somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪)

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় সমস্যা ছিল পানির সমস্যা। আমেরিকায় সরাসরি কল থেকে পানি খাওয়াটা কোনো ব্যাপার না। সবাই খায়। যথেষ্ট নিরাপদ ও যা শুনেছি। কিন্তু আমি কখনই এমন সরাসরি না খাওয়ায়, প্রথম দিকে খুবই সমস্যা হত। খেতে গেলে কেমন কেমন জানি লাগত। ক্যাম্পাসে, আমাদের দেশে যেমন ভার্সিটিগুলোয় ফিল্টার পানি থাকে তেমনি এখানে ওয়াটার ফাউনটেইন থাকে। সবাই নুয়ে জাস্ট বাটন প্রেস করে খেয়ে নেয়। প্রথম প্রথম বেশির ভাগ পানি মুখ থেকে পরে যেত। পরে আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেছে।

তৃতীয় সমস্যা ছিল বাথরুম আর গোসলের। ডর্মগুলোতে বাথরুম আর গোসল করার জায়গা সবার একসাথে। হাই কমোডে আমি এমনিতেই অভ্যস্ত না। ব্যবহারের পর পানির ও কোনো ব্যবস্থা নাই। শুধু টিস্যু। এছাড়া দরজার মাঝখানে বিশাল ফাকা জায়গা। উপরে নিচেও একই অবস্থা। এর চেয়েও খারাপ অবস্থা ছিল ইন্টারন্যাশনাল অফিসে। ঐখানের টয়লেটে ছিটকিনি লাগানোর কোনো ব্যবস্থাই ছিল না !!!!! সে এক চরম অবস্থা। গোসল করার জন্য পাশাপাশি তিনটা শাওয়ার। কার্টেইন একই সাথে লাগানো। প্রবলেম হইলো একপাশ থেকে কেউ টান দিলে ওপর পাশেরটা পুরি উম্মুক্ত হয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনই দুই চার জনের মান ইজ্জত পাবলিক প্রপার্টি হয়ে যেত। আমার সাথেও হইছে। সবার টার্গেট থাকত মাঝের শাওয়ার দখল করার। একটা মজার ঘটনা বলি। আমার ফ্লোরে একপাশে ছেলে, একপাশে মেয়ে। সেই দিন নর্থ হেজেসে প্রথম। কোথায় কি জানি না। বাথরুম খুজতেছি। তখন ভার্সিটি শুরু না হওয়ায় তেমন কেউই নাই। মেয়েদের পাশ যে আলাদা তাও জানি না। মেয়েদের পাশের বাথরুমে কেউ আবার বিটলামি করে "WOMEN" এর "WO" মুছে দিছে। কেউ ছিল না। আমি নিশ্চিন্ত ভাবে বাথরুম করে দাত ব্রাশ করছি এমন সময় এক মেয়ে শুধু টাওয়েল জড়িয়ে ভিতরে ঢুকলো। আমি আর ওই মেয়ে দুইজনই থতমত। মেয়ে কনফিউজড ভাবে বলল "আমি তো জানতাম এটা মেয়েদের ওয়াশরুম" আমি বললাম বাইরে তো "MEN" লেখা। মেয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে গোসল করতে চলে গেল। পরে জেনেছিলাম যে ওই মেয়েও ঐদিনই প্রথম আসছিল, তাই বুঝে নাই। আমার ফ্লোর আর.এ. ছিল জার্মানির একটা মেয়ে, কেলী। ও এই ঘটনা পরে গ্রুপ আড্ডায় আমার থেকে শুনে বলে "তোমার কপাল খারাপ যে মাত্র একটাই মেয়ে আসছিল" !!!!!

চতুর্থ সমস্যা ছিল প্রথম প্রথম আমি আমেরিকানদের সাথে মিশতেই পারতাম না। একসেন্ট বুঝতে সমস্যা হত আমারও, ওদেরও। ওরা যেই সব টপিক নিয়া আলাপ করত তার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আইডিয়া আমার ছিল না। ঝামেলা বেশি হতো ওরা যখন জোকস করত। ওদের জোকস আমার কাছে মোটেও ফানি লাগত না। এছাড়া কথায় কথায় "থ্যান্ক ইউ" বলাটাও তখন রপ্ত করে উঠতে পারি নাই। তাই প্রথমে অনেকেই আমাকে রুড ভাবত। এই সমস্যা কাটানোর জন্য ফ্লোর আর.এ. কেলী আমাকে গ্রুপ প্রোগ্রামগুলোয় বেশি বেশি ডাকত আর কিছু না কিছু করতে দিত। ডর্মে প্রতি সপ্তাহেই কিছু না কিছু হত, গ্রুপ আড্ডা- যেখানে জাস্ট এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করা হত। অথবা ছোট খাটো কোনো খেলা- আইসক্রিম অথবা হাওয়াই মিঠাই বানানো সবাই মিলে, কারাওকে প্রতিযোগিতা, ট্রেজার হান্ট, ওয়াটার ফাইট, জোম্বি হান্ট, ওয়ার্ড গেম, পিজা পার্টি এইগুলো। এই সব জিনিস ঐখানকার মানুষদের সাথে মিশতে আর কালচার এডপ্ট করতে হেল্প করে খুব।

পঞ্চম সমস্যা ছিল, যেকোনো ছুটিতেই, সেটা ২ দিন হোক অথবা ৭ দিন, ডর্ম পুরো বন্ধ হয়ে যেত। তখন তল্পিতল্পা নিয়া অন্য কারো বাসায় উঠতে হত। সোফায় শুয়ে কোনো মতে ছুটির দিনগুলো পার করতাম। এত টাকা দিয়ে থাকার পর এই জিনিসটা পুরাপুরি অবিচার মনে হত।

(চলবে)

অন্যান্য পর্ব:
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৪)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৫)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৬)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৭)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৮)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৯)
আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:১৩
৩২টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×