মাঝে দুই দিন লিখার ইচ্ছা থাকা পরও লিখতে পারি নি। কারন গত দুই দিন ইউনিভার্সিটির কিছু বিষয় নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। রাত করে হোটেল এ ফিরেছি, তবে কিছু কাজের কাজ হয়েছে এই কয়েকদিন এ। এখানে আসার পর যে হোম সিকনেস ছিল তা এই ব্যস্ততায় কিছুটা হলেও কমেছে। গত দুই দিন আর আজকের দিনে আমার সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ হয়েছে যেটা হলো - একটা বাসা যোগাড় হয়েছে। বাসাটা ইউনিভার্সিটির কাছেই, হাটা পথে প্রায় ৪-৫ মিনিট। জায়গার নাম হলো কুইনস এভিনিউ। আজকে শুধু বাসা খোজার কাহিনীই লিখি।
এখানে বাসা খুজতে হয় ইন্টারনেটে। আমি তো তখনো ল্যাব একসেস পাইনি। আর এনরোলমেন্ট নিয়ে কিছু্টা ঝামেলা হচ্ছিল, জিনিসপত্র ঠিকমত বুঝে পাচ্ছিলাম না সব। আমার রুমে আমি একবারও যাইনি। আমি ইউনিভার্সিটি যাই আর তনয় অথবা শিমুল অথবা মৌ - সাদী অথবা কবিতা এদের ডেস্কে ঘুরাঘুরি করি। বাসায় মোবাইল ইন্টারনেট আছে। তবে ইউনিভার্সিটির ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড ছাড়া ইউনিভার্সিটির ওয়েব খেকে বাসার বিজ্ঞাপনদাতাদের কন্টাক্ট ইনফরমেশন দেখা যায় না। আরেকটা বাসা খোঁজার সাইট আছে সেটা হলো গামট্রি নামে। এটাতে মাঝে মাঝে ঢু মারি। আর পরিচিত/অপরিচিত যত বাংলাদেশী আছে সবার সাথে দেখা হলেই বলি বাসার কথা। খুব টেনশনে আছি। একটা দুইটা বাসার কথা শুনা যায় আর আমি কনফার্ম করতে বলি। কনফার্ম করতে গেলে আমাকে এটা সেটা বলে। তোমার আগে একজন বাসা দেখে গিয়েছে, তার আগামী শুক্রবার ফোন করার কথা, সে ফোন না করলে বাসা তোমাকে দেওয়া হবে এই জাতীয় কথা। এক বাংলাদেশী বড় ভাই তার বাসা ছাড়বেন। সেটা ইউনিভার্সিটি থেকে ৩০ মিনিটের হাটা পথ। সেই বড় ভাইকে বললাম বাসার কথা। উনি বললেন চেষ্টা করবেন। তার বাসায় বাকি দুইজন থাকে এই ইউনিভার্সিটির, সেই দুইজন আবার চাইনিজ। আমার চাইনিজ, জাপানীজ, কোরিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান কোনটাতেই কোন সমস্যা নেই। বাসা পাওয়া দিয়ে কথা। সেই চাইনিজ এর সাথে আমার পরিচয় হলো, সে বললো বাসা দিবে। তার কোন সমস্যা নেই। পরের দিন গিয়ে শুনি সে নাকি আগে কোন একজনের সাথে কথা বলেছে, সে যদি না বলে তাহলে আমার বাসা পাওয়া হবে।
তনয় আমাকে বললো কবিতা নাকি আমার জন্য দুইটা বাসার খোজ পেয়েছে ইন্টারনেটে। আমি কবিতার ডেস্কে গেলাম। সে হলো এখানকার বাসা স্পেশালিস্ট। সে যখন এখানে আসে তখন সে অনেক বাসা খোজাখুজি করেছে, আর কিছুদিন থাকার পর আবার বাসা চেন্জ করেছে এইজন্য বাসা সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান। নতুন কেউ আসলেই সে বাসা খোজার দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে নেয়। কবিতা আমাকে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনগুলো দেখালো, আমি ফোন করলাম, একটা ইমেইলও করলাম। ফোনে সরাসরি বলে দিল যে, দি রুম হ্যাজ বিন টেকেন অলরেডী আর ইমেইল এর কোন রেসপন্স পেলাম না। কবিতা আমাকে নিয়ে গেল ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে। সেখানের নোটিশবোর্ড এ বাসার বিজ্ঞাপন থাকে। একটা বিজ্ঞাপন পেলাম কিন্তু মেয়েদের জন্য। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, সন্ধ্যার পর আমি হোটেল এ চলে এলাম।
পরেরদিন এক চাইনিজের জানানোর কথা আমাকে। সে আমাকে হাবিজাবি বুঝাতে লাগলো, আমি বূঝলাম বাসা হবে না। তনয় আর আমি আবার ইন্টারনেটে দেখলাম যে নতুন কোন বিজ্ঞাপন আছে কিনা? একটা নতুন বিজ্ঞাপন আছে, আমি ফোন করে মোবাইল খোলা না পেয়ে মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম। এরপর আমি আর তনয় মিলে গেলাম লাইব্রেরী এর নোটিশবোর্ড দেখতে। নোটিশবোর্ড এ দেখি একটা নতুন বিজ্ঞাপন। আমি দেরী না করে ফোন দিলাম। একটা ছেলে ধরলো, বললো বাসা এভেইলেবল আছে, আমি বললাম, আমি দেখতে চাই, কখন দেখা যাবে ইত্যাদি। সে বললো, আধাঘন্টা পর আমাকে জানাবে কোথায় আসতে হবে। মিনিট পাচেক পর সে আবার আমাকে ফোন করে বলল, সে বাসায় যাচ্ছে, আমি যদি ফ্রি থাকি তাহলে যেন গ্লেনফেরী স্টেশনে অপেক্ষা করি। সে রিচমন্ড থেকে ট্রেন এ উঠেছে। আমি প্রতিদিন রিচমন্ড থেকে গ্লেনফেরী আসি। ৭ মিনিট লাগে। আমি বললাম ওকে। আমি আবার ফ্রি না? বাসা খোজতে খোজতে আমি হয়রান হয়ে গেছি। গ্লেনফেরী স্টেশনে আমি ট্রেনে উঠলাম। নামতে হবে তার পরের স্টেশন অ্যবার্ন এ। ছেলেটি ইন্ডিয়ান, পান্জাবী। সংগে তার বাবা। উনি আগামী ১২ তারিখ চলে যাবেন। এখন তার রুমে একজন বাংলাদেশী থাকে। সে ১৫ তারিখ বাসা ছেড়ে দিবে। আমার ইউনিভার্সিটি থেকে ৫ মিনিটের হাটা পথ। আমি রুমে গেলাম, রুমটা ছোট, তবে একজনের থাকার মত ব্যবস্থা আছে। টিভি, রিডিং টেবিল, খাট, আলমিরা এইসব আছে। সংগে একটা ব্যালকনি আছে, সেখান থেকে আমার ইউনিভার্সিটি দেখা যায়। তবে রান্নাঘরটা খুব ছোট।
যা হোক, আমার তখন এতকিছু দেখবার খুব বেশী সময় নাই। আমার একটা বাসা দরকার। পরে সমস্যা হলে অন্য জায়গায় উঠে যেতে হবে। এটার ভাড়াও খুব বেশি না। লোকেশন এর তুলনায় একটু কমই বললো তনয়। আমি তাকে বললাম, রাতে জানাবো। আসার সময় দেখি সেই ছেলের কাছে ক্রমাগত ফোন আসা শুরু করেছে বাসার ব্যপারে। আমি তনয়কে ফোনে বললাম যে কি করবো, তনয় বললো য়ে, কনফার্ম করে ফেল। আমি ওই ছেলেকে আবার ফোন করে কনফার্ম করে দিলাম, বললাম, আমি আধঘন্টার মধ্যে টাকা নিয়ে আসতেছি। কিছুক্ষন পর গিয়ে বন্ডের টাকা দিয়ে আমি বাসা কনফার্ম করলাম। আহ শান্তি।
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১০
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৯
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৮
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৬
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৫
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৪
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ৩
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ২
ফিরিঙ্গিদের দেশে - ১
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


