somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখুন আমাদের ইতিহাস - ৬

২২ শে জুন, ২০০৮ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ফিরে দেখুন আমাদের ইতিহাস - ১

ফিরে দেখুন আমাদের ইতিহাস - ২

ফিরে দেখুন আমাদের ইতিহাস - ৩

ফিরে দেখুন আমাদের ইতিহাস - ৪

ফিরে দেখুন আমাদের ইতিহাস - ৫


আগের পোষ্টসমূহের ধারাবাহিকতায়-

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি:

বিংশ শতাব্দীর সত্তর দশকে পুরো বিশ্বে দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও রাশিয়ার প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশী। এশিয়ুা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল। এমতাবস্থায় জাতিসংঘের কতিপয় সিদ্ধান্তকেও প্রভাবান্বিত করে। এর সাথে বাংলাদেশ সরকারও কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যহত রাখে।

ভারত

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে ভারতের ভুমিকা অনস্বীকার্য।
১. লক্ষ লক্ষ স্মরনার্থীদের খাবার, আশ্র‌য় ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে সহায়তা করে।
২. বিভিন্ন দলীয় রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি, সামাজিক সংগঠন, প্রচার মাধ্যম এবং সাধারন জনগন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন করতে সহায়তা করে। বুদ্ধিজীবি এবং সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ক্যাম্পেইন করে।
৩. ভারত সরকার মুক্তিযুদ্ধাদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করে।
৪. ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড এবং ভারতীয় ইস্টার্ণ কমান্ড একসাথে আক্রমন শুরু করে এবং ফলশ্রুতিতে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ

স্বাধীনতা সংগ্রামের চুরান্ত ফলাফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
১. ৩রা এপ্রিল ১৯৭১। সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পুর্ব পাকিস্তানের অবস্থা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দেন।
২. জুন-জুলাই ১৯৭১। স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন চেয়ে বাংলাদেশ থেকে একটি দল সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী এবং জার্মানী সফর করে।
৩. ৯ই আগস্ট ১৯৭১। ভারত-সোভিয়েত শান্তি, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা চুক্তি সাক্ষরিত হয়। যার সার বিষয় ছিল, এদের যেকোন একটি দেশের উপর হামলা হলে অপর দেশ এগিয়ে আসবে। এই চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
৪. পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দেয়। সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্য পোলান্ড বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়।

যুক্তরাষ্ট্র

সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ছিলেন রিচার্ড নিক্সন এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন হেনরী কিসিঞ্জার।

সরকারঃ
১. নিক্সন প্রশাসন কখনোই পাকিস্তানীদের গনহত্যা এবং পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি।
২. ডিসেম্বর ১৯৭১। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোয় যা এমনভাবে যৌথ বাহিনী খুব গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং জয়ের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যায়।

প্রচার মাধ্যম এবং ব্যাক্তিত্বঃ
অপরদিকে কিছু নেতৃস্থানীয় সিনেটর, কংগ্রেস সদস্য, বুদ্ধিজীবি, কুটনৈতিক এবং শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র পাকিস্তানের এই বর্বরতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
১. ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আর্চার কে. ব্লাড তার আরও বিশ কর্মকর্তার সাক্ষর সহ সরকারের সাথে ভিন্নমত পোষন করে চিঠি দেয়।
২. এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৫জন সিনেটর পাকিস্তানের এই অপকর্মের বিপক্ষে এবং পাকিস্তান উপর সামরিক নিষেধাঞ্জা আরোপের জন্য নিজেদের মতামত ব্যক্ত।
৩. সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতে স্মরনার্থী শিবির সফর করেন এবং পাকিস্তানের গনহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানান।
৪. ভয়েস অফ আমেরিকা এবং কিছু সংবাদপত্র নিয়মিত পাকিস্তানের মানবিক অধিকার ক্ষুন্ন করার ব্যাপারে এবং মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসিক অভিযানের কথা প্রচার করে। যা বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।

ইউরোপ

১. বৃটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানীর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের অত্যাচারের বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়।
২. বৃটেনে বাংলাদেশীদের জনসভায় লর্ড ব্রুকওয়ে এবং পার্লামেন্ট সদস্য পিটার শোর, মাইকেল বার্নস এবং জন স্টোনহাইস বক্তব্য রাখেন।
৩. ফ্রান্সের বিখ্যাত দার্শনিক এন্ড্রে মালর্ক্স তার বার্ধক্য সত্তেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের ইচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
৪. জার্মানীর এশিয়ান ষ্টাডির অধ্যাপক ওয়াইডম্যান পুর্ব পাকিস্তানের ধ্বংসলীলা বন্ধের পক্ষে বিবৃতি দেন।
৫. ইউরোপের বেশিরভাগ প্রচারমাধ্যমগুলো গনহত্যার প্রকৃত ছবি এবং অন্যান্য কর্মকান্ডের সংবাদ প্রচার করে।

চীন

১. চীন সরকার পাকিস্তান সৈরশাসকদের নেয়া পদক্ষেপ সমর্থন করে।
২. চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রই মুলত পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে।
৩. ১লা নভেম্বর ১৯৭১ ইয়াহিয়া খান রেডিওতে এক ভাষনে বলে চীন পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখবে এবং যদি ভারত পাকিস্তান আক্রমন করে তবে চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিবে।

জাপান

১. কিছু জাপানী রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং সংবাদপত্র পাকিস্তানের এমন আচরনের বিরোধিতা করে।
২. পার্লামেন্ট সদস্য কে. নিশুমুরা স্মরনার্থী শিবির পরিদর্শন করে এবং আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত বলে মন্তব্য করেন।



[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০০৮ রাত ৩:২২
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×