somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রুপকথার গল্প!

০৬ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন আগের কথা। একদেশে বাস করতো এক রাজকন্যা। রাজকন্যাদের অনেক ধরণের নাম থাকে। সুন্দর সুন্দর সেসব নাম! রুপকুমারী, ফুলকুমারী, জুলেখা, সুলেখা এমন সব নানা রকম সুন্দর সুন্দর নাম।

কিন্তু এই গল্পের রাজকন্যার নাম ঠিক সে ধরণের ছিলোনা। তার ছিলো খুব অদ্ভুত রকমের পঁচা একটা নাম। কি নাম জানো? ভুলকুমারী। কারন সে যখন খুব ছোট তখন থেকেই তার চারপাশে সব ভুলভাল কাজ শুরু হলো। সে নিজেও অবশ্য আরেকজন ভুলভাল কাজ করা অঘটনঘটনপটিয়াসী ছিলো।

সে যাইহোক যথারিতী কন্যা বড় হলো। সে যখন অষ্টাদশী ততদিনে সে অষ্টকোটী ভুলভাল কাজ করে ফেলেছে অলরেডী।মানে মানুষের ভাষায় মনুষ্যসমাজে যেসব জিনিস ভুল বলে পরিচিত সেসব। সবাই সঠিক পথে চলে , সঠিক কাজটাই করে আর ভুল কুমারী করে শুধুই ভুল। তাই ভুলকুমারীর বন্ধু কেউ হয়না কারণ ভুল করতেও যেমন কেউই পছন্দ করেনা তেমনি ভুলকুমারীর ছায়াও কেউ মাড়াতে চায়না।কিন্তু একদিন এক মজার কান্ড হলো। হঠাৎ তার দেখা হলো এক ভুলকুমারের সাথে। দেখা হওয়াটা ছিলো খুব মজার একটা ঘটনা।

ভুলকুমার: নামটি কি গো কন্যা তোমার? কোথায় তোমার বাড়ি?
ভুলকুমারী: নাম যে আমার ভুলকুমারী, সবার সাথে আড়ি। /:)
ভুলকুমার: ( পরম বিস্মিত হয়ে:-*)
এত দিনে পেলাম বুঝি যোগ্য আমার জুড়ি।
ভুল করাতে সুনাম আমার আছে ভুরি ভুরি।:)
ভুলকুমারী: তফাৎ হঠো কুমার তুমি নিজের জ্বালায় মরি
তারি মাঝে আসলে তুমি গলায় নিতে দড়ি?

ভুলকুমারী মুখখানি মলিন করে চলে গেলো কোথায় যেন। আর ভুলকুমারের দিন কাটেনা, রাত কাটেনা। তাকে তো ভুল করতেই হবে তাই সে ভুলকুমারীর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে কবুতরের পায়ে বেঁধে উড়িয়ে দিলো।

দিন যায় রাত যায়। একদিন ভুলকুমারী রুপোর ঘাটে বসে সোনার জলে নাম লিখছে এমনি সময় কবুতর চিঠি নিয়ে হাজির।
ভুল কুমারের চিঠি: মিছেই তোরে ভুলতে চাওয়া।।
বুকের ভেতর- ব্যাথার কপাট-
দুঃখ হাওয়ার আসা যাওয়া,
স্মৃতির মেঘে মুখ তুলে চাই ...............
Click This Link

বৃথাই ভাবি ভুলে যাব-
এমনটা 'তুই'- কোথায় পাব?।
মায়া হয়েই- নাহয় থাকিস
ছায়ার কালোয়.....- আমায় রাখিস।।

এমন চিঠির জবাব ভুল কুমারী লিখতে বসে গেলো সাথে সাথেই?

ভুলতে তোকে হবেই আমায়।
ব্যাথার কপাট-ভেংগে চুরে,
সুখ নিয়ে তোর পালিয়ে যাবো।
স্মৃতির মেঘে এক মুঠো ছাই
Click This Link
এমনটা 'তুই'- না পাস যদি
আমায় নাহয় ভুলেই থাকিস,
কালোয়-সাদায় থাকিস না আর
আলোর পথে এগিয়ে চলিস!!
কবুতর চিঠি নিয়ে উড়ে গেলো আবার তার জবাব এলো। জবাব লিখলো ভুলকুমারীও। ভুল যে তাকে করতেই হবে। উপায় আছে তার থেকে বাঁচার? মোটেই নয়।

ভুলকুমারের চিঠি
ইচ্ছে করে সঙ্গী হয়ে তোর......
নগ্ন পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে-
ভোরের আলোয় অনেকটা পথ হাঁটি-
ঘুম ভাঙ্গা তোর সদ্য ভেজা চোখে-
সকাল আমার সবুজ পরিপাটি।
Click This Link
জোছনা ভেজা সন্ধ্যা ছড়ায় ঘ্রাণ
তোরই চুলের আঁধার করা ছায়ায়-
যখন কাছে চুপটি বসে থাকি
থাকিস নাহয় তাকিয়ে অনেক মায়ায়।
ভুলকুমারীর প্রান কেঁদে যায়। কলিজা ছিড়ে যায়। আহা ভুল যে তাকে করতেই হবে।
ভুলকুমারী লিখে, ঘুমভেঙ্গে তুই চাসনা আমার চোখে
হাটিসনা তুই আমার সাথে আর,
হোসনা আমার সংগী ওরে তুই
কস্ট পাওয়া ইচ্ছে গুলো ছাড়!!
Click This Link
অচিন পুরের অচিন পাখি হয়ে
সারা জীবন থাকি ই না হয় আমি।
স্বপনপুরের লুকোচুরির খেলায়
স্বপন গুলো থাক না হয়ে দামী।!!

লুকিয়ে নাহয় ছিলাম বুকের মাঝে
আর সেখানে কেই বা বল আছে???
নাইবা হল এই জীবনে পাওয়া,
সকল ব্যাথা থাক না হয়েই চাওয়া!!

ভুলকুমারী মনকে বোঝায়। চিঠি লেখা বন্ধ করে । কুমারের চিঠি আসে। কন্যা চোখের জলে ভাসে।
কুমারের চিঠি ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনিনা-
ইট পাথরের রুক্ষ প্রলয় -
রাত্রি ঘনায় নির্জনতায়
সড়ক বাতির ক্লান্ত আলোয়।

অপেক্ষার ই প্রহর কাটে-
তাকিয়ে থাকা নীল জানালায়-
আসে যদি তোরই চিঠি
লেখা কথার পংক্তি মালায়।
Click This Link

কন্যা আবার দুখের সাগরে ভেসে লিখে ফেলে আরেক পত্রকাব্য

তমস রাতের নির্জনতায়-
ইটপাথরের পাহাড় ফুড়ে,
ক্লান্তি নামে তোর দুচোখে-
নিয়নআলোর মায়ায় জুড়ে।

ঝিঁঝিঁপোকার ঝিল্লীরবে-
স্মৃতিগুলো পাখনা মেলে,
শ্রবনলোকে তন্দ্রাগীতি-
যেদিনগুলোয় গেছিস ফেলে?
Click This Link আবারও শেষে একি অপরাগতা

দিনযে গেছে চোখের জলে
মিথ্যে মায়ার গগণতলে
অনেক ব্যাথা বুকে চেপে
যোজন যোজন পথটি মেপে-

বুঝে গেছি আজ আমি তার
ভুল করেও ফিরবো না আর!!

এবার ভুলকুমার ক্ষেপে গিয়ে লেখে, কবিতার পর কবিতা ক্ষেপা ক্ষেপা সব চিঠি
Click This Link
ভুলকুমারীও মজা পেয়ে যায় সেও লেখা তার পাল্টা জবাব
Click This Link

তারা আবার ভুল করে। ভুল করে দুজনের কাছাকাছি এসে করে আরো সব বড় বড় ভুল। হাবুডুবু খায় তারা।
Click This Link
Click This Link
Click This Link

Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

এমনি কত শত ভুলকথায় গাঁথা ভুলের মালার ক্ষণ পেরিয়ে গেলো।

সেদিন সেই রাজ্যে এলো ভুল সংশোধনী দিবস। সেই দিন গণনা করা হয় কারা কারা ভুল করেছে । ভুলকুমার ও ভুলকুমারী হৃদয় ফাঁটে। দুচোখ কাঁদে। চলে যেতে হবে তাদের ভুল সংশোধনী কেন্দ্রে। যদিও তাদের জন্মগত স্বভাবই বার বার ভুল করা।তবুও কে শোনে কার কথা? সে রাজ্যের নিয়ম যে মানতেই হবে।
ভুলকুমার মনের দুখে লিখলো,
ধর, একদিন তোর ইচ্ছে হলো
কাঁদতে ভীষন;
তখন না হয় আমায় ডাকিস ;
নাই বা হেসে সঙ্গী হলাম;
কান্না মধুর হোক সেই ক্ষণ।
Click This Link
ভুলকুমারী চোখের জলে ভেসে লিখলো আরেক কাব্যচিঠি,
যদি,
একদিন খুব ইচ্ছে করে
ভীষন কাঁদি,
সত্যি তোকেই ডাকবো তখন-
কাঁদবো একা?
কক্ষনও না
তুই যে আমার ব্যথার কারণ।
Click This Link

চিরবিদায় নিলো তারা। প্রতিশ্রুতি দিলো,এ জনমে না হোক পরজনমে দেখা হবে তাদের। সেই দিনের অপেক্ষাতেই কেটে যাবে বেলা।ভুলকুমারী কাঁদতে কাঁদতেই জিগাসিলো ,

সঙ্গী হবি?
চুপি চুপি
ডাকি যদি, ঐ পারের শেষে,
নিভার্বনায় থাকবো দুজন
বাঁধবো বাসা মেঘের দেশে।
কিন্তু তারপর........

আর তো হলোনা দেখা, জগতে দোহে একা
চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনা তীরে-


শুধু হঠাৎ হঠাৎ আজো ভুল করে ভুল কুমারের মনে পড়ে যায়। তখন সে চুপিচুপি লেখে।

তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
ইচ্ছে যখন হঠাৎ শিশির, ঘাসের সবুজ 'পরে,
কিংবা জোড়া শালিক নাঁচন, মেঠো পথের ধারে।
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।
Click This Link
ভুলকুমারী সূচীসুতোয় লেখে কাব্যগাঁথা। ভুল করেও না ভুলে যাওয়া দিনের কথা।

জলমোতিটা দুলছে চোখের পাতায়
তোর ছায়াটা পড়ছে যে আজ
বন্ধ মনের খাতায়।
Click This Link
জলমোতিটা দোলে আমার চোখে
দেখতে ভীষন ইচ্ছে করে
আরেকটাবার তোকে।
দিন যায়, মাস গড়ায়, বছর ফুরোয়। গ্রীস্ম যায়, বর্ষা আসে। ভাবছো ভুল কুমারী ভুলকুমারের কথা ভুলেই গেলো? :(


বর্ষার প্রথম বৃষ্টিফোটা জলমোতি হয়ে ঝরে ভুলকুমারীর চোখে। ভুলকুমারী ফেলে আসা দিনের পত্র পড়ে, মনে মনে আওড়ায় চুপিচুপি।
অবাক লাগে পড়ি যখন সেসব দিনের কথা,
বুকের মাঝে বাজে আমার দুঃখদিনের ব্যাথা।

মনে পড়ে সেই বরষায় ফিরতেছিলাম পথে,
মুঠোফোনের মুঠোর ভেতর তুই যে ছিলি সাথে।

Click This Link

ভুলকুমার একা একা আনমনে লেখে-
নিজেকেই বুঝি প্রশ্ন করে-
আঁধার এখন জোছনা লুকোয়,
স্মৃতির আকাশ হারায় আলো;
হয়না আঁকা মুখচ্ছবি আর;
জানতে তবু ইচ্ছে করে, এখনকি তুই বাসিস ভালো?

Click This Link

কিন্তু হায়। জবাব আর আসেনা। ভুলকুমার আর ভুলকুমারী এখন জেনে গেছে এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ভুল করেও ভুল করা যায়না।


ভুলকুমারকে জানাই জনমদিনের শুভেচ্ছা।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১০:৪৬
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের প্রতি একটি সতর্ক বার্তা

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০০

অতীতে গরুর মাংসে হাড় বেশি হওয়ার জের ধরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে দেখেছি,
.
ও ভাই মুজে মারো মুজে মারো নেহি মাজাক হ রাহে
.
ঢাল-সড়কি,টেঁটা-বল্লম, গুলতি, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে তারা দলে দলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করলো?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১১



ব্লগে কে কে বলেন, আমেরিকা শেখকে হত্যা করেছে? খুব বেশী ব্লগার ইহা বলেন না; তারা শেখের দুর্নীতি, আওয়ামী লীগের দোষ টোষ নিয়ে বলেন যে, কিছু বিপথগামী সৈনিক শেখকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় বিএসএফের বর্বরতা: পঞ্চগড় সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২১

আরেকটি নিরীহ প্রাণের বলিদান

আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

এতো সোজা!
চাইলেই কেউ কোনো দেশ দখল করে নিতে পারে না- তা সে যতই শক্তিধর দেশ হোক। বড়ো, শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেই যদি ছোট এবং দুর্বল দেশকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসো বসো গল্প শুনি

লিখেছেন শায়মা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১২


ছোট থেকেই আমি বকবক করতে পারি। তখনও আমি গল্পের বই পড়তে শিখিনি, তখনও আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে পারতাম। আর আমার সে সব গল্প শুনে বাড়ির সকলে হাসতে হাসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×