কলেজের ১ম বর্ষ শেষ, গরমের ছুটি, বেশীরভাগ সময় খামারে গরু-ছাগল দেখছি, থাকিও সেখানে। সারাদিনের খরতাপের পর, চৈত্রের সন্ধ্যাগুলো কেমন আয়েসী আয়েসী মনে হতো। সেদিন বেলা ডুবার পর, পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে পুর্বের মাঠ ও পাহাড়টাকে দেখছিলাম; মাঠের মাঝামাঝি কে একজন টুকরি মাথায় গ্রামের দিকে আসছে, সাঁঝের আলোয় এতদুর থেকে চেনা মুশকিল; হাঁটার প্যাটার্ণ দেখে মনে হলো, পশ্চিম পাড়ার আবুল ভাইয়ের ছোট মেয়ে মনি, জ্বীনে-ধরা বেছুর ছোট বোন। আমি ঘাটে নেমে হাতমুখ ধুয়ে আবার পাড়ে উঠলাম; দেখি মনি যেখানে ছিলো, অনেকটা সেখানেই আছে, কিন্তু বসা অবস্হায়। গত সপ্তাহে একটা ছেলেকে মাঠে ধোঁড়া সাপে কামড় দিয়েছিলো; এই বছর মাঠে অনেক ইঁদুর; সেই কারনে কিছু সাপও আছে মাঠে।
সাপের কথা মনে আসায় আমি অনেকটা দৌড়ে মনির কাছে পৌঁছালাম; কাছে যেতেই মনি উঠে দাঁড়ালো, তার বাজারের টুকরী পড়ে গিয়েছিলো, তাকে খুবই বিষন্ন দেখাচ্ছে, কপালে ঘাম। চারিদিকে বেশ পরিমাণ খেসারীর ডাল ছড়ায়ে আছে। সে বাজার নিয়ে ফিরছিলো, পড়ে গেছে; কিছু পরিমাণ ডাল সে টুকরিতে তুলেছে, ধুলাবালি ও খড়কুটায় একাকার; বাকীগুলো ধানের নারা ও ফাটলে পড়েছে। সে সেগুলো তোলার জন্য আবার বসলো। আমি বললাম,
-ওগুলো থাক, তুই বাড়ী চলে যা।
-মা রাগবে, বাবা বলেছে রাতে শুটকি দিয়ে ডাল রান্না করতে।
-এগুলো ফাটল মাটল থেকে বের করতে তোর সারা রাত যাবে।
-তুমি যাও, আমি এগুলো নিয়েই বাড়ী যাবো।
-তোর বাবা খাবে কখন?
-যখন হয়, তখন খাবে, তুমি যাও।
দেখতে দেখতে অন্ধকার হয়ে এলো; আমি বললাম,
-খামারে খেসারীর ভাংগানো পরিস্কার ডাল আছে, ওখান থেকে নিয়ে যা, এই ধুলাবালির ডাল নিলে গেলে তোর মায়ের মন খারাপ হবে।
-আমি এগুলো তুলে নেবো; তোমাদের ডাল নিলে মা রাগ করবেন।
-তুই না বললে উনি জানবেন কি করে? চল, তোর ঘরে ফিরতে দেরী হবে।
মনি আমাকে কিছুটা অপছন্দ করতো; তার ধারণা, আমি বেছুর সব কথা শুনি, সেজন্য বেছু একটু বেশী পাগলামী করতে পছন্দ করে। গ্রামের সবাই মনে করে যে, বেছুর সাথে জ্বীন আছে। আমরা নীরবে হেঁটে খামারের দিকে যাচ্ছি, আমি বললাম,
-তুই অকারণে আমার উপর রাগ করিস সব সময়।
-অকারণে নয়, অনেক কারণ আছে; বেছু তোমাকে পেলে কিসব পাগলামী শুরু করে, তোমার হাত ধরে কথা বলে, মানুষ কি মনে করে?
-বেচারী সোজা মানুষ, কথা বলতে চায়।
-তোমাকে পেলে ওর কথা কখনো শেষ হয় না, এগুলো ভালো নয়।
-তুই মন খারাপ করিস না, সব মেয়ে মানুষ সমান হয় না; কিছু মেয়ে একটু বেশী আদুরে হয়।
মনির ধুলো মাখা ডালগুলো রেখে দিয়ে, তাকে আনুমানিক সের'খানেক ডাল দিলাম; তার বিষন্নতা কমে এসে্ছে, আমি দৌঁড়ায়ে গেছি, এতেই তার চোখগুলো উজ্বল হয়ে উঠেছিলো; আমি বললাম,
-তোকে দেখে মনে হচ্ছে, কেহ তোকে পিটায়েছে, একটু হাস।
-হাসাহাসির দরকার নেই; তুমি বেছুর সাথে হাসিও।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১১:৪৯