? কি মনে হয় আপনাদের?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৫১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×