আমার প্রথম লেখালেখি শুরু করার পেছনের কারণটা বেশ অন্যরকম ছিল- সেটা ছিল অনিচ্ছাকৃত আইসোলেসন! প্রায় এক পক্ষকাল একটা ঘরে আটকে থেকে বাধ্য হয়ে লেখা-লেখির শুরু। তারপরে কয়েক বছর একদম চুপ- শুধু মাঝে মধ্যে রোজনামচা লেখা। আচমকা এক ঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে গেল জীবন, সবকিছু ভুলে থাকার জন্য ফের লেখালেখির শুরু। আমার বেশীরভাগ লেখা বা লেখার সূত্রপাত সেই সময়েই। ২০০৭ এ প্রথম বাংলা ব্লগের খোঁজ পাই। তারপরে একটানা লিখে গেছি ৪/৫ বছর। ফের বিয়ে, সন্তান, ব্যাবসায়িক ব্যস্ততা,অতি প্রিয় ছোট ভাই, বন্ধুর মত ভাগ্নি, ঘনিষ্ঠ বন্ধু জন, বাবার মৃত্যুতে সব কিছু লন্ড ভন্ড। গত সাত বছর ধরে আমি চেষ্টা করেছি কিছু একটা লিখতে- কিন্তু কি বোর্ডের সামনে বসলেই সব এলোমেলো হয়ে যায়! এক রাশ হতাশা এসে ভর করে মনে। ভাবি- কি হবে লিখে? আমি লিখলেই কি না লিখলেই কি, পৃথিবীর আর কি এমন ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে? বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। এত প্রিয় ব্লগ আমার – সেখানেও দু-চার মাসে এক আধবার ঢুঁ দেই। এর মাঝেই অনেক পরিচিত জন ব্লগ ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে –ব্লগে আমিও অনেকটা অচেনাই হয়ে গেলাম। দু-চারজন ব্লগার ভালবাসার টানে মাঝে-মধ্যে খোঁজ নিয়েছেন। কোথায় হারিয়ে গেলেন-বলে?
লেখালেখির ব্যাপারে আমি ভীষণ রকম স্পর্শ-কাতর। নিজেকে খুব সযতনে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। এমনকি আমার অতি ঘনিষ্ঠ অনেক আপনজন-ও জানেনা আমি লেখালেখি করি। আমার নিক বন্ধু আত্মীয়দের প্রায় সবার-ই অজানা! এর কারণ ভয় নয়, দ্বিধা ও সঙ্কোচ! কারণ আমার লেখার- মান ও ভাষা-গত দুর্বলতার! সেজন্য খুব কম ব্লগার-ই আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনে।
এর মাঝে এক ছোট ভাই নব্য প্রকাশক ফেসবুকে যোগাযোগ করে লেখা চাইল। আমি কিছুদিন টাল-বাহানা করে বললাম; সামুতে কয়েকটা সিরিজ আছে দেখেন ওখান থেকে কোনটা নিয়ে করা যায়? সে একটা পছন্দ করল। তার সাথে আমার চুক্তি ছিল; বইতে আমার কোন শর্ট বায়োগ্রাফি ও ছবি দেয়া যাবেনা। আর আমি বইয়ের প্রচারণায় জন্য কোন রকমের সহযোগিতা করব না। বেচারা নতুন প্রকাশন- আর আমি অখ্যাত লেখক! এত বড় রিস্ক নেয়া কি উচিত হবে এই নিয়ে দুই বছর ধরে চিন্তা করছে! আমি যদিও খোঁচাখুঁচি করি কম- কিন্তু সে আমাকে কথা দিয়ে বিপদে পড়ে গেছে।
কোভিড-১৯ নামে নতুন এক রোগের আবির্ভাবের সাথেই সারা বিশ্বের অভাবনীয় এক পরিবর্তন দেখার সুযোগ হল। সে ধারাবাহিকতায় আমার জীবন যাপনেরও বেশ একটু পালটে গেল। ভেবেছিলাম প্রথম তিনমাস শুধু লিখব আর লিখব। কত শত প্লট মাথার মধ্যে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু লিখতে গেলেই সবকিছু গুলিয়ে যায়। এরপরে আছে মেসেঞ্জারের প্যাড়া। সারা বিশ্বের বন্ধুদের একসাথে অখণ্ড অবসর- অস্টেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের সাথে জার্মানি, ইউ কে’র সময় আবার ওদের সাথে আমেরিকা – কানাডার সময় মেলে না। সারাদিন টুং টাং। ছিঁড়ে যাওয়া বা আলগা হয়ে যাওয়া সুতো-গুলোয় ফের মাঞ্জা দেয়া।
এবার হাল ছেড়ে দিলাম- আর হবেনা।সব ছেড়ে যখনই ফের ব্যস্ততম জীবনে প্রবেশ করতে যাব ঠিক তখন-ই করোনার(সম্ভাব্য) আমার ঘরে প্রবেশ। সবাইকে ছেড়ে অগত্যা বাধ্য হয়ে ফের আইসোলেসন। এবার সব বন্ধুরাও ব্যস্ত- তাদের নাগরিক জীবন নিয়ে। নিজের পরিবারও আমার থেকে নিরাপদ দুরুত্বে! আটঘাট বেধে বসলাম বই পড়া আর লেখা-লেখি নিয়ে।
ব্লগে দু-একটা লেখা দিতেই দেখি আমার কয়েকজন প্রিয় ব্লগার( মনিরা সুলতানা আপু , জনাব আমি ব্লগার হইছি,জনাব আকন বিডি,জনাব অদৃশ্য, জনাব অশুভ, জনাব ভুয়া মফিজ সহ অনেকেই) আমার লেখা পুরনো একটা সিরিজ, যেটার মাঝপথে ইজ্জত হারানোর ভয়ে চম্পট দিয়েছিলাম- সেই সিরিজের কথা মনে করিয়ে আমাকে খোঁচাচ্ছে। ভেবেছিলাম এই অতি অখ্যাত লেখকের কথা সবাই সবাই ভুলে গেছে। এত পুরনো একটা সিরিজের কথা কারো মনে থাকবেনা নিশ্চিত ছিলাম- কিন্তু কিসের কি? পুরনো কিছু সন্ত্রাসী(!) এখনো রয়ে গেছে ব্লগে। যাদের কারণে আমার সংসার টেকানো দায় হয়ে পড়বে।
আগেই তোলা ছিল কিছু নোট আর সেই গল্পের কিছু চুম্বক অংশ। অবশেষে একটানা চারদিন বসে বসে জোড়া তাপ্পি তালি দিয়ে একটা পরিপূর্ণ সিরিজ দাড় করালাম।
‘আলকাশ’( যার সম্ভাব্য অর্থ: বদ্ধ মাতাল) শুরু করেছিলাম খালি চোখে। এখন ভারী চশমার বেড়া। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আবেগ কমে আসে। পুরনো উন্মাতাল প্রেম-ভালবাসাকে মনে হয় ছেলেমানুষি পাগলামি! সততা, নীতি-বোধ বেশ প্রগাঢ় হয়। লিখতে বসে বুঝলাম এভাবে লেখাটা অন্যায়- কারো প্রেমিকার নগ্ন শরীরকে সবার সামনে উন্মোচন করে দেয়াটা নীতিহীন বোধের পরিচায়ক।কিন্তু একেবারে না দিলে তো লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এ সিরিজের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে নারী-প্রেম,মদ আর সিগারেট। তাইতো অবশেষে দিলাম, তবে সূক্ষ্ম মসলিন কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঢেকে- পুরোটা দেখা যায়, আবার দেখা যায় না।
প্রিয় ব্লগার, ‘আলকাশ’ নিয়ে নতুন করে শুরুর গল্পটা দু’দশ লাইনের মধ্যে লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হল আর কই। আমি আমার প্রথম আইসোলেসনের গল্পটা বলতে চেয়েছিলাম; কিন্তু লেখা যত কলেবরে বাড়বে পাঠকের কপাল তত বেশি কুঞ্চিত হবে।
তাইতো এখানেই সমাপ্তি টেনে যারা এর পূর্বে পড়েননি তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক দিয়ে দিলাম-যদি মনে চায় একটু চোখ বুলিয়ে নিবেন;
আলকাশ প্রথম পর্বঃ Click This Link
আলকাশ দ্বীতিয় পর্বঃ Click This Link
আলকাশ তৃতিয় পর্বঃ Click This Link
আলকাশ চতুর্থ পর্বঃ Click This Link
আলকাশ পঞ্চম পর্বঃ Click This Link
আলকাশ ষষ্ঠ পর্বঃ Click This Link
আলকাশ সপ্তম পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৪০