somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখার কারণে চাকুরী হারালাম।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট বুশের ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের কারণে ২০০৭ সালে আমেরিকায় ভয়ংকর রিসেশান শুরু হয়েছিলো; ২৫ মিলিয়ন লোকের চাকুরী নেই, আমারও চাকুরী নেই; সহসা চাকুরী পাবার সম্ভাবনা নেই দেখে, ২০০৮'এর শুরুতে দেশে গেলাম। দেশে পৌঁছার ২ সপ্তাহ পরে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভের একটা চাকুরীর বিজ্ঞাপণ দেখে টেলিফোন করলাম; বিজ্ঞাপণদাতা ম্যানেজারের সাথে কথা হলো; নাম শুনে মনে হলো পাকিস্তানী আমেরিকান; ম্যানেজার আমাকে বললো,
-এক সপ্তাহের মাঝে যদি নিউইয়র্ক আস, আমি তোমার ইন্টারভিউ নেবো।

চাকুরী হওয়ার সম্ভাবনা কম, টিকেটের টাকাগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে! যাক নিউইয়র্ক এলাম; সরকারী অফিস, ম্যানেজারের নাম নাদিম কাইয়ানী, আমেরিকায় জন্ম, পাকিস্তানী পরিবারের ছেলে; দেখতে পাকিস্তানীদের মতো নয়, অনেকটা ইটালিয়ান ফিটালিয়ানদের মতো। তার ডিপার্টমেন্ট সরকারী বন্ড ক্রয়-বিক্রয়ের ডাটা রাখে মেইন-ফ্রেইম কম্প্যুটারে; সেই ডাটাকে RISC/AIX মেশিনে আনার জন্য সে নিজেই ১টা সিষ্টেম ডিজাইন করেছে; আগামী ২ বছরের মাঝে দরকারী সব এ্যাপ্লিকেশ তৈরি হবে, ডেভেলপমেন্ট টিম কাজ করছে; তার আরো একটা প্রজেক্ট আছে, তার সময়ের অভাব, একজন এ্যাসিসটেন্ট দরকার। বিরাট সরকারী অফিস, তার সামনের দেয়ালে বিশাল একটা System Flowchart; সে সেটা আমাকে দেখায়ে বললো,
-ইহা আমি অংকন করেছি, তুমি যদি ইহা আমাকে বুঝায়ে বলতে পারো, তুমি চাকুরী পাবে। এখন নীচে চল, তোমাকে কফি কিনে দেই।

কফি নিয়ে ২ জন তার অফিসে ফিরে আসার পর, সে বললো,
-অন্য কাজে আমি পাশের বিল্ডিং'এ যাচ্ছি, রুম খোলা থাকবে, এই নাও ৩০ ডলার, দুপুরে লান্চ করে নিও; আমি বিকেল ৪টায় ফিরে আসবো; তখন তুমি এই চার্ট সম্পর্কে যা পার বলিও; হয় চাকুরী হবে, না হয় হবে না।

সে ফেরত আসার পর, আমরা ঘন্টাখানেক চার্ট নিয়ে আলাপ করলাম; সে আমাকে চাকুরী দিলো কনসালটেন্ট ( টেম্পোরারী )হিসেবে; সাথে ১টা কনডিশন জুড়ে দিলো, সে যেদিন কাজে আসবে, সেদিন আমাকেও কাজে আসতে হবে; তার ছুটির দিনে আমার ছুটি।

পরদিন কাজে আসার পর, সে আমাকে কফি কিনে দিয়ে কাজ বুঝায়ে দিল: তার ৩ জন প্রজেক্টলীড আছে, ওরা যখন টিম-মিটিং করে, আমাকে উপস্হিত থাকতে হবে, তাদের আলাপ থেকে বুঝতে হবে, কোথায়ও কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা এবং তাদের কথার সাথে কাজের মিল আছে কিনা! কথা শেষ হওয়ার পর, সে আমাকে বললো,
-তুমি চার্টের ৭০/৭৫ ভাগ বুঝেছ, বাকীটুকু কাজ করার সময় বুঝতে পারবে। যারা ৮৫ ভাগ বুঝেছে, আমি তাদেরকেও নিইনি; তোমাকে নিয়েছি মুসলিম ব্রাদার হিসেবে, ইহা মনে রাখিও।

আমি চুপ, বুঝলাম ধর্ম নিয়ে ইমোশানেল সমস্যা আছে, একদিন আমার সাথে ইহা নিয়েই সমস্যা হবে। তার গ্রুপে অনেক লোকজন, সবই তরুণ/তরুণী, আমি একমাত্র বয়স্ক। সে তার কাজে ব্যস্ত, আমার কাজে সে খুশী। সে ক্রিকেটের ফ্যান, আমি ক্রিকেট পছন্দ করি না; আমি ফুটবলের মানুষ, সে ফুটবল পছন্দ করে না।

আড়াই বছর অবধি সব ভালোভাবে চলছে কোন সমস্যা হয়নি। ২০১০ সালের ওয়ার্ডকাপ ফুটবল খেলা শুরু হলো; আমি দিনের বেলায় খেলা দেখতে পারি না, রাতে দেখি। সেমি-ফাইনালের দিন ছুটি নিতে চাইলাম, সে ছুটি দিলো না। অসুবিধা নেই, ফাইন্যাল দেখতে পারবো সরাসরি, খেলা শনিবারে (১১ই জুলাই)।

ফাইনাল খেলার আগেরদিন, নাদিম আমাকে জানালো যে, সিষ্টেম ব্যাকআপ হবে শনিবারে (খেলার দিন ), সথে কিছু নতুন হার্ডওয়ার যোগ করা হবে সিষ্টেমে; সে আসবে, আমাকেও আসতে হবে। এই ব্যাকআপ, রেষ্টোরেশন, আপগ্রেডে আমার কোন কাজ থাকে না, আমাকে উপস্হিত থাকতে হয়, কারণ নাদিম ডাটা সেন্টারের লোকদের সাথে থাকে; আমি বসে বসে কফি খাই, সিএনএন দেখি ( কনফারেন্স রুমে টিভি ছিলো)।

শনিবারে কাজের কথা শুনে, আমি ছুটি চাইলাম খেলা দেখার জন্য; নাদিম না করে দিলো। শনিবারে কাজে এসেছি, আমি এক বিল্ডিং'এ, নাদিম অন্য বিল্ডিং'এর ডাটাসেন্টারে; দিনের ১০টার দিকে নাদিমের জন্য ১টা ষ্টারবাকস'এর ল্যাটে কিনে ডাটাসেন্টারে গেলাম। সে ষ্টারবাকস'এর ল্যটে খুবই পছন্দ করতো, সে খুশী; তাকে খুশী দেখে, খেলা দেখার জন্য দিনের ২টা থেকে ৪টা অবধি ছুটি নেয়ার কথা বললাম, সে "না" করে দিলো।

আমার কাজের বিল্ডিং'এর পাশে, ১টা বারে বড় স্ক্রীনে খেলা দেখায়, আমি ২'টার সময় গিয়ে বারে বসলাম। খেলা শেষে অফিসে ফিরলাম; দেখি, টেবিলে নাদিম নোট রেখে গেছে, অফিসে ফেরার সাথে সাথে যেন তার অফিসে গিয়ে দেখা করি। আমি গেলাম, সে বললো,
-তোমার এই বয়সে, বারে বসে খেলা দেখা মানায়? সর্বোপরি, আমি তোমাকে বাইরে যেতে ছুটি দিই নাই। এই মাসের পর, তোমাকে আর কাজে আসতে হবে না।

আমি নীচে গিয়ে একটা ল্যাটে কিনলাম, নাদিমের অফিসে গেলাম; সে নেই, দেখলাম সে ডাটা সেন্টারে (পাশের রুম ); আমি ল্যাটেটা তার টেবিলে রেখে আমার অফিসে ফিরলাম; আমার ব্যাজ, ল্যাপটপ টেবিলে রেখে, একটা টুকরা কাগজে লিখলাম, "বিদায় নাদিম"; অফিস থেকে বের হয়ে এলাম, তাকে হয়তো আরো ২/৪ ঘন্টা ওখানে থাকতে হবে; আমি এখন ফ্রি।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:৩১
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×