somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঊনসত্তুর থেকে পচাঁত্তুর-'৭১এ যাদের বয়স তিনের কম ছিল তাদের থেকে সামুর কনিষ্ঠতম ব্লগারটিকে উৎসর্গীকৃত-পর্ব-২

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবতরনিকা: বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বংশকারীদের (আমি নির্বংশই বলবো কারন প্রচলিত ধারায় বংশগতি পুরুষ উত্তরাধিকারীর ওপরেই বর্তায়) শাস্তি প্রদানের পর থেকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটার পর একটা পোষ্ট আসছে। যার প্রায় সবগুলোই (গুটি কয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া) পক্ষপাত দুষ্ট। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আমার নিজস্ব ক্ষতির কথা ভুলে/ এড়িয়ে আমি আমার একান্ত ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি, শিরোনামে উৎসর্গীকৃত ব্লগারদের জন্যে। ৩ বছরটা উল্লেখ করার কারন হ'ল যে মানুষের কোন স্মৃতি ৩ বছর বয়সের আগে থাকেনা, সাধারনত। এ পোস্টে আমার ব্যাক্তিগত ক্ষতি গুলোঃ

১। এটা প্রকাশিত হবার পর আমার পরিচয় গোপন থাকবেনা, যা আমি এতদিন সযতনে রক্ষা করেছি।

২। ব্যাক্তিগত ঘটনা বয়ান পাঠকদের কাছে মাঝে মধ্যে আত্মপ্রচার ও পারিবারিক প্রচারের মত লাগবে যা আসলেই অশোভন, অরুচিকর এবং বিরক্তিকর। এগুলোও আমি লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে এসেছি আজীবন।

৩। কোন পক্ষাবলম্বন না করে লেখাটা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। আমার জন্যে আরো কঠিন। কারন যৌবন যখন সদ্য দেহ-মনে ভর করে আমার সমগ্র সত্তাকে ভীষনভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে, যা কিছুই সুন্দর তারই প্রেমে পড়ছি, ঠিক সে সময়ই বংগবন্ধুর সাথে আমার পরিচয়। নিরপেক্ষভাবে তাঁর ব্যাপারে লিখতে আমার খুবই কষ্ট হবে এবং আমাকে অসাধ্য সাধন করতে হবে।

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো-আমার যে একটা দায় আছে আমার পরের প্রজন্মগুলোর কাছে।

আমার এই দায় শোধ যদি এই প্রজন্মকে আমাদের গৌরবময় আর কলংকলেপিত অতীতকে নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে শেখার পথে একপাও এগিয়ে নিয়ে যায়, তা'লেই আমি মনে করবো সেটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।
[/si

অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত সৃতিচারন। পারিবারিক ঘটনাবলীর চর্বণ। সমগ্র দেশের ব্যাপারটা কখনোই প্রধান্য বিস্তার করবেনা, সে সাধ্যও আমার নেই।

পুরোটা পড়ার পর অনেকের কাছেই এটাকে "পর্বতের মূষিক প্রসব" বলে মনে হ'তে পারে। তাদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

পর্ব-১পর্ব-২পর্ব-৩ পর্ব-৪
পর্ব৫পর্ব-৬পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২ পর্ব-১৩ পর্ব-১৪ পর্ব-১৫ পর্ব-১৬পর্ব-১৭ পর্ব-১৮পর্ব ১৯ পর্ব-২০


অনিশ্চিত দিনগুলো

এক ব্যাক্তি এক ভোটের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে। নির্বাচনোত্তর দিন গুলোতে আমরা ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। অধিবেশন পিছিয়ে দেয়া, ক্ষমতা হস্তান্তরে গরিমসি এসব চলতে থাকে। সে সময়টায় আবার বন্দী জীবনে ফিরে যাই। ৭ই মার্চ, ১৯৭১। আমাদের অধ্যক্ষ লে: কর্নেল ফজল ই হক এবং এ্যাডজুটেন্ট ক্যাপটেন জুবেরীকে( দু জনেই অবাংগালী) অনেক বলে কয়ে জ্যেষ্ঠরা রাজী করালেন বংগবন্ধুর ভাষন শোনাবার ব্যবস্থা করতে। আমরা ৩০০ ছাত্র অধীর আগ্রহে বসে আছি কান খাড়া করে। কিন্তু প্রতীক্ষাই সার। কিছুই শুনতে পেলাম না।

কদিন পরই ঢাকার প্রশাসন যখন পুরোপুরি বংগবন্ধুর হাতে চলে গেল আমাদের কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্যে বন্ধ হয়ে গেল।

তিন সুলতানঃ

চিটাগাংয়ে তখন ৩ জন নাম করা সুলতান ছিলেন। কুলী সুলতান: দিন মজুর সরবরাহকারী, গরু সুলতান: গরুর ব্যবসা করতেন, আর খসী (খাসী) সুলতান: তার ছেলে মেয়ে হ'তনা বলে এই নাম। খসী নামটি পাকাপোক্ত হবার পর তার সন্তান হওয়া শুরু করে।

অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ এই আওয়ামী লীগ নেতা (খসী সুলতান) থাকতেন সিডিএ আবাসিক এলাকার পাশে। বংগবন্ধু চিটাগাং আসলেই তাঁর বাসায় একবেলা কাটাতেন (সে সময় পর্যন্ত)।

অবিরাম মিটিং

প্রয়াত সুলতান চাচার (খসী সুলতান) সভাপতিত্বে আমাদের বাসায় প্রতিদিন মিটিং হ'ত, যদি ইয়াহিয়া ক্ষমতা না দেয় তা'লে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, বাংগালী-অবাংগালীদের সম্পর্ক এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি এসবের ওপর। মিটিং এ আসতেন রব্বানী চাচা (প্রয়াত) লতিফ চাচা(প্রয়াত), আবুল হোসেন চাচা (ইনকাম ট্যাক্সে ছিলেন, অনেকদিন যোগাযোগ নেই), সওদাগর এজেন্সিজ এর মালিক (নাম মনে আসছেনা, তবে তার দু' ছেলের নাম ছিল আমীর ও উজির, সম্ভবত পরে শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন, তার কোন তৎপরতা দেখিনি বলেই বোধহয় ঠিক মনে নেই), ডাক্তার সৈয়দ আনোয়ার আলী(প্রয়াত, মুক্তি যুদ্ধে সাহসী এই ডাক্তারের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবদান ছিল), আশিকুল ভাই (কালুরঘাট রেডিও স্টেশন চালু করার পেছনে তার অবদান ছিল) ও আরো কয়েক জন। সারাদিন চলতো কাপের পর কাপ চা, বিস্কুট, দুপুরের খাবার, কোন কোন দিন রাতের খাবারও। মিটিংএর ফাঁকে ফাঁকে ব্রিজ খেলতেন অনেকেই। ড: আনোয়ার আলী সব সময় জিততেন। হারতেন বাবা নিয়মিত এবং হেরেই তার পার্টনারকে দিতেন ঝারি। আমরা ছোটরা সারাদিন পরিবেশনে ব্যস্ত থাকতাম। রাধুঁনী বা সাহায্যকারীদের পরিবেশন করা নিষিদ্ধ ছিল। পরিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে আমরা ছোটরা ম্যাচের কাঠি দিয়ে ফ্লাস খেলতাম।

নৃশংসতার শুরু

ইয়াহিয়ার টালবাহানা, ভুট্টোর ঘুটি চালানো বংগবন্ধুর ক্ষমতা অরোহনকে অনিশ্চত করে দিচ্ছিল। তখন বাংগালীদের রাগ গিয়ে পড়লো বিহারীদের ওপর। একমাত্র বিহারীরাই ছিল হাতের কাছে ঝাল মেটানোর জন্যে। বিহারীরা কখনোই বাংগালীদের সাথে মিশে যায়নি। তারা কথা বলতো উর্দুতে। আত্মীয়তা করতো নিজেদের ভেতর, ভোট দিত মুসলিম লীগ, পি পি পি বা ইসলামী পন্থী দলগুলোকে। মানসিক ভাবে তারা সবসময় পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে একাত্বতা বোধ করতো। যদিও পাকিস্তানীরা তাদেরকে মোহাজের বলে নাক সিঁটকাতো। অনেকটা আজকের তূর্কীদের মত। নিজেরা মনে করে ইউরোপীয় আর ইউরোপীয়রা করে দুর দুর।

স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত পাকিরা (আমরা তখন তাদের ডাকতাম "পাইয়া" বলে) বিহারীদের বাংগালীদের চেয়েও নীচু স্তরের মনে করতো {এখানে যে কারো ভিন্নমত থাকতে পারে, এটা আমার একান্ত নিজের পর্যবেক্ষন। আমাদের ক্লাসে (ক্লাস সেভেন) মোট ৫৪ জন ছাত্রের মধ্যে অবাংগালী বা অবাংগালী ঘেঁষা বাংগালী ছিল ২১ জন। ওদের সাথে দিন রাত এক সংগে থেকে, খেয়ে দেয়ে, ঘুমিয়ে, পড়ালেখা করে, পিটি প্যারেড করে, খেলাধুলো করে, ঝগড়া ঝাটি করে আমার এ ধারনা হয়}।

মার্চের ২৩/২৪ তারিখে সন্ধ্যার দিকে আমি খালার বাড়ি ঈদগাঁ থেকে ঢাকা ট্রাংক রোডের দিকে আসছিলাম কাবাব খেতে (যে রাস্তাটা আগ্রাবাদ থেকে হাজী পাড়া হয়ে ঈদগাঁর পাশ দিয়ে ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়েতে ওঠে)। যেখানে রাস্তাটি মহা সড়কে মিশেছে সেখানে, এক কোনে একটা কাবাবের দোকান ছিল 'জিন্দেগী হোটেল'। অপূর্ব স্বাদের গরুর বটি কাবাব পাওয়া যেত ওখানে।

তো আমি যখন গজ পন্চাশেক দুরে হোটেল থেকে, তখন আমার পেছন থেকে শোরগোল উঠলো :"দর দর, বিহাইজ্যারে (ধর ধর বিহারীটাকে)"। প্রথমে অত্যন্ত ফর্সা উনিশ কুড়ি বছরের একটি ছেলে আমার পাশ দিয়ে উর্ধ্ব শ্বাসে দৌড়ে গেল। তার একটু পরই পাঁচ ছ' জন লোক। তাদের কারো কারো হাতে ছুরি। চোখের পলকেই ওরা ধরে ফেল্ল ফর্সা ছেলেটাকে। রাস্তার পাশে শুইয়ে জবাই করে দিল। খাসী জবাই করলে যেমন কিছুক্ষন শব্দ বের হয় শ্বাস নালী দিয়ে, অবিকল সে রকম শব্দ করতে করতে আর পা ছুড়ঁতে ছুঁড়তে রাস্তা রক্তে ভাসিয়ে বিহারীটি খুন হয়ে গেল।


-চলবে


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৮
৪৩টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×