somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - সমাধান - ৪

২৮ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব - ১ | পর্ব - ২ | পর্ব - ৩

প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়ে বসে আছি একটি রেষ্টুরেন্টে। আমার ঠিক মুখোমুখি বসে আছে একটি মেয়ে। কিছুক্ষন আগেও আমরা পরস্পরকে চিনতাম না। মেয়েটি একা নয়। তার সাথে একজন ভদ্রলোক এসেছেন। দূরে একটি টেবিলে বসে এদিকে উঁকিঝুঁকি মারছেন। এমন ভাবে আমাদেরকে পর্যবেক্ষন করছেন দেখে মনে হচ্ছে বাংলা সিনামার ভিলেনের চামচা তিনি। যেন এক্ষুনি গিয়ে বলবেন "মাতবর সাব আফনের মাইয়ারে দেখলাম রহিম মাঝির পোলার লগে ইটিস পিটিস করতাছে"। ডিম লাইটগুলোর প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে রেষ্টুরেন্টের প্রতিটি অংশে আলো পৌছে দিতে। লাইটগুলো যেন মালিকের কৃপনতার স্বাক্ষী দিচ্ছে। আমি ভেবে পেলাম না এত টাকা খরচ করে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায় নেমে সামন্য লাইটের জন্য এত কৃপনতার কারণ কি?

একটু আগে একজন বয় এসে মেন্যু দিয়ে গেল। কি অর্ডার করব ভাবছি আর মনে মনে ভাবীকে অভিশাপ দিচ্ছি। কাল ভাবীর জরুরী কথাটি ছিল ঠিক যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। ভাবীর রূমে ঢুকতেই আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। আমি বললাম -

"এটা কি?"

"খুলো আগে"

আমি খামের মুখটি খুলে চুপ করে বসে রইলাম।

"আরে খামের মুখ খুলে বসে আছো কেন? ভেতরে কি আছে দেখো!"

আমি খামের মুখটি একটু ফাঁক করে ভেতরে উঁকি মেরে তাকালাম। ভেতরে মোটা কাগজের কিছু একটা আছে। কি তা ঠিক বুঝতে পারলাম না।

"আশ্চর্য !" ভাবী বললেন "এমন করে দেখছো কেন? ভেতর থেকে বের করে দেখো"

আমি খামটি খুব আড়ষ্ট ভঙ্গিতে ধরে রেখেছিলাম। যেন খামের ভেতরে বিষাক্ত সাপ আছে। ভাবীর ধমক খেয়ে কাঁপা হাতে খামের ভেতরের কাগজটি বের করলাম। দেখলা একটা মেয়ের ছবি। প্রথমেই আমার মনে হল ভাবী নিশ্চই এই মেয়েকে ভাইয়ার সাথে দেখেছে। কোন ভাবে ছবিও জোগাড় করেছে। এখন আমার উপর গোয়েন্দাগিরির ভার পরবে। আমি মনে মনে শংকিত হয়ে পরলাম। পরে বুঝলাম ঘটনা আরো খারাপ।

"এটা কার ছবি ভাবী?"

ভাবী অতি নাটকীয় ভঙ্গীতে বললেন -

"এটা একটা মেয়ের ছবি এবং আগামীকাল সন্ধ্যায় তুমি এই মেয়ের সাথে দেখা করবে"

"কেন?"

"এমনি। মেয়েটির সাথে পরিচিত হবে"

"ধুর! আমার এত পরিচিত হওয়ার দরকার নেই। আমি দেখা করতে পারবনা"

"তোমার দরকার নেই কিন্তু আমাদের দরকার আছে"

"আমাদের মানে !!!"

"আমাদের মানে আম্মার এবং আমার"

"আম্মা বলেছে দেখা করতে !!!"

ভাবীর কথার ধরনে যতটুকু বুঝলাম ওনারা বউ-শ্বাশুড়ী মিলে আমাকে মরহুম বানানোর প্ল্যান করেছেন। ভাবীকে অনেক অনুনয় বিনয় করলাম আম্মাকে বুঝিয়ে বলতে। কিন্তু ভাবীকে রাজী করাতে না পেরে শেষমেষ ভাইয়ার শরনাপন্ন হলাম এবং ভাইয়া অতি আনন্দের হাসি হেসে বললেন আম্মার উপর কথা বলার সাহস তার নেই। আমি নিজে যে বলব সেই সাহস ও আমার নেই। অগত্য কোন উপায় না দেখে আজ সন্ধ্যায় দেখা করার নির্ধারিত স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মেয়েটির সাথের ভদ্রলোককে দেখে প্রথমেই আমার মনে হয়েছিল বডিগার্ড। ওনার ভাব সাব দেখে অন্তত তাই মনে হয়েছিল। যদিও ভদ্রলোক পরে নিজেকে মেয়েটির দুলাভাই বলে পরিচয় দিলেন এবং এই মুহুর্তে তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে দূর থেকে উঁকি মেরে আমাদেরকে দেখছেন।

আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল মেয়েরা নাকি বহুরূপী এবং ডেঞ্জারাস প্রকৃতির হয়। যদিও আমি কখনই মেয়েদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য করি না। এক্ষত্রে নারী সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতার ঘাটতি মূল কারণ। তাই কি বলতে কি বলে বসি এই ভয়ে নির্বাক থাকি। নারীজাগরণের এই যুগে উল্টা পাল্টা কিছু বলে নারীদের হাতে রামধোলাই খেয়ে সংবাদপত্রের শিরোনাম হবার ইচ্ছা আমার কোন কালেই ছিল না এখনও নেই। আমার জন্য সবচাইতে স্বস্তিকর ব্যপার হল সামনে বসা মেয়েটি অতিরিক্ত সুন্দরী নয়। খুব সুন্দরী মেয়েদের সামনে অনেক চালু পাবলিকও ভেজা বেড়াল হয়ে যায়। আর আমিতো সে তুলনায় কিছুই না। তবে তরুনীর প্রখর ব্যক্তিত্বে আমি এক কথায় মুগ্ধ। মুগ্ধতা এতই বেশী যে মুগ্ধতার ভারে আমি কুঁজো হয়ে বসে আছি।

মেয়েটি পরিচয় পর্বের শুরুতেই তার নাম বলেছিল কিন্তু এখন নামটি মনেকরতে পারছি না। আবার জিজ্ঞেস করব কিনা তাই ভাবছি। অনেকক্ষন চুপচাপ বসে আছি। নিরবতা একসময় অসহ্য হয়ে উঠতেই মেয়েটি বলল -

"এভাবে চুপ করে বসে থাকার চেয়ে বরং চলুন চলে যাই"

"আরে না যাবেন কেন? কি অর্ডার দেব ভাবছিলাম। এক কাজ করুন আপনি অর্ডার দিন" বলেই মেন্যুটি মেয়টির দিকে বাড়িয়ে দিলাম।

মেয়েটি অর্ডার দিল। খাওয়ার ফাঁকে খুব ফর্মাল কিছু কথা বললাম। অবশেষে বিদায়ের পালা। রিক্সা ঠিক করে উঠে পরলাম। খুব চিন্তায় আছি না জানি বাসায় ফিরলে কি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। দুঃশ্চিন্তা দূর করার জন্য গান শোনা দরকার। মনের মাঝে শুরু হল সুরলয় আর বেজে উঠলো - আমার প্রিয়ারও ছায়া আকাশে আজ ভাসে..............

চলবে..........
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×