somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৯

২৬ শে জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফিরিঙ্গিদের দেশে আসার পর প্রথম কিছুদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটু বিচলিত ছিলাম বটে, তার পর থেকে শুরু হয়ে গেল একঘেয়েমি। নতুন কোন কিছুই হয় না। সবকিছু ছকে বাধাঁ হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠি, ইউনিভার্সিটি যাই - ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় আসি, খাই আর ঘুমাই। সবদিনই একরকম - খোলার দিনও যেমন, বন্ধের দিনও তেমন। আমার কোন এক্সট্রা কিছু নাই। এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল বিশ্বকাপ। ভাবলাম, নতুন একটা কিছু করে সময় পার করা যাবে... যেই ভাবা সেই কাজ, খেলা দেখা শুরু করলাম। আমার এখানে খেলা শুরু হয় সাউথ আফ্রিকা টাইমের থেকে ৮ ঘন্টা পরে (টাইম জোন এর কারনে)। তিনটা খেলার একটা সাড়ে ৯ টায়, আরেকটা ১২টায় - আর শেষেরটা ভোর সাড়ে ৪ টায়। ইউনিভার্সিটিতে আমার কাজ রিসার্চ করা, কোন ক্লাস এ এটেন্ড করা লাগে না। আমি সারারাত ইউনিভার্সিটিতে থাকি, খেলা দেখি, সকাল বেলা ঘুমাই। বিশ্বকাপ এর কারনে আমার জীবনযাত্রা পাল্টে গেল। সূর্যের আলো দেখা হয় না অনেকদিন। এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল আমার শনির চক্র। মাঝে মাঝে আমার শনির চক্র যায়... কয়েকদিন কিছুই ঠিকমত হয় না.. আবার কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়। তবে ফিরিঙ্গিদের দেশে শনির দশা হওয়াতে একটা জিনিস ভালো হয়েছে - একঘেয়েমি থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে থাকতে জীবন অনেক বেশি এনজয়এবল ছিল মনে হয় এখন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চিন্তা - টাইমমত অফিসে যেতে পারবো কিনা? যদিও আমার এই ধরনের চিন্তা কখনোই করতে হতো না - অফিসের শুরুর সময়টা তো আর আমার জন্য বসে থাকবে না..ওটাকে পাত্তা না দেয়াই ভাল। তাই ওই সময়টাতে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ - এই দর্শন নিয়ে আমি বরাবর ১০-১১টা পর্যন্ত ঘুমাতাম। কিন্তু তারপরও এই সমস্যা, সেই সমস্যা - প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যালেন্জ। অফিস শেষ করে বাসায় আসার সময় - বাসের লাইনে দাড়িয়ে থাকা - বাস কি পাওয়া যাবে, পাওয়া গেলেও আমি কি উঠতে পারবো, আজকে না হয় রিক্সা নিয়ে চলে যাই - এসব ভাবনাতে মাথা সবসময় ব্যস্ত থাকতো, একঘেয়েমি মাথায় ঢুকার কোন ফুসরতই পেত না। বাসায় আসলাম, চিন্তা বুয়া কি এসেছে, নাকি রান্না করে খেতে হবে। ওখানে থাকার সময় কোন একটা ঝামেলা হলেই বিরাট টেনশন হতো - অন্তত এখন আমার তাই মনে হয়।

এবার ফিরিঙ্গিদের দেশে আমার শনির দশা নিয়ে বলি। খেলা দেখে আমি বাসায় চলে গেছি। গিয়ে দেখি রান্না করা খাবার এর মধ্যে ডাল শেষ। ভাত আর একটা তরকারি আছে। আমার হুট করে মনে হলো - আলু যখন আছে, ভাজি করে ফেলি। একটা আলু কেটে ফেললাম। এবার পেস্ট বানাতে হবে, বাটিতে হলুদ আর মরিচ এর গুড়া ঢেলে পেস্ট বানাচ্ছি - সেই সময় একটা কল আসলো.. আমি কথা বলতে বলতে আমার রুমের সাথে যে ব্যালকনি আছে সেখানে চলে গেছি - কথা প্রায় শেষ - ঘরে ঢুকতে যাব, দরজার কার্নিশে (নিচে যেটা থাকে - কার্নিশই তো বলে নাকি?) হোঁচট খেয়ে আমি উল্টা। আমি উল্টা তাতে তো কোন প্রবলেম না... ২ সেকেন্ডেই আমি আবার সোজা হয়ে গেলাম। সমস্যা যেটা হলো - হলুদ মরিচ এর পেস্ট পুরোটাই আমার কার্পেট এর উপর। রাত বাজে তিনটার মত। এই জিনিস আমি এখন কিভাবে সরাই। টিস্যু পেপার, ন্যাকড়া কাপড়, কোনটা দিয়েই কাজ হচ্ছে না। আমি যতই ঘষাঘষি করি সেখান খেকে ততই হলুদ রং বের হয়ে আসে। মানুষ তরকারিতে এই জিনিস কেন খায় সেটা আবার এনালাইসিস করা শুরু করলাম, মনে মনে গালি দিতে লাগলাম - আর ভাবতে লাগলাম, আর কোনদিন হলুদ দিয়ে রান্না করার চিন্তা মাথায় আনা যাবে না।

ঘন্টাখানেক পর অবস্থা কিছুটা সুবিধার মনে হলো, আমি ভাবলাম বাকিটা আমার কাজ না। বন্ডের টাকা খেকে কিছু টাকা কাটা যাবে যাক.. আমার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব না। কার্পেটের বেশ কিছুটা অংশ জুড়ে হলুদ হয়ে আছে। আমার হাত পায়ে হলুদ। বিয়ের কোন নাম গন্ধ নাই, এর মধ্যে আবার গায়ে হলুদ। তাও আবার নিজের গায়ে নিজেই। বাথরুমে গিয়ে হাত ধুলাম। কিন্তু পা? ফিরিঙ্গিরা সবকিছুতেই এক্সপার্ট। সবকিছুই ডাবল ডাবল করে রেখেছে। খালি একটা জিনিসের অভাব এখানে। সেটা হলো বাথরুমে কোন ট্যাপ নেই। আমি অনেক চিন্তা করে এটার কোন লজিক বের করতে পারি নাই। হাত মুধ ধোয়ার জন্য বেসিন আছে, গোছল করার জন্য বাথটাব, শাওয়ার সবকিছুর ব্যবস্থা আছে, কিন্তু পা ধোয়ার কোন ব্যবস্থা নেই এদের। এদের মাথায় কখনও মনে হয় এই জিনিসের অভাব বোধ হয় নাই। কেন হয় নাই, সেটা নিয়ে পরে আরো রিসার্চ করতে হবে কিন্তু আমার এখন গোছল করতে হবে। গায়ে হলুদ নিয়ে আর থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ মনে হলো না। রাত চারটার সময় আমি গোছল করতে গেলাম আর ভাবতে লাগলাম - দেশেই ভালো ছিলাম।

উপলব্ধি: হলুদের প্রতি একটা বিরক্তি এসে যাওয়াতে দুইদিন হলুদ ছাড়াই রান্না করেছি। খাবার মন্দ হয় নাই। এখন অবশ্য আবার হলুদ ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। কিনে ফেলছি যখন, শেষ করাটাই ভালো হবে... অপব্যয় করা ঠিক না - এই সূত্রে। তবে গায়ে হলুদ যখন একবার হয়ে গেছে - আর একবার হওয়ার সম্ভবনা নাই... গন্ধটা সুবিধার না আর হলুদ মাখার পরও আমার কালো চামড়া একটুও ফর্সা হয় নাই।:P

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১০

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৮

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৭

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৬

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৫

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৪

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৩

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ২

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫০
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×