টোকিওর ঘটনা। আমরা সবাই মিলে বেশ বড়সর একটি দল যাচ্ছিলাম দাওয়াত খেতে। আমরা এক পাশে বসে আছি। ট্রেন মোটামুটি খালি। কালো রঙের জামা পড়া একটি মেয়ে বসে আছে আমার সামনে। রানীর মতোন অভিজাত তার চেহারা।
মেয়েটির সাথে দারুণ আকর্ষণীয় ফর্সা মতোন একটি ছেলে। আমার বিপরীত দিকেই তারা দুজন বসে আছে। তাদের বয়স ২৪/২৬ এর কাছাকাছি হবে।
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলাম। খুবই মোহনীয় লাগছিলো তাঁকে। মেয়েটির চোখে বুদ্ধির ঝিলিক, আবার একই সাথে মদির মায়া ভরা যেন। জাপানী কিছু মেয়েদের দেখলে মনে হয় এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে সে! কানের পাশে ক’গাছি চুল! আহা, ঐশ্বর্য বুঝি একেই বলে।
এমন দুজন মানুষকে দেখেও আনন্দ লাগে। আমি ছেলে ও মেয়েটিকে দেখে সেই আনন্দ পেয়েছিলাম। বেশ কয়েকবার তাকিয়ে থাকার ফলে মেয়েটি বুঝতে পারে আমি তাঁকে দেখছি। সে আমাদের দিকে তাকিয়ে স্পষ্টই বুঝতে পারল আমরা তাদের দেশের অতিথি! কারণ চাল চলন ও চেহারায় আমরা খাটি বাঙ্গাল!!
ট্রেন ছুটে চলেছে।
কিছুক্ষণ পর পর থামছে। লোকজন উঠছে আবার কিছু নামছে।
কিছুটা বেশরমের মতোন আমি মাঝে মাঝে তাদের দেখছি। একটা স্টপেজ থেকে বেশ স্মার্ট সুন্দরী এক তরুণী উঠলো ট্রেনে। এবং দাঁড়ালো গিয়ে সেই ছেলে ও মেয়েটির সামনে। তখন হলো মজার একটি ঘটনা- আমার সামনে বসা ছেলেটি সদ্য ট্রেনে উঠা মেয়েটিকে এভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দু-তিন ঝলক দেখলো যে আমি বিস্মিত হলাম। আমাদের দেশে অশিক্ষিত মানুষ যেভাবে কাউকে দেখে প্রায় সেভাবেই ছেলেটি মেয়েটিকে দেখেছে। তার সাথের তরুণীর দিকে খেয়াল নেই।
তারপর হলো মজার ব্যাপার। মেয়েটি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সে খুবই লজ্জিত বোধ করছে বোঝা গেলো। আমি পুরো ব্যপারাটি খেয়াল করেছি এটা মেয়েটিও খেয়াল করেছে।
আকর্ষণীয় চেহারার সেই ছেলেটি মাঝে মাঝেই তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই তরুণীকে দেখছে আর সঙ্গে থাকা মেয়েটির সাথে কথা বলতে চাইছে, খুনসুটি করছে। কিন্তু মেয়েটি সেই যে চোখ বন্ধ করেছে আর খুলেনি।
ছেলেতো আর মেয়ের চোখ বন্ধের কারণ জানে না।
সে নানা চেষ্টা করছে।
চোখ বন্ধ করার আগে মেয়েটির চোখে রাগের ঝিলিক দেখা গেছে।
এভাবে তরুণীকে দেখার বিষয়টি মেয়েটির মোটেও ভালো লাগেনি তা বোঝা গেছে বেশ স্পষ্ট। সে নিজেই ভয়াবহ রূপসী। তার পাশে থাকা ছেলেটির এমন আচরণে সে রেগে গিয়েছিলো। ট্রেনে বলে হয়তো উলটাপালটা কিছু করেনি। আমরা যদি আশেপাশে কেউ না থাকতাম তবে সেখানে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধতো ।
দীর্ঘ যাত্রা শেষে আমি যখন নামছি তখনো দেখলাম নাহ, মেয়ে সেই যে চোখ বন্ধ করেছে, আর চোখ খুলছে না। আমি ট্রেন থেকে নামতে নামতে ভাবলাম
যাও বাছাধন,
বাড়িতে গিয়ে টের পাবে কত ধানে কতো চাল।
//
টোকিওর মেট্রোতে প্রচুর উঠেছি আমরা। যে কদিন ছিলাম ট্রেনেই যাওয়া আসা করেছি। আমাদের হোটেল ও তার পাশের স্টেশনকে বেশ পরিচিত জায়গায়ই মনে হতো শেষের দিকে। এই নিয়ে বিস্তারিত লিখছি। কি সুন্দর তাদের ব্যবস্থাপনা। নাগরিকদের চলাচলে তারা কতোটা মনোযোগী, যত্নশীল।
কবি নীলসাধুর জাপান ভ্রমণ নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে ভ্রমণ কাহিনী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জাপান ভ্রমণের শতবর্ষ পর
কবি নীলসাধু
পৌঁছালেন!
#BookFair2020 #EREG
জাপান ভ্রমণ নিয়ে আরো পোষ্ট
টোকিও বইমেলা ২০১৯
বইয়ের দোকানে ঘুরাঘুরি :: টোকিও বইমেলা ২০১৯
ওদায়বা শহরে ঘুরাঘুরি :: টোকিও বইমেলা ২০১৯
সেন্সো-জি টেম্পলে ঘুরাঘুরি :: টোকিও বইমেলা ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৫৪