somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রাম্প ঝড়ে উড়ে যাবে বাংলাদেশ?

০৮ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেকদিন পর বাংলাদেশের মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা একসাথে একটি বড় ইস্যুতে সাড়া দিয়েছে। মিডিয়া আর জনগণ সমানতালে অন্তর্বর্তী সরকারের ডাউনফল নিয়ে রসিকতা করছে। আসলে বাঙালির স্বভাবই এমন ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, সাধারণ মানুষের এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব থাকবেই। পান খেতে গিয়ে যদি চুন একটু বেশি হয়ে যায়, সেটাও সরকারের দোষ! আর আজকের ঘটনাটা তো আরও ভয়াবহ।

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন এক ঘোষণা দিয়েছেন—আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব পণ্যের ওপর ৩৫% শুল্ক। আগে ছিল ৩৭%, এখন কমে ৩৫% । চিঠিতে তিনি আরও বলে দিয়েছেন—বাংলাদেশ যদি আমেরিকার মাটিতে ফ্যাক্টরি বানায়, তাহলে শুল্ক শূন্য। মানে, "তোমার দেশের সস্তা লেবার ছেড়ে, আমার দেশে আসো" এই হচ্ছে নতুন বাণিজ্যনীতি!

গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, তাদের ওপর অতি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আগের ১৫ শতাংশের ওপর আরও ৩৭ শতাংশ বাড়িয়ে মোট ৫২ শতাংশ করে দিয়েছিলেন। এখন ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, তা কমে ৩৭ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে সেই শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ! তাই নেটিজেনদের মনে প্রশ্ন বাংলাদেশের সঙ্গে এমন আচরণ ট্রাম্প করলেন কেন?

আরও চমক আছে শুধু বাংলাদেশ না, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, লাওস, তিউনিসিয়া, এমনকি কাজাখস্তানও বাদ গেল না। তবে অনেকে শুল্ক আমাদের থেকে কম। তালিকাটা দেখে মনে হচ্ছে ট্রাম্প নিজে বসে বসে বিশ্ব মানচিত্রে শুল্কের রং তুলছেন! এখনকার ট্রাম্প এক রকম ‘বদ্ধ উন্মাদ’, যেন পাগলের মতো আচরণ করছেন। তিনি এখন নোবেল পুরস্কার পেতে চান ! অন্যদিকে আরেক আন্তর্জাতিক অপরাধী নেতানিয়াহুও এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। দুজন মিলে গাজায় ‘রিসোর্ট’ বানানোর পরিকল্পনা করছেন বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এই অদ্ভুত ট্রাম্প কেন বাংলাদেশকে এত কঠোর শুল্কের মুখে ফেললেন, তার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না।

অনেকে দোষ দিচ্ছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা বিষয়ক উপদেষ্টা খলিলকে। বলা হচ্ছে, তারা নাকি সঠিকভাবে লবিং বা ডিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও প্রধান উপদেষ্টা চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বদলাতে। গত মাসে তিনি লন্ডনে এয়ারবাস কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যাতে ইউরোপকে দেশের সিচুয়েশন বুঝিয়ে এয়ারবাস কেনা থেকে সরে এসে বোয়িং থেকে বিমান কেনার পথ সুগম করা যায়। এমনকি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায় যেখানে প্রধান উপদেষ্টা এয়ারবাসের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে হয়তো কথা বলতেন ।

অর্থাৎ, বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান নীতিনির্ধারকরা বোয়িংয়ের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। বাণিজ্য সচিবও বলেছেন, বাংলাদেশ বোয়িং থেকে আরও বিমান কিনবে এই বার্তা ট্রাম্প প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ইউরোপকে সন্তুষ্ট রাখতে এয়ারবাসকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। সে সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন আরও বোয়িং বিমান কেনার, কিন্তু তখন শেখ হাসিনা ইউরোপের দিকেই ঝুঁকে পড়েছিলেন।

এখন আশার কথা হলো ট্রাম্প এখনো বাংলাদেশকে পুরোপুরি ধ্বংস করেননি। এখনো সময় আছে নতুন কোনো কূটনৈতিক তৎপরতায় কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার। বাংলাদেশের উপর আরোপিত টারিফ কমিয়ে ভিয়েতনামের কাছাকাছি নেয়া যায় কিনা তার জন্যে বর্তমানে বাণিজ্য উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা সবার অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে। রোহিঙ্গা বিষয়ক উপদেষ্টা খলিলও সেখানে আছেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।

এই খবর শোনার পর আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে যেন ঈদের আনন্দ নেমে এসেছে ! তারা কেউই শিল্প ধ্বংস, গার্মেন্টস খাতের ধস নিয়ে ভাবছে না তারা কেবল দেখতে চায় প্রফেসর সাহেব (মুহাম্মদ ইউনূস) কীভাবে হোঁচট খান। বাস্তবতা হলো, শেখ হাসিনা যদি এখন ক্ষমতায় থাকতেন, তিনিও এই পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দিতে পারতেন না। কারণ ট্রাম্প ব্যক্তিগত মর্জিমাফিক সিদ্ধান্ত নেন, যুক্তির ভিত্তিতে নয়। মাঠে খেলা ট্রাম্প খেললেন একাই, গোলও দিলেন একাই, আমরা শুধু দর্শক। এখন প্রশ্ন: আমরা কী করবো ? পাল্টা শুল্ক বসাবো ? উত্তরও ট্রাম্প দিয়ে রেখেছেন "তাহলে তোমার শুল্ক যত, তার সঙ্গে আমারটা জুড়ে নেব !"

এখনো আমাদের মনে রাখা দরকার এই সময়টা একটি রূপান্তরকাল। এর মধ্যে আবার নতুন করে বড় বিপদের মুখে পড়া কতটা যুক্তিযুক্ত? ট্রাম্প মূলত আমেরিকার ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই ভাবেন না। অথচ আমেরিকার রাষ্ট্রদূত, দূতাবাস সবাই জানার কথা দেশে কী হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্পের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ যেন সুখে আছে তাই হয়তো সে চায় দেশটি উচ্চ শুল্ক বহন করুক !

এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলোরও আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ তারাও এই ‘পাগলাটে’ ট্রাম্পের সঙ্গে ডিল করতে পারত না। যেখানে প্রফেসর সাহেব নিজেই হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে অন্যদের অবস্থা আরও খারাপ হতো। বিএনপির জন্য তো ভয় আরও বেশি। চীনের সঙ্গে তাদের ইদানিং যে ঘনিষ্ঠতা দেখা যায় ভবিষ্যতের জন্য তা অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং এখন বাংলাদেশের উচিত পশ্চিমাদের সঙ্গে যেকোনো মূল্যে সম্পর্ক ভালো রাখা। চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসা দরকার। এই কঠিন সময়ে বিচক্ষণ কূটনীতিই পারে দেশকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচাতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×