somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোকের দিনেও HSC, নির্বিকার উপদেষ্টা আর প্রশ্নবিদ্ধ সেনা ভূমিকা

২২ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ পুরো দেশ শোকাহত। উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আগামীকাল জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে, অথচ এইচএসসি পরীক্ষা যথারীতি চলবে। এই সিদ্ধান্ত সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

অনেকেই মনে করছেন, যারা মাইলস্টোন কলেজের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, তাদের কথা ভেবে আগামীকাল এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করলে জাতির কোনো বিশাল ক্ষতি হতো না। করোনার সময় আমরা দেখেছি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পরীক্ষা স্থগিত করেছিলেন, যদিও এর একটি নেতিবাচক দিক ছিল শিক্ষার্থীদের অটো পাসের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন কেউ পরীক্ষা বাতিল করতে বলছে না, কেবল একদিনের জন্য পরীক্ষা স্থগিত করে পরবর্তী শুক্র বা শনিবার নিয়ে গেলে বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান হতে পারত।

শিক্ষা উপদেষ্টা স্যার যেভাবে বলছেন যে বিমান দুর্ঘটনার সাথে এইচএসসি পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই, তা পুরোপুরি সত্য নয়। যারা মাইলস্টোন কলেজের ছাত্র, তাদের পরিবারে এই ঘটনা গভীর ট্রমা তৈরি করেছে। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে মারা গেছেন। তার ছেলে সন্তান এখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কীভাবে সে এই শোক কাটিয়ে আগামীকাল পরীক্ষা দিতে যাবে, তা নিয়ে নেটে নাগরিকরা প্রশ্ন তুলেছেন। এনডিসি (নটর ডেম কলেজ) সহ অনেক কলেজ পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, আগামীকাল পরীক্ষা দিয়ে তারা শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবেন। জুলাই আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেক সংগঠন শিক্ষা উপদেষ্টাকে আল্টিমেটাম দিচ্ছে। সরকার হাতের নাগালে থাকার মধ্যেই একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নেবে বলে সবাই আশা করছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা যে কয়েকজন অথর্ব উপদেষ্টা পেয়েছি, তার মধ্যে একজন হলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। তিনি সাবেক গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। অধ্যাপক ইউনূস তাকে স্বাস্থ্যর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কেন দিয়েছেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এ ধরনের অথর্ব উপদেষ্টাদের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনেকে ঠাট্টা করে "এনজি-গ্রাম সরকার" বলে থাকেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জুলাই আহতদের ব্যাপারেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। জুলাইয়ে আহতরা সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় আন্দোলন করেছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিএস দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবরে এসেছে, কোনো নিয়ম না মেনেই নাকি সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার নিয়োগ হচ্ছে। আজকের এত বড় সংকটের দিনেও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্লিপ্ত ভূমিকা মানুষকে অবাক করেছে। রাজা যায়, রাজা আসে, কিন্তু মানুষের দুর্দশা কি কমে?

এদিকে সকাল থেকেই সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। অভিযোগ উঠছে, কতজন মারা গেছে তার আসল হিসাব গোপন করা হচ্ছে। মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিডিয়ার সামনে মুখ না খুলতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আজকের ঘটনায় বিমান বাহিনী কি দায় এড়াতে পারে? ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান প্রশিক্ষণের যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। চাইলে কি নির্জন কোনো এলাকায় এরকম বিমান প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেত না ?

এদিকে মানুষ মরছে আর উক্ত এলাকার রিকশা ও সিএনজি ওয়ালারদের ভাড়া বেড়ে গেছে। অ্যাম্বুলেন্স আসার আগে যখন শিশুদের ঝলসে যাওয়া দেহ নিয়ে মানুষ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রিকশা, সিএনজি খুঁজছিল, তখন তারা ৪-৫ গুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। মানুষকে কোনো প্রাইভেট কারও সাহায্য করছিল না। এটাই কি আমাদের বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্য ? আশেপাশে দোকানগুলোতে খাবার ও পানির দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো স্ট্যান্ডবাজি করতে হাসপাতালে শো-অফ করতে গেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের এই কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ আছে, হতাশা আছে। এত বড় দলবল নিয়ে বার্ন হওয়া রোগী দেখতে যাওয়ার ঝুঁকি তারা জানেন বলে মনে হয় না।

এই পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল মহলের একটি মানবিক ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেবল দায়সারা বিবৃতি বা দায় চাপানোর রাজনীতি নয়, বরং মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নিরাপদ ও সুসংগঠিত ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৩:০৪
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×