somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানকে শায়েস্তা করতে না পারলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক সময়ের কিলিং ম্যাশিন সাদ্দাম এবং মধ্যপ্রাচ্যের ত্রাস গাদ্দাফিকে দমন করার পর মধ্যপ্রাচ্যে কিন্তু স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছিল, কিন্তু বিগত ১ দশক ধরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইরান। ঠিক এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসবে আবির্ভাব হয়েছে ইরান। নিজ দেশের ভেতর এবং দেশের বাইরে এমন কোন অপকর্ম নেই এই ইরান করেনি। গত তিন বছর ধরে ইরানের মুক্তিকামী সাধারণ জনগণের উপর হত্যা, গুম, খুন, নির্বিচারে গুলি, জেল-জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে আসছে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বর্বর বাহিনী।



ছবি- ইরানের এক নারী আন্দোলন কর্মী।

শান্তিকামী আন্দোলন কর্মী মায়সা আমিনিকে নির্যাতন করে হত্যার পর থেকে ফুঁসে উঠেছে ইরানের জনগণ, তারা এখন আলী খামেনির বর্বরোচিত শাসন থেকে মুক্তি চায়।



ছবি- মায়সা আমিনির মৃত্যুতে ক্ষোভ।

দেশের বাইরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অপকর্মের লিস্ট অনেক বড়; মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো সন্ত্রাসী বাহিনীকে ইরান ব্যাক আপ দিয়ে যাচ্ছে; আল- জিহাদি, হিজবুল্লাহ, হুতি গোষ্ঠী, হামাস, কুদ্দুস বাহিনী ইত্যাদি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ইরানের ছত্র ছায়ায় লালন পালন হচ্ছে। ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, ইরাক, ইজরাইল ইত্যাদি দেশগুলোতে ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী গুলো ব্যাপক ভাবে সক্রিয় রয়ছে, সুযোগ পেলেই তারা না না গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সাধারণ মানুষের উপর হামলা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। সর্বশেষ ঘটনা ইজরাইল-ফিলিস্তিনের ঘটনা যার পুরো কলকাঠি নাড়ছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্য আজ যেন এক জাহান্নামে পরিণত হয়েছে শুধু এক ইরানের জন্য।



ছবি- হুতি বিদ্রোহী।

সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই ইয়েমেনের হুতি বাহিনীকে দমন করা চেষ্টা করে আসছে কিন্তু তারা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ইরানের সমর্থনের কারণে, ঠিক যেমন ইসরাইল বাহিনী হামাসকে দমন করতে পারছে না। ভয়ঙ্কর এসব জঙ্গি গোষ্ঠীকে দমন করা সত্যিই অনেক দুরূহ কারণ এরা বেসামরিক লোকজনের ঘরবাড়ি, স্থাপনার নিচে সুরঙ্গের ভিতর লুকিয়ে থাকে, এদের ট্রেস পাওয়া অনেক কঠিন। যুদ্ধের সময় এরা সাধারণ জনগণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, যে বা যারাই এতে অস্বীকার করবে তাদেরই কতল করা হয়, মুরতাদ, ধর্মদ্রোহী বলে।



ছবি- জঙ্গী গোষ্ঠী।

এভাবেই বেসামরিক লোকজন এদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে কারণ এসব দেশের সরকার ব্যবস্থা খুবই দুর্বল সরকারই বরং এসব জঙ্গি গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।



ছবি- হামাসের আস্তানা।

২০১৮ সালের দিকে ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা 'কাসেম সোলাইমানি' সৌদি আরবকে হুমকি দিয়েছিলেন- সৌদি আরব যদি ইয়েমেনের হুতি বাহিনীর উপর আক্রমণ বন্ধ না করে তাহলে পবিত্র মক্কা, মদিনা নগরী ব্যতীত সৌদির সবগুলো নগরী ধ্বসীয়ে দেয়া হবে" বলে। দিন দিন যেন ইরানের স্পর্ধা বেড়েই যাচ্ছিল, তার ঠিক দুই বছর পরে ২০২০ সালে সৌদি আরব আমেরিকার সহায়তায় কাসেম সোলাইমানির উপর নির্ভুল এক হামলার মাধ্যমে হত্যা করে ইরানের উপর প্রতিশোধ নেয়। এতো বড় একজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হলো অথচ উক্ত হামলায় একজন বেসামরিক লোকও হতাহত হয়নি; যা ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে সেরা এক সামরিক হামলা। আসলে যে কোন আক্রমণে বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়-ক্ষতি কখনোই কাম্য হতে পারে না।



ছবি- কাসেম সোলাইমানি, মাঝে।

কাসেম সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান তাদের উচ্চ প্রযুক্তির অত্যাধুনিক এক মিসাইল যা মুহূর্তেই নির্ভুল লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এমন এক হাইলি সফিস্টিকেটেড মিসাইল দ্বারা সফল ভাবে নিজেদের বেসামরিক বিমান নিজেরাই ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছিল =p~ । উক্ত হামলায় ৩০০ এর মত বেসামরিক লোক নিহত হয়। বিষটার জন্য ইরান অবশ্য পরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলো।



ছবি- ইরানের উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান। :-P

সৌদি আরব এখনো সারা বছরই ইয়েমেনে হুতি বাহিনীর উপর বোমা বর্ষণ করেই যাচ্ছে, এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে সৌদির যেমন হুতি বিদ্রোহীদের হামলা থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনই ইসরাইলেরও হামাস বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার রয়েছে, রাশিয়া যেমন নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে ইউক্রেনে নির্বিচারে নারী-পুরুষ হত্যা করছে।



ছবি- ইয়েমেনে সৌদি বাহিনীর বোমা বর্ষণের পারের অবস্থা। :(

সুতরাং দেখা যাচ্ছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অধিপত্য কায়েম করতে ইরান বিভিন্ন সন্ত্রাসী, জঙ্গি গোষ্ঠীকে একের পর এক সহায়তা প্রদান করেই যাচ্ছে। পুরো মুসলিম বিশ্ব যেখানে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধ করার উপায় খুঁজছে কিন্তু ইরান সেখানে হিজবুল্লাহ, হামাস, হুতি, ইসলামিক জিহাদ ইত্যাদি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সহায়তার মাধ্যমে এই কনফ্লিক্টকে আরও উস্কে দিয়ে বিষয়টাকে খুবই ভয়াবহ অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই এই ভয়াবহতার আঁচ ইরানের উপরেও পড়বে, কারণ ইট'টি মারলে তো পাটকেলটি খেতেই হয়।



ছবি- হিজবুল্লাহ গুরুর সাথে আয়তুল খামেনি এবং কাসেম সোলাইমানী।

বক্তব্য খুবই পরিষ্কার; ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, মিসর, ফিলিস্তিন, ইসরাইল তথা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যত হতাহতের ঘটনা ঘটছে তার সবগুলোর দায় ইরানের, পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখছে এই ইরান, এভাবে আর বেশিদিন চলতে দেয়া যায় না বিশ্ববাসীর সময় এসেছে এখন ইরানকে থামানোর। অবশ্য ইরানের হাতে এখনো সময় রয়েছে সুপথে ফিরে আসার তা না হলে ইরানকে করুন পরিণতি বরন করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

এবার আসি মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের ঘটনায়।


না, মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে ইরানের তেমন কোন সামরিক প্রভাব নেই, তবে রাশিয়ার সহায়তায় কিছু একটা করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে, যে কারণে ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পক্ষে এরা সরাসরি ভোট প্রদান করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার এই ন্যক্কারজনক হামলার পক্ষে হাতে গোণা যে দুই একটি দেশ সমর্থন জানিয়েছে তার মধ্যে ইরান অন্যতম। রাশিয়া ইউক্রেনে যত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইরান ততই বাহবা দিয়েছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যেমন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করে যাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও স্বৈরাচারী, আগ্রাসী রাষ্ট্রগুলোকে গোপনে অথবা সরাসরি সমর্থন দিয়ে আসছে। ইরান মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে সময় এসেছে একে শায়েস্তা করার। ইরান সমর্থিত যত জঙ্গি গোষ্ঠী রয়ছে এগুলো সব নির্মূল করতে হবে, ধ্বংস করতে হবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইরানের যত সামরিক ঘাঁটি, তবেই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা যুদ্ধ চাই না আমরা শান্তি চাই, শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধের বিকল্প কিছু নেই।



আরো কিছু কথা... নাহ থাক। বাকি খবর আপনারা পত্রপত্রিকা থেকেই জেনে নিবেন যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ঘটবে।



ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:০৭
১১টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×