somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১৬) - কানাডার ডাক্তার, ও আমার অস্বস্তিকর "ধরণী দ্বিধা হও" মূহুর্ত!

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের সারসংক্ষেপ: একটি বাংলাদেশী পরিবার কানাডায় গিয়ে জীবনটাকে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করার সংগ্রামে নেমে পড়ল। পরিবারের মেয়েটি একদিন তার বাবা মায়ের সাথে গিয়ে ওখানকার স্কুলে ভর্তি হয়ে এলো। তাকে একটি নির্ধারিত দিন থেকে ক্লাস শুরু করতে বলা হয়। অন্যদিকে পরিবারের কর্তা ও কর্ত্রীও কিছু কোর্সে ভর্তি হয়ে পড়লেন চাকরির জন্যে। ঘরে বাবা মায়ের অনুপস্থিতে মেয়েটি লুকিয়ে মনোরম পাহাড়ি এলাকাটি ঘুরতে যেয়ে বিপদে পড়তে পড়তে বাঁচল। এভাবে করে স্কুলের প্রথম দিন চলে এলো এবং বেশ ঘটনাবহুল দিনটি শেষও হয়ে এলো।

পূর্বের পর্বগুলোর লিংক:
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১) - প্রথমবার প্রবাসে প্রবেশের অনুভূতি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (২) - জীবনের গল্প শুরু হলো এইতো!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৩) - সুখে থাকতে কিলায় ভূতে! (কুইজ বিজেতা ঘোষিত)!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৪) - বাংলাদেশ ভার্সেস কানাডার দোকানপাট, এবং বেচাকেনার কালচার! (কুইজ সলভড)!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৫) - কেমন ছিল কানাডিয়ান স্কুলে ভর্তি হবার প্রস্তুতি পর্ব?!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৬) - কানাডিয়ান স্কুলে ভর্তির ইন্টারভিউ অভিজ্ঞতা!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৭) - কানাডার স্কুল ভ্রমণ এবং দেশীয় মফস্বলের স্কুলের টুকরো স্মৃতি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৮) - কানাডার প্রথম খারাপ অভিজ্ঞতা!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (৯) - আবারো দুটিতে একসাথে, প্রেমের পথে... :`> (কুইজ সলভড)
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১০) - লাভ বার্ডসের প্রথম কানাডিয়ান ক্লাসের অভিজ্ঞতা....
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১১) - মায়ের বিদেশী ক্লাসমেট্স, কালচার শক এবং বাবার জেলাসি!
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১২) - কানাডিয়ান গুন্ডার কবলে.......
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১৩) - কানাডিয়ান গুন্ডার কবলে পথ ভুলে এডভেঞ্চারে.......
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১৪) - বৈদেশী স্কুলে প্রথম সে দিন.......
তুষার দেশে এক বাংলাদেশী কিশোরীর দিনরাত্রি - পর্ব (১৫) - প্রথম দিনে লজ্জা, অস্বস্তিতে একের পর এক গুবলেট.....

পূর্বের সিরিজের লিংক: কানাডার স্কুলে একদিন এবং কানাডার স্কুলে একেকটি দিন

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

কানাডিয়ান স্কুলের প্রথম সপ্তাহটি বিভীষিকাময় সময়ের মতো কেটে গেল। ক্লাসে টিচারদের কথাই ঠিকমতো বুঝতে পারিনা, পড়াশোনা তো দূরের ব্যাপার। অন্যদিকে ফিজিক্যাল এডুকেশনের লম্বা ক্লাসটি শরীরকে অবশ করে দেয়। শুক্রবারের বিকেলে ক্লান্ত, বিদ্ধস্ত শরীর ও মন নিয়ে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফিরে মনে হলো, আরেহ পরবর্তী দুদিন আমার কোন ক্লাস নেই! দমবন্ধ ভয় ও ভীষন ক্লান্তিময় দিনগুলো থেকে একটু বিরতি পাচ্ছি! কাল সকালে চোখ খোলা মাত্র আমাকে অন্যদিনের মতো ভিনদেশী স্কুলের ভয়ে কুঁকড়ে যেতে হবেনা।
তীব্র গরমে ঘামে ভেজা শরীর হুট করে মেঘলা বাতাসের ছোঁয়ায় যেমন চনমনে হয়ে ওঠে, আমার মনও উইকেন্ডের ভাবনায় তেমনই অনুভব করল।

আবার ভাবলাম, নাহ, পুরো সময়টা ছুটি কাটানো যাবেনা। আমি টিচারদের বেশিরভাগ কথাই বুঝি না, যা একটু বুঝতে পারি নোট করে নেই। নোটগুলোর বেশিরভাগ লাইনই পূর্ণ থাকে না, কোন লাইনের প্রথম অর্ধেক আছে, তো কোনটার শেষ অর্ধেক। টিচার যদি কারো প্রশ্নের জবাবে এক কথা আবারো রিপিট করতেন তখন আমি পুরোপুরি ধরে ফেলতাম। তাছাড়া ওভারঅল আমার নোট দেখলে মানুষজন আমাকে তারছিড়া পাবলিক অথবা বধিরই ভাববে নিশ্চই।
আমি প্ল্যান করলাম নোট এবং বইয়ের সেই চ্যাপ্টারগুলো পাশাপাশি রেখে খাপছাড়া ব্যাপারগুলো মেলানোর, বোঝার চেষ্টা করব। কিছু না বুঝতে পারলে অন্ধভাবে মুখস্থই করব। কিন্তু পড়াশোনা করব। তবে সেই শুক্রবার রাতটা কিছু না করেই কাটিয়ে দেবার পরিকল্পনা করলাম।

রাতে বাবা বলল। "কালকে তোমার ছুটি, তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।"
আমি বললাম, "আমি তো ঠিক আছি, ডাক্তারের কাছে গিয়ে কি করব? আমি যাব না।"

আমার না যেতে চাইবার মূল কারণ ছিল, দুটো দিন আমি কোন ফরেনারের দাঁত ভাঙ্গা, কানে পীড়াদায়ক ইংলিশ শুনতে চাইনি। শুধু দুটো দিন একটু ব্রেক চেয়েছিলাম।

বাবা বলল, "ধুর কি বলো? রেগুলার চেকআপ। ইমেইল পাঠিয়েছে আমাদের ফ্যামিলি ডক্টরের অফিস থেকে। যেতেই হবে।"

আমি ভাবছি বাবা মা কদিনে ফ্যামিলি ডক্টরও জুটিয়ে ফেলেছে! পরে জেনেছিলাম এখানে সবার জন্যেই ফ্যামিলি ডক্টর সেট করা থাকে। দেশে যেমন কারো কারোরই শুধু পরিচিত ডক্টর থাকে, এখানে তেমন না।

পরেরদিন পুরো ফ্যামিলি চলে গেলাম। হাঁটতে লাগলাম সবাই। অনেকক্ষন ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি কিন্তু পথ শেষ হচ্ছেনা।
বাবাকে বললাম, "আর কতদূরে?"
বাবা বলল, "আরো বেশ দূরে মা!"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "বাবা তাহলে বাস নিলাম না কেন?"
বাবা বলল, "বাস নিলে এক দেড় ঘন্টা লাগবে হাঁটলে পঁচিশ মিনিট, তাই।"

বাস যেহেতু ঘুরে ঘুরে যায়, নানা জায়গায় থামে, তাই অনেকক্ষেত্রে বাসের পথ বেশি টাইম লাগে। সেজন্যেই বাবা হেঁটে যাবার প্ল্যান করেছে। দেশে সবসময় গাড়ি ও রিকশার ওপরে থেকেছি, পঁচিশ মিনিট হাঁটা অনেক বেশি মনে হচ্ছে। আর একটা মজার বিষয় খেয়াল করেছি। বিকেল বেলায় ইচ্ছেমতো গন্তব্যহীনভাবে নিজের মনের আনন্দে হাঁটলে সময়ের হিসেবই থাকেনা। কিন্তু কোথাও যাবার জন্যে পাঁচ মিনিট হাঁটতেও বিরক্তি লাগে! এমন কেন হয়? হয়ত গন্তব্যের চেয়ে জার্নি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে! গন্তব্য পথকে নির্দিষ্টতার জালে বন্দি করে বাড়িয়ে দেয়, গন্তব্যহীনতায় মাইলের পর মাইল নিশ্চিন্তে হেঁটে যাওয়া যায়, কেননা স্টিয়ারিংটা নিজের হাতেই থাকে। যখন ইচ্ছে থেমে যাব, কে কি বলবে?

এসব ভাবতে ভাবতে একটা বিল্ডিং এর সামনে চলে এলাম। আগে কখনো আসিনি বলে বেশ খুঁজতে হলো বাবাকে, ডাক্তারের অফিসটি। একটু ব্যাকওয়ার্ড জায়গায়, গলির মধ্যে। ছোটখাট কাঁচের দরজাটি খুলে ঢুকে গেলাম। বাবা রিসিপশনিস্টকে বললেন আমাদের এপয়েন্টমেন্ট আছে। তিনি কম্পিউটারে চেক করে ওয়েট করতে বললেন।

চারিদিকে চোখ বোলাচ্ছি। একদিকে একটি বড় এক্যুরিয়াম রাখা, সেখানে কালারফুল সব মাছ। মনে মনে ভাবছি, দেশের বাড়িতেও আমাদের এক্যুরিয়াম ছিল, আহারে মাছগুলোর খাওয়া, পানি পরিষ্কার সব আমিই করতাম। ভাই বোনহীন আমার নিঃসঙ্গ শৈশবে ওরাই ছিল পরম বন্ধু! চোখ ছলছল করে উঠল ওদের কথা ভেবে। সামনের দেয়ালে বড় একটি ফ্ল্যাট টিভি, এখানে অবশ্য সবখানে ফ্ল্যাট টিভিই দেখেছি এসে থেকে। আমার এখনো মনে আছে, সেখানে একটি ইংলিশ মুভি দেখানো হচ্ছিল। কুকুর ও বিড়ালের এনিমেটেড মুভি।

রুমের অন্য সাইডে কাঁচের দরজা। সেখান থেকে এক মোটাসোটা, বেঁটে আপেলের মতো টকটকে হোয়াইট মহিলা হাসতে হাসতে এলেন, একজনের নাম ধরে ডাকলেন। সামনের সিট থেকে তখন একজন ওনার সাথে চলে গেলেন। বুঝলাম আমাদের টাইম আসলে নাম ডাকা হবে। একটু পরে এসে আমাদের নাম নিলেন, আমরা ওনার সাথে গেলাম।
কাঁচের দরজার ওপাশে ছোট ছোট সব রুম। একটি রুমে নিয়ে গেলেন। আমাদের সবার হাইট, ওয়েট, ব্ল্যাড প্রেশার মাপলেন।
তারপরে আরেক রুমে নিয়ে গেলেন। আমরা কেন এসেছি জানতে চাইলেন। বাবা বলল, রেগুলার চেকআপ এবং ফ্যামিলি ডাক্তারের সাথে পরিচিত হতে। সেই মহিলা আরো কিসব প্রশ্ন করল, বাবা উত্তর দিলেন।

উনি, "ওকে, ওকে, ইউ অল ওয়েট হেয়ার, ডক্টর উইল বি হেয়ার শর্টলি!" বলে দরজা লাগিয়ে চলে গেলেন।

সেই রুমটিতে একটি বেড ছিল, কিছু যন্ত্রপাতি। ছোটখাট আলমারি, আর হাত ধোঁবার ব্যবস্থা। কয়েকটি চেয়ার এবং একটি কম্পিউটার। কানাডায় এসে এই জিনিসটি বারবার মুগ্ধ ও অবাক করে। অতোটুকু রুমে এতো জিনিস, কিন্তু গিজগিজে মনে হচ্ছেনা। পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা তার মধ্যেও ম্যানেজ করে ফেলেছে কিভাবে যেন! এরা আসলেই অনেক গোছালো!

বিরক্তিকর ওয়েট শুরু হলো। কানাডায় এলে এই জিনিসটি ডেফিনিটলি সবচেয়ে বিরক্ত করবে যে কাউকে। ডক্টরের এসিসট্যান্ট একবার চেক করেন, তারপরে আবারো মেইন ডক্টরের জন্যে লম্বা ওয়েট শুরু হয়। দুদফা অপেক্ষার মানে কি? একবারে ডক্টর দেখলেই তো পারে।

যাই হোক, বেশ অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরে, একজন মানুষ রুমে হাসিমুখে ঢুকলেন। হাসিটা এমন যেন আমরা পেশেন্ট নই, তার শ্বশুড়বাড়ির লোক, বিরিয়ানি খাবার দাওয়াত দিতে এসেছি! এত প্রাণবন্ত হাসি এরা কিভাবে দেয় কে জানে! হোয়াইট লোকটির হাইট ঠিকঠাক, নাকটা টিয়াপাখির ঠোঁটের মতো খাড়া, আর চোখে চশমা। তাকে দেখলে বোঝা যাচ্ছে যে সে ডাক্তার।

কানাডায় আপনি চেহারা দেখেই অধিকাংশ মানুষের পেশা বুঝে ফেলবেন। পুলিশ ও ফায়ার ফাইটাররা লম্বা ও জায়গান্টিক ফিগারের হবেই হবে, শিক্ষকদের চোখে মুখে ফ্রেন্ডলি, বুদ্ধিদীপ্ত ভাব থাকবেই, আর ডক্টরদের দেখেই পৃথিবীর সবচেয়ে ভদ্র, আন্তরিক ও প্রফেশনাল মানুষ মনে হবে। আমি অনেকদিন পর্যন্ত কনফিউজড হয়ে ভাবতাম, এরা কি চেহারা দেখে ভার্সিটিতে চান্স দেয় নাকি?

ডক্টর সবার সাথে কুশল বিনিময় করে কম্পিউটারের সামনে বসে একটি সাইটে লগইন করলেন। তারপরে আমাদেরকে একের পর এক প্রশ্ন করে গেলেন। কতদিন কানাডায়, অরিজিনালি কোথা থেকে, কোন এলার্জি আছে কিনা, ফ্যামিলিতে কাছের আত্মীয় স্বজনদের অসুখ বিসুখের ব্যাপারেও জানতে চাইলেন।
মায়েরগুলোও বাবাই বলে দিল। এরপরে তিনি আমার দিকে ইশারা করে বাবাকে প্রশ্ন করলেন, "একটাই সন্তান?"
বাবা হেসে হ্যাঁ বলল।
উনি তখন আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন।
এখানে কোন স্কুলে ভর্তি হয়েছি কিনা? স্কুলের নাম কি? কেমন লাগছে কানাডায়? ইত্যাদি।
উনি বেশ সফটস্পোকেন এবং ধীর ধীরে কথা বলেন, তাই প্রায় সবই বুঝতে পারছি আর উনিও আমার ভাঙ্গা ইংলিশ বুঝতে ধরে ফেলছেন। তাই আমি বেশ কনফিডেন্ট ও কনফরটেবল হয়ে গেলাম ওনার সাথে।

একসময়ে উনি আমাকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করতে লাগলেন।

জানতে চাইলেন আমার এলকোহোল, ড্রাগ, সিগারেট কোনকিছু নেবার ইতিহাস আছে কিনা? এখন নেই কিনা?
আমি অবাক হয়ে গেলাম, আমাকে দেখে কি নেশাখোর মনে হচ্ছে ওনার?
আমি সজোরে দুদিকে মাথা নেড়ে জানালাম না।

উনি তারপরে আরো অদ্ভুত প্রশ্ন করলেন।

ডু ইউ হ্যাভ এনি কিডস? হ্যাভ ইউ এভার বিন প্রেগন্যান্ট?

আমি ভাবলাম, ভাই বোন আছে কিনা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে কিডসের কথা জানতে চেয়েছেন ভুলে।
আমি বললাম, "সরি?"
উনি আবারো একই কথা রিপিট করলেন। আমি মায়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে দেখি, মাও অবাক। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা লজ্জা পেয়ে গেছে!
আমি আবারো না বললাম।
বাবা মায়ের সামনে ওনার এমন প্রশ্নে আমি এত লজ্জা পেয়েছি বলার নয়।
মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ভাবছি,

"ধরণী, তুমি দ্বিধা হও
আমি তন্মধ্যে প্রবেশ করি"

আমাদের অবস্থা দেখে ডাক্তারও একটু অপ্রস্তুত হলেন, এবং সেটি লুকানোর জন্যে হেসে, "গুড গার্ল!" বলে কম্পিউটারে টাইপ করা শুরু করলেন।

তখন আমি মনে মনে তখন খুব রাগ করছিলাম ডাক্তারের ওপরে আমার বয়সী কিশোরি ও অবিবাহিতা মেয়েকে এসব প্রশ্ন করার জন্যে। কিন্তু পরে বুঝেছি ওদের কালচারে এসব কমন ব্যাপার তাই নিশ্চই কম্পিউটারের ফর্মে এসব প্রশ্ন লেখা থাকে। পূরণ করতে ওনাকে জানতেই হয়।

তারপরে উনি আমাদের ভ্যাকসিনেশন হিস্ট্রি দেখতে চাইলেন। দেশের সব ডকুমেন্টস তাকে দেখানো হলো। উনি অনেক লম্বা সময় নিয়ে সেগুলো এসেস করতে থাকলেন। একবার রুমের বাইরেও গেলেন কারো সাথে কিছু আলোচনা করতে।
এসে জানালেন, বেশ কিছু ভ্যাকসিনেশন আমাদের কারোর দেওয়া নেই। আমি ভাবছি দেশে তো সব দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। এখানে আবার এসব কি?
পরে জেনেছিলাম কিছু ভ্যাকসিনেশন দেশে তখনো এভেলেইবল ছিলনা, কিন্তু কানাডায় সেগুলো দেওয়া হতো। ওরা কিছুটা এডভ্যান্সড ছিল।
উনি আমাদেরকে আরেক জায়গায় যেতে বললেন, সেখানে নাকি ওরা ভ্যাকসিনেশনগুলো দিতে পারবে। সেই জায়গার ঠিকানা দিয়ে এপয়েন্টমেন্ট করতে বললেন সুবিধামতো সময়ে।

উফফ! নতুন দেশে আসা আসলেই নতুন জন্মগ্রহণের মতো। আরেক ঝামেলা মাথায় এসে পড়ল। ছুটির দিনটাও পুরো শান্তি পেলাম না। ধুর, এই দেশটি কি আমাকে একটু শান্তি দেবে না? কি ক্ষতি করেছি আমি এর? কানাডায় যেয়ে কত শত বার যে বিরক্তিতে অথবা হতাশায় এমন কথা মাথায় এসেছে তার হিসেব নেই।

ডাক্তারের ওখান থেকে বেড়িয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক সময় হয়ে গিয়েছে। আবারো বেশ কিছু পথ হেঁটে বাড়ি যেতে হবে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে আরেকটি জিনিস বুঝলাম। গন্তব্য কোন অপরিচিত জায়গা হলে পথ লম্বা মনে হয়, তবে গন্তব্য নিজের আপন, স্বস্তির বাড়ি হলে পথ আরো দীর্ঘ হয়ে যায়। পৌঁছানোর আকুলতা ও জলদিটা যে বেড়ে যায়.....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৩৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×