আমেরিকার স্পেনিশ ও আফ্রিকান-আমেরিকান নানীদের বেশীর ভাগকেই আজকাল নাতী/নাতনীদের পালন করতে হচ্ছে; এই কারণে, রিটায়ারমেন্টের পরও অনেককে দীর্ঘদিন কাজ করতে হচ্ছে।
আমার বন্ধুদের মাঝে ১ জনের মোটামুটি বেশ বড় ধরণের ব্যবসা আছে; গত শীতে, তিনি পায়ে বেশ ব্যথা পেয়েছিলেন; তখন মাঝে মাঝে উনার ব্যাংকিং'এর লেনদেনটা আমাকে দেখতে হতো। ফেব্রুয়ারীর শীতের এক বিকেলে একটা বড় ধরণের চেক ব্যাংকে জমা দিতে বললেন; ৫'টায় ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়; আমি বন্ধ হওয়ার ১০ মিনিট আগেই ব্যাংক এলাকায় পৌঁছলাম, কিন্তু পার্কিং নেই; রাস্তায় স্হানে স্হানে বরফের স্তুপ থাকায় পার্কিং এর সংখ্যা কমে গেছে; ৫ মিনিট চারিদিকে ঘুরে কিছু না পেয়ে, ব্যাংক থেকে ১ ব্লক দুরে, ওয়ানওয়ে রাস্তায় ডবল পার্কিং করলাম, টিকিট দিলে ৫০ ডলার জরিমানা হবে। ব্যাংকের দিকে পা বাড়ানোর সময়, বাড়ীর সিড়ির কাছে দাঁড়ানো ১৪/১৫ বছরের এক কিশোরী বললো,
-২/৩ মিনিটের ভেতরেই তুমি টিকিট পাবে।
মেয়েটি এই শীতের ভেতর হালকা একটা জ্যাকেট পরে, ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলো; সাদা পুয়ের্তোরিকান মেয়ে; শীতে কান ২টা কিছুটা নীল হয়ে গেছে। আমি বললাম,
-তুমি পুলিশকে বলিও, পরিবারের গাড়ী, লোকজন বাসা থেকে বেরুচ্ছে; আমি ৫ মিনিটে ফিরে আসবো।
আমি চলে যাচ্ছিলাম, সে বললো,
-পরিবারের গাড়ীর চাবি দিয়ে যাও, পুলিশ যদি সরাতে বলে!
-তুমি চালাতে পার, লাইসেন্স আছে?
-চালাতে পারি, লাইসেন্স নেই।
আমি চাবি দিতে দ্বিধা করায়, সে বললো,
-তুমি ভীতু মানুষ, চাবি দিতে ভয় পাচ্ছ! এই হলো পরিবারের গাড়ী!
তাকে চাবি দিয়ে আমি দৌঁঁড় দিলাম, দরজা বন্ধ করার ১ মিনিট পুর্বে ব্যাংকের ভেতরে যেতে সক্ষম হলাম। লাইন বড়, মিনিট দ'শেক লেগে গেলো। বের হয়ে গলির মাথা থেকে দেখি, গাড়ী ডবল পার্কিং'এ যেখানে রেখেছিলাম, সেখানে নেই; মেয়েটি খালি যায়গা পেয়ে পার্কিং করেছে কোথায়ও। হেঁটে ব্লকের মাঝামাঝি যেতেই সে আমাকে দেখে হর্ণ দিলো। সে ড্রাইভিং সীটে বসে আছে; আমাকে বললো,
-ভয়ে তোমার ঘাম বের হচ্ছে?
-না, আমি বুঝতে পেরেছিলাম, তুমি খালি যায়গা পেয়েছ।
সে গাড়ী থেকে নামলো, আমি ধন্যবাদ দিয়ে, জিজ্ঞাসা করলাম,
-এই শীতে হালকা জ্যাকেট পরে বাইরে কি করছিলা?
-আমি গার্বেজ ফেলতে আসার সময় ভুলে চাবি নিয়ে বের হইনি; এখন নানী ফেরা অবধি বাইরে থাকতে হবে।
-নানী কখন ফিরবে?
-নানী কাজ করছে, সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মাঝে ফেরে।
-তুমি কতক্ষণ বাইরে?
-ঘন্টা তিনেক।
-কোন রেষ্টুরেন্টে গিয়ে বসো।
-আমার সাথে টাকা নেই।
-তুমি চাইলে আমার সাথে যেতে পার, আমি ডিপোজিট স্লিপটা অফিসে দিয়ে, আশপাশে কোথায়ও তোমার বসার ব্যবস্হা করবো।
সে দুরে কোথায়ও যেতে চাইলো না, পাশেই ম্যাকডোনাল্ড; সে খাবার নিলো, আমিও সামান্য খাবার নিয়ে বসলাম; প্রশ্ন করলাম,
-নানীর সাথে কেন, মা-বাবা কোথায়?
-বাবাকে কখনো দেখিনি; মায়ের বিয়ে হয়েছে, আমি সৎ-বাবার সাথে থাকতে চাইনি।
-নানীর তো বয়স হয়েছে, মনে হয়!
-হয়েছে, আমার জন্য তাঁকে কাজ করতে হয়। আগামী বছর থেকে আমি কাজ করতে পারবো; তখন তাঁকে আর কাজ করতে দেবো না; আমি উনার ভার নেবো।
-মনে থাকবে, নাকি নিজের কোলে কেহ এসে যাবে?
-মনে থাকবে, মাকে দেখলাম তো, উহা জীবন নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২৪ ভোর ৪:৫২