দেশে যাওয়া-আসা, বিবিধ স্হানে চাকুরী করার কারণে, সমবয়স্ক বাংগালীদের সাথে আমার ঘনিষ্টতা তেমন গড়ে উঠেনি, আমি যাদের সাথে চলি ফিরি তাদের গড় বয়স ৬০ বছরের নীচে; সর্ব কনিষ্ঠজনের বয়স ৪৮ বছর। গত আগষ্ট মাসে ১ পার্কে ১৮ জনের একটা বয়স্ক গ্রুপের সাথে ৪/৫ ঘন্টা সময় কাটিয়েছি; ইহা এক ধরণের নতুন অভিজ্ঞতা ছিলো।
আমাদের গ্রুপের ১ জনের ( ব্যবসায়ী ) শ্বশুর শ্বাশুড়ি এসেছেন দেশ থেকে, উনার বাসায় দেখা হয়েছে; ১টি গ্রীক রেষ্টুরেন্টে বেশ লম্বা সময় আড্ডা দেয়া যায়, আমরা সেখানে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করলে মেহমানরা হালালের কথা বলে উহা নাকচ করে দেন; বরং পার্কে পিকনিক করতে চাইলেন। শহরের ১টি পার্কে পিকনিকের ব্যবস্হা করা হলো; বাচ্চারা বাদ; সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা অবধি। শহরের পার্কগুলোতে ভোরে গিয়ে টেবিল দখল করতে হয়, না'হয় ভালো যায়গা পাওয়া যায় না। ব্যবসায়ী ও গ্রুপের কনিষ্ঠজন গিয়ে সকাল ৮'টায় ৪ টেবিলের একটি স্পট পেয়েছেন।
আমি ৯'টায় গিয়ে উপস্হিত, নাস্তার অনেক আইটেম; কিন্তু এরা ২ জন ব্যতিত কেহ এখনো আসেনি। নাস্তার পর, স্পটের ভার আমাকে দিয়ে ২জনই তাদের স্ত্রীদের ও মেহমানদের আনতে গেলেন। সময় ১০টা, কারো দেখা নেই, আমি বারবার চা খেয়ে, হেঁটে হুঁটে সময় কাটাচ্ছিলাম। একজন তরুণ বাংগালী ছেলে এসে আমার সাথে পরিচয় করে জানালো যে, সে বেশ অসুবিধায় পড়েছে: সে ১৮ জনের একটা বাংগালী 'সিনিয়র সিটিজেন গ্রুপকে' পার্কে এনেছে, কোথায়ও যায়গা পাচ্ছে না। সে বুঝেছে যে, এই ৪টি টেবিল আমি ধরে রেখেছি, তাকে কিছু সময়ের জন্য ২/১ টা টেবিল দেয়া যায় কিনা! আমি ৩টি টেবিল দিয়ে দিলাম; আমাদের লোকজন আসতে দেরী হচ্ছে, এবং আমাদের জন্য ২০টির বেশী চেয়ার আনা হচ্ছে, আমরা ১৪ জনের মতো হবো।
ছেলেটি নিউইয়র্কে জন্ম-নেয়া, খুবই অমায়িক। সে গিয়ে বাস থেকে লোকদের নিয়ে এলো; পরে বুঝলাম ব্যবসাটা ছেলের বাবার, সে বাবাকে সাহায্য করছে। ছেলে সবার সাথে আমাকে পরিচয় করায়ে দিলো; সবাই মোটামুটি আমার কাছাকাছি বয়সের। এখানে যতটুকু চা-কফি, বেগল, খোঁয়াসো, পেষ্ট্রি ছিলো, সেগুলো সবাকে দিলাম। ছেলে ব্রেকফাষ্টের প্যাকেট এনেছিলো, সবাইকে খাবার দিয়ে, সে অন্য যায়গায় খালি টেবিল খুঁজতে গেলো; ২০ মিনিট টেবিল খুঁজে এসে, আমাকে বলে,
-আংকেল, আমি তো মনে করেছিলাম, ১০টার দিকে এলে যায়গা পাবো; এখন দেখছি কোথায়ও খালি টেবিল নেই! বাবা মন খারাপ করবেন।
-এখানেই থেকে যাও, আমাদের লোকজন চেয়ার আনবেন, খাবার রাখার জন্য ১টি টেবিল হলেই আমাদের চলবে।
ছেলে ধন্যবাদের পর ধন্যবাদ দিচ্ছে; লোকজনও খুব খুশী, আমি যায়গা ছেড়ে দিয়েছি। গ্রুপে ১ দম্পতি চট্টগ্রামের, তাঁরা ২ জন আমার সাথে আলাপ জুড়ে দিলেন; বাড়বকুন্ডে বড় ব্যবসা ছিলো; সব ফেলে একমাত্র মেয়ের এখানে চলে এসেছেন। মেয়ে ডাক্তার, উনাদের কিছু করতে হয় না, ১টা স্পেনিশ মেয়ে বাসার কাজকর্ম করে দেয়; দিনের বড় অংশ কাটে জ্যামাইকার ১ মসজিদে। মসজিদ ও ১জন ডাক্তার ( এদেশে এখনো প্রেকটিসের লাইসেন্স পাননি ) মিলে সিনিয়য়র সিটিজেন ডে-কেয়ার চলাচ্ছেন। প্রায় সবাই আমাকে উনাদের গ্রুপে জয়েন করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন।
এদের সবাই ছেলেমেয়েদের কাছে এসেছেন, বিবিধ পেশার লোকজন; প্রায় সবাই গত ৫/৬ বছরের ভেতরে এই দেশে এসেছেন; দেশে ছেলেমেয়ে আছে, পরিবার আছে।
আমাদের লোকজন আসতে আসতে ১২ টা বাজলো; বসার যায়গা নিয়ে কোন অসুবিধা হয়নি, খাবারও ছিলো প্রচুর। উনাদের জন্যও বিরাণী এনেছিলো ছেলেটি, সাথে কিছু কুকি, কেইক ও ফলমুল। বয়স্কদের সবারই খুব ইচ্ছা, আমি যেন মসজিদের সিনিয়র সিটিজেন গ্রুপে যোগদান করি; আমি আগামী কোন এক সময়ের কথা বলে, কোনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি উনাদের সাথে আলাপ করে বুঝলাম যে, উনারা প্রতিদিন মসজিদে কম্পাউন্ডে ৬/৭ ঘন্টার বেশী সময় থাকেন; মসজিদের বেইসমেন্টে রেস্ট নেয়ার যায়গা আছে, ধর্মীয় আলোচনা, ইবাদত ইত্যাদি করে সময় কাটান; সামাজিক কোন কিছুতে নেই, পারিবারিক দায়িত্বও তেমন নেই, মনে হচ্ছে। সবই ভালো, তবে আমি এভাবে সময় কাটাতে পারবো বলে মনে হলো না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৩:৪০