somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুষ্ট জ্বীনের উৎপাত, কোটি টাকা গায়েব

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবি- জ্বীনের কেরামতি।

‘কেরামতি দেখে’ দেড় কোটি টাকা অন্যের হাতে তুলে দেন তিনি।

বিস্তারিত: এক বালতি পানির মধ্যে কিছু কাগজ ও এক হাজার টাকার নোট ছেড়ে দেন। কিছুক্ষণ পর পানিতে ভেসে ওঠে অনেকগুলো এক হাজার টাকার নোট। এমন চমক জাগানোর মতো কেরামতি দেখিয়ে আবদুল খালেক খান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আস্থা অর্জন করেন তরিকুল ইসলাম। এরপর ফাঁদে ফেলে তাঁর কাছ থেকে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা নেন তিনি।

ঢাকার কাফরুলের বাসিন্দা খালেকের প্রতারিত হওয়ার এ ঘটনার মামলা তদন্ত করে মাগুরার তরিকুলের অপকর্ম সম্পর্কে নানা তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর ভিত্তিতে সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন সিআইডির উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আল মামুন।

মামলায় বলা হয়েছে, জিনের বাদশা পরিচয়ে তরিকুল আবদুল খালেক নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকায় তরিকুল ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি প্রাইভেট কার ও একটি এক্সকাভেটর কেনেন। এ ছাড়া তরিকুল মাগুরায় ১০ শতক জমি কেনেন। তাঁর ব্যাংক হিসাবে ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৪ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে

এর আগে ২০২১ সালে তরিকুলের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় প্রতারণার মামলা করেন ভুক্তভোগী আবদুল খালেক। ওই বছরের ১০ মার্চ ওই মামলায় তরিকুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি। মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ১২ মার্চ তরিকুল ও তাঁর তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য তরিকুলসহ অন্যরা প্রতারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তরিকুলের আইনজীবী ফেরদৌস সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেল তরিকুল জিনের বাদশা পরিচয়ে আবদুল খালেকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি। খালেকের সঙ্গে তরিকুলের টাকাপয়সার লেনদেন ছিল। খালেক এ বিরোধের জের ধরে তরিকুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। খালেকের বিরুদ্ধেও মাগুরার আদালতে প্রতারণার একটি মামলা চলছে।

এ ব্যাপারে খালেক প্রথম আলোকে বলেন, সিআইডি তদন্ত করে তরিকুলের প্রতারণা ও জালিয়াতির তথ্য–প্রমাণ পেয়েছে। আর তরিকুল তাঁকে হয়রানি করার জন্য মাগুরায় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন।

যেভাবে ফাঁদে পড়েন খালেক

মামলার কাগজপত্র ও ভুক্তভোগী খালেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাবনার আবদুল খালেক খান ২৫ বছর ছিলেন সৌদি আরবে। ২০০৪ সালে দেশে ফিরে ঢাকার কাফরুল এলাকায় তিনি বসবাস শুরু করেন। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন। স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে ভালো ছিলেন। পরে খালেকের স্ত্রী ও তাঁর এক ছেলে অসুস্থ হন। স্ত্রী ও ছেলেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। তবে তাঁর স্ত্রীর কিডনির সমস্য আরও বেড়ে যায়। খালেক একপর্যায়ে স্ত্রী ও সন্তানের অসুস্থতার কথা তুলে ধরেন পরিচিত খোকনের কাছে। পরে খোকনের মাধ্যমে তরিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তরিকুল তখন খালেককে বলেন, তাঁর কাছে জিন আসে। তিনি তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে সুস্থ করে তুলবেন।

মামলার এজাহারে খালেক দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে ওষুধ দেন তরিকুল। সেই ওষুধ সেবন করে তাঁরা দুজনই সুস্থ বোধ করেন। পরে তিনি তরিকুলকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন।

খালেক খান মামলায় বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তান কিছুটা সুস্থ হলে জিনের বাদশা তরিকুলের বিভিন্ন কেরামতি দেখতে থাকি। একপর্যায়ে জিনের বাদশা বলেন, আমাকে যখন তোরা এনেছিস, তখন তোদের আর কোনো দুঃখ–কষ্ট থাকবে না।’

খালেক মামলায় আরও বলেন,জিনের বাদশা বলেন, বল, তোদের কত টাকার প্রয়োজন? আমি তখন জিজ্ঞাসা করি, কীভাবে টাকা দেবেন? তখন জিনের বাদশা বলেন, এক বালতি পানি দে। এক বালতি পানি দেওয়ার পর তরিকুল বালতির মধ্যে কিছু কাগজ ও এক হাজার টাকার নোট ছেড়ে দেন। তখন অনেকগুলো এক হাজার টাকার নোট তৈরি হয়।’

খালেক প্রথম আলোকে বলেন,তরিকুল সব সময় বলতেন, তাঁর কাছে জিন আসে। দাতে টোকা দিলেই জিন চলে আসত। এরপর নানা কেরামতি দেখাতেন তরিকুল। কয়েকবার আমার হাতে টাকাও দিয়েছেন। একপর্যায়ে আরও অনেক টাকা বানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। তখন তরিকুল বলেন, আরও টাকা বানিয়ে দেব। তবে একটা কাজ করতে হবে। পৃথিবীতে যত মসজিদ আছে, সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ কিনে দিতে হবে। আমি জিজ্ঞাসা করি, কত টাকার প্রয়োজন। তখন তরিকুল বলেন, জিনের বাদশা এসে বলে দেবে। পরে একটা পাত্রে রাখা কাগজ ওঠাতে বলেন তরিকুল। সেখানে লেখা ছিল, ৫৬ হাজার কোরআন শরিফ কিনতে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রয়োজন। আমি টাকা দিতে রাজি হই।’

খালেক বলেন, এরপর তরিকুলের নির্দেশে তাঁকে ছয়টি প্যাকেট এনে দেন। এগুলোর মাধ্যমে তরিকুল তাঁকে কয়েক কোটি টাকা বানিয়ে দেবেন। পাশাপাশি কোরআন শরিফ কেনার জন্য তরিকুলকে টাকা দিতে থাকেন। তরিকুলের কথামতো নদীতে সাত লাখ টাকা ফেলে দেন বলে জানান তিনি।


খালেক আরও বলেন, তরিকুল একপর্যায়ে তাঁকে টাকা বানানোর প্যাকেট ধরিয়ে দেন। তবে কোরআন শরিফ কেনার পুরো টাকা না দেওয়া পর্যন্ত প্যাকেট খুলতে নিষেধ করেন। তরিকুলের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত তিনি তাঁকে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দেন। বাকি টাকা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের দেওয়া টাকাভর্তি বাক্স খুলতে নিষেধ করেন তরিকুল। এরপর তরিকুল ও তাঁর সহযোগী আবদুল্লাহ যশোরে চলে যান। কোরআন শরিফ কেনার বাকি টাকা দিতে বলেন।

মামলায় খালেক দাবি করেন,আমি ও খোকন তরিকুলের দেওয়া বাক্স খুলে দেখি, বাক্সে কেবল কাগজ। কোনো টাকা নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে তরিকুল ও তাঁর সহযোগী খালেকের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। আর খালেকের পূর্বপরিচিত খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে তরিকুল আমার সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন। আমিও ফাঁদে পড়ে তাঁকে কয়েক লাখ টাকা দিয়েছিলাম।

তথ্যসূত্র প্রথম আলো।

লেখাটি শেয়ার করার উদ্দেশ্য হলো- এই ২০২৪ সালে এসেও খোদ ঢাকা শহরে যদি এ ধরণের কান্ড ঘটে; তাহলে শত বছর আগের গ্রাম বাংলার কি ভয়াবহ চিত্র ছিল তা ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠে। ২০১০/১২ সালের দিকে মিরপুরে এক ব্যক্তির কাছ থেকেও ৩/৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছিলো জ্বীনের বাদশা নামক আরেক প্রতারকের মাধ্যমে। জ্বীনের বাদশা নামক এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে দেশে কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে তেমন কোন জনসচেতনা চোখে পড়ছে না।

আর্থিক প্রতারণার ঘটনাগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমি সাধারণত ভিকটিমকেই দোষারোপ করি, এই ঘটনাতেও আমি ভিকটিমকেই দোষ দেবো, একদম উচিৎ শিক্ষা হইছে ছাগলটার, প্রতারক চক্রগুলো এ ধরণের প্রতারণার ঘটনা আরও বেশি বেশি ঘটাক আমি সেটাই চাই, এইসব গবেট লোকদের একটু শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে।

মুসলিম দেশগুলোতে জ্বীনের উৎপাতের শেষ নেই, আর আমাদের ভাঙ্গাদেশ হচ্ছে জ্বীনের জন্য এক উর্বর ভূমি, দেশের অন্তত ৮০% জনগণই জ্বীন বিশেষজ্ঞ। সবাশ বাংলাড্যাশ।

জ্বীন নিয়ে আরও পড়ুন

‘জিন’ তাঁকে অন্তঃসত্ত্বা করেছে :-<


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৪৯
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×