সূরা রাদ কুরআনের ১৩ তম সূরা।
রাদ অর্থ বজ্র। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৪৩টি। রাদ সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাতে যে বিশেষ যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহ্র প্রত্যাদেশ সমূহের প্রতি ইঙ্গিত; যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা সমূহকে প্রকাশ করেছেন। মানুষের প্রতি তাঁর করুণার অভিব্যক্তি রয়েছে এই সূরাতে। পয়গম্বরদের মাধ্যমে আল্লাহ্র নির্দ্দেশ সমূহ মানুষের ভাষাতে রূপান্তরিত হয়। যা পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষাতে রূপান্তরিত হয়। আল্লাহর বাণী যেমন মানুষের ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পায়, আমরা যদি বিশ্ব প্রকৃতির দিকে দৃষ্টিপাত করি, সেখানেও দৃষ্টিগোচর হবে প্রকৃতির বিভিন্ন আইন সমূহ যা আল্লাহ্র আইনেরই প্রকাশ মাত্র। সূরা রা'দ অনলাইনে পড়তে চাইলে
বিস্ময়কর বা অলৌকিক কিছুর মধ্যে আল্লাহ্কে অনুসন্ধান না করে আমাদের চারিপাশের প্রকৃতির মাঝে, তাঁর সৃষ্টির মাঝে, চেনা পৃথিবীর মাঝে, আল্লাহ্র সৃষ্টি নৈপুণ্যের মাঝে তাঁর ক্ষমতা ও দয়াকে অনুধাবন করতে বলা হয়েছে। প্রকৃতির আইনের মাঝে তাঁর ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে। মানুষ তার পরিকল্পনা করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্র পরিকল্পনা বা ইচ্ছাই স্থায়ীত্ব লাভ করবে। পূর্বের সূরা ইউসুফের কাহিনীতে আল্লাহ্ এই সত্যকেই প্রকাশ করা হয়েছে।
কোরআনের প্রতিটা সূরায় অনেক কথা বলা হয়েছে।
কথার আড়ালে, আরো অনেক কথা রয়েছে। বিজ্ঞান বলে এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড এক সু-নিয়ন্ত্রিত অমোঘ নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। প্রকৃতির এই ব্যবস্থাপনা উচ্চস্বরে ডেকে বলছে যে, এর পিছনে এমন একজন স্রষ্টা ও পরিচালক রয়েছেন, যিনি মানুষের অনুভুতি ও চেতনার বহু উর্দ্ধে। তিনিই সকল কিছুর স্রষ্টা সকল কিছুর পরিচালক, রক্ষক প্রতিপালক। সকল কিছু পরিচালনার জন্য তিনি নির্দিষ্ট আইন করে দিয়েছেন। আরশে সমাসীন কথাটি দ্বারা এই ভাবকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সব কিছুকেই তিনি তার নিয়মের আজ্ঞাবহ করে দেন। এই নিয়ম এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত কার্যকর হবে। সমস্ত সৃষ্টির শেষ গন্তব্যস্থল আল্লাহ, যেমন সৃষ্টির প্রথম শুরু হয়েছিলো আল্লাহ্র থেকে।
সুরা রাদের শিক্ষণীয় কয়েকটি বিষয় হলঃ
কুরআনের সত্যতা, সব কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ, আল্লাহর ক্ষমতা বিষয়ে চিন্তার নির্দেশ, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একজন ইমাম থাকা, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, ফেরেশতাদের দিয়ে মানুষকে রক্ষা করা ইত্যাদি। আল্লাহ কারও নিয়ামত অযথা ছিনিয়ে নেন না, সব বস্তু এমনকি বজ্রও আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করে, সত্য ও মিথ্যার উপমা-এসবও এই সুরার আকর্ষণীয় কয়েকটি আলোচ্য বিষয়। মুমিনের বৈশিষ্ট্য, কাফিরের বৈশিষ্ট্য, অতীতের খোদাদ্রোহী জাতিগুলোর পরিণতি, আল্লাহর স্মরণ সান্ত্বনাদায়ক, তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্যতা, তৃণ-বৃক্ষের বর্ণনা ও হযরত আলী (আ.)- এর মহত্ত্ব নিয়েও আলোচনা রয়েছে সুরা রাদে। ‘যারা ঈমান গ্রহণ করেছে, আল্লাহর জিকির দ্বারা তাদের অন্তর শান্ত হয়। জেনে রাখ! আল্লাহর জিকিরের দ্বারাই তারা অন্তরে শান্তি লাভ করে।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
সুরা রাদে পাহাড়ের প্রসঙ্গ এসেছে।
কুরআনের অন্য আয়াতে পাহাড়কে পৃথিবীর পেরেক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মাটির ভেতর পর্যন্ত প্রোথিত পাহাড় গুলো খুঁটি বা পেরেকের মতই ভূমির ওপর বাইরের ও ভেতরের চাপকে প্রতিরোধ করে। তাই পাহাড় না থাকলে অবিরাম নড়াচড়া ও ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীতে জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ত। এরপর একই আয়াতে নদ-নদীর কথা এসেছে। পাহাড় থাকার ফলে পৃথিবীর সেচ-ব্যবস্থা হয়েছে খুবই চমৎকার। পৃথিবীর অনেক পাহাড়ই বরফ আকারে পানি সংরক্ষণ করছে। এই বরফ গলে নিচের দিকে নেমে আসে পানি। এভাবে সারা বছরই পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভাবেই সেচের কাজ হয়ে যাচ্ছে। এরপর এসেছে ফলের কথা যার পেছনে রয়েছে ভূমি বা মাটি, পানি ও সূর্যের আলোর অবদান। প্রতিটি ফল আবার দুই ধরনের। এখানে দুই ধরনের বলতে অনেকেই মনে করেন, দুই বা ততোধিক বৈশিষ্ট্যের ফল। যেমন, টক ও মিস্টি বা শুকনো ও রসালো কিংবা কাঁচা ও পাকা ফল ইত্যাদি।
তথ্যসুত্রঃ
১। তাফসীর ইবনে কাছির
২। আহসানুল বায়ান
৩। আল কোরআন (বাংলা অর্থসহ)
৪। সহি হাদীস
৫। মোকছেদুল মোমেনীন
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
৫। সূরা মায়েদা
৬। সুরা আন’য়াম
৭। সূরা আল আরাফ
৮। সূরা আনফাল
৯। সূরা আত-তাওবা
১০। সূরা ইউনুস
১১। সূরা হুদ
১২। সূরা ইউসুফ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:১০