আজ শুক্রবার। মেলবোর্ন এ আমার দ্বিতীয় দিন। ঘুম থেকে উঠে দেখি ১০ টা বাজে। তারপর হঠাৎ খেয়াল হলো যে, আমার ঘড়িতে তো বাংলাদেশের টাইম সেট করা। তারমানে এখানে এখন ২টা বাজে। আমি আস্তে আস্তে ঘুম থেকে উঠলাম। আমার কোন তাড়াহুড়া নেই। আজকে তনয় আসবে না। বিকেল এর পর রাস্তায় বের হওয়া যাবে না (তনয় এর নিষেধ)। কিভাবে সময় কাটানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করছি। তারপর হঠাৎ মনে হলো, বিকেলের আগেই বাইরে থেকে ঘুরে আসা যায়। আমি রুম থেকে বাইরে বের হলাম। আস্তে আস্তে হাতমুখ ধোয়া, বাথরুম করা, নাস্তা করা এসব কাজ শেষ করলাম। তারপর রেডি হয়ে বাইরে বের হলাম। বাইরে ঠান্ডা। তবে সহ্য করা যায়। আমাদের দেশের শীতকালের মত।
আমার ব্যাগ এ ক্যামেরা। আমি ভাবছি সামনে গিয়ে ছবি তুলবো। কোন দিকে যাওয়া যায় চিন্তা করছি। পরে ভাবলাম একদিকে গেলেই হয়। সবকিছুই তো আমার জন্য নতুন। হোটেল থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তা ধরে হাটা শুরু করলাম। হাটছি তো হাটছিই। দুইপাশে দোকানপাট। রাস্তায় গাড়ি চলছে। তনয় এর একটা কথা আবার মনে হলো। এখানে গাড়ি হর্ন দেয় না। হর্ন দেওয়া মানে গালি দেওয়া। এতক্ষন ধরে রাস্তায় হাটছি, কিন্তু কোন হর্ন এর শব্দ কানে আসেনি। হাটতে হাটতে একটা ব্রিজ এর উপর উঠে আসলাম। নিচে খাল। বাংলাদেশের পিচ্চি খালের মত। কিন্তু পরিস্কার, কোথাও কোন ময়লা আনর্জনা নেই। ব্রিজ এর উপর কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলাম। ভাবলাম ছবি তুলি, কিন্তু ক্যামেরা বের করতে ইচ্ছা হলো না। ব্রিজ পার হয়ে আরো একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। দেখি জায়গার নাম সাউথ ইয়ারা। তারমানে ওই খালটা মনে হয় ইয়ারা নদী। এইটা যদি নদী হয় তাইলে বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা দেখলে এরা ভাববে য়ে সাগর। এইটা নদী কিনা সেটা পরে বের করা যাবে।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি ৫টার কাছাকাছি বাজে। প্রায় অনেকক্ষণ হেটে এসেছি। ভাবলাম এবার ফেরত যাই। তনয় এর কথামত সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা ঠিক না, কারন আজকে শুক্রবার। আমার মাত্র শুরু। এখনই রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না। পরে কোন বিপদে না পড়ি। আমার সাথে যোগাযোগের কোন সিস্টেম নেই। তাই উল্টা ঘুরে হোটেল এর দিকে হাটা শুরু করলাম। হোটেল এর কাছাকাছি এসে পড়েছি, এই সময় দেখি আমার সামনে দিয়ে এক মহিলা হেটে যাচ্ছে। এক দোকানের সামনে থেকে এক ছেলে ওই মহিলাকে বলছে, ’হ্যালো ম্যাম, উইল ইউ কল মি?’ মহিলা হাটতে হাটতে সামনে এগিয়ে গেল এবং বলল, ’ডোন্ট ওরি. আই উইল।’ সেই ছেলে তাকে থ্যাংকস দিয়ে আবার রাস্তায় দাড়িয়ে রইলো। আমি সামনে হেটে যাচ্ছি। আমি ওই ছেলের কাছাকাছি আসতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ’ডিয়ার স্যার, ডু ইউ ওয়ান্ট টু হ্যাভ সাম ওয়াইন উইদ পেনাটস উইথ মি?’ আমি বললাম, ’নো থ্যাংকস।’ সে বলল, ’অলরাইট, এনজয়।’ মনে মনে ভাবলাম, ঈদ তাহলে শুরু হয়ে গেছে। আমার আর বাইরে থাকা ঠিক না। আমি হোটেল এ চলে আসলাম। হোটেল এ ঢুকতেই ভায়োলেট (রিসেপশনিস্ট) আমাকে ডেকে বলল, ওয়ান অব ইউর ফ্রেন্ড হ্যাজ কলৃড। আমি বললাম, ডিড হি টেল হিজ নেম? ভায়োলেট এর উত্তর, ইয়েছ, দ্য ম্যান হু কেম লাস্ট নাইট। আমি বললাম, দেন ইট মাস্ট বি তনয়? সে বলল. ইয়েছ, মি. টানায়। আমি বললাম, ওকে, আই অ্যাম কামিং উইদইন মিনিটস। দেন আই উইল কল ব্যাক তনয়। এই কথা বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। কাপড় চেন্জ করে আমি আবার রিসেপশনে গিয়ে তনয় কে কল করলাম, বললাম বাইরে কি কি ঘটলো। কথা বলা শেষ করে আমি আবার হোটেল রুমে ফেরত গেলাম। আমার কিছুই করার নেই এখন। গতকাল রাতে হোটেল থেকে একটা মোবাইল চার্জার নিয়েছি। মোবাইলে তো আর কিছু করা যায় না। তাই কি করা যায় সেইটা নিয়ে ভাবছি। টিভি ছেড়ে দিলাম। চ্যানেল ১০ এ খাবারের একটা অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে। তাই দেখছি। ঢাকায় থাকার সময় চোখের সামনে টিভি থাকলেও দেখতাম না। আর এখন বস্তাপচা খাবারের অনুষ্ঠানও দেখতে হচ্ছে। এই সেই চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি সেটা বলতে পারবো না।
ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত প্রায় ৮ টা বাজে। আমি ভাবলাম বাইরে বের হওয়া যাক। হোটেল এর সামনে রাস্তায় বের হয়ে দেখি কি অবস্থা। হোটেল থেকে বের হলাম। রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। লোকজন কম। হঠাৎ ডানপাশে কিসের জানি শব্দ হলো, চেয়ে দেখি রাস্তার ওপাশে দুইটা মেয়ে হেটে হেটে যাচ্ছে আর কোন একটা কিছু নিয়ে জোরে জোরে কথা বলছে। ভাবেসাবে মাতাল মনে হলো। হঠাৎ ঠিক আমার বরাবর এসে দাডিয়ে গেল। আমি চেয়ে দেখি আমাকে ইশারা করে কি জানি বলছে, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না। দুই একটা যা বুঝতে পারলাম তার মধ্যে একটা হলো, আমাকে ওদের সাথে যেতে বলে। আমি বললাম, ফাইন্ড অ্যানাদার ওয়ান। তারপর মনে হয় আমাকে গালিগালাজ করতে করতে চলে গেল। হোটেল এর বাইরে আর থাকা সুবিধার মনে হলো না। পরে ওদের সাথে ঈদ পালন করবো। তবে আজকে না। যা হোক হোটেল এ ঢুকে কি করবো সেটা নিয়ে চিন্তা করছি। রুমে এসে ল্যাপটপ বের করলাম। ভাবলাম ঘটনা যা হচ্ছে লিখে ফেলা যাক। সময় কাটবে। কিন্তু এখানকার ইলেকট্রিক সিস্টেম আলাদা। আমার ল্যাপটপের থ্রি পিন এখানে ঢুকবে না। তাই আবার রিসেপশনে গিয়ে একটা এডাপটার নিয়ে আসলাম। এখন মনে হয় সময় কাটানোর মত কিছু একটা হাতে পেলাম। ল্যাপটপ খুলে, মেলবোর্ন এ আসা থেকে কি কি ঘটনা ঘটেছে তা মনে করে লিখা শুরু করলাম। লিখতে লিখতে দেখি রাত ১টা বাজে। আমার সাথে একটা মোবাইল হার্ডডিস্ক আছে। সেইটাতে অনেক গুলো সিনেমা আছে। এখন একটা সিনেমা দেখা যাক। কিছুক্ষন সিনেমা দেখে তারপর ২টার দিকে ঘুমিয়ে গেলাম।
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১০
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৯
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৮
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৭
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৬
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৫
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৪
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৩
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




