একটি ভিয়েতনামী মেয়ে দোকানের ক্যাশিয়ারের সাথে ঝগড়া করছিলো, তার মেজাজ খারাপ ছিলো; সেই সময়, আমি ভুলে তাকে একটা অপ্রয়োজনীয় কথা বলে বেশ সমস্যায় পড়েছিলাম; যাক, কিছু ঘটেনি।
২০১৮ সালের শীতের শুরুতে আমি বেশ দুরে একটি চাকুরী পেলাম, এক পথই ৭০ মাইলের বেশী ড্রাইভ। কাজ থেকে বের হতে হতে রাত হয়ে যেতো; হাইওয়ের শুরুতে ২০/৩০ মাইল এলাকায় বেশ কুয়াশা হতো; আমি তখন ডুয়েল-ভিশনে ভুগছিলাম, কুয়াশার মাঝে সামনের গাড়ীগুলোর লেজের লাইটগুলোকে এলোমেলো দেখতাম, একটা গাড়ীকে দু'টিও মনে হতো, কোনটা কোন লাইনে আছে, উহা আমার বোধগম্য হতো না, এবং সামনের গাড়ী কতদুরে আছে বুঝতে সমস্যা হতো। সেই কারণে আমি আমি মাঝে মাঝে মোটেলে থেকে যেতাম রাতে। হাইওয়েতে হ্যাজার্ড লাইট দিয়ে, শ্লো-লাইনে ৬৫ মাইলের যায়গায় ৩৫/৪০ মাইল বেগে গাড়ী চালাতাম; কিন্তু একদিন এক পুলিশ আমাকে শ্লো-চালানোর জন্য ধরলো; আমি চোখের কথা বললে বিরাট সমস্যা হবে বুঝে, কৌশলে গাড়ীর দোষ দিয়ে রক্ষা পেলাম। আমি ভাবলাম মোটেলে থেকে যাবো, তাই সার্ভিস ষ্টেশনে থামলাম রাতের খাবার খেতে।
সেলফ-সার্ভিস ক্যাফে, লোকজন মোটেই নেই; আমি এক টুকরা স্যামন, সামান্য পালং-শাক, ১ টুকরো রুটি ও ১টি সোডা নিয়ে ক্যাশের লাইনে দাঁড়ালাম; খাবার নেয়ার সময়ও লক্ষ্য করছিলাম, ১টা মেয়ে-কাষ্টমার ক্যাশিয়ারের সাথে কি নিয়ে উঁচু গলায় তর্ক করছে। ৩ জন ক্যাশিয়ার, মাঝখানের মেয়েটার সাথে একটা ভিয়েতনামী মেয়ে রেগেমেগে তুমুল তর্ক করে চলছে, বাকী ২'জন ক্যাশিয়ার মনোযোগ দিয়ে উহা শুনছে, আমি দাঁড়িয়ে আছি, কেহ আমাকে ডাকে না।
২/৩ বার হাত নাড়লাম, খবর নেই; আমি বিনা-আহবানে ১ম ক্যাশিয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, সে বেশ বিরক্ত হলো, আমার খাবার মেপে দাম বললো বিরক্তির সাথে। পুলিশের জরিমানা না'দেয়ার কারণে মনে যেটুকু আনন্দ ছিলো, মেয়ের কালো মুখ দেখে, উহা উবে গেলো। পকেটে হাত দেয়ার সময়, আমার পায়ে কি যেন লাগলো; আমি কিছু মনে করিনি। ঝগড়ারত খাটো মেয়েটি (সম্ভবত ভিয়েতনামী ) আমাকে লক্ষ্য করে চড়া গলায় বললো,
-কানা নাকি, আমর কুকুটাকে মাড়াচ্ছ কেন?
-কে মাড়াচ্ছে, কোথায় তোমার কুকুর?
-চোখে কিছু দেখ না?
ক্যাশ মেশিনের টেবিলটা কাষ্টমারের দিকে অনেকটা প্রসারিত, আমি এঁকেবেঁকে টেবিলের নীচে তাকালাম; দেখি খুবই ছোট একটি কুকুর ভিয়েতনামী মেয়েটার পায়ের কাছে আশ্রয় নিয়ে ভীত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,
-স্যরি, আমি দেখি নাই!
-স্যরি, মরি কম বলিও, চোখ খোলা রেখে হাঁটিও, দুনিয়াটা কানায় ভরে গেছে।
মেজাজ খাট্টা হয়ে গেলেো, বললাম,
-স্যরি বললাম, এরপর তুমি কানা মানা ডাকছ কেন? কুকুরের সাইজ তো তোমার অনুপাতে, উহাকে দেখতে হলে দুরবীণ লাগবে!
-তুমি আমর সাইজ নিয়ে কথা বলছ? দেখ, তোমাকে লালঘরের পানি খাওয়ায়ে ছাড়বো।
কি আপদ! বুঝলাম, যা বলেছি, উহা ভালো কিছু নয়। এমন সময়, আমার ক্যশিয়ার আমাকে বললো,
-তুমি কোন সাহসে একটা মেয়ের সাইজ নিয়ে কথা বলছো?
বিনা-আহবানে ক্যাশিয়ারের কাছে যাওয়ায় সে বিরক্ত হয়েছিলো, এখন সে সুযোগ পেয়ে ঘি ঢালছে! আমি বললাম,
-ঠিক আছে, আমি ভুল বলেছি, আবারো স্যরি। আমি যাচ্ছেি!
-তোমার খাবারের দাম দিয়ে যাও।
-আমি তোমার খাবার খাবো না।
-তোমাকে খেতে বলছি না, দাম দিতে বলছি।
-আমি দামও দেবো না।
-দাঁড়াও মালিককে ডাকছি।
-সে ওয়াকিটকিতে কোন এক স্যামকে ডাকলো; ক্যাশিয়ারের পেছনের দরজা হয়ে আমার বয়সী এক বড় আকারের আমেরিকান আসলো; মেয়েটা আমাকে দেখায়ে বললো,
-এই লোক খাবারের দাম দিচ্ছেে না।
লোকটি রাগ টাগ করলো না, স্বাভাবিকভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-জেনটেলন্যান, আপনি খাবার নিয়েছন, পয়সা দিচ্ছেন না কেন?
আমার মেজাজ ভালো ছিলো না, আমি বাংলায় বললাম,
-পয়সা নেই!
কি বললেন?
-পয়সা নেই!
স্যাম ক্যাশিয়ারের দিকে তাকিয়ে বললো,
-এই লোক ইনরেজীই জানে না, মনে হয়, চাকুর বাকুরী নেই; খাবারটা ওকে দিয়ে দাও।
-এই লোক এতক্ষণ পরিস্কার ইংরেজীতে কথা বলছিলো।
-শোন, তোমরা ৩ জন কাজের থেকে গন্ডগোল বেশী কর, দুনিয়ার ঝগড়া লাগাও। খাবারটা আমাকে দাও।
স্যাম মেয়ের থেকে খাবারটা নিয়ে আমার হাতে দিয়ে বললো,
-জেন্টেলম্যান, আপনি খাবারটা নিয়ে যান, পয়সা দেয়ার দরকার নেই।
আমি ধন্যবাদ বলে পা বাড়াচ্ছি, ভি্যেতনামী মেয়েটা বললো।
-ঐ লোক ভালো ইংরেজী জানে!
-ইংরেজী জানলেও মানুষের ক্ষুধা লাগতে পারে, স্যাম বললো।
আমি খাবার হাতে বেরিয়ে পড়লাম। ইচ্ছা ছিলো বসে খাবো, ভাবলাম, ভিয়েতনামী মেয়ে আবার কোন প্যাচাল লাগায়!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৮