somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঊনসত্তুর থেকে পচাঁত্তুর-'৭১এ যাদের বয়স তিনের কম ছিল তাদের থেকে সামুর কনিষ্ঠতম ব্লগারটিকে উৎসর্গীকৃত-পর্ব১৯

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[si]অবতরনিকা: বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বংশকারীদের (আমি নির্বংশই বলবো কারন প্রচলিত ধারায় বংশগতি পুরুষ উত্তরাধিকারীর ওপরেই বর্তায়) শাস্তি প্রদানের পর থেকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটার পর একটা পোষ্ট আসছে। যার প্রায় সবগুলোই (গুটি কয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া) পক্ষপাত দুষ্ট। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আমার নিজস্ব ক্ষতির কথা ভুলে/ এড়িয়ে আমি আমার একান্ত ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি, শিরোনামে উৎসর্গীকৃত ব্লগারদের জন্যে। ৩ বছরটা উল্লেখ করার কারন হ'ল যে মানুষের কোন স্মৃতি ৩ বছর বয়সের আগে থাকেনা, সাধারনত। এ পোস্টে আমার ব্যাক্তিগত ক্ষতি গুলোঃ

১। এটা প্রকাশিত হবার পর আমার পরিচয় গোপন থাকবেনা, যা আমি এতদিন সযতনে রক্ষা করেছি।

২। ব্যাক্তিগত ঘটনা বয়ান পাঠকদের কাছে মাঝে মধ্যে আত্মপ্রচার ও পারিবারিক প্রচারের মত লাগবে যা আসলেই অশোভন, অরুচিকর এবং বিরক্তিকর। এগুলোও আমি লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে এসেছি আজীবন।

৩। কোন পক্ষাবলম্বন না করে লেখাটা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। আমার জন্যে আরো কঠিন। কারন যৌবন যখন সদ্য দেহ-মনে ভর করে আমার সমগ্র সত্তাকে ভীষনভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে, যা কিছুই সুন্দর তারই প্রেমে পড়ছি, ঠিক সে সময়ই বংগবন্ধুর সাথে আমার পরিচয়। নিরপেক্ষভাবে তাঁর ব্যাপারে লিখতে আমার খুবই কষ্ট হবে এবং আমাকে অসাধ্য সাধন করতে হবে।

৪। শুধুমাত্র স্মৃতি নির্ভর লেখার মূল সমস্যাটা হ'ল ভুল স্মৃতি মনের মধ্যে থাকা। যে কেউ যদি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার কোন বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করেন, তা'লে তাকে আমি অনুরোধ করবো মন্তব্যে তা তুলে ধরতে। আমার স্মৃতি ঘাটতে সাহায্য করার নেই কেউ আমার হাতের কাছে।

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো-আমার যে একটা দায় আছে আমার পরের প্রজন্মগুলোর কাছে।

আমার এই দায় শোধ যদি এই প্রজন্মকে আমাদের গৌরবময় আর কলংকলেপিত অতীতকে নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে শেখার পথে একপাও এগিয়ে নিয়ে যায়, তা'লেই আমি মনে করবো সেটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।

অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত স্মৃতিচারন। পারিবারিক ঘটনাবলীর চর্বণ। সমগ্র দেশের ব্যাপারটা কখনোই প্রধান্য বিস্তার করবেনা, সে সাধ্য বা যোগ্যতা আমার নেই।

পুরো সময়টার কিছু অনুল্লেখযোগ্য অংশ বিষদ ভাবে আসবে আবার অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ পরবে, ব্যাক্তগত স্মৃতিচারনের এটা একটা বিরাট সমস্যা। অনুরোধ করি বিষয়টা মনে রেখে আমার এ লেখাটা পড়বেন ।

পুরোটা পড়ার পর অনেকের কাছেই এটাকে "পর্বতের মূষিক প্রসব" বলে মনে হ'তে পারে। তাদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

[পর্ব-১পর্ব-২পর্ব-৩ পর্ব-৪
পর্ব৫পর্ব-৬পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২ পর্ব-১৩ পর্ব-১৪ পর্ব-১৫ পর্ব-১৬পর্ব-১৭ পর্ব-১৮পর্ব ১৯ পর্ব-২০


THIS IS A FUN POST . ONE MAY EVEN RATE "R". READER'S DISCRETION SOLICITED. এটা একটা কৌতুক পোষ্ট। অতি মৃদু আদি রসাত্বক। গুরু গম্ভীর এবং/কিম্বা অচলায়তন ব্লগার ও দশর্নাথীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অপরিপক্কদের না পড়াই ভাল এঁচোড়ে পক্ক হয়ে যেতে পারেন

এ পোস্টের সব ফটো আর ভিডিও ক্লিপ নেট থকে নেয়া।

কড়ি বাঁচাতে স্বর্ণমুদ্রা


আমার ছোট মামা (ক্লাস সেভেনে থাকতে তাঁকে নিয়ে আমি একটা সিরিজ বের করেছিলাম "নিরো মামা সমাচার"। ২০ পর্ব পর্যন্ত চলেছিল) আর আমি আমার সাইকেলে করে বনানীর এখন যেটা কেমাল আতাতুর্ক সড়ক (Kemal Ataturk Avenue), সেখানের আমার মেজ খালার বাড়ি থেকে ছোট খালার বাড়ি, বুয়েট ক্যাম্পাসে গেলাম। ছোট খালা মামাকে বল্লেন রেশন এনে দিতে। রেশনের দোকান ছিল নিউ মার্কেটের যে গেটটার পাশ দিয়ে বিডিআরএ যাওয়া যায় (নিউ পল্টন) সে গেটের ধারে কাছে। যাতায়তের ভাড়া সহ টাকা পয়সা নিয়ে আমরা সিঁড়ি দিয়ে নীচে
নামলাম। মামা বুদ্ধি বের করলেন। আমার সাইকেলটা দিয়ে যদি রেশন আনি তা'লে ভাড়ার পয়সাটা বাঁচালো যাবে আর তাতে আমার খালা খুব খুশী হবেন। পলাশীর মোড়, আজাদ হয়ে ডানে বাঁক নিলাম। সাইকেল চালাচ্ছেন মামা, আমি রডে বসে। হঠাৎ পপৎ ধরনীতল।

সাইকেল চালকের সাইকেল চালনায় নিবিষ্ট মনটি ডানের দু' দুটি শিক্ষালয়ের অধ্যয়নরতা অগনিত অপ্সরীদের সুমধুর কলকাকলীতে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ায় আমরা দুজনে ভুতলে শায়িত। তেল ও চিনির ভান্ড, চটের ব্যাগ সাইকেলের স্পোকের সাথে ভালবাসাবাসি করছে।

তখন প্লাস্টিকের যুগ ছিলনা। কৌটো ঝালাই ও কেনা, ব্যাগ কেনা, সাইকেলের স্পোক বদলানো, চাকার টাল ভাংগানো আর সাইকেল কোলে বাসায় ফেরার রিকসা ভাড়া বাবদ যা খরচ হ'ল তা দিয়ে আমরা চো চিং চো থুক্কু {গুলিস্তান এলাকার, আমাদের দেশের প্রথম (সম্ভবতঃ) চৈনিক রেস্তোরাটি তত দিনে বোধ হয় উঠেই গেছে।} বাংচিংএ চৈনিক মধ্যাহ্ন ভোজ সারতে পারতাম বোধ হয়।

জাতীয় কবির প্রতি প্রতি টান

আমার কলেজের এক বন্ধু থাকতো ধানমন্ডিতে।

তখন বসবাসরত কাজী নজরুল ইসলাম ও তার পরিবারের রাষ্ট্র বরাদ্দকৃত বাসাটি তার বাসা থেকে খুব একটা দুরে ছিলনা।। ছুটির সময় ও রোজই একবার অন্ততঃ ঢু মারতো কবির বাসায়। আমাকে নিয়ে গেছে শতবার। কারনটা অবশ্য জাতীয় কবির প্রতি তাঁর (আমাদের) ভালবাসা নয়, জাতীয় কবি নাতনী-মিষ্টি কাজীর প্রতি তার প্রেম (আর আমার Infatuation)। আমার দেখা কাজী পরিবারের সবচেয়ে সুন্দরী ছিল মিষ্টি। মিষ্টি কাজীর ফিটের ব্যামো ছিল। মাঝে মাঝে ও হাঁটতে বের হত। বন্ধুটি আমার সব সময় পিছু নিত তার -যদি একবার হাঁটতে হাঁটতে ফিট হ্য়!

একদিন ওর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল। লেকের পার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিট হয়ে গেল মিষ্টি। আমার বন্ধুকে আর পায় কে?

মাথাটি কোলে নিয়ে অতি সোহাগে পায়ের চামড়ার চপ্পলটি মিষ্টি কাজীর নাকের কাছে ধরে রাখলো। মনে মনে বলতে প্রার্থনা করতে থাকলো সহসাই যেন জ্ঞান না ফেরে।

সর্ব ডানে দাঁড়িয়ে মিষ্টি কাজী

তখন থেকেই তার নাম হয়ে গেল মিষ্টি কাজী।

____________________________________________

গার্লস কেডেট কলেজের স্বপ্ন দ্রষ্টা

চার খলিফার আদেশে আমাদের কলেজে সাইন বোর্ড টাংগানো হ'ল "ফৌজদারহাট আবাসিক মহাবিদ্যালয়"। অধক্ষ্য জনাব নাসির চৌধুরী, এ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান (অবঃ)। আবাসিক মহাবিদ্যালয়ের আবার এ্যাডজুট্যান্ট, সোনার পাথর বাটি।


আমাদের কলেজের ওপর পরীক্ষা নিরিক্ষা চলতে লাগলো, চললো টানা পোড়েন। আমরা "আবাসিক"ই চাই আমাদের শিক্ষকেরা চান "কেডেট"।
পিটি প্যারেড শুরু হ'ল। অনেকেরই তাতে অনীহা। সকালে পিটির সময় সিক রিপোর্টের লাইনে {যারা অসুস্থ তাদেরকেও পিটিতে আসতে হ'ত, ভিন্ন স্থানে দাঁড়াতে হ'ত, পিটি করতে হ'তনা। পিটি শুরু হ'লে (দৌড়) সিক রিপোর্টকারীরা হাসপাতালে ডাক্তরের কাছে রিপোর্ট করতো} রোজ দাড়াঁতাম আমাদের ক্লাসের কাইজ্জা , আমি, হাম্বা আর সদ্য প্রয়াত পিগু। ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান আমাদের ওপর ভীষন বিরক্ত থাকতেন। কিভাবে যেন আমরা এই চারজন ডাক্তারকে (ডাঃ নোভালজিন, আসল নাম ডাঃ ইউসুফ, খাঁটি ছাটিগাঁইয়া) দিনের পর দিন বোঝাতে সম্মত হতাম যে আমরা অসুস্থ। একদিন ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান আমাদের লাইনে এসে বল্লেন " তোমরা যদি ফিডি ফ্যারেড কইত্তে পা ফার তালি চলি যাও! You should voluntarily go out!"

তার শত বকা, শাসানো, হুমকীর মধ্যেও আমরা সিক রিপোর্ট করে করে পিটি মাফ নিতে থাকলাম। একদিন তাঁর ধৈর্য চ্যুতি ঘটলো।

আমাদের কাছে এসে অতি নিরীহ গলায় কোমল সুরে জিজ্ঞেস করলেন: "তোমাদের মাসিক হয় নি কোন?"

গার্লস কেডেট কলেজ স্থাপনের চিন্তাটা তাঁর তাঁর মস্তিষ্ক প্রসুত বলেই মনে হয় এখন।

আইল্লা আইল্লা কত্তি কত্তি

ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান হালকা বিমান বিধ্বংসী রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন ষাটের দশকে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরের পাক ভারত যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ করেন খেমকরন সেক্টরে। সে যুদ্ধের বর্ণনা বেশ ক'টি বইতে লিপিবদ্ধ আছে। ইন্টারনেটেও পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই, আমার নামও খুঁজে পেয়েছি যখন! খেমকরন সেক্টরে ভীষন যুদ্ধ হয়। ভারতীয় বাহিনী ক্যাপ্টেন বাচ্চী খানের ডেপ্লয়মেট পাশ কাটিয়ে তাদের পেছন দিয়ে পাকিস্তানী ভুখন্ডে ঢুকে পরে। বাধ্য হয়ে তাঁর ইউনিটকে অবিন্যস্তভাবে (rout not organized withdrawal) শত্রুর ফাঁক দিয়ে পিছু হটতে হয়। এই পিছু হটার সময় রাতের অন্ধকারে শত শত মৃতদেহ পায়ের নীচে দলে (তাঁর একটা পা এক সময় এক মৃতদেহের পাঁজরের ভেতর ঢুকে আটকে গিয়েছিল, পা বের করতে তাঁর অতি মূল্যবান আধ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়, অর্ধ গলিত অন্ত্রের কিয়দংশ তাঁর পায়ের সাথে বের হয়ে আসে,), অনেক কষ্টে শত্রুর কাছে ধরা না পরে তিনি ফিরে আসেন। তার পর পরই তার সাময়িক মনোবিকলন হয় (nervous breakdown)। তিনি চিকিৎসাগত কারনে অকালীন অবসর নিয়ে ফৌজদারহাটে যোগ দেন, সামরিক বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে।

স্বাধীনতার কিছুদিন পর তাঁর মধ্যে প্রবল ধর্মভাব জেগে ওঠে। তিনি দাঁড়ি রেখে দেন। তার অত্যন্ত সপ্রতিভ স্ত্রীকে বোরকায় মোড়ান। আমাদের কলেজের সাপ্তাহিক সিনেমা দেখা নিজে বন্ধ করেন এবং স্ত্রীকেও বন্ধ করান। বাসার রেডিও, টেপ রেকর্ডার ভেংগে ফেলেন (বিক্রি করলে তো অন্য কেউ এগুলো দিয়ে গুণাহের কাজ করবে)।

একদিন তিনি তাঁর স্ত্রীকে ডেকে বল্লেন " আমাদের হুজুরে পুরনুর রাসুল কেজুর ফাতার বিছানায় ঘুমাইতেন আমরাও ঘুমাইবো"। এই বলে তিনি তাঁর বাড়ি থেকে সব আসবাবপত্র ঝেঁটিয়ে বিদায় করলেন।

মাসখানেক পর তাঁর মনে হল-হুজুরে পাক রাসুল্লাহ তো বিদ্যুৎ ব্যাবহার করতেন না!

গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবাদহে তিনি তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন।

একদিন তাঁর অফিসে স্ত্রীর আপন খালাতো/মামাতো/ফুপাতো/চাচাতো ভাই (রাগীমন, ইংরেজী কত সোজা ভেবে দেখুন, এক cousin শব্দে আট আটটি সম্পর্ক প্রকাশ করা যায়) আসলো। কথা বার্তা আপ্যায়ন শেষে সে ভাই বল্লেন: " ভাইয়া তা হ'লে আপনার বাসায় গেলাম, বোনটিকে দেখে চলে যাবো। হুংকার দিয়ে উঠলেন দুলাভাই"তুমি বেগানা ফুরুষ আমার ওয়াইফের সাথে তুমার কি?' জান তুমি বেগানা ইস্তিরি লোকের লোকের চেহারা দেইখলে যেনা করার ফাফ হইবে? বাড়ি ছলি যাও।" ভাই বাড়ি চলে গেলেন।

কিছুদিন পর মিসেস বাচ্চী খানও।

বছরাধিক ক্যাপ্টেন বাচ্চীর শত অত্যাচার সহ্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ অপমান সহ্য করার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা তাঁকে দেননি।

তিন দিন পর ক্যাপ্টেন বাচ্চী খানের দ্বিতীয় বারের মত নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়। তিনি কলেজের হাসপাতালে ভর্তি হন। আমাদের সতীর্থ জ্যাকল ( সরকারী উচ্চ পদে কর্মরত) তাঁকে দেখতে যায়। জ্যাকলকে জড়িয়ে ধরে তিনি ডুকরে ওঠেন ".....হেইল, .....হেইল, আইল্লা আইল্লা কইত্তে কইত্তে আমার সংসারে আগুন ধরি গেল!"



জন্ম নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী পদক্ষেপ!

কলেজে ঢোকার সময় প্রধান ফটকের আগেই হাতের বাঁয়ে বড় সড় এক দিঘি।কিংবদন্তির। শত শত বছরের পুরোনো। আশে পাশের গ্রামে দিঘিটি নিয়ে ভয়াবহ সব গল্পের প্রচলন আছে। সেই দিঘিতে পুরো কলেজের ছাত্রেরা একদিন মাছ ধরতে গেল। ঘের জাল ছাড়াও খালি হাতে আমরা অনেক মাছ ধরলাম। কুমিল্লা শহরের ওয়েষ্ট ব্যাংক অফ ধর্মসাগরের ছেলে কাইজ্জা ( এখনো উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেয়। অধুনা সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের অত্যাচারের ভয়ে চিটাগাং সিংগাপোর খ্যাপ দেয়) প্রমাণ করে ছাড়লো যে সে আসলেই দিঘির পারে বড় হয়েছে। কলেজের সব ছাত্রদের মধ্যে সে-ই সবচে' বেশী মাছ ধরলো হাত দিয়ে। চারটা মাছ জমা দিয়ে বাকিগুলো আমরা সার্টের ভেতর লুকালাম, ফিরবো। কিন্তু গণনা আর শেষ হয়না। আমাদের ক্লাসের মাংকির ( অতি জনপ্রিয় ডাক্তার, চিটাগাংএ মেট্রো পলিটান ক্লিনিক, ও আর নিজাম রোডে বসে সম্ভবতঃ, ওর মার নাম ময়নার মা, চিটাগাং রেডিওতে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন) ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিনকে (সাকার ভাই নয়) পাওয়া যাচ্ছেনা। অনেকক্ষণ পর তার মৃতদেহ পাওয়া গেল।

চোখের সামনে লাশ আর মনের সামনে দিঘি নিয়ে আগের শোনা ভয়াবহ সব গল্প। ভয়ে আমরা সব সিঁটিয়ে গেলাম।

শাহজাহান (এখন নজরুল) হাউজের হাউজ টিউটর ছিলেন ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান। সে রাতে ভয়ের চোটে জ্যাকলরা রুমের সব খাট এক সাথে লাগিয়ে ঘুমানোর আয়োজন করছিল। এমন সময় ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান এসে হাজির।

খাট গুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তিনি শিহরিত হয়ে উঠে বল্লেন "...হেইল, তোমরা এ কি কইচ্ছো? এইভাবে একোইত্র হই ঘুমাইলে, কাইল সকালে তো আমি ফ্যারেড স্টেইট (parade state: লোকবল গণনা) মিলাইতে ফাইরবোনা!"

লজ্জা জয় করলো ভয়কে। খাটগুলো আলাদা হয়ে গেল।

ধরা খাওয়া

অনেক পরে.....
সবাই আমরা বিজ্ঞান নিয়েছি এইচ এস সিতে। তবে কম্বিনেশন ভিন্ন। জ্যাকল আর হাম্বার (২৭ বছর সরকারী চাকুরী করে এখন ব্যাবসায়ী) কম্বিনেশন এমনই (জীববিজ্ঞান ও সামরিক বিজ্ঞান, অংককে ঝেটিয়ে বিদায়) যে তাদের দুজনের সামরিক বিজ্ঞান ক্লাস আলাদা নেয়া হয়। সেদিন হাম্বা স্বভাবগত ভাবেই অনুপস্থিত (ডাক্তারের পরামর্শে), জ্যাকল স্টাফ লাউন্জে গিয়ে দেখে ডেস্কে মাথা রেখে ক্যাপ্টেন বাচ্চী ঘুমুচ্ছেন। জ্যাকলকে আর পায় কে? সোজা লাইব্রেরীতে। তখনকার দিনে অতি জনপ্রিয় Encyclopedia Britannicaর Human Reproductive Organs (ব্রিটানিকা জ্ঞান কোষের মানব দেহের প্রজনন অংগ সমুহ) অধ্যায়ের রংগীন পাতা উল্টানো শুরু করলো সে। অধ্যক্ষ (তখনকার) লে. কর্নেল শামসুল ইসলাম (তাঁর বড় ছেলে মুজাহিদ ক'দিন আগেও এন বি আর এর উচ্চ পদে কর্মরত ছিল, এখন সম্ভবতঃ প্রেষণে) লাইব্রেরিতে আসলেন। পুরো পাঠাগারে তখন একমাত্র পাঠক জ্যাকল। অধ্যক্ষ এসে জিজ্ঞেস করলেন "..হে..., তোমার কোন ক্লাস নেই?
জ্যাকলের উত্তর "জ্বী স্যার আছে।"
'কি ক্লাস?'
'মিলিটারি সাইন্স'
'তো ক্যাপটেন বাচ্চী খান কোথায়?"
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির জ্যাকলের উত্তরঃ
'"স্যার উনি স্টাফ লাউন্জে ঘুমুচ্ছেন!"

ঘন্টা খানেক পর। আমরা মিস্টার হ্যারিসন রোডের (নজরুল ইসলাম) বাংলা ক্লাস করছি- হ্যারিসন রোড-বউবাজার-পার্ক স্ট্রিট- সদর স্ট্রিট-রোজকার মত তিনি তাঁর সদ্য যৌবনের কোলকাতার গল্প বকে যাচ্ছেন। হঠাৎ কোন অনুমতি না নিয়েই সোজা ক্লাসের মাঝে ঢুকে পড়লেন ক্যাপ্টেন বাচ্চী খান। তার সবচে' প্রিয় ছাত্রটিকে উদ্দেশ্য করে বল্লেন 'সোহেইল, তুমি আমার সাথে এই রকম বেঈমানী কইত্তে ফাইরলা?'

চোখ ভরা তার আশাহতের দৃষ্টি।

-----

ক্যাপটেন বাচ্চী খান এই পর্ব লেখা পর্যন্ত পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় সুস্থ্য শরীর ও মন নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করছেন। তাঁর সাথে আমার দিন পনেরো আগে দেখা হয়েছিল, পুরোনো ফৌজিয়ানদের সমবেশে। এখানে বলা ঘটনাগুলি সবার সামনে তাঁকে অভিনয় সহকারে বর্ণনা করি আমি। পুরোটা সময় ধরে তিনি মুচকি মুচকি হেসে উপভোগ করেন আমার বর্ণনা। তাঁর আশে পাশের লোকদের অবশ্য বেশ অসুবিধের সৃষ্টি করেছিলাম আমি। ভরপেট খেয়ে পেটের খিঁচুনিতে খাবার উগরানো ঠেকাতে অসুবিধে হচ্ছিল সবার।

Why Dancing? Am I Laughing?

অংক করাতে পারুক আর না-ই পারুক, আমাদের অংক শিক্ষকদের প্রত্যেকেই ছিলেন মজার। সবচেয়ে বেশী যার সাথে দুষ্টুমী করতাম তিনি হচ্ছেন জিসিবি (গরিলা চন্দ্র বড়ুয়া ধেৎতেরি গোপাল চন্দ্র বড়ুয়া)। তার নাক ছিল আস্ট্রেলিয় এ্যাবরিজিনদের মত। মুখ পুর্ণিমার চন্দ্রের মত। গিকার চেয়েও মোটা ছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প আছে।

একদিন তিনি বোর্ডে অংক করার জন্যে আমাদের দিকে পেছন ফিরেছেন। সাদা প্যান্টালুনের পেছন দিকটার কিয়দংশ হলুদ! আমরা সশব্দে হেসে উঠলাম। সবচেয়ে বেশী হেসেছিলাম আমি আর সদ্য প্রয়াত পিগু । আমাদের দিকে তেড়ে আসলেন তিনি। আমি আর পিগু চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে জানালা দিয়ে পগাড়পার। আমাদেরকে ধরতে না পেরে অগত্যা মধু সূদন আমাদের ক্লাসের সবচে' শান্ত ও ভদ্র ছেলে মাননীয় জাহাংগীরের ওপর চড়াও হলেন। এক হাত দিয়ে ডাস্টারের বাড়ি আর অন্য হাত দিয়ে মাথায় অনবরত গাট্টা মারতে মারতে বলতে থাকলেন "হ আই লাফিং? এ্যাম আই ডান্সিং?"

সন্ধ্যর মধ্যেই মাননীয় জাহাংগীর জ্বরে প্রলাপ বকতে লাগলো। ও কিন্তু সেদিন একটুও হাসেনি। অতি গম্ভির প্রকৃতির জাহাংগীর কখনও হাসতোনা বলেই আমরা ওকে ডাকতাম মাননীয় জাহাংগীর।

জাহাংগীর অনেক বছর ধরে আলজাইমারে ভুগছে।

আমি আবার..এবং বাংলা শব্দ ভান্ডার

মিস্টার হাসান আমাদের বাংলা সাহিত্য পড়াতেন। প্রথম দিন ক্লাসে এসেই তিনি নিজের পরিচয় জানালেন, আমাদের সাথে গল্প করলেন। যাওয়ার সময় হঠাৎ ঘুরে দাড়িয়ে আমাদের বল্লেন " আমি আবার ফার্স্ট ক্লাস কিনা আর আক্কাস আবার থার্ড ক্লাস কিনা তাই তামি তোদের সাহিত্য আর আক্কাস ব্যাকরণ পড়াবে।" বলে মুখ দিয়ে একটা শব্দ করে, হাত দিয়ে একটা তালি বাজিয়ে প্রস্থান করলেন।

তাকে এই ধরায় সবচে' জ্ঞানী মানুষ বলে আমরা মনে করতাম পড়াতেও অপূর্ব। বাংলায় তো তাঁর জুড়িই নেই। আমার শেখা বাংলার প্রায় পুরোটাই ওনার কাছ থকে শেখা।

একদিন মিষ্টি কাজী ( নাম করনের শানে নজুল ওপরে দেয়া) হাসপাতাল থেকে সিক রিপোর্ট শেষে ফিরেছে। কি যেন তাকে অস্থির করে রেখেছে। মিষ্টার হাসানের ক্লাস চলা কালীন সময়ে সে ঢুকেছে। আগাগোড়া ইংরেজী মাধ্যমে পড়া মিষ্টি কাজীর বাংলা জ্ঞান আমার তিন সন্তানের চেয়ে খুব একটা উন্নত ছিল না। একবার পাঠাগার সম্পর্কে রচনা সে শুরু করেছিলএইভাবে: "পাঠাগার হ'ল একটি ঘর যেখানে অনেক পাঁঠা বসবাস করে..।"

তো তার আর তর সইলোনা ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত। হঠাৎ দাঁড়িয়ে উঠে ২৯ জন ছাত্রের সামনে জিজ্ঞেস করলো: "স্যার, স্তন মানে কি?"

সারা ক্লাসে পিন পতন সব্ধতা! অনেক্ষন মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি বল্লেন : "পয়োধর!" বলেই আগের প্রসংগে ফিরে গেলেন।

পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে ধপ করে বসে পড়লো মিষ্টি।

পরে জানতে পারি, আমাদের জিসিবি ডাক্তারের কাছে বলেছিলেন যে তাঁর স্ত্রীর স্তনে ব্যাথা হচ্ছে তাই যেন তাকে ওষুধ দেয়া হয়। বাইরে থেকে মিস্টি শুনে ফেলেছিল তা।

একদিন মিষ্টার হাসান রবীন্দ্র নাথের অচলায়তন পড়াচ্ছেন। খুব ইচ্ছে আমাদের দিয়ে নাটক করান। অপ্রাসংগিক ভাবে পিগু কি যেন বল্ল, আমি হেসে ফেল্লাম।

খুব ধীরে ধীরে মি. হাসান বল্লেন: ইউসুফ কি যেন বল্ল, ......হাসলো, এইসব ইতরামী, বাঁদরামী, বদমাইসী, হারামজাদামী যারা করে তাদের ক্লাস থেকে বের হয়ে যাওয়াটাই বান্ছনীয়।

বই গুটিয়ে আমরা দুজন বেরিয়ে গেলাম এবং যথারীতি লাইব্রেরীতে অতি মনোযোগ সহকারে ব্রিটানিকা জ্ঞান কোষের মানব দেহের প্রজনন অংগ সমুহ অধ্যয়নরত অবস্থায় অধ্যক্ষের কাছে ধরা পড়লাম।

দেখ দেখ কি সুন্দর পাখি!

সমস্ত কলেজ গিয়েছি কক্সবাজারে। বিরাট খোলা মাঠ। যে মাঠে আজকাল শীতে মেলা হয় সেখানে (সম্ভবতঃ) তাঁবু খাটিয়ে থাকা। আমাদের হাউজ মাস্টার বাত্তি (মিস্টার আবুল আশরাফ নুর), সকাল বেলা তাঁর তাবুর সামনে আমাদের মাটিতে বসিয়ে শৃংখলা জাতীয় অতি বিরক্তিকর বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। আমরা তার চেয়েও ভয়াবহ বিষয় অবতারনার আশংকায় ভীত-তাঁর ইংরেজী কবিতার বই সদ্য বেড়িয়েছে তখন। যে কোন সময়ে বইটি বের করে উদাত্ত গলায় আবৃতি শুরু করতে পারেন। উসখুস করছি।পাশে বসা জ্যাফের (ঘাস ফুল এন জি ও করে) কৌতুহলী দৃষ্টি অনুসরন করে দেখি বাত্তির গাঢ় নীল প্যান্টালুনের বিশেষ জায়গায় কালো রংয়ের আফ্রিকার ম্যাপ ছোপ দেয়া! কিছুক্ষনের ভেতর আমাদের সবার দৃস্টি স্থির হয়ে গেল সেখানে!

একটু পরই বাত্তি হাত উঠিয়ে আকাশের দিকে আংগুল তুলে অতি উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন "দেখ দেখ কি সুন্দর পাখি!" বলেই তাঁবুর ভেতর সেঁধিয়ে গেলেন।

হালাল খাওয়া

কলেজের হাসপাতালের কাছেই ডাক্তারের বাসা। কলেজের ডাক্তার তখন লে. কর্নেল এল এ খান। আমি আন্তঃ হাউজ এ্যাসল্ট কোর্স করার সময় Mediterranean Net এ পল্টি খেয়ে(এসব ব্যাপারে আমি একেবারেই অদক্ষ, সামরিক আকাদেমী কিভাবে পার করেছি তা আজও আমার কাছে জীবনের সবচে' বড় বিস্ময়) কলার বোন খসিয়ে হাসপাতালে। ডাক্তারের ছোট্ট ৩/৪ বছরর মেয়ে ইভার সাথে খুব খাতির হয়ে গেল। সে একদিন গল্প করলো ওর পালা মুরগীদের। আমি কাইজ্জা, ম্যান্দো (ম্যান্দা , উচ্চ পদে সরকারী চাকুরী শেষে এখন আমেরিকা প্রবাসী, এই বয়সে!) বাংগু ('বংগীয়> শব্দের অপভ্রংশ, ঠোলা-চিকিৎসক, কুমিল্লা পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত) ও ভাত/হাদু (৫ জনের ভাত একাই খেত বলে, উচ্চ পদে সরকারী চাকুরী শেষে ব্যাক্তি মালিকানাধীন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত)কে ডেকে আনলাম। গভীর রাতে হানা দেয়া হল। খোঁয়াড়ে হাত ঢুকালেই মুরগী ঠোকর দেয়। শেষে ম্যান্দো হাত ঢুকালো। ওর হাতের চামড়াতে কোন অনুভূতি নেই। মুরগীর মাথা একটা ধরলো বটে কিন্তু ফোকর দিয়ে বের করার সময় মুরগীর নিতম্ব গেল আটকিয়ে। টানাটানি শুরু হ'ল। হঠাৎ হাদু বলে উঠলো ফিস্ ফিস্ করে ' বিসমিল্লাহে আল্লাহু আকবার' বল, যদি কল্লা ছিড়ে আসে তা'লে তো হালাল থাকবেনা। ম্যান্দোর সাথে সবাই পড়া শুরু করলো দোয়াটি এবং এক সময় ঠিকই মুরগীর মাথা ছিঁড়ে ম্যান্দোর হাতে চলে আসলো। বাংগুর আর তর সইলো না। খোঁয়াড়ের দরোজা ভেংগে ছটফট করতে থাকা ধর নিয়ে দিল দৌড়। আকবর (শহীদুল্লাহ) হাউজে কাইজ্জা মুরগীটা রান্না করলো। হাসপাতালে আমাকে একটা রান পাঠিয়েছিল সকাল ৪টার দিকে। নাস্তার আগে খেতে পারিনি। লবন দিতে ভুলে গিয়েছিল বলে।

ভাগ্যিস হাদু ছিল, নইলে সেদিন হারাম খেতাম !

হাদুর বাড়ি ছাগলনাইয়া/ সুধারাম/লক্ষীপুর/দাগন ভুইয়া/মাতু ভুইয়া/সেনবাগ/হাজিগন্জ, ঠিক কোনখানে আজ আর মনে নেই ।

গণ সিক রিপোর্ট

আমাদের কলেজ এলাকায় তখন হাজার খানেক খেজুরের গাছ ছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর শীতের আগে আগে ওগুলোকে নিলাম করতেন। নিলামে যে গাছগুলো পেত, তার জীবনের শান্তি ঘুঁচে যেত। আমরা দল বেঁধে রস চুরি করতাম। এত বেশী করতাম যে দু'য়েক সময় হাউজের খাবার পানির ড্রাম ভর্তি করে হাউজের সবাইকে ঘুম থেকে তুলে রস খাওয়াতাম। একদিন রস চুরি করে কেবল ঘুমুতে গেছি। পেট মোচড় দিয়ে উঠলো। সারা রাত বাথরুমে যাওয়া আসা করতে করতেই কেটে গেল আমাদের। সকাল বেলায় সিক রিপোর্ট করলাম সবাই। যে-ই পেটের গন্ডগোলের কথা বলে তাকেই চিকিৎসা না দিয়ে ডাক্তার এ্যাডজুট্যান্টের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

সে যাত্রা ৬ টি এক্সট্রা ড্রিল (শাস্তি এক ধরনের) খেয়ে কোন মতে জান রক্ষা করি।পরে জানতে পেরেছিলাম যে কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে নিলাম গ্রাহকরা হাঁড়িতে আচিল (এক ধরনের জোলাপ) রেখেছিল।

সে যাত্রায়

সে যাত্রায় চার কেডেট কলেজ চার খলিফার হাত থেকে বেঁচে গেল। "কেউ খাবে তো কেউ খাবেনা" নীতি বর্জন করে আমাদের আবাসিক কলেজ আবার কেডেট কলেজে রূপান্তরিত হ'ল। সরকার বুঝলেন যে আমরা সবাই তখন গরিব ̃গুরবো।ধন সুসম বন্টন করলে নির্ধন উপকৃত হয় , কিন্তু দারিদ্র ভাগ করলে কারুরই কিছু ভাগে পড়ে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ বদরুল মিল্লাত, আসলেন আমাদের অধ্যক্ষ হয়ে। ক্যাপ্টেন সালজার (পরে ব্রিগেডিয়ার হয়ে অবসরে) আসলেন সেনা বাহিনী থেকে এ্যাডজুট্যান্ট হয়ে।

পড়লাম আমরা মহা বিপদে। রোজ আর যাওয়া যায় না প্রিয় চিটাগাং শহরে। রূপের রানী চোরের রাজা, দস্যু রানী, এক মুঠো হায়দর দূঃখিত, এক মুঠো ভাত দেখা যায় না। পিগুর আর রোজ সন্ধ্যায় কমিউনিষ্ট মেনিফেষ্টো মুখস্ত আবৃতি করা হয়ে ওঠেনা না, তার বদলে তাকে তখন মাগরিব পড়তে যেতে হয়। ছরুগরু(সারওয়ার) আর "excess value" বুঝাতে আসেনা। তার যেতে হয় আজান দিতে।

আমরা যাপন করা শুরু করি বিনিদ্র রজনী।
শুনশান নীরবতায় আর ঘুম আসে না।

সুরে সুরে গাওয়া "( ওইক্ক) শিক্কা শান্তি ফ্রগতি" ততদিনে আমাদের ঘুম পাড়ানিয়া হয়ে গিয়েছে

কেডেট কলেজ প্রতিস্ঠার পেছনে কর্নেল মরিস ব্রাউনের অবদান চির স্মরনীয়। আমার সম বয়সী এই ফৌজদারহাট তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৫৮ সালে। আমাদের এই অত্যন্ত গরীব দেহে মানুষ যেখানে খেতে পায় না সেখানে প্রতিভার বিকাশ কিভাবে ঘটবে? এই চিন্তায় সর্ব প্রথম ইস্ট পাকিস্তান কেডেট কলেজ নামে ফৈজদারহাটের যাত্রা শুরু। শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তার বিচারে এখানে ছাত্র ভর্তি করা হত/হয়। বেতন অভিভাভকদের সাধ্যের ওপর ধরা হত/হয়। আমাদের সাথে অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত অনগ্রসর পরিবারের প্রচুর ছেলে পড়তো। আবার পড়তো বোগী ভাই, বিশাল সম্পদের মালিক এম আর সিদ্দিকীর ছেলে। আই বিএর শিক্ষকতা করেছেন তিনি বহুদিন।

এই মহান ইংরেজ সেনা কর্তা, এক পাকি আর্মি অফিসারের বাচ্চাকে আইন বহির্ভুত ভাবে কলেজে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কলেজ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। তিনি নিউজিল্যান্ড/অস্ট্রেলিয়ায় পরলোক গমন করেন। ততদিনে আমি ওল্ড ফৌজিয়ান (সম্ববতঃ)। মহামহিম তাঁর আত্মার শান্তি দিক।


চলবে আরেকটু।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×