somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৪

০৮ ই মে, ২০১০ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ভেবেছিলাম যে জেট লেগ আস্তে আস্তে কেটে যাবে, কিন্তু কোথায় কি? আজকেও ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দুপুর ১২টা বেজে গেল। বিছানায় গড়িমসি করতে করতে আরো ১ ঘন্টা। আসলে এখন য়ে আবহাওয়া সেটা ঘুমের জন্য একদম পারফেক্ট। বাইরের তাপমাত্রা ১২-১৩ এর মত। হোটেল এ হিটার আছে। কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমানোর থেকে ভালো আর কি হতে পারে। আজকে রবিবার, বন্ধ। আমি রুম থেকে বের হয়েই শুনতে পেলাম পাশের রুমের ছেলেটা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। শব্দ শুনেই আমার আবার ঘুম পেয়ে গেল। তারপরও হোটেল এর ভিতরের বসার জায়গাটাতে গিয়ে কিছুক্ষন বসলাম। তারপর আবার রুমে এসে ফ্রেশরুমে গেলাম। এটা সেটা করে করে ফ্রেশ হতে হতে আরো এক থেকে দেড় ঘন্টার মত লেগে গেল। তিনটার দিকে মনে হলো দুপুরের খাবার খেতে হবে। তনয় আমার জন্য যে খাবার কিনে দিয়েছিল সেগুলো এখনও আছে। ব্যাটা আমাকে কি মনে করেছিল কে জানে, তবে এত খাবার কেউ ২/৩ দিনে খায় কিনা আমার তা জানা নেই।

খাবারের পর্ব শেষ করে ভাবলাম হাটতে বের হবো। কোথায় যাওয়া যায় সেটা ভাবছি। আগের দিনগুলোতে তো একেক দিকে গিয়েছি। আজকে প্ল্যান করে বের হবো চিন্তা করছি। আস্তে আস্তে রেডি হচ্ছি আর ভাবছি কোথায় যাওয়া যায়। রেডি হয়ে এখানকার একটা ম্যাপ নিয়ে বসলাম। তনয় বলেছিল আমার ইউনিভার্সিটি যেতে হলে যে ট্রেন স্টেশনে নামতে হবে তার নাম গ্লেন ফেরি। রিচমন্ড থেকে ৩ টা স্টেশন পর। রিচমন্ড, ইস্ট রিচমন্ড, বার্নলি, হাউথর্ন, গ্লেনফেরি। আমার হোটেল এর কাছের য়ে মোড় সেখানে একটা ছোট স্টেশন আছে, সেটা হলো ইস্ট রিচমন্ড। আমি ভাবলাম একটা স্টেশন যেহেতু এসেই গেছে ‌তাহলে হেটে হেটে ইউনিভার্সিটির দিকে যাই। ইস্ট রিচমন্ড আর রিচমন্ড স্টেশনের হাটা পথের দূরত্ব প্রায় ১০ মিনিটের মত। আমি গতকাল একবার তনয়দের সাথে হেটে গেছি এবং তনয়রা চলে যাওয়ার পর আবার হেটে এসেছি। যেই ভাবা সেই কাজ। হোটেল থেকে বের হয়ে হাটা শুরু করলাম। এই রাস্তায় আগে আসিনি। এই মোড় থেকে ডানে এবং সোজা আমি আগেই গিয়েছি, তাই নতুন রাস্তা। আমি সাড়ে ৪ টার দিকে বের হলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা। গাড়িও তেমন নেই আর লোকজনও নেই। মনে হয় উইকএন্ড শেষ হচ্ছে বিধায় এরা সবাই ঘরে বসে আগামীকালের কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি হাটা শুরু করলাম। একটু এগুতেই দেখি ফেরারী এর শো রুম। গ্লাসের ভিতর দিয়ে ফেরারী গাড়ি দেখা যাচ্ছে, আমি নিড ফর স্পিড এ য়ে ফেরারী দেখেছি সেটার সাথে মিলিয়ে দেখলাম, একই রকম দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় দিন যখন ইয়ারা নদীর উপরের ব্রিজ পার হয়েছিলাম, তখন দেখেছিলাম ল্যম্বরঘিনির শো রুম। শো রুমে গাড়ি দেখছি বটে, কিন্তু রাস্তায় কোন ফেরারী কিংবা ল্যম্বরঘিনি এখনও চোখে পড়েনি। আছে হয়তো, কোন একসময় চোখে পড়বে।

ফেরারী এর শো রুম পার হয়ে হাটা শুরু করলাম আরো সামনের দিকে। হাটছি তো হাটছিই। ফুটপাত জুড়ে সেঞ্চুরী গাছের পাতা পড়ে আছে। রবিবারে মনে হয় সিটি কর্পোরেশনও বন্ধ থাকে, পাতা পরিস্কার হয়নি। প্রায় ৪০ মিনিট হাটার পর সামনে দেখি রেল স্টেশন, বার্নলি। আমার মোবাইল এর সিম কার্ড একটিভ হয়নি বলে কোথায় কল করা যাচ্ছে না কিন্তু একটা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানেই যাচ্ছি জায়গার নাম দেখা যাচ্ছে। বার্নলি স্টেশন পার হয়ে দেখি বার্নলি পার্ক। পার্কে কোন লোকজন নেই। আমি পার্ক পার হয়ে এসে দেখি বিপদ। রেললাইন ২ দিকে ভাগ হয়ে গেছে। যেকোন একটা গেছে হাউথর্ন হয়ে গ্লেন ফেরি তে। সেটা কোনটা সেটা তো আমার জানা নেই। আমি হাটা বন্ধ করলাম। একটা ট্রামের যাত্রী ছাউনির কাছে দেখলাম মেলবোর্ন সিটির ট্রাম লাইন এর ম্যাপ আছে। সেখানে দেখলাম, গ্লেনফেরি এখনও অনেক দূর। আসলে আমি ঘুর পথে এসেছি। রেললাইন অন্য দিক দিয়ে গেছে। আমার হোটেল থেকে যেদিকে এসেছি তার উল্টা দিকে গেলে ভালো হতো। এখন তো আর কিছু করার নেই। আমি উল্টা দিকে হাটা শুরু করলাম। এখন মনে হয় রাস্তায় একটু লোকজন বেশি। কিছু লোক দেখি জগিং করছে। এক মহিলা কুকুর নিয়ে বের হয়েছে, সে বার্নলি পার্ক এ ঢুকে গেল। এখানে বেশিরভাগই জগিং করছে দেখি কানে হেডফোন দিয়ে। আমি হাটছি। সামনে দেখি সাইকেল এ করে এক অস্ট্রেলিয়ান আসছে। আমি সরে গিয়ে জায়গা দিতেই আমার দিকে চেয়ে হাসি দিয়ে বলল, থ্যাংকস। আমিও হাসি দিয়ে চলে এলাম। মনে মনে চিন্তা করছি, ইউনিভার্সিটিতে তো যাওয়া হলো না, এখন কোথায় যাওয়া যায়?

হাটতে হাটতে আবার আগের জায়গায় ফেরত এলাম। এখন দেখি রাস্তায় লোকের ভিড় আগের থেকে বেশি। আমি হোটেল এর দিকে না গিয়ে রিচমন্ড স্টেশনের দিকে হাটা দিলাম। দুইপাশে রেস্তোরা আর বার। ফুটপাতে বসার ব্যবস্থা আছে। কেউ কেউ রেস্তোরার ভিতরে আর কেউ কেউ ফুটপাতে বসে খাচ্ছে। তবে যে যাই খাক না কেন, নারী পুরুষ, ছোট বড় নির্বিশেষে মোটামুটি সবার সামনেই ওয়াইন এর গ্লাস আছে। আমি হেটে প্রায় রিচমন্ড স্টেশনে চলে এসেছি। এতক্ষনে ভিড়ের কারণ ধরতে পেরেছি। কোন একটা খেলা ছিল। প্রায় অনেকেই দেখি জার্সি পরে হাটছে আর খেলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে। রিচমন্ড স্টেশনে পৌছানোর আগে এমসিজি এর ফ্লাডলাইট দেখা গেল। নেক্সট টাইম বাংলাদেশের খেলা হলো দেখতে আসবো ভাবছি। অন্য খেলা হলে হয়তো টিকেট পাওয়া সম্ভব হবে না, আর টাকা খরচ করে যখন দেখবো, তখন নিজের দেশেরটাই দেখা ভালো।

স্টেশনে ঢুকে আশেপাশের লিফলেট এবং ট্রেনের সময়সূচীগুলো দেখলাম ভালো করে। কিভাবে সময়সূচী থেকে বের করতে হবে সেইটা সম্পর্কে একটা হাল্কা ধারনা হলো। এখানে সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত একধরনের সময়, শনিবারের জন্য আলাদা সময়সূচী, রবিবারের জন্য আলাদা। রবিবারে ট্রেন দেখলাম সবচেয়ে কম, ২০ মিনিট পর পর। অন্যান্য দিন ৫-৭ মিনিট পরপরই ট্রেন আছে। সময়সূচী দেখা শেষ করে স্টেশন থেকে বের হয়ে এলাম। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে শরীর। আমি আস্তে আস্তে হাটছি। আসলে ঢাকাতে যে চলাফেরা করেছি তার বেশিরভাগই তো রিক্সা অথবা বাস এ। পায়ের ব্যবহার খুব বেশি করেছি বলে মনে পড়ে না। আর এখানে আসার পর হাটাই সম্বল। অল্প দূরত্ব হলে সবাই হেটেই যায়। রিক্সা তো আর নেই। কি আর করবে এরা?

আমি আমার হোটেল এর কাছের মোড়ে চলে এসেছি। বাসায় ফোন করবো ভাবছি। কিছু বন্ধু বান্ধবের সাথেও কথা বলা যাবে। আমার কলিং কার্ডে আরো প্রায় ৮০ মিনিট এর মত অবশিষ্ট আছে। আমি কল করা শুরু করলাম। একের পর এক কল করে গেলাম। প্রায় ৭৫ মিনিট এর মত কথা বলে আমি ফোন রাখলাম। এক হাতের উপর ভর দিয়ে কথা বলছিলাম। ফোন বুথ থেকে বের হয়ে দেখি সেই হাত ব্যাথা করছে। হাতে ব্যাথা, পায়েও। তাই আরো ঘুরাঘুরির প্লান বাদ দিয়ে হোটেল এ চলে আসাই ভালো মনে হলো। আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে হোটেল এ চলে আসলাম। হোটেল এসে দেখি খুব বেশি রাত হয়নি। মাত্র সাড়ে ৭ টা বাজে। কিন্তু আমি খুব টায়ার্ড। কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত ১০টার বেশি বাজে। রাতের খাবার খাওয়া হয়নি। ১১টার দিকে কিচেন বন্ধ হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি কিচেন এ চলে গেলাম। রাতের খাবার গরম করে খেয়ে নিলাম। তারপর বাথরুম থেকে এসে লিখতে বসলাম দিনলিপি। এখন বাজে রাত ১২:৩০। কালকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে। দুপুর একটা পয়তাল্লিশে আমার এপয়েন্টমেন্ট। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারলে হয়।

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১০

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৯

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৮

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৭

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৬

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৫

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৩

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ২

ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×