বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ী জীবিত বা মৃত ব্যাক্তির মানহানি একটা অপরাধ।বাংলাদেশের দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি মানহানির উদ্দেশ্যে বা মানহানিকর জেনে বা পাঠের জন্য উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান কল্পস্মৃতির সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দাবাদ প্রণয়ন বা প্রকাশ করে যে, সেই নিন্দাবাদ উক্ত ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করবে, সেই ব্যক্তি কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা ছাড়া উক্ত ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে।
বাংলাদেশের দন্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদ- বা অর্থদন্ড বা উভয়বিধ দন্ড হতে পারে। ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরণ সম্পর্কে এবং এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।
এখানে দেখা যাচ্ছে যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে অনেকেই অবাধে মানহানিকর অপরাধ করে যাচ্ছে। উদাসী স্বপ্ন নামে একজন বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সামাজিক অবস্থান বিবেচনা না করে যাকে তাকে তুমি সম্বোধন করছে।
বারবার বলার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে এসব অপকর্মে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
শেরে বাংলার পায়ের ধূলার যোগ্য হতে না পারা এই উদাসী স্বপ্ন নামের এক নোংরা,নষ্ট জীব তাকে নিয়েও বাজে মন্তব্য করা ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।
শেরেবাংলা ছিলেন বৃটিশ শাসিত ভারতের অন্যতম বাঙ্গালী মুসলমান রাজনৈতিক নেতা,ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। কলকাতার প্রথম মুসলিম মেয়র,অবিভক্ত যুক্ত-বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, দীর্ঘ ৪০ বছর কলকাতা হাইকোর্ট-এর আইন ব্যবসা করা দক্ষ আইনজীবি এবং সর্বোপরি ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব পেশকারী,যেটা ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্যোগ।
তার সাহসিকতার কারণে অবাঙ্গালীরাই তাকে শেরে বাংলা উপাধি দিয়েছিলো।
জওহরলার নেহেরু মতো ভারতের জাতীয় নেতা ও পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ১ বছর বাঙ্গালী ফজলুল হকের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। লাহোর প্রস্তাব পেশ করার দিন সম্মেলন কক্ষে প্রবেশের সময় তাকে দেখে পথ ঝেড়ে দিয়ে জিন্নাহও বলেছিলো,যখন বাঘ সামনে এসে দাড়ায়, ভেড়াকে তখন পথ ছেড়ে দিতে হয়। বাঙ্গালী নেতা হওয়ার পরও তার এরকমই দাপট ছিলো এইসব বিশাল অবাঙ্গালী ব্যাক্তিদের কাছে।
একজন ব্যাক্তির রাজনৈতিক মেধা ও দক্ষতা কতোটা থাকলে বৃটিশ আমলে কলকাতার বিলাত ফেরত ঝানু রাজনীবিদদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে পারেন,বিন্দুমাত্র জ্ঞান-বুদ্ধি থাকলে সেটা যেকেউ বুঝবে। সেইসময় শেরে বাংলা না থাকলে আজ বাংলাদেশের জনগণের অবস্থাও হতো গুজরাট,কাশ্মির আর দিল্লিসহ ভারতের মুসলমানদের মতো ,যাদের দিনে দুপুর যেকোন অজুহাতে হত্যা,ধর্ষণ করা হয়.ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে বাংলাদেশী নাগরিক ঘোষণা করা হয়।
এই শেরেবাংলাই প্রথম ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী করে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন,যেটা পরে জিন্নাহ,নেহেরু আর প্যাটেলের ষড়যন্ত্রে পাকিস্তান প্রস্তাবে পরিণত হয় আর কলকাতাসহ পশ্চিম ও পূর্ববাংলা স্বাধীন না হয়ে পাকির উপনিবেশ হয়। তারপরও লাহোর প্রস্তাবের ফলেই বাংলা ভারত থেকে আলাদা হয়ে তারপর স্বাধীন হতে পেরেছে,যেটা ভারতের অংশ হলে কোনদিনও সম্ভব হতো না।
আজ শেরেবাংলাকে সে বলছে সাম্প্রদায়িক বলছে,অথচ বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে জামালপুরে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। ফজলুল হকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেখানে দাঙ্গা বন্ধ হয়। সুভাস চন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎ বসু এবং হিন্দুমহাসভার শ্যামাপ্রসাদ মিত্র ছিলেন তার রাজনৈতিক মিত্র।
কৃষকদের দুর্দশা নির্মূলের জন্য ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন,১৯৫৩ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর মুসলিম লিগের রাজনীতি বিলোপ করে মূখ্যমন্ত্রী হয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ, ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে সরকারী ছুটির দিন ঘোষণা, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিতে ‘শহীদ মিনার’ নির্মাণ,বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ধমান হাউসকে বাংলা ভাষা গবেষণা কেন্দ্র বা বাংলা একাডেমি ঘোষণা করা, জমিদারি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়া এবং বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা ছিলো তার অগণিত অবদানের মধ্যে কিছু।
মূলত মহান ব্যাক্তিদের এভাবে ইতরের মতো গালিগালাজ করারা বড় মানসিক রোগী,যারা জীবনে কোনো ক্ষেত্রেই সফল হতে না পারার অক্রোশে বড়দের গালিগালাজ করে বিকৃত আনন্দ পায়।
এইসব উদাসী ফুদাসী,যাদের নিজের আসল নাম দেয়ার তো সাহসও নাই, এরা চিরদিনই নর্দমায় পড়ে থাকবে আর স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রথম পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে চিরদিন সন্মানিত হয়ে থাকবেন শেরে বাংলা ফজলুল হক-এর মতো মহান ব্যাক্তি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৩:১০