ঘটনা-১***
১৯৭৯ সালে ইরানের আয়াতুল্লাহ খমেনি সরকার ইরানে মেয়েদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করে দেয়। ১৯৮৩ সাল অবধি ইরানের সকল জায়গায় এবং সকল মেয়েদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়, এমনকি যারা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী নারী এবং যারা ইরানের নাগরিকও নয় কিন্তু ইরানের ঘুরতে অথবা কাজে এসেছেন তাদের জন্যেও হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়।
ইরানে নারীদের হিজাব না পরার কারণে রাস্তাঘাটে হেনস্থা করা ও শারীরিক নির্যাতন করা খুবই কমন একটি বিষয়। এমনকি কোনো নারী যদি হিজাব না পরে তাহলে ১০ দিন থেকে শুরু করে দুই মাস পর্যন্ত জেল হতে পারে এবং সাথে ৫০,০০০ থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ ইরানি টাকা জরিমানাও হতে পারে। ১৯৭৯ সালের রেভলুশনের সময় দুইটি শ্লোগান খুবই জনপ্রিয় ছিলো যার মধ্যে একটি ছিলো "হিজাব পরো নাহলে আমরা তোমার মাথায় মারবো" এবং "বেপর্দাদের মৃত্যু চাই"
২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইরানের একজন নারী, নাম ভিদা মোভাহেদ তেহরানের রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে একটি ইউটিলিটি বক্সের উপর দাড়িয়ে হিজাব খোলা অবস্থায় তার সাদা ওড়না একটি লাঠির মাথায় বেধে জনগণের উদ্দেশ্যে পতাকা মতো করে ওড়াতে থাকে নারীদের বিরুদ্ধে ইরানী সরকারের নিপীড়ন, দমন ও বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে।
এই ঘটনার পরেই ভিদা মোভাহেদ কে ঐ দিনই গ্রেফতার করা হয় এবং জেলে আটকে রাখা হয়। এদিকে এই ঘটনার পর ইরানের নারীরা সজাগ হয়ে ওঠেন এবং দীর্ঘদিন যারা ইরানের এরকম নারী দমন নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল তারাও প্রতিবাদে অংশ নেয়। ভিদা মোভাহেদের সমর্থনে ইরানের বহু জায়গায় তারাও হিজাব ছাড়া লাঠির মাথায় সাদা ওড়না বেধে প্রতিবাদে অংশ নেয়। তাদের মধ্যেও অনেককেই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে নারীরা এরপর তাদের প্রতিবাদ ও হিজাব ছাড়া ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে থাকে। ইরানের নারীরা এবং ওমেন এক্টিভিস্টরা এই ঘটনার পর বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া সহ সব জায়গায় প্রতিবাদ সোচ্চার হয়ে ওঠে।
--------------
ঘটনা-২***
২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের কারনাটাকা সরকার কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব, হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের কমলা রং এর শাল এবং অন্য যেকোনো ধর্মের অনুসারীদের তাদের ধর্মের সিম্বল বহন করে এমন কোনো পোশাক পরা যাবে না এবং শুধুমাত্র স্কুল বা কলেজ কর্তৃক নির্ধারিত পোশাক পরতে হবে এমন একটি রুলস জারি করে।
এই ঘটনার প্রতিবাদ হিসেবে সেকেন্ড ইয়ার কমার্সের একজন ছাত্রী মুসকান খান একটি হিন্দু ডানপন্থী ছাত্রদের ভিড়ের সামনে "জয় শ্রীরামের" বিপরীতে "আল্লাহু আকবর" বলে স্লোগান দিতে থাকে এবং মুসকান খানের এই নির্ভীক আচরণ ভিডিওর মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায় এবং সকলে কান্নারটাকা সরকারের এই আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
----------------
আমি কাকে সমর্থন করি?
দুইটা ঘটনাই মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুইটাতেই নারীদের তাদের শরীরের উপর অধিকার কে ছোট করা হয়েছে। একজন মানুষ কি পরবে না পরবে সেটি তার ব্যক্তিগত বপার এবং স্বাধীনতা । পোশাকের উপর সরকারি নির্দেশনা থাকলেও হিজাব পরা অথবা না পরা সিরিয়াস কোন আইন ভঙ্গ করে না।
আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসলিম মুসকান খানের সমর্থন করবে কিন্তু আবার অন্যদিকে ভিদা মোভাহেদ এর বিরোধিতা করবে। এর কারণ মানবাধিকার, নারী অধিকার অথবা ব্যাক্তি স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম। মুসলিমদের এই ধরণের সমর্থন হিপক্রেসি ছাড়া কিছুই নয়।
আমি মুসকান খান কে সমর্থন করি তার হিজাব পরার অধিকার কে সম্মান জানিয়ে এবং আমি একই সাথে ভিদা মোভাহেদ কেও সমর্থন করি তার হিজাব না পরার অধিকার কে সম্মান জানিয়ে
লেখকঃ মেহেদী হাসান সজীব
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:০৬