গত দুইদিন ধরে চলছে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা। ব্রিগেডিয়ার আযমীর "আমার সোনার বাংলা" কে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাবনা থেকে এই তুমুল আলোচনা -সমালোচনা চলছে নেটিজেনদের মধ্যে।
মূলবিষয়ে আসি।
৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণ বিপ্লবের মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনের অবসান হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলার আপামর জনসাধারন তাদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে।
এখন যেকোনো ইস্যুতেই নেটিজেনদের মধ্যে তুমুল আলোচনা- সমালোচনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে গুরুতর কিছু আলোচনা -
১) জাতীয় সঙ্গীত শিরক করা হয়েছে।
কারণ গানটি রবীন্দ্রনাথ দূর্গা দেবীকে উৎসর্গ করে লিখেছেন। কেউ কেউ বলছেন কালী দেবীকে উৎসর্গ করে লিখেছেন।
যার প্রমান হিসেবে গানটির ২য়, ২৩ম এবং ২৪তম লাইনটিকে উদ্ধৃত করা হচ্ছে।
-- জাতীয় সঙ্গীতের "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি!"
এই দুটি চরণ থেকেই বুঝা যায় বাংলাকে উদ্দেশ্য করে গানটি লেখা।
" মা, তোমার " এই সম্বোধনগুলো পুরো গানে যতবার ব্যবহৃত হয়েছে তা মূলত বাংলাকেই সম্বোধন করা বুঝায়।
এখানে অন্যকোন কিছুকেই সম্বোধন করার কোন যৌক্তিকতায়ই নেই তা প্রথম লাইন থেকেই প্রমানিত। দেবী দূ্র্গা, দেবী কালীতো নয়ই। তাই প্লিজ কেউ এখানে ধর্মীয় অপব্যখ্যা টেনে আনবেন না প্লিজ। যদি টেনে আনেন তাহলে বুঝবো আপনি বাংলা ভাষাই ঠিক মতো জানেন না। আপনি মূলত ভালোবাসেন উর্দু, ফারসি। আদতে আপনার উর্দু,ফার্সিতে আরো ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। আপনাদের জন্য কবি আব্দুল হাকিম বলেছেন,
'যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি'
২)এটি ভারতের কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা। তাই এটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হতে পারেনা।
৩) ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে গানটি রচিয়িত হয়েছে।
এর প্রেক্ষাপট বঙ্গভঙ্গ। একশ বছর আগের গানটির সাথে বাংলাদেশ কোনভাবেই রিলেটেড নয়। তাই এটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত থেকে বাদ দিতে হবে।
-- দুই এবং তিন নম্বর পয়েন্টের ব্যাখ্যা একসাথেই দেয়া যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের যেচে এসে বলেনি তোমরা আমার লেখা গানটিকে তোমাদের জাতীয় সঙ্গীত করো।
বরঞ্চ তার মৃত্যুর পর আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনে এবং নিজেদের জন্য যূৎসই মনে করে এই গানটিকে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দান করেছি। এতে রবীন্দ্রনাথ হিন্দু, মুসলিম, ভারতীয় না বাঙ্গালী তা মূখ্য বিষয় ছিলোনা।
এর প্রমান ১৯৭০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত জীবন থেকে নেয়া সিনেমাটি।
এই সিনেমাতে মুক্তিযুদ্ধের আগেই গানটি চিত্রায়িত হয়েছে।
৪)
এমন একটা জাতীয় সঙ্গীত যা দেশের যুদ্ধক্ষেত্রে, আন্দোলনে, সংগ্রামে মানুষের শরীর মন জাগ্রত রাখার এক বিন্দু সক্ষমতা রাখে না, এমন এক রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত যা শুনলে সংগ্রামী চেতনা উজ্জীবিত হবে তো দূরের কথা ঘুমিয়ে যাবে এমন সঙ্গীত নিয়ে আবেগ কোথা থেকে আসবে?
-- এটি একটি ডাহা মিথ্যে কথা। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের ময়দানে সমবেত কন্ঠে গানটি গাইতেন নিজেদের উজ্জীবিত রাখার জন্য। দেশপ্রেম নিজেদের মধ্যে সদা জাগ্রত রাখার জন্য। আত্মবলিদানে নিজেকে সপে দেয়ার জন্য। যারা অনেক ভিডিও আপনারা পাবেন। অনেক প্রমান আছে।
তাই ডাহা মিথ্যে কথা দিয়ে সত্যকে দমিয়ে রাখা যাবেনা।
বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার ছাত্র জনতার বিপ্লবের ফসল। বিপ্লবী সরকার চাইলেই রাষ্ট্রের ও জনগনের প্রয়োজনে যেকোন প্রকার সংস্কারের অধিকার রাখে। সেটি জাতীয় সঙ্গীত হোক আর জাতীয় পতাকা হোক কিংবা অন্য যেকোন সংস্কার।
বিপ্লব হয় আত্মবলিদানের মাধ্যমে।
তাই বিপ্লবীরা কখনোই সংকীর্ণ মনা হন না। তারা হন বীর দ্বীপ্ত চেতনার। তাই বিপ্লবীগন চাইলেই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যেকোন সংস্কার করতে পারেন।
সেটি হোক জাতীয় সঙ্গীত কিংবা অন্য কিছু।
যেহেতু আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ভারতীয় কবির লেখা এবং বর্তমানে দেশে ভারত বিদ্বেষ তুঙ্গে। এবং বর্তমান চেতনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ন(ভারতের ভূমিকার কারনে) তাই এটি চাইলে বাদও দেয়া যেতে পারে।
আবার যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী, মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধ পরবর্তী এটি মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছে তার প্রেক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এটিকেই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে রেখে দিতে পারে।
মূলত জনমতই এখানে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে।
তাই এই বিষয় নিয়ে একটি গনভোটের আয়োজন করা যেতে পারে।
এবং সংখ্যা গরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করনীয় ঠিক করা যেতে পারে।
ছবিঃ ফেবু
© লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪২