somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা

১৪ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-১
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-২
ধারাবাহিক উপন্যাস নগ্নবেলা কিস্তি-৩
নগ্নবেলা কিস্তি-৪
নগ্নবেলা-৫
নগ্নবেলা-৬
নগ্নবেলা-৭
নগ্নবেলা-৮

কিস্তি-৯

জাফর সাহেব ফাইলের মধ্যে ডুবে আছেন। হঠাৎ মনে হলো সুনসান নীরবতা। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলেন পুরো অফিস ফাঁকা। কোন টেবিলেই কেউ নেই। টেবিলে রাখা ফাইলের কাগজ ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। ঘড়ির দিকে তাকালেন জাফর সাহেব। সাড়ে চারটা বাজে। পাঁচটা পর্যন্ত অফিস। এরই মধ্যে চলে গেছে বেশির ভাগ লোক। একটু আগেও কি সরগরম ছিল। কত হৈচৈ হট্টগোল। দ্রব্যমূল্য, রাজনীতি এমন কি বাস ভাড়া নিয়েও তুমুল সমালোচনা। বেশি উত্তেজনা ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ে। কথাটা তোলেন আশরাফ সাহেব।
আবদেল সাহেব আর তো পারি না। এবার বুঝি না খাইয়াই থাকতে হবে। বেতনের টাকায় ১০দিন চলে। বাকি ২০ দিন কি করমু?
কেন হাওয়া খাইবেন। খবরদার, ঘুষ-দুর্নীতি একদম না...
আরে রাখেন সাহেব। সব রসুনের এক কোয়া।
পাশ থেকে রাশেদ সাহেব এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলেন- সাবধান এই কথা দ্বিতীয়বার উচ্চারণ কইরেন না। জানেন তো দেয়ালেরও কান আছে। এখন কিন্তু ইটের ভাজে ভাজে টিকটিকি লাগাইয়া রাখছে।
আরে হ, কতই তো দেখলাম। সবাই দেহি একে একে বাইর হইয়া আইতাছে। বিলাই কি কম ঠেলায় গাছে ওঠে।
কথার রেলগাড়ি চলতে চলতে হাসিনা-খালেদা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। একজন হাসিনার পক্ষে সাফাই গাইছেন, অন্যজন খালেদা। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ আশরাফ সাহেবের বেঁফাস এক মন্তব্য।
ব্যস, হারুন সাহেব মওকা পেয়ে গেলেন। গরম তেলে পানির ফোঁটা পড়লে যেমন ছ্যাৎ করে ওঠে তেমনি জ্বলে উঠলেন।
দু’জনই চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছে। চরম উত্তেজিত। বোঝা যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। যে কোন একজনকে এখান থেকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। হারুণ সাহেবকে টেনে বাইরে নিয়ে গেলেন আবদেল সাহেব।
তাদের হৈচৈ হট্টগোলে মাথা ধরে গিয়েছিল জাফর সাহেবের। তিনি কাজ করতে পারছিলেন না। পরিস্থিতি শান্ত হলে কাজে মনোযোগী হলেন।
অফিস সহকারী সুরুজ এসে বললো- স্যার, বাসায় যাইবেন না?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জাফর সাহেব বললেন- যাবো। আরেকটু। হাতের কাজটা সেরে নেই।
সবাই চলে গেছে স্যার। আপনি আর আমি আছি।
জানি। খালি টেবিলে ফ্যানগুলো ঘুরছে। ওগুলো বন্ধ করে দাও। কিছু কাগজ বোধহয় উড়ে গেছে, ওগুলো গুছিয়ে রাখো।
সরকারি অফিস। কাজের চেয়ে আড্ডা বেশি। সারাক্ষণ কিছু না কিছু নিয়ে মেতেই আছে। আজ মনটা খুব খারাপ জাফর সাহেবের। লাঞ্চ আওয়ারে নিউজ পেপারে একটা খবর পড়ে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। পেনশনের টাকা না পেয়ে একটা লোক সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। জাফর সাহেবের চাকরি আছে আর সাত মাস। তিনি ভাবলেন- এলপিআর-এ থাকা অবস্থায়ই পেনশনের ফাইলটা তৈরি করে ফেলতে হবে। রশিদ সাহেবের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো দরকার। পেনশনের ফাইল তার কাছে যাবে। তিনি সুরুজকে ডাকলেন। বললেন- সুরুজ একটু দেখে এসো তো রশিদ সাহেব আছেন কিনা।
সুরুজ বললো- কেউ নাই স্যার। পুরা অফিস খালি। রশিদ স্যার চাইরটায় চইলা গেছে। আমার লগে দেখা হইছে লিফটে।
জাফর সাহেব বললেন- ও আইচ্ছা।
তিনি ঘড়ির দিকে তাকালেন। এখনও পাঁচটা বাজার সাত মিনিট বাকি। ফাইলপত্র গোছালেন তিনি। এরপর ফ্যান বন্ধ করলেন। চেয়ারে বসে এক গ্লাস পানি খেয়ে পাঁচটা পাঁচে অফিস থেকে বের হলেন।
কিছুদিন ধরে অফিস ছুটির পর ভিক্টোরিয়া পার্কের কোণায় এসে দাঁড়ান জাফর সাহেব। সাড়ে পাঁচটা পৌনে ছ’টার দিকে আঁকা মেয়েটি আসে। তার সঙ্গে দেখা করেন। হেঁটে বাসা পর্যন্ত যান। ওকে পৌঁছে দেয়া দায়িত্ব মনে করেন তিনি। এটা ওটা নিয়ে কথা বলেন। পড়ালেখা কেমন হচ্ছে জানতে চান। তার মা কেমন আছেন তাও জানতে চান। বিদায় নেয়ার আগে ছোট করে বলেন- ভাল থেকো মা, তোমার মাকে সালাম দিও।
পার্কের কোণায় দাঁড়িয়ে আছেন জাফর সাহেব। আঁকা এখনও আসেনি। কেন আসছে না বুঝতে পারছেন না। তার কিছুটা চিনত্মা হচ্ছে। পথে কোন সমস্যা হলো না তো? আজকাল ঢাকা শহরে বিপদের শেষ নেই। পদে পদে বিপদ আর সমস্যা। দেখা গেল বাসে করে আসছে- সিএনজি বাস। হঠাৎ বাসে আগুন। আজকাল প্রায়ই এমনটা হচ্ছে। এমন হলে মেয়েটা কিভাবে বাস থেকে নামবে। পুরুষরা পাল্লা দিয়ে জোর খাটিয়ে বের হয়ে যাবে। আঁকা মেয়ে মানুষ। তার বের হওয়া কঠিন। এর ওপর বেশ সুন্দরী মেয়ে। বাসে কত রকম লোক চলাচল করে। ছিনতাইকারী, পকেটমার থেকে শুরু করে ভদ্র-অভদ্র সবই আছে। কে জানে ভিড়ের হয়তো কেউ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গায়ে হাত দিতে চাইবে। বেশ চিন্তা হচ্ছে জাফর সাহেবের। তিনি বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন।
এখন সাড়ে ছ’টা বাজে। প্রতিটা বাস লক্ষ্য রাখছেন। দু’জন কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেসও করেছেন। এই রোডের কোন বাসে আগুন লেগেছে কিনা। কিংবা কোন দুর্ঘটনা! তারা বলেছে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তাহলে মেয়েটি কোথায় গেল। নাকি আজ অফিসে যায় নি। সে কিংবা তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লো না তো?
পার্কের ভেতরে লাইন ধরে হাঁটছে মানুষ। এরা সবাই ডায়াবেটিসের রোগী। এই এক সমস্যা মানুষের। ডায়াবেটিস হওয়ার আগে কেউ হাঁটে না। হলে পরে দায়ে পড়ে ছোটাছুটি করে।
ভিক্টোরিয়া পার্কে একটি টিভি আছে। অনেক লোক সেখানে বসে নাটক দেখছে। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে জাফর সাহেবের। তিনি টিভি দর্শকদের দলে ভিড়বেন কিনা চিন্তা করছেন। অনুষ্ঠান দেখার জন্য নয়। একটু বিশ্রাম নেয়া।
শ্রাবণ মাসের আজ ১৪ তারিখ। বড় দিন। ঘড়িতে সাতটা ছুঁইছুঁই। মসজিদগুলোতে একযোগে আজান হচ্ছে। মাগরেবের আজান। পার্কের দক্ষিণ পাশে একটি মসজিদ আছে। নামাজ পড়তে ওই মসজিদে ঢুকলেন জাফর সাহেব।
ফরজ ও সুন্নত পড়ে বেরিয়ে এলেন তিনি। গরমে শরীরে এক ধরনের জ্বালা শুরু হর্য়েছিল। এখন কিছুটা ভাল লাগছে। মসজিদের বাইরে বেরিয়ে দেখলেন লোডশেডিং চলছে।
ফুটপাত ধরে হাঁটছেন জাফর সাহেব। উদ্দেশ্য আঁকার বাসায় যাওয়া। কিছুদূর এগোতেই দু’ পাশে দু’টি ছেলে তার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে লাগলো। তাদের একজন আস্তে করে বললো- চাচা ভাল আছেন?
জাফর সাহেব তার দিকে তাকালেন। অন্ধকারে চিনতে পারলেন না। তিনি বললেন- হ্যাঁ বাবা ভাল আছি।
এবার অপর পাশের ছেলেটি বললো- চাচা এক শ’ টাকা দেন। আমরা নাস্তা খাবো।
তোমরা কে বাবা, তোমাদের তো চিনতে পারলাম না।
আমাদের না চিনলেও চলবে। টাকাটা দিন।
আমার কাছে এক শ’ টাকা নেই।
তাহলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করুন। হইচই করবেন না, বুঝতেই পারছেন।
এবার জাফর সাহেব টের পেলেন তিনি পেটের ডানপাশে ব্যথা পাচ্ছেন। ওখানে কিছু একটা ধরে রেখেছে ছেলেটি। তিনি বললেন-
আমার কাছে মোবাইল নেই।
চুপ একদম কথা বলবেন না। যা আছে বের করুন।
পকেট হাতড়ে বিশ টাকা বের করলেন জাফর সাহেব। বললেন- আমার কাছে এই আছে নাও।
ছেলে দু’টো তাকে সার্চ করলো এবং বিরক্ত হয়ে ফিরে গেল।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×