somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক গল্পঃ পরভৃতা -২

১৭ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১ম পর্ব

( ২)


কামরুন্নাহার পলাশের ছোট ফুফু, পলাশের অত্যন্ত প্রিয়। বেড়ে উঠেছে সে এই ফুফুর কাছেই,ছোটবেলা থেকে তার যত বায়না,যত আবদার সব এই ফুফুর কাছেই । এ জন্য কামরুন্নাহারকে পলাশের মায়ের কাছ থেকে কম টিকা টিপ্পনী শুনতে হয়নি। কামরুন্নাহার অবশ্য তাতে তেমন কিছু মনে করেন না, বাচ্চাদের ভালেবাসা তার কাছে স্বর্গীয় নেয়ামতের মতো। সেটুকু পাওয়ার বিনিময়ে কে কি বলল তাতে তার কিছু যায় আসে না।

তবে ফুফুর প্রতি পলাশের অভিযোগের শেষ নেই।কিছুতেই সে একটু বেশি সময় ধরে নিজের করে পাওয়া যায় না তাকে।
পলাশের কাছে মাঝে মাঝে মনে হয় তার ফুফু সম্ভবত রোবট টাইপের কিছু একটা।একটানা একজন মানুষ কিভাবে সারাদিন এত এত কাজ করে যেতে পারে কে জানে?

কয়েকদিন ধরে ছোট ফুফুকে একটু নিরিবিলি পাবে বলে অনেক চেষ্টা ও পরিশ্রমের পরে আজ বিকালে সেই সুযোগটুকু এলো পলাশের জন্য, বাড়িভর্তি লোকজন সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে।
এ বাড়িতে ভাগবাটোয়ারা চলছে পুরোদমে,হৈচৈ গন্ডগোল ও চলছে সমানতালে। আজ সবচেয়ে বড় পুরানো সিন্দুকটা খোলা হয়েছে। তাই নিয়ে গরম গরম কথা চালাচালি খোঁচাখুৃচি চলছে অবিরত। বিরক্তিকর এসব পরিস্থিতি চলবে আরও বেশ ক'দিন বোঝাই যাচ্ছে।
আজ কদিন বিশেষ কারণে কেউ কেউ কামরুন্নাহারকে কোন কাজেই হাত দিতে দিচ্ছেন না,তার প্রতি হঠাৎ করে কারো কারো দরদ উথলে উঠেছে চোখে পড়ার মত।

কারণ অবশ্য আছে, তার শরিকানা অংশটা বেশ বড় এবং তিনি স্বভাবে সরল সোজা,ঘোর প্যাঁচ নেই মুক্ত। তো সেই অংশটা নিজের আয়ত্ত্বে আনার ধান্দায় প্রায় সকলে ব্যতিব্যস্ত, এখন তার দায়িত্ব নিতে তার ভালো মন্দ দেখ ভাল করতে কম বেশি সবাই আগ্রহী !

একেই বলে ভাগ্য, কিছুদিন আগেও যে ছিলো সবার কাছে অপাংক্তেয় , প্রয়োজন না পড়লে কেউ তার খোঁজ নিতো না কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আজ তার কত খাতির কত যত্ন!

পলাশও এটুকু বোঝে, স্বার্থে মোড়া ভালোবাসার ফলস্বরূপ ফুফুর এই অবসর ও এত খাতির। পরিস্থিতি অবশ্য প্রথমে এমন ছিল না মোটেও,প্রথম প্রথম তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করেছিল অনেকেই, কিন্তু আজকাল আইন কানুন যথেষ্ট কড়া। শরিক ফাঁকি দিতে চাইলে সহজে সুবিধা করা যায় না বরং জটিলতা বাড়ে। আর যদি সেই শরিক বর্তমান থাকে তবে তো কথাই নেই।

কামরুন্নাহারের পাশে এসে দাড়িয়েছেন পলাশের বাবা। তিনি এ বাড়ির একজন ডাকসাইটে সদস্য ,রওনক শিকদারের প্রথম পক্ষের সেজো ছেলে।তিনি অনেক হিসেবি এবং বুদ্ধিমান। তিনি পলাশের প্রতি কামরুন্নাহারের ভালোবাসাটাকে এক্ষেত্রে কামরুন্নাহারকে নিজের ভাগে টেনে নেওয়ার কাজে ব্যবহার করছেন সুচতুরতার সাথে।

পলাশ ঘরে ঢুকে ফুফুকে দেখতে পেয়ে একটু নিশ্চিন্ত হলো ।খুব জরুরি একটা কথা আছে তার, আজই বলতে হবে দেরি হয়েছে এমনিতেই।
পলাশের বান্ধবী স্নেহলতা খুব তাড়া দিচ্ছে কদিন ধরে। মেয়েটি জ্বালিয়ে খেলো একেবারে। আজ কিছু একটা না করলেই নয়,মুখ দেখাতে পারবে না সে স্নেহলতাকে।

পলাশের এই ফুফুটি এ বাসার স্হায়ী বাসিন্দা এবং চিরকুমারী।

কেন তিনি বিয়ে করে থিতু হননি বা করতে চাননি সে সম্পর্কে অবশ্য বিশেষ কিছু জানে না পলাশ । অন্যরা হয়তো জানলেও জানতে পারে, তবে পলাশ এটুকু জানে একসময় মারাত্নক স্মৃতি বিভ্রাট হয়েছিলো তার এই ফুফুর ,হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি ভয়ঙ্কর ঝড়ের কবলে পড়ে । উপকূলীয় অঞ্চলে তার মামাবাড়ি সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলো মায়ের সাথে। তখনই এই দূর্ঘটনা ঘটে। কয়েক মাস ধরে অনেক খুঁজে ও তাকে ফিরে পাওয়া যায়নি, যখন তাকে পাওয়া যায় তখন সে এমনেশিয়ার রুগী। কাউকে চিনতে পারে না কোন কিছু মনে করতে পারে না, আলুথালু আলাভোলা অবস্থা।

মামাবাড়ি থেকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে আসেন যখন তিনি তখনও তিনি খানিকটা অপ্রকৃতস্থ , ফিরে এসে পলাশকে আকড়ে ধরেন পরম মমতায়। সেই থেকে শুরু।

তারপর পলাশের দেখাশোনা ও রাঁধুনির কাজই তার সময় কাটানোর প্রধান অবলম্বন হয়ে দাড়ায়।
এতবড় যৌথ পরিবার কাজের অন্ত নেই তবে নেওয়া খাওয়ার লোক আছে বিস্তর। এক্ষেত্রে অনেকের জন্য কিছুটা আরামের সুযোগ মিলল সহজেই।

সেই শুরু সারাটাদিন ফাইফরমাশ আর কাজ। দিন যে কখন গড়িয়ে রাত হয় মাঝে মাঝে তিনি তা নিজেই ঠাওর করতে পারেন না।
তাঁর বিয়ের প্রস্তাব যে একেবারে আসেনি তা কিন্তু নয়। কিন্তু প্রতিবারই সে বিয়ে ভেঙেছে বিচিত্র কারণে। একসময় সে পাগল হয়ে গিয়েছিল একথা জানলে কে আর সেই পাত্রীকে বিয়ে করতে চায়? হাজার গোপনীতার মধ্যে সেই খবরটি সুকৌশলে কে বা কারা পাত্র পক্ষের কানে পৌঁছে দিতে দেরি করেনি প্রতিবারই।

-ফুপি তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
কামরুন্নাহার হাতের কাজটা করতে করতে বললেন,
-বলো শুনছি।
-তোমার হাতের কাজটা রাখো, কথাটা জরুরি,মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
-তেমন কিছু তো করছি না,আচ্ছা রাখলাম এবার বল তোমার জরুরি কথাটা।শুধু খবরদারি।
- আগে বলো তো তুমি রাগ করবে না।
-রাগ করার মত কি কিছু করেছো?
-তোমার কি মনে হয়?
- আমার কিছু মনে হয় না তুমি তাড়াতাড়ি শেষ করো আমি একটু বেরুবো। অনেক দিন মনাদের ওখানে যাওয়া হয়নি।
- ফুপি স্নেহলতা নামে আমি একজনকে চিনি।
-নামটা সুন্দর তো, চিনি মানে কি? শুধুই চেন?
- না,আমাদের সাথে পড়তো। বন্ধু।
- তো কি হয়েছে তার?
-স্নেহলতা তোমার সাথে একটু দেখা করতে চায়।
-আমার সাথে! দেখা করবে? কেন? আমি তো ব্যপারটা বুঝতে পারছি না, আমি কি ওকে চিনি?
-চেনো কি চেনো না সে আমি জানি না। তবে ও বলেছে ও তোমার সাথে একটু দেখা করতে চায়।
-আশ্চর্য! আচ্ছা, যাকগে বাড়িতে এনো একদিন। কি জন্য দেখা করতে চায় শোনা যাবে না হয় তখন।
- বাসায় এলে তো কবেই নিয়ে আসতাম। বাসায় আসবে না সে।
- ও মা কেন?
- তা জানি না।তুমি কি দেখা করবে? জরুরি কিন্তু।
কথাটাকে গুরুত্ব না দিলে ও কামরুন্নাহার কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারেন না একজন অচেনা অজানা মানুষ তার সাথে দেখা করার কি প্রয়োজন থাকতে পারে । পলাশের নিজের কোন সমস্যা? কে জানে?
কামরুন্নাহার বেগুনি রঙের একটা শাড়ি বের করলেন।
চলবে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
ছবিঃ গুগোল
ফুটনোটঃ পরভৃত ১. /বিশেষণ পদ/ পরপুষ্ট, পরের দ্বারা প্রতিপালিত। ২. /বিশেষ্য পদ/ পরের দ্বারা প্রতিপালিত এইজন্য. কোকিল। /পর+ভৃত/। /বিশেষণ পদ/ স্ত্রীলিঙ্গ. পরভৃতা।
গল্পটি সাত পর্বে সমাপ্ত। আশা করি সবাইকে পাশে পাবো। শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:১৮
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×