বাংলাদেশের মানুষজনকে বলতে দিলে, শতকরা ৮০/৯০ জন বলবেন যে, তারা জ্বীন, ভুত, পেত্নী, যক্ষ, ইত্যাদি দেখেছেন, ইহাদের সাথে কথা বলেছেন, দেখে ভয়ে পালিয়ে প্রানে বেঁচে গেছেন, দোয়া কলেমা পড়ে ইহাদিগকে তাড়া করেছেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এদের শ্রোতারাও এদেরকে বিশ্বাস করেন। বাংলাদেশে শতশত শিক্ষিত মানুষ দেখেছি, যারা খুবই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসব দেখার কথা বলে থাকেন।
লোকজন যতই আত্মবিশ্বাস নিয়ে জ্বীন, ভুত, পেত্নী, যক্ষ, ইত্যাদি নিয়ে কথা বলুক না কেন, ইহার মাঝে কোন ধরণের সত্যের চিহ্নও নেই; এই ধরণের ভুল দেখা কিংবা ভুল ধারণা আমাদের দেশে পুরোপুরি গ্রহনযোগ্য ।
মনে হয়, ২ বছর আগে ব্লগেও কিভাবে প্রায় সপ্তাহখানেক অলিখিতভাবে ভুত-সপ্তাহ পালিত হয়েছিলো; পোষ্টের পর, পোষ্ট আসছিলো জ্বীন, ভুত নিয়ে; এবং অনেক ব্লগার জ্বীন, ভুত নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। পড়তে ভালোই লাগছিলো; কিন্তু যাঁরা এসব বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার তথাকথিত সত্যঘটনা বলছিলেন, তাঁরা হয়তো বুঝতে পারছিলেন না যে, এগুলো সত্যের বরখেলাপ।
আদিকালের সাহিত্য মোটামুটি রূপকথাই ছিলো: অতিমানব, দৈত্য-দানব, জ্বীন-ভুত অতিপ্রকৃতরাই গল্পের মুল বিষয় ছিলো। এরপর সাহিত্য ছিলো রাজা, রাণী, রাজপুত, রাজকন্যা, উজির,নাজির, সেনাপতিদের নিয়ে। এরপর, সাহিত্য ধনীদের উদ্ভব ঘটে। ধনীরা এখনো আছে, তবে, সাধারণ মানুষের জীবনের কাহিনী স্হান করে নিয়েছে।
পশ্চিমের সাহিত্যে রূপকথা খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো, পশচিমের সেরা রূপকথাগুলো এখনো জীবন্ত। পশ্চিমে এখন রূপকথার প্রভাব কমে এসেছে, সাধারণ মানুষের জীবন নিয়েই বেশীরভাগ সাহিত্য রচিত হচ্ছে। পশ্চিমের মানুষ এখনো ভুতপেত্নীকে কেন্দ্র করে উৎসব পালন করে; কিন্তু একটা শিশুও বুঝে যে, ইহা উৎসব মাত্র, আসলে ভুতপেত্নী নেই।
পশ্চিম থেকে বিদায় নেয়া ভুতপেত্নীরা এখন এশিয়া ও আফ্রিকায় বসবাস করছে; এই ২ মহাদেশে এখনো মানুষ ভুত, পেত্নী, জ্বিন, পরী দেখেন, মানুষের উপর এরা ভর করে, এদের নিয়ে চরম মিথ্যাকে সত্য হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছেন এই ২ মহাদেশের মানুষ।