এক গ্রামে নানা কিসিমের লোকের বাস। সেখানে ছোট একটি গ্রুপের মানুষের গায়ে ঘামাচি বেশ ভালোভাবেই জেঁকে বসেছে। আগে ঘামাচিগুলোর আকার বড় বড় ও অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক হলেও এখন গ্রামের মোড়লের নানামুখি উদ্যোগে ঘামাচিগুলো আর আগের মতো তেমন একটা বেদনাদায়ক নেই।
এরমধ্যে এক ঘামাচিসমৃদ্ধ লোক গ্রামের অন্য সকল ঘামাচিমুক্ত লোকেদের দেখে বেশ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ল। যদিও সে জানত যে গ্রামে বড় গ্রুপের কিছু মানুষ জন্ডিস, আমাশায়, পাতলা পায়খানা, হেপাটাইটিস, এমনকি ক্যান্সারেও আক্রান্ত। কিন্তু সে এগুলোকে কর্ণপাত না করে এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গেল শরীর থেকে ঘামাচিকে চিরতরে বিদূরিত করার আশায়।
ডাক্তার হাতুড়ে হলেও বেশ ঘাগু ও এলেম ছিল এ ব্যাপারে। উনাকে অনেক বুঝালেন যে এই ঘামাচি সারানো তার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না। আপনি যে পরিবেশে থাকেন সেখানে এটি নিয়েই থাকতে হবে। এটাই আপনার ভবিতব্য। তবে পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে এই বিশ্রি রোগটিও স্থিতিশীল থাকবে। চুল্কানি কম হবে। আপনার শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর হবে না। গোদরেজের ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল গায়ে মাখিয়ে কুল পরিবেশে বাস করতে থাকুন। আর চারপাশে দেখুন কত শত লোক পাছায় ইয়া বড় ফোঁড়া নিয়ে পশ্চাদদেশ ক্যাচলা কেচলি করছে। এতে আপনার কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। বরং আপনি আপনার কাজে মনোযোগ দিন। সেটাই ভালো।
কিন্তু লোকটি নাছোড়বান্দা। পিছলার ব্যাটা পিছলা। সে এই বিশ্রি জিনিস কিছুতেই বয়ে বেড়াবে না। তার এই অতি ছ্যাঁচড়ামির জন্য ডাক্তার বিরক্ত হয়ে উনার সহকারীকে বললেন, ‘ওহে গেদু, ৭নং শিশিটা নিয়ে আয় তো বাছা’।
লোকটি আঁতকে উঠে বললেন, ‘ডাক্তার সাব, ওটা তো গত সপ্তাহে গরুর খুরা রোগ সারার জন্য আমাকে দিয়েছিলেন’।
‘৭নং শিশির গুণ শুনলে রাত দিন কাবার হয়ে যাবে। এটি মহৌষধ। লাগিয়েই দ্যাখেন। ঘামাচির জেঠু মশাই পর্যন্ত লেজ তুলে পালাবে।’- হাতুড়ে ডাক্তার নিরাশক্ত গলায় বললেন।
এরপর উনাকে শিশিটি হাতে দিয়ে, ‘রাতে ঘুমানোর আগে পানি মিশিয়ে ঘামাচিযুক্ত এলাকায় দম ধরে মালিশ করবেন। বেশি কচলাবেন না। বেশি পাছড়াবেন না’। আর হাতে একটি চিরকুট দিয়ে বললেন, ‘কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে এটা জোরে জোরে পড়ে অন্য ঘামাচিওয়ালাদের শুনাবেন’।
লোকটি ডাক্তারের পরামর্শ পালন করল অক্ষরে অক্ষরে। পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে গোটা শরীর চপকা চপকা কালো ডোরাকাটা হয়ে গেছে। ঘামচি তো গেছেই, সাথে শরীরের চামড়াও...। কারণ ওটা ছিল...।
লোকটি তাড়াতাড়ি কাগজটি খুলে দেখল সেখানে লেখা আছে,’যা নিরাময়যোগ্য নয়, সেখানে চেষ্টা করুন কীভাবে রোগটি বশে রাখা যায়। তা না হলে বেশি ডলাডলিতে চামড়া পুড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বেয়াক্কেল কোনহানকার।’
*আমাদের আক্কেলের অভাবজনিত রোগে কিছু ওৎ পেতে থাকা শকুনদের আমরা নিজেরাই ডেকে আনি মাংস খুবলে খাওয়ার জন্য। শুভবোধের উদয় হোক ঘামাচিমুক্ত ও ঘামাচিযুক্ত আক্কেল আলীদের।
ছবি: লেখক। উঁইপোকার ঢিবি, আলতাদিঘী, নওগাঁ। ঢিবিগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে। ঠিক আমাদের চিরাচরিত মূল্যবোধের মতো।
************************************************************************************************* ************************
আখেনাটেন/জুলাই-২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩৮