[ বাণী চিরন্তনিঃ
যেই ছেলে বা মেয়ে ভার্সিটি তে পড়াশোনা করেছে কিন্তু ভার্সিটির আবাসিক হলের ডাল খায় নি তার ক্যাম্পাস জীবন অপূর্ণই থেকে গেল, ঠিক যেমন মাঝি ছাড়া নৌকা অপূর্ণ থেকে যায় – জনৈক ক্যাম্পাস মনীষী]
আমার বন্ধুদের মাঝে সবথেকে বেশি সংখ্যক চান্স পেয়েছিল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমিও চান্স পেয়েছিলাম কিন্তু সাবজেক্ট পছন্দ না হওয়াতে ভর্তি হইনি। বন্ধুরা সবসময়ই বলত সিলেটে ঘুরতে যাবার জন্যে। বিভিন্ন কারনে সময় হচ্ছিল না। থার্ড ইয়ার পরীক্ষা শেষ হবার পর সিদ্ধান্ত নিলাম এইবার যাবই যাব।
তিন দিন ছিলাম শাহ্ পরাণ হলে। ঘটনাটা ২য় দিন রাতের। তখন শীতের সময়। যারা সিলেট থাকেন তারা জানের শীতের সময় সিলেটে ভালই শীত পড়ে। এম্নিতেই ঠান্ডা তার উপর যদি কেউ গোসল করতে চায় তবে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা অনেক কষ্টদায়ক হয়ে যায়। তাই নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ রাতে গোসল করে না, আর যদিও করে তবে পানি গরম করে করে।
আমি আমার বন্ধুর সাথে যেই রুমে ছিলাম তার পাশের রুমেই এক বড় ভাই থাকতেন যার সাথে আমার বন্ধুর এক রুমমেটের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিল না। ওই বড় ভাই তাকে খুব জ্বালাতন করতেন। কারন বড় ভাই পলিটিক্স করতেন আর আমার বন্ধুর রুমমেট বিপক্ষ দলের সমর্থক ছিল। এই জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হল ছেড়ে দিবেন এবং সুযোগ পেলে ওই বড় ভাইকে একটু সাইজ করবেন। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। সেই রাতে যখন তিনি হল ছেড়ে মেসে উঠার জন্য জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন তখনি সুযোগ চলে আসল।
বড় ভাই সেদিন বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন। রাতে ফিরলেন এবং প্রস্তুতি নিলেন গোসল করার। এই সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। শীতের সময় খুব কমই বিদ্যুৎ যায়। বড় ভাই তখন আমাদের রুমে এসে বললেন-
“এই আরিফ (যন্ত্রনায় কাতর রুমমেট এর ছদ্মনাম), তুমি তো চলে যাচ্ছ। যাবার আগে শেষবারের মত আমার একটু সেবা করে দিয়ে যাও। ডাইনিং থেকে আমার কথা বলে গরম পানি নিয়ে তিন নাম্বার বাথরুমে দিয়ে এসো। আমি ওইখানে গোসল করতে ঢুকছি।“
আরিফের মুখটা ম্লান হয়ে গেল। সে প্রথমে তার লাগেজগুলো রিকশায় করে মেসে পাঠিয়ে দিয়ে ডাইনিং এ গেল গরম পানি আনতে। পানি নিয়ে বাথরুমে দিয়ে রুমে এসে আমদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে আসল হঠাত আমরা চিৎকার শুনতে পেলাম। বুঝলাম বাথরুম থেকে আওয়াজ আসছে। দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি বড় ভাই চোখে হাত দিয়ে চিৎকার করছে। তার বালতিতে তাকিয়ে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। সেখানে পানির বদলে ছিল ডাল।
আসলে আরিফ এই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাবার সুযোগটা পুরোপুরি নিয়েছিল। গরম পানির বদলে সে ভার্সিটির বিখ্যাত পানসে ডাল নিয়ে এসেছিল। যেহেতু বিদ্যুৎ ছিল না তাই বড় ভাই সেটা ধরতে পারেন নি। এটাকেই সম্ভবত বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ। নাহলে শীতকালে যখন বিদ্যুৎ যায় না তখন সেদিন ই কেন বিদ্যুৎ চলে যাবে। সৃষ্টিকর্তা সম্ভবত আরিফের ক্ষোভ মেটাবার একটা বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। বেচারা আরিফ। কম জ্বালাতন তাকে সহ্য করতে হয় নি। এই ঘটনার পরে কার কি অবস্থা হয়েছিল তা জানি না। তবে মাঝে মাঝে জানতে খুব ইচ্ছে হয়।
১ম পর্বঃ Click This Link
২য় পর্বঃ Click This Link
৩য় পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৬