উপরে ছবির এই কিশোরীকে সারাবিশ্ব চেনে, আপনি তাকে চেনার কথা; এই ১২ বছর বয়সী (ছবি তোলার সময়ে ) আফগান কিশোরীর নাম সরবত গুলা, অনেকে তাকে নতুন নাম দিয়েছে, 'আফগানী মোনালিসা' । আফগান গৃহযুদ্ধর কোন এক সময় অসুস্হ হয়ে গুলার মায়ের মৃত্যু হয়, বাবার অনুপস্হিতিতে অসহায় কিশোরী দাদীর সাথে পালিয়ে পাকিস্তানর পেশোয়ারে চলে যায়; ১৯৬৪ সালে, পেশোয়ারের রিফিউজী ক্যাম্পে ছবিটি তুলেছিলো আমেরিকান ফটোগ্রাফার ষ্টিভ ম্যাককারী।
১৯৮৫ সালের জুন সংখ্যা National Geographic'এর কভারে শরবত গুলার ছবিটি ছাপানো হয়েছিলো; National Geographic থেকে এই ছবিটি সারা বিশ্ব ছড়িয়ে পড়ে; '৮০ ও '৯০ দশকে পশ্চিমের প্রায় মানুষ তাকে জানতো, সে আফগানিস্তানের মানুষের সকল কষ্টের, সকল দু:খের ও দৈন্যতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলো, আজও এই ছবিটি আফগানিস্তানের কথা মানুষকে মনে করিয়ে দেয়।
আফগানিস্তানের যুদ্ধ এখনো থামেনি, ইহা একটি চলমান প্রক্রিয়া; কোটী মানুষ পাকিস্তান থেকে আফগানে ফিরে গেছে; কিন্তু শরবত গুলার জীনটাই রিফিউজী জীবন, নিজ দেশে স্হায়ীভাবে ফেরা হয়নি।
পাকিস্তানে থাকাকালীন সময়ে, ১৩ বছর বয়সেই শরবতের বিয়ে হয়; স্বামীর নাম ছিলো রহমত গুল। ১৯৯২ সালে সে স্বামীর সাথে আফগানিস্তানে ফিরে আসে। গুলার মোট ৪জন মেয়ে ও ১ জন ছেলে হয়েছিলো; ৪র্থ মেয়ের মৃত্যু হয় ছোটকালেই। ২০১২ সালে শরবতের স্বামীর মৃত্যু হয়।
২০০২ সালে National Geographic পক্ষ থেকে ফটোগ্রাফার ষ্টিভ ম্যাককারী গুলাকে খুঁজতে আফগানিস্তান আসে; অনেক চেষ্টা করে তাকে খুঁজে পায়; National Geographic গুলার চিকিৎসার খরচ দেয় ও হজ্বের খরচ বহন করে।
আমেরিকান আক্রমণে ( ২০০১) তালেবান সরকারের পতনের হলে, কোন এক সময় গুলা তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলো। ২০১৬ সালে পাকিস্তানী পুলিশ তাকে বেআইনীভাবে পাকিস্তানে বসবাসের জন্য আটক করে। এই সময় আফগান সরকার এগিয়ে আসে, তাকে দেশে নিয়ে যায়, থাকার ব্যবস্হা করে ও মাসিক ভাতা দেয়।
কিন্তু সেই সুখ তার সহেনি, ২০২০ সালে তালেবানরা ফেরত আসার পর, সে ভয়ে দেশ থেকে পালানোর প্ল্যান করে; সে এখন ইতালীতে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৬