somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি কাকে সমর্থন করেন এবং কেনো?

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা-১***
১৯৭৯ সালে ইরানের আয়াতুল্লাহ খমেনি সরকার ইরানে মেয়েদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করে দেয়। ১৯৮৩ সাল অবধি ইরানের সকল জায়গায় এবং সকল মেয়েদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়, এমনকি যারা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী নারী এবং যারা ইরানের নাগরিকও নয় কিন্তু ইরানের ঘুরতে অথবা কাজে এসেছেন তাদের জন্যেও হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়।

ইরানে নারীদের হিজাব না পরার কারণে রাস্তাঘাটে হেনস্থা করা ও শারীরিক নির্যাতন করা খুবই কমন একটি বিষয়। এমনকি কোনো নারী যদি হিজাব না পরে তাহলে ১০ দিন থেকে শুরু করে দুই মাস পর্যন্ত জেল হতে পারে এবং সাথে ৫০,০০০ থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ ইরানি টাকা জরিমানাও হতে পারে। ১৯৭৯ সালের রেভলুশনের সময় দুইটি শ্লোগান খুবই জনপ্রিয় ছিলো যার মধ্যে একটি ছিলো "হিজাব পরো নাহলে আমরা তোমার মাথায় মারবো" এবং "বেপর্দাদের মৃত্যু চাই"

২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইরানের একজন নারী, নাম ভিদা মোভাহেদ তেহরানের রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে একটি ইউটিলিটি বক্সের উপর দাড়িয়ে হিজাব খোলা অবস্থায় তার সাদা ওড়না একটি লাঠির মাথায় বেধে জনগণের উদ্দেশ্যে পতাকা মতো করে ওড়াতে থাকে নারীদের বিরুদ্ধে ইরানী সরকারের নিপীড়ন, দমন ও বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে।

এই ঘটনার পরেই ভিদা মোভাহেদ কে ঐ দিনই গ্রেফতার করা হয় এবং জেলে আটকে রাখা হয়। এদিকে এই ঘটনার পর ইরানের নারীরা সজাগ হয়ে ওঠেন এবং দীর্ঘদিন যারা ইরানের এরকম নারী দমন নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল তারাও প্রতিবাদে অংশ নেয়। ভিদা মোভাহেদের সমর্থনে ইরানের বহু জায়গায় তারাও হিজাব ছাড়া লাঠির মাথায় সাদা ওড়না বেধে প্রতিবাদে অংশ নেয়। তাদের মধ্যেও অনেককেই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে নারীরা এরপর তাদের প্রতিবাদ ও হিজাব ছাড়া ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে থাকে। ইরানের নারীরা এবং ওমেন এক্টিভিস্টরা এই ঘটনার পর বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া সহ সব জায়গায় প্রতিবাদ সোচ্চার হয়ে ওঠে।
--------------

ঘটনা-২***
২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের কারনাটাকা সরকার কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব, হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের কমলা রং এর শাল এবং অন্য যেকোনো ধর্মের অনুসারীদের তাদের ধর্মের সিম্বল বহন করে এমন কোনো পোশাক পরা যাবে না এবং শুধুমাত্র স্কুল বা কলেজ কর্তৃক নির্ধারিত পোশাক পরতে হবে এমন একটি রুলস জারি করে।

এই ঘটনার প্রতিবাদ হিসেবে সেকেন্ড ইয়ার কমার্সের একজন ছাত্রী মুসকান খান একটি হিন্দু ডানপন্থী ছাত্রদের ভিড়ের সামনে "জয় শ্রীরামের" বিপরীতে "আল্লাহু আকবর" বলে স্লোগান দিতে থাকে এবং মুসকান খানের এই নির্ভীক আচরণ ভিডিওর মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায় এবং সকলে কান্নারটাকা সরকারের এই আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
----------------

আমি কাকে সমর্থন করি?
দুইটা ঘটনাই মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুইটাতেই নারীদের তাদের শরীরের উপর অধিকার কে ছোট করা হয়েছে। একজন মানুষ কি পরবে না পরবে সেটি তার ব্যক্তিগত বপার এবং স্বাধীনতা । পোশাকের উপর সরকারি নির্দেশনা থাকলেও হিজাব পরা অথবা না পরা সিরিয়াস কোন আইন ভঙ্গ করে না।

আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসলিম মুসকান খানের সমর্থন করবে কিন্তু আবার অন্যদিকে ভিদা মোভাহেদ এর বিরোধিতা করবে। এর কারণ মানবাধিকার, নারী অধিকার অথবা ব্যাক্তি স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম। মুসলিমদের এই ধরণের সমর্থন হিপক্রেসি ছাড়া কিছুই নয়।

আমি মুসকান খান কে সমর্থন করি তার হিজাব পরার অধিকার কে সম্মান জানিয়ে এবং আমি একই সাথে ভিদা মোভাহেদ কেও সমর্থন করি তার হিজাব না পরার অধিকার কে সম্মান জানিয়ে

লেখকঃ মেহেদী হাসান সজীব


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:০৬
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×