রাত জেগে খেলা দেখার দল ভারী হতে শুরু করেছে আস্তে আস্তে। প্রথম প্রথম খেলা দেখতে বোরিং লাগতো, দুই তিনজন এর বেশি হতো না আর সেই সাথে গ্রুপ পর্বের বেশিরভাগ ম্যাচই হাই প্রোফাইল না, তাই অনেকের আগ্রহ থাকতো না। প্রথম পর্বের শেষ দিকে এসে পড়েছি আমরা, খেলা দেখতে আসা ছেলেপেলের সংখ্যা বাড়ছে ধীরে ধীরে। ছেলেপেলে বলতে সবাই বাংলাদেশী। বাংলাদেশী ছাড়া অন্যরা সচারাচর খেলা দেখে না। আমার রুমে নেদারল্যান্ডের এক ছেলে বসে, আমি নেদারল্যান্ডের খেলা দেখি, সে বসে বসে রিসার্চ করে
খাবার নিয়ে আসতে আসতে খেলা প্রায় শুরু হয়ে গেছে। তনয়, শিমুল, সাইফুল ভাইসহ বাকিরা টিভি অন করতে ব্যস্ত। আমি আর তানভীর গার্লিক ব্রেড গরম করতে মাইক্রোওয়েভ এর সামনে ব্যস্ত। গার্লিক ব্রেড এর প্যাকেট এর গায়ে কুকিং ইন্সট্রাকসন দেয়া আছে, ১২-১৬ মিনিট ওভেনএ গরম করতে হবে। তানভীর এর ব্রেডটা আমারটা থেকে আলাদা, ফয়েল পেপার দিয়ে মোড়া, আমরা দুজনেই মাইক্রোওয়েভএর মধ্যে ব্রেড ঢুকিয়ে দিয়েছি। ২ মিনটি পর হঠাৎ দেখি আগুন। তানভীর এর টাতে। তাড়াতাড়ি বের করা হলো, পেপার এর একটা অংশ ছেড়া ছিল, তাতে আগুন ধরেছে। সে পেপারটা ফেলেদিয়ে আবার গরম করতে দিল। আমারটাতে পেপার নেই, আমারটা প্রসেসিং হচ্ছে। এদিকে খেলা শুরু হয়ে গেছে। আমি তানভীরকে বললাম, তুমি একটু আমারটার দিকে নজর দিও। এই বলে আমি খেলা দেখা শুরু করলাম। একটু পর পিছনে ফিরে দেখি তানভীর ফোনে কথা বলছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি অবস্থা তানভীর, ঠিক আছে তো? সে বলে, ঠিক আছে। আমি আবার খেলা দেখা শুরু করলাম। তারপর হঠাৎ করে আবার তাকিয়ে দেখি মাইক্রোওয়েভ এর ভেতর কিছু দেখা যায় না, খালি ধুঁয়া আর ধুঁয়া, এদিকে তানভীর অন্যদিকে ফিরে কথা বলেই চলেছে। আমি তাড়াতাড়ি ওঠে গিয়ে দেখি, আরো অনেক সময় বাকি আছে। মাত্র ৬ মিনিট এর একটু বেশি হয়েছে। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। মাইক্রোওয়েভ এর তার খুলে ফেলে ব্রেডটা বাইরে বের করার চেষ্টা করতেই সারা ঘরে ধুঁয়া ছড়িয়ে পড়ল। আমি হাত দিতেই দেখি আগুন গরম ভিতরে। অবস্থা খারাপ। এদিকে পোড়া গন্ধে বাকি সবাই উঠে এসেছে। একজন বলে উঠলো এলার্ম বাজা মনে হয় শুরু করে দিবে, ফায়ার এলার্ম। ঘরের মধ্যে স্মোক ডিটেকটর আছে, দেথি ওইখানে লালবাতি জ্বলছে। এলার্ম মনে হয় বাজছে, কিন্তু আমরা কোন শব্দ পাচ্ছি না। এদিকে এসি চালু হয়ে গিয়েছে। এসি সাধারণত রাত ১০টায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রচন্ড শব্দ হচ্ছে বাতাসের। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ জানালা খোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু জানালা খোলা যায় না। ঘরে এখন ধুঁয়ার চোটে থাকা যাচ্ছে না। কিংকর্তব্যবিমূড় অবস্থা। একজন বললো, সিকিউরিটিকে ফোন করেতে হবে। সিকিউরিটি এর নাম্বার আছে লেভেল ৩ এ। আমরা সবাই মিলে নিচে নেমে গেলাম। লেভেল ৩ এ সিকিউরিটি এর নাম্বার পাওয়া গেল না। সব লাইট অফ। আমরা নিচে নামা শুরু করলাম। নিচে গেলে সিকিউরিটি এর দেখা পাওয়ার কথা। সবার নিচের লেভেল এ আসতেই এলার্মের বিকট শব্দ কানে আসলো। বুঝলাম, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, কিন্তু এলার্মের শব্দ ভেতরে কেন শোনা যায় না সেটা একটা রহস্য। ভেতরের মানুষদের কি এলার্ম দেওয়া উচিৎ না? বাইরে বের হতেই দেখি সিকিউরিটির লোকজন, আমরা বললাম, মাইক্রোওয়েভ থেকে স্মোক বের হয়েছে, ওভার কুকিং এর জন্য এবং এখন সব ঠিক আছে। তারা বললো, তোমরা বাইরে থাক, ভিতরে ঢোকা যাবে না। ফায়ার ব্রিগেড এসে গেছে। ১০-২০ সেকেন্ড পর দেখি ফায়ার ব্রিগেড এর লোকজন ভেতরে গেল।
আমরা ঠান্ডার মধ্যে বাইরে দাড়িয়ে আছি। ফায়ার ব্রিগেড যে ভেতরে গিয়ে ফায়ার পাবে না সেটা তো নিশ্চিত। আমাদের চিন্তা, এই ঘটনার রিয়েকশন কি হয়। বিভিন্নজন তাদের বিভিন্ন মতামত দেওয়া শুরু করলো। হঠাৎ দেখি সাইফুল ভাই বিল্ডিং থেকে বের হচ্ছেন। বের হয়েই ঝাড়ি। কে নাকি তাকে রুমের দরজা খোলা রাখার কথা বলে এসেছে। উনি সেজন্য এতক্ষন দরজা ধরে দাড়িয়ে ছিলেন। তারপর আর থাকতে না পেরে চলে এসেছেন। অনেকক্ষনপর দেখি ফায়ারব্রিগেড এর লোকজন বের হচ্ছে। আমাদের দিকে চেয়ে বললো, এখন তোমরা ভিতরে যেতে পার। ভেতরে ঢুকতেই, সিকিউরিটির একজন আমাদের প্রশ্ন করলো, কি হয়েছে। আমরা বললাম, প্যাকেট এর গায়ে যেভাবে লিখা ছিল - আমরা সেভাবেই কুক করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু হঠাৎ আগুন লেগে গেল। পরে অবশ্য আমরা আবিষ্কার করলাম যে, ওভেন আর মাইক্রোওয়েভ ওভেন এক জিনিস না। আমাদের মধ্যে কয়েকজন খেলা দেখতে গেলাম। বাকিরা খেলা দেখবে না বলে বাসায় চলে গেল, কেউ কেউ ডেস্ক এ। আমি, তনয় আর শিমুল চিন্তা করছি, পরেরদিন কি হয়।
পরেরদিন ইউনিভার্সিটিতে আসার পর শুনলাম - সকালবেলা নাকি এলার্ম টেস্ট করা হয়েছে, আর ডেস্কে বসার পর দেখি একটা ই-মেইল - সেখানে বলা আছে, রাতে আগুন লেগে যাওয়ার কারনে মাইক্রোওয়েভ ওভেনটা চেক-আপ করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, পরে আবার দিয়ে যাওয়া হবে। আর সবাইকে সতর্কতার সাথে কুকিং স্টাফ ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৯
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৮
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৭
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৬
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৫
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৪
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৩
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ২
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


