somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঊনসত্তুর থেকে পচাঁত্তুর-'৭১এ যাদের বয়স তিনের কম ছিল তাদের থেকে সামুর কনিষ্ঠতম ব্লগারটিকে উৎসর্গীকৃত-পর্ব-৯

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[si]অবতরনিকা: বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বংশকারীদের (আমি নির্বংশই বলবো কারন প্রচলিত ধারায় বংশগতি পুরুষ উত্তরাধিকারীর ওপরেই বর্তায়) শাস্তি প্রদানের পর থেকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটার পর একটা পোষ্ট আসছে। যার প্রায় সবগুলোই (গুটি কয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া) পক্ষপাত দুষ্ট। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আমার নিজস্ব ক্ষতির কথা ভুলে/ এড়িয়ে আমি আমার একান্ত ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি, শিরোনামে উৎসর্গীকৃত ব্লগারদের জন্যে। ৩ বছরটা উল্লেখ করার কারন হ'ল যে মানুষের কোন স্মৃতি ৩ বছর বয়সের আগে থাকেনা, সাধারনত। এ পোস্টে আমার ব্যাক্তিগত ক্ষতি গুলোঃ

১। এটা প্রকাশিত হবার পর আমার পরিচয় গোপন থাকবেনা, যা আমি এতদিন সযতনে রক্ষা করেছি।

২। ব্যাক্তিগত ঘটনা বয়ান পাঠকদের কাছে মাঝে মধ্যে আত্মপ্রচার ও পারিবারিক প্রচারের মত লাগবে যা আসলেই অশোভন, অরুচিকর এবং বিরক্তিকর। এগুলোও আমি লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে এসেছি আজীবন।

৩। কোন পক্ষাবলম্বন না করে লেখাটা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। আমার জন্যে আরো কঠিন। কারন যৌবন যখন সদ্য দেহ-মনে ভর করে আমার সমগ্র সত্তাকে ভীষনভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে, যা কিছুই সুন্দর তারই প্রেমে পড়ছি, ঠিক সে সময়ই বংগবন্ধুর সাথে আমার পরিচয়। নিরপেক্ষভাবে তাঁর ব্যাপারে লিখতে আমার খুবই কষ্ট হবে এবং আমাকে অসাধ্য সাধন করতে হবে।

৪। শুধুমাত্র স্মৃতি নির্ভর লেখার মূল সমস্যাটা হ'ল ভুল স্মৃতি মনের মধ্যে থাকা। যে কেউ যদি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার কোন বক্তব্যে দ্বিমত প্রকাশ করেন, তা'লে তাকে আমি অনুরোধ করবো মন্তব্যে তা তুলে ধরতে। আমার স্মৃতি ঘাটতে সাহায্য করার নেই কেউ আমার হাতের কাছে।

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো-আমার যে একটা দায় আছে আমার পরের প্রজন্মগুলোর কাছে।

আমার এই দায় শোধ যদি এই প্রজন্মকে আমাদের গৌরবময় আর কলংকলেপিত অতীতকে নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে শেখার পথে একপাও এগিয়ে নিয়ে যায়, তা'লেই আমি মনে করবো সেটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।

অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত সৃতিচারন। পারিবারিক ঘটনাবলীর চর্বণ। সমগ্র দেশের ব্যাপারটা কখনোই প্রধান্য বিস্তার করবেনা, সে সাধ্য বা যোগ্যতা আমার নেই।

পুরো সময়টার কিছু অনুল্লেখ যোগ্য অংশ বিষদ ভাবে আসবে আবার অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ পরবে, ব্যাক্তগত স্মৃতিচারনের এটা একটা বিরাট সমসয়া। অনুরোধ করি বিষয়টা মনে রেখে আমার এ লেখাটা পড়বেন ।

পুরোটা পড়ার পর অনেকের কাছেই এটাকে "পর্বতের মূষিক প্রসব" বলে মনে হ'তে পারে। তাদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

পর্ব-১পর্ব-২পর্ব-৩ পর্ব-৪
পর্ব৫পর্ব-৬পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২ পর্ব-১৩ পর্ব-১৪ পর্ব-১৫ পর্ব-১৬পর্ব-১৭ পর্ব-১৮পর্ব ১৯ পর্ব-২০


ফৌজদারহাটে মৃত্যুর প্রহর গোনা

নভেম্বরের ১২/১৩ (সম্ভবতঃ) তারিখে ফৌজদারহাট কেডেট কলেজ খোলে। যে গুটি কতক হতভাগা কলেজে যোগ দেয় তাদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম।

কমান্ডার সোনাংকী তখন অধ্যক্ষ। ড্রিল স্টাফ পাকি সেনাবাহিনীর সদস্য জিরাফ তখনো সেখানে সদম্ভে বিচরননরত। আমারা যখন পিটি বা ড্রিল করতাম তখন তার অত্যাচারে অস্থির থাকতাম। তার চোখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারতাম আমাদেরকে যে মেরে ফেলতে পারছেনা সে আক্রোশটাই ছিল প্রবল তার মাঝে। তার সাক্ষাৎ দুই উর্দ্ধতন অফিসারকে বাংগালীরা হত্যা করেছে, একজনের স্ত্রীকে অত্যাচার করেছে, এসব সে কখনোই ভুলতে পারতো না। শিক্ষকদের সকলে উপস্থিত ও ছিলেন না। তখন কোন এ্যাডজুটেন্টকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। প্রকৃত পক্ষে, কমান্ডার সোলাংকী ছাড়া কলেজের বাকি সকলেই ছিল জিরাফের অধস্তন।

২১/২২ তারিখ রাতে হঠাৎ খবর পেলাম জিরাফ আমাদের ৯ম শ্রেণীর শাহজান হাউজের রহমান ভাইকে ধরে হাউজের চিপায় নিয়ে গেছে -মেরে ফেলতে। কারন জিরাফ খবর পেয়েছে যে রহমান ভাই মুক্তি এবং তার কলেজে যোগ দেবার একমাত্র কারন হ'ল এখানে নাশকতা চালানো। রহমান ভাইয়ের বাবা ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্নেল। মুক্তি যুদ্ধে তিনি শহীদ হ'ন। তাঁর নামে ময়নামতি সেনানিবাসে একটা স্টেডিয়াম আছে। নাম সম্ভবত কর্নেল এম আর চৌধুরি স্টেডিয়াম।

হাউজের বেয়ারা এবং সম্ভবত: একজন অধ্যপক দৌড়ে গিয়ে প্রিন্সিপ্যাল কমান্ডার সোনাংকীকে খবরটা দেন। কমান্ডার সোনাংকী সংগে সংগে তাঁর গাড়ী নিয়ে ছুটে আসেন ঘটনা স্থলে, জিরাফের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করেন এবং তাঁর গাড়িতে করে সোজা নিয়ে চিটাগাং শহরে ছেড়ে দিয়ে আসেন।

কলেজের দিনগুলো কাটতো ভয়াবহ মৃত্যু চিন্তায়। জিরাফের সাথে কাটাতে হ'ত দিনের অনেকটা সময়। সারা রাত কাটতো নির্ঘুম। এভাবেই চলে এলো ৩রা ডিসেম্বর। পাকিস্তান ভারত আক্রমন করে বসলো।

পরদিন সকালে কলেজ হঠাৎ করে ছুটি হয়ে গেল। সকল অভিভাবককে খবর দেয়া হ'ল দুপুরের মধ্যে ছাত্রদের নিয়ে যেতে। চিটাগাংএর বাইরে যারা থাকে তাদেরকে কিভাবে নেয়া হবে সে ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা পাওয়া গেল না। বাবা তখন অসম্ভব ব্যস্ত, একটি জাহাজ বন্দরে ভিড়ছেনা যুদ্ধের জন্যে। সে জাহাজে বাবার আর জাহিদ হোসেন চাচার (চিটাগাংএর স্বনামধন্য জাকির হোসেনের পু্ত্র) কারখানার প্রায় ষোল হাজার টন র' ম্যাটেরিয়াল ছিল। বাবা কলেজ বন্ধের খবর পেলেন না। বাসার টেলিফোন তখন নষ্ট। চিটাগাংএর প্রায় সবাই একে একে চলে গেল সংগে ঢাকা ও অন্যান্য জায়গার অনেকেই। শেষ পর্যন্ত ইকবাল আজিম ভাইয়ের বাবা মা আমাকে বল্লেন "তুমি থেকে কি করবে এখানে? আমাদের সাথে চল। তোমাকে বাসায় পৌছে দেব।"

থেকে যাওয়া ক'জন করুন চোখে চেয়ে থাকলো। একটা অপরাধ বোধ নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।

আমরা চলে যাওয়ার দিন দুয়েক পর, যে সব ছাত্রদের থেকে যেতে হয়েছিল, জিরাফ তাদের লাইন করে দাঁড় করায় গুলি করে মারার জন্য। মারার আয়োজন করতে বোধ করি সময় সে একটু বেশীই নিয়ে ফেলেছিল।

জিরাফ মারিবার পূর্বেই সোনাংকী আসিয়া পড়িল।

এই জিরাফ কিন্তু আত্ম সমর্পন করেনি। সে হেটেঁ বার্মায় চলে যায়। সেখান থেকে পাকিস্তানে। আমাদের পাইয়া এক বন্ধুর সাথে বছর তিরিশেক পর ব্যাংককে দেখা হ'লে সে এ খবর আমাকে জানায়।


বাসায় পৌঁছে কেবল খেতে বসেছি, হঠাৎ প্লেনের শব্দ। লনে দৌড়ে এসে দেখি মাথার ওপর দিয়ে অনেকটা ত্রিভুজের (ব্লগার ত্রিভুজ নয়) মত ডানা ওয়ালা ( Delta winged) ছোট্ট একটা প্লেন পতেংগার দিকে যাচ্ছে। পরে (১৯ বছর)জেনেছি ওটা ছিল এ্যালীজ্ব বিমান, রিকোনাইসেন্স করার কাজে ব্যাবহার করা হয়। বেশ কিচ্ছুক্ষন চক্কর দেয়ার পর সেটা সাগরের দিকে চলে গেল।

দুপুরের দিকে টেলিফোন ঠিক হবার কিছুক্ষন পরই একটা ফোন এলো। আমার জীবিত একমাত্র চাচা তখন ওয়াপদা, কক্সবাজারে কর্মরত। এমনিতেই সব সময় তিনি উত্তেজিত থাকেন, সেদিন যার পর নাই উত্তেজিত গলায় না থেমে অনেকক্ষন কথা বলে গেলেন। তাঁর কথার মাঝেই লাইনটা কেটে গেল। ফোন আবার ডেড। তার কথায় যে টুকু বুঝতে পেরেছিলাম তা হ'ল কক্সবাজারে সেদিন সকালেই ভারতীয় বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম, কখন বোমা পড়ে চিটাগাংএ।

খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হ'লনা। তখন সন্ধ্যা। মাগরিবের আযান পড়ছে (সম্ভবত)। আমরা ছাদে। হঠাৎ আমাদের মধ্যে একজন চিৎকার করে আকাশে কি যেন দেখাবার চেষ্টা করলো। চোখ রগড়ে দেখি, হালি শহর সি এস ডি গোডাউনের উপর দিয়ে তিনটি বিমান উড়ে আসছে। আরো কাছে আসতেই বুঝলাম এগুলো দিনের আসা প্লেন নয়। একটু পরেই কালো ধোঁয়ায় পতেংগার দিকের আকাশ ছেয়ে গেল। আঁধার নামতেই দেখলাম ওদিকের আকাশ লাল হয়ে আছে। সেই রং স্বাধীনতার পরও ছিল অনেকদিন।

পুরো পাড়ায় উৎসবের আমেজ। মা কোথায় যেন বেরিয়ে গেছেন। খোশ মেজাজে আব্বা গেছেন রব্বানী চাচার বাসায়। রাত দশটায় দেখি রাতে কিছুই রান্না করা হয়নি। বুড়ো বাবুর্চী ভাই আর সতীশ কাকা বাসায় নেই। আম্মা সাড়ে দশটায় ফিরে ভাত আর ডাল তুলে দিলেন চুলায়। আমদের বাসায় তো ডিমের আর অভাব নেই। এগারোটার দিকে পা টিপে টিপে ফিরলেন বাবুর্চী ভাই আর সতীশ কাকা। তারা গিয়েছিলেন বন্দর হয়ে পতেংগা পর্যন্ত। ৪ নম্বর (?) জেটি থেকে পতেংগা পর্যন্ত কর্ণফুলীর উপরে জ্বলছে সব জাহাজ। একটাও অক্ষত নেই। আব্বা হুংকার দিয়ে উঠলেন জয় বাংলা। আজ ডিম খাবনা । গরুর মাংস খাবো। বলেই গরম পানিতে দেওয়ান হাটের গরুর মাংসের জমানো চাক ডোবালেন।

সেই দিন থেকে পরের পাঁচ ছ' দিন (সম্ভবত) ক্রমাগত বোমা ফেলা ও রকেট ছোঁড়া চালিয়ে গেল বোমারু বিমান গুলো। প্রথম দিনই জাহাজ গুলো ডুবেছিল। পরের ক'দিনের মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারীর অতিকায় সব ট্যাংকগুলো জ্বলা শুরু করলো। সতীশ কাকা খবর নিয়ে আসলেন যে সি আর বি (Central Railway Building)তেও বোমা ফেলা হয়েছে। বোমা ফেলা আমরা দেখতে পেতাম না। কারন তখন বিমান গুলো চিলের মত গোত্তা মারতো(সতিশ কাকা নিজের চোখে দেখেছে)। রকেটিং আমরা দেখতাম একেক বারে একেকটা প্লেন দুটো করে রকেট ছাড়তো। আমরা বলে উঠতাম জয় বাংলা।

দিনের বেলায় বিমান আক্রমন হলেই হাজী সাহেবের বাড়ির লোকজন ছাড়া পাড়ার সবাই বেড়িয়ে আসতো বাইরে। বিমান বিধ্বংসী কামানের অজুত খানেক গোলা ছুটে যেত আকাশে। বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটায় আকাশ ভরে যেত। আমরা সবাই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাতাম ঐ সব গোলার একটাও যেন বিমানের গায়ে না লাগে। আল্লাহ আমাদের কথা সেদিন গুলোতে শুনেছিলেন।

তত দিনে আমরা জেনে গেছি যে ঐ বিমান গুলো আগরতলা নয়, বংগোপসাগরে থাকা বিমানবাহী জাহাজ বিক্রম থেকে আসছিল।১৯ বছর পরে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের Final Thrust মুখস্ত করছি তখন দেখি ওটা ছিল INS Vikrant.

হোটেল আগ্রাবাদে মধ্যাহ্ন ভোজন

সারা পতেংগা যখন জ্বলছে বাবার তখন নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তাঁর একটাই চিন্তা, যে জাহাজ তার কারখানার (জাহিদ হোসেনেরও) কাঁচামাল নিয়ে বহির্নোংগর থেকে করাচীর দিকে রওয়ানা হচ্ছে সে জাহাজকে যদি থামানো না যায় তাহ'লে আমাদের দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। স্বাধীনতা তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ১১/১২ ডিসেম্বরে বাবা জাহিদ হোসেন চাচাকে ফোন করেন এবং রাজী করান যে দু'জনে মিলে চেষ্টা করবেন জাহাজটি যাতে চট্টগ্রাম বন্দরেই মাল খালাস করে। দুজনে মিলে ঠিক করলেন যে পরদিন যে করেই হোক জাহাজের ক্যাপটেনকে ধরবেন। সকালে রওয়ানা দেবার সময় মা ভয় পেয়ে গিয়ে বাবাকে কিছুতেই যেতে দিতে চাচ্ছিলেন না। কারন মীর কাশেমের আল বদর বাহিনী তখন চিটাগাংএ খুব বেশী তৎপর। বাবাকে কোন ভাবেই নিরস্ত্র করতে না পেরে মা বল্লেন আমাকে সাথে নিয়ে যেতে। বাবা যতই বোঝাতে চাইলেন যে দুজনে গেলে দুজনেরই বিপদ ততই মা কোন যুক্তিই না শুনে আমাকে সাথে নিতে জোর করতে থাকলেন। না পেরে শেষ মেষ আমাকে নিয়েই রওয়ানা হলেন। ঠিক করা ছিল জাহাজের ক্যাপ্টেনকে নিয়ে বাবা হোটেল আগ্রাবাদে নিয়ে আসবেন। জাহিদ হোসেন চাচা থাকবেন হোটেলে। মধ্যাহ্ল ভোজে বন্দর কতৃর্পক্ষের প্রতিনিধি, ক্যাপ্টেন, জাহিদ চাচা আর বাবা মিলে ঠিক করবেন পরবর্তী কর্ম পদ্ধতি।

জ্বলন্ত আগুনের পর্বতের পাশ দিয়ে (আমি অত গরমের মধ্যে আর কখনোই কাটাই নি) প্রায় ৪৫ মিনিটের পথ অতিক্রম করে একটা ছোট স্পিড বোটে উঠলাম। পালক ফেলে দিয়ে আস্ত মোরগের পশম চুলায় পোড়াবার সময় যেমন গন্ধ বের হয় ,ঠিক সেরকম গন্ধ পাচ্ছিলাম, বেশ কিছুক্ষন থেকেই। হঠাৎ বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি তার ভ্রু নেই। পুড়ে গেছে। আমার ভ্রু আর চোখের পাপড়ি জন্মাতে জন্মাতে আমরা স্বাধীন। শরীরের সমস্ত চামড়া জ্বলেছে বেশ কিছুদিন।

জাহাজ থেকে দড়ির সিঁড়ি নামিয়ে দেয়া হ'ল। ক্যাপটেন আপ্যায়ন করলেন। ক্যাপটেনকে নিয়ে ঐ আগুনের মধ্য দিয়েই ফিরলাম আগ্রাবাদ হোটেলে। অনেকক্ষন আলাপ আলোচনা হ'ল। ক্যাপটেনের কথা হল, যে কোম্পানীর মাল তারা বহন করছে, সে কোম্পানীর সাথে চুক্তি করেছে পাকিস্তান সরকার। চোখের সামনে অনেক সওদাগরী জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। এতবড় ঝুঁকি নেয়ার তাদের কোন প্রয়োজন নেই। তারা যদি করাচীতে মাল খালাস করে তাহলেও কোম্পানীর বিল পেতে কোন অসুবিধে হবেনা। বিকেলের দিকে ক্যাপটেনকে আর বন্দর কর্তৃপক্ষকে রাজী করাতে পারলেন জাহিদ চাচা ও বাবা। কাচাঁমালের আনলোডিং চলে ষোলই ডিসেম্বর পযর্ন্ত ।

সেদিন আমার এজেন্ডা ছিল খাওয়া। খুব নরোম বান আর ক্রিম অফ চিকেন স্যুপ ছিল দিয়ে শুরু। শেষে খেয়েছি সুফলে। মাঝে, ছুঁচো আমি খুব মজা করে বীফ স্টেক আর রোস্টেড পটেটো খাই মাখন দিয়ে পেট পুরে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৫
৩২টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×