
বাংলাদেশে এখন যে রাজনৈতিক আবহাওয়া বিরাজ করছে, তাকে 'ব্যস্ত' বললেও কম বলা হয়। দেশের ভেতরে ও বাইরে কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ এবং ঘন ঘন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলো নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরের সাথে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ধারাবাহিক বৈঠকগুলো রাজনীতির মঞ্চে এক নতুন নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন একটাই: রাজনীতিতে হচ্ছেটা কী ?
জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে লন্ডনে ট্রেসি জ্যাকবসন এবং তারেক রহমানের মধ্যে একটি একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা নিশ্চিত করেছেন তারেকের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর এবং মার্কিন দূতাবাস। এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে আগামী নির্বাচন, সরকার গঠন এবং বিএনপির রাজনৈতিক রূপরেখা নিয়ে। নির্বাচনে জয়ী হলে কেমন দেশ গড়তে চায় বিএনপি এমন মৌলিক প্রশ্নগুলো আলোচনায় এসেছে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অক্টোবর মাসেও ট্রেসি জ্যাকবসন আবার লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। এত ঘনঘন বৈঠকের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? এই প্রশ্নটি এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে স্পেন, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সুইডেন, রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ধারাবাহিক সাক্ষাৎ যেন আরেকটি রহস্যের জন্ম দিয়েছে। এটি কি কেবলই সৌজন্য সাক্ষাৎ, নাকি এর পেছনে গভীর কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ রয়েছে? জামায়াত কি তবে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে? এ কারণেই কি সকলে তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে?
জামায়াতের পক্ষ থেকে এমন সময় এই বৈঠকগুলো হচ্ছে, যখন তারা নিজেদেরকে 'লিবারেল ও প্রগতিশীল' দল হিসেবে প্রমাণ করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি নারী নেতৃত্বকে ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সাথে দেখা করিয়ে তারা এই বার্তা দিতে চাইছে। অন্যদিকে, জামায়াত ক্ষমতায় এলে নারীরা কেবল নারীদের সামনে নাচতে পারবে এমন ফতোয়া দেওয়া হচ্ছে। এই দ্বৈত চরিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: জামায়াত রাষ্ট্রদূতদের কাছে কী বার্তা দিচ্ছে? তারা কি আসলে শরিয়া চায় নাকি গণতান্ত্রিক রাজনীতি করবে ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুতে শিবিরের জয় জামায়াতকে নতুন আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। তারা মনে করছে, জাতীয় নির্বাচনে ০৩ আসন থেকে একলাফে তারা একক ভাবে ১৬০ আসন পর্যন্ত পেতে পারে। এই আত্মবিশ্বাসের ভিত্তিতেই জামায়াত সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আবার একই সাথে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে।
অন্যান্য রাষ্ট্রদূতরা যেখানে জামায়া্তের সাথে সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন, সেখানে ট্রেসি জ্যাকবসনকে ভিন্ন মনে হচ্ছে। তিনি কেন বারবার তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করছেন? আমেরিকা তারেক রহমান এবং বিএনপির কাছে আসলে কী চায় ? বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের এই ঘন ঘন ব্যস্ততা এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন একটি সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আগামী নির্বাচন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
ট্রেসি জ্যাকবসন এবং অন্য রাষ্ট্রদূতদের এই পদক্ষেপগুলো হয়তো কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার অংশ, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতার ভারসাম্যে এক অদৃশ্য প্রভাব পড়ছে। আগামী দিনগুলোতে জামায়াত তার 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড'-এর বিষয়ে কতটা সফলভাবে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করতে পারে এবং তারেক রহমানের সাথে আমেরিকার আলোচনা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কী ধরনের সমীকরণে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার বিষয়।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


